Broken Dream of a Sight Disable

Author Topic: Broken Dream of a Sight Disable  (Read 948 times)

Offline Md. Khairul Bashar

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 203
  • Test
    • View Profile
Broken Dream of a Sight Disable
« on: December 22, 2012, 12:23:19 PM »
স্বপন একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। শারীরিক এই প্রতিবন্ধিত্ব দমিয়ে রাখতে পারেনি তাঁকে। জীবনযুদ্ধে জেতার চেষ্টা করে অনেক দূর এগিয়েছেনও। আমলাতান্ত্রিকতা তাঁকে স্বপ্নের শেষ সিঁড়িটার গোড়ায় পা রাখতে দিল না।আদালতে লড়ে সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার মতো অসম্ভবকে সম্ভব করেছিলেন শরীয়তপুরের স্বপন চৌকিদার। কিন্তু ৩৩তম বিসিএসের দুটি লিখিত পরীক্ষা দেওয়ার পর শ্রুতলেখক পরিবর্তনের কারণে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়।স্বপন বলছেন, নিরুপায় হয়েই তাঁকে শ্রুতলেখক পরিবর্তন করতে হয়েছিল এবং এ ব্যাপারে পিএসসির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা তাঁকে মৌখিকভাবে সম্মতি দিয়েছিলেন। কিন্তু পিএসসি ও পরীক্ষা কেন্দ্রের কর্মকর্তাদের ‘অসহযোগিতা ও দায়িত্বহীনতায়’ তাঁর স্বপ্নের মৃত্যু ঘটেছে।

বাধা জয়ের সংগ্রাম: মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে প্রথম বিভাগ পেয়ে উত্তীর্ণ হওয়ার পর স্বপন চৌকিদার ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে। ২০০৬ সালে আইনে স্নাতক ও পরের বছর স্নাতকোত্তর পাস করেন। এরপর অপরাধ মনোবিজ্ঞান বিষয়ে আবার স্নাতকোত্তর পাস করেন। প্রথম শ্রেণীর সরকারি কর্মকর্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। ২০০৮ সালে ২৮তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিতে চেয়েছিলেন।কিন্তু দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য কোনো সুযোগ না থাকায় সেখানেই থমকে যেতে হয়। তবে হাল না ছেড়ে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হলেন স্বপন।এ বছরের ২০ মার্চ হাইকোর্ট পিএসসিকে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে নির্দেশনা দেন। স্বপ্নপূরণের পথে একটা ধাপ পেরোলেন স্বপন। ৩৩তম বিসিএস পরীক্ষার প্রাথমিক বাছাইতে উত্তীর্ণ হয়ে আরেক ধাপ এগিয়ে যান। ১৯ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন তিনি। কিন্তু দুটি পরীক্ষা দেওয়ার পর উল্লিখিত কারণে আটকে গেছেন তিনি।

যেভাবে স্বপ্নভঙ্গ: স্বপন গতকাল শুক্রবার প্রথম আলোকে জানান, আদালত শ্রুতলেখক নিয়ে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের পরীক্ষা নেওয়ার জন্য পিএসসিকে নির্দেশনা দেন।স্বপন চৌকিদার জানান, প্রথমে অক্টোবর মাসে লিখিত পরীক্ষার সিদ্ধান্ত জেনে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সেলিম রেজা ও মোহাম্মদ সোলায়মানকে শ্রুতলেখক করার জন্য পিএসসিতে আবেদন করেন। পিএসসি তাঁকে একজনকে শ্রুতলেখক করার নির্দেশনা দেয়। তখন স্বপন বলেন, ‘পরীক্ষাসহ কোনো কারণে একজনের উপস্থিত হতে সমস্যা হতে পারে—এ কারণে আমি দুজনের জন্য আবেদন করছি।’স্বপন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর যুক্তি শুনে এ সময় পিএসসির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক বিবেকানন্দ বিশ্বাস বলেন, পিএসসি একজনকেই লিখিত অনুমতি দেবে। তবে কোনো কারণে সে যদি না আসতে পারে, তাহলে যে শ্রুতলেখক হবে সে পরিচয়পত্র নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে এলেই চলবে। এরপর স্বপন প্রথম বর্ষের ছাত্র সেলিম রেজাকে শ্রুতলেখক করেন। লিখিত পরীক্ষা অক্টোবরে শুরুর কথা থাকলেও প্রশ্নপত্র ফাঁসের গুজবের কারণে তা বাতিল হয়ে যায়। এরপর ১৯ ডিসেম্বর থেকে পরীক্ষা শুরুর সিদ্ধান্ত নেয় পিএসসি। তবে এবার এক দিনে দুটি করে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।স্বপন বলেন, ‘পরীক্ষা পিছিয়ে যাওয়ায় আমি বিপদে পড়ি। কারণ, শ্রুতলেখক সেলিম রেজার এখন প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা চলছে। একই দিনে দুটি পরীক্ষা পড়ায় সংকট আরও বাড়ে।’ স্বপন জানান, ১৯ ডিসেম্বর তিনি একজন শ্রুতলেখককে নিয়ে রায়েরবাজারের জরিনা শিকদার হাইস্কুল ও কলেজ কেন্দ্রে গণিত ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের পরীক্ষা দেন। প্রথম দিনের শ্রুতলেখকের জরুরি কাজ থাকায় পরদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে নিয়ে বাংলাদেশ বিষয়ের পরীক্ষা দিতে যান।

স্বপন বলেন, পরীক্ষা শুরুর আধঘণ্টা পর কেন্দ্রসচিব ও কয়েকজন এসে বলেন, শ্রুতলেখক তো সেলিম রেজা। এই মেয়ে কে? জবাবে তিনি বলেন, সেলিম রেজা পরীক্ষার কারণে আসতে পারেননি। তবে পরিচয়পত্র নিয়ে এলে অন্য কাউকে নিয়েও পরীক্ষা দেওয়া যাবে বলে আশ্বাস দিয়েছে পিএসসি।স্বপন প্রথম আলোকে বলেন, ‘কেন্দ্রসচিবসহ কেউই আমার কথা শুনতে চাচ্ছিলেন না। একপর্যায়ে বলি, আপনারাই যেকোনো একজন শ্রুতলেখক ঠিক করে দেন। কিন্তু তাঁরা সে কথা না শুনে আমাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেন। পিএসসির কর্মকর্তা বিবেকানন্দ স্যারকে একবার অন্তত ফোন করার অনুরোধ করলেও তাঁরা কোনো কথা না শুনে আমাকে বহিষ্কার করেন।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রসচিব অধ্যক্ষ মোহাম্মদ শাহ আলম গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রথম দিনে ও একটা ছেলেকে এনেছে আর দ্বিতীয় দিনে একটা মেয়েকে নিয়ে আসে। কিন্তু তাঁর কোনো অনুমতি ছিল না। এ কারণে আমরা পরীক্ষা নিইনি। পিএসসির লোকজন, ম্যাজিস্ট্রেট—সবাই মিলেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’ স্বপনকে আরেকজন শ্রুতলেখক কেন দেওয়া হলো না জানতে চাইলে শাহ আলম বলেন, ‘শ্রুতলেখক বললেই তো পাওয়া যায় না।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিএসসির পরিচালক (পরীক্ষা) বিবেকানন্দ দাস বলেন, ‘যেহেতু পিএসসি থেকে একজনের বেশি শ্রুতলেখক দেওয়ার নিয়ম নেই, তাই আমরা একজনের জন্যই অনুমতি দেই।’ ওই শ্রুতলেখকের পরীক্ষা বা অন্য জরুরি কাজ থাকলে কী হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের জানালে আমরা সিদ্ধান্ত দিতে পারি।’ স্বপনকে বহিষ্কার করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিবেকানন্দ দাস বলেন, ‘আমাকে তো কেউ বিষয়টি জানায়নি! বহিষ্কারের আগে যদি কেন্দ্রসচিব বা কেউ আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতেন, তাহলে অবশ্যই একটা সিদ্ধান্ত দিতাম। একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী এত দূর এসে এভাবে বিদায় নেবে, সেটা তো কারও কাম্য নয়।’



Source: http://www.prothom-alo.com/detail/date/2012-12-22/news/315104