১০টি ইসলাম ধ্বংসকারী বিষয়

Author Topic: ১০টি ইসলাম ধ্বংসকারী বিষয়  (Read 24 times)

Offline Mrs.Anjuara Khanom

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 474
  • Test
    • View Profile
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তাআলার জন্য নিবেদিত। দরূদ ও সালাম অবতীর্ণ হোক সেই মহান নবীর উপর যার পরে আর কোন নবী নেই। আরো নাযিল হোক তাঁর পরিবার বর্গ, সহচর বৃন্দ এবং তাঁর হেদায়াতের অনুসারীদের উপর।

অত:পর হে মুসলিম ভাই! এ কথা জেনে নিন যে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা সকল বান্দার উপর ইসলামে প্রবেশ করা, উহা আঁকড়ে ধরা এবং উহার পরিপন্থী বিষয় থেকে সতর্ক থাকা ফরজ করেছেন। আর নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সে দিকে আহবান করার জন্যই প্রেরণ করেছেন। আল্লাহ্‌ এই মর্মে ঘোষণা দিয়ে বলেন, যে ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অনুসরণ করবে সে হেদায়াত প্রাপ্ত হবে পক্ষান্তরে যে তাঁর থেকে বিমুখ হবে সে পথভ্রষ্ট হবে। তিনি বহু আয়াতে মুরতাদ হওয়ার মাধ্যম, শির্ক ও কুফরীর সকল প্রকার হতে সতর্ক করেছেন।

বিদ্যানগণ মুরতাদের বিধি-বিধান অধ্যায়ে এই মর্মে উল্লেখ করেছেন যে, একজন মুসলমান ব্যক্তির রক্ত ও ধন-সম্পদ হালাল কারী বিভিন্ন ইসলাম বিধ্বংসী কার্য কলাপ সম্পদনের মাধ্যমে মুরতাদ ও ইসলাম হতে বহিস্কার হয়ে যায়। ইসলাম বিধ্বংসী কাজ হল সর্ব মোট ১০টি যা শাইখুল ইসলাম ইমাম মুহাম্মাদ বিন সুলায়মান আত তামীমী (রহিমাহু্মুল্লাহ) ও অন্যান্য বিদ্বানগণ উল্লেখ করেছেন। আমরা ঐ সকল ইসলাম বিধ্বংসী কাজ গুলো নিন্মে সংক্ষিপ্ত ভাবে কিঞ্চিত ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ সহ আপনার জন্য উল্লেখ করছি। যাতে আপনি উক্ত বিষয়গুলো থেকে সতর্ক থেকে অপরকে সতর্ক করতে পারেন।
ইসলাম বিধ্বংশী কাজ গুলো নিন্মরূপঃ

প্রথমঃ আল্লাহর ইবাদতে শির্ক করা। আল্লাহ বলেনঃ “নিশ্চয় আল্লাহ তার সাথে শির্ক করাকে ক্ষমা করেন না। উহা ব্যতিরেকে উহার নিন্ম পর্যায়ের পাপ সবই তিনি যাকে ইচছা ক্ষমা করেন।” [নিসা: ১১৬]

আল্লাহ তাআলা আরও বলেনঃ “নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি শির্ক করবে আল্লাহ তার উপর জান্নাত হারাম করে দিবেন এবং তার বাসস্থান হবে জাহান্নাম, আর এই সমস্ত যালিমদের জন্য কোন সাহায্যকারী থাকবে না।” [সূরা মায়েদাহ্‌: ৭২]

জ্ঞাতব্যঃ এই শির্কের অন্তর্ভূক্ত হল: মৃতকে আহবান করা, তাদের নিকট ফরিয়াদ করা, তাদের জন্য নযর-নেয়াজ মানা ও পশু যবেহ করা। যেমন কোন ব্যক্তি জ্বিনের জন্য বা কোন কবেরর জন্য যবেহ করল ইত্যাদি।

দ্বিতীয়ঃ নিজের ও আল্লাহর মধ্যে মধ্যস্থতা সাব্যস্ত করে তাদের উপরেই ভরসা রাখা। এই ধরণের ব্যক্তি সর্ব সম্মতিক্রমে কাফের বলে গণ্য।

তৃতীয়ঃ  মুশরিককে মুশরিক বা কাফেরকে কাফের না বলা বা তাদের কুফরীতে সন্দেহ পোষণ করা কিংবা তাদের ধর্মকে সঠিক ভাবা।

চতুর্থঃ এই বিশ্বাস করা যে অন্যের আদর্শ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শের চাইতে অধিক পূর্ণাঙ্গ। কিংবা এই বিশ্বাস করা যে, অন্যের বিধান নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিধান অপেক্ষা অধিক উত্তম। (যেমন কেউ কেউ তাগুতের বিধানকে নবীর বিধানের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিযে থাকে) সে ব্যক্তি কাফের বলে গণ্য হবে।

পঞ্চমঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আনিত কোন বস্তুকে ঘৃণার চোখে দেখা। এমতাবস্থায় সে কাফের বলে গণ্য হবে যদিও সে ঐ বস্তুর উপর বাহ্যিক ভাবে আমল করে। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “ইহা এজন্যই যে, তারা আল্লাহর নাজিলকৃত বিষয়কে ঘৃণা করেছে সুতরাং আল্লাহ তাদের আমল গুলোকে পণ্ড করে দিয়েছেন।” [সূরা মুহাম্মাদ: ৯]

ষষ্ঠঃ দ্বীনের কোন বিষয় নিয়ে বা তার পুরস্কার কিংবা শাস্তিকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেনঃ “আপনি বলুন (হে রাসূল) তোমরা কি আল্লাহর সাথে, স্বীয় আয়াত সমূহের সাথে এবং রসূলের সাথে ঠাট্টা করছিলে? কোন প্রকার ওজর-আপত্তির অবতারণা কর না। তোমরা ঈমান আনায়নের পর আবার কুফরী করেছ।” [সূরা তাওবাহ্‌: ৬৫-৬৬]

সপ্তমঃ যাদু-টোনা করা: যাদুর অন্যতম প্রকার হল তন্ত্র-মন্ত্রের সাহায্যে দুজন মানুষের বন্ধন তৈরী করা বা তাদের মাঝে সম্পর্ক ছিন্ন করা। সুতরাং যে ব্যক্তি যাদু করবে বা তাতে রাজি হবে সে কাফের বলে বিবেচিত হবে। আল্লাহ তাআলার বলেনঃ “ঐ দুজন (হারূত- মারুত ফেরেস্তা) কাউকে যাদু শিক্ষা দিতেন না যতক্ষণ পর্যন্ত এই ক্থা না বলতেন-নিশ্চয় আমরা (তোমাদের জন্য) পরীক্ষা স্বরূপ। সুতরাং (আমাদের নিকট যাদু শিখে) কাফের হয়ো না।” [সূরা বাকারা: ১০২]

অষ্টমঃ মুশরিকদেরকে মুসলমানদের বিরূদ্ধে সাহায্য সহযোগিতা করা। আল্লাহ তাআলার বাণী: “তোমাদের মধ্য হতে যে ওদের (অর্থাৎ বিধর্মীদের) সাথে বন্ধুত্ব করবে সে তাদেরই দলভূক্ত বলে গণ্য হবে। নিশ্চয় আল্লাহ যালেমদেরকে হেদায়াত দান করেন না।” [সূরা মায়েদা: ৫১]

নবমঃ এ বিশ্বাস করা যে, কারও জন্য মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শরীয়তের বাইরে থাকার অবকাশ রয়েছে। যেমন (এক শ্রেণীর ভণ্ড সূফীর ধারণা অনুপাতে) অবকাশ ছিল খিযির (আ:)এর জন্য মূসার (আ:) শরীয়ত হতে বাইরে থাকার। এ বিশ্বাসেও সে কাফের হয়ে যাবে। আল্লাহ তাআলা বলেন: “যে ব্যক্তি ইসলাম ব্যতীত অন্য ধর্ম অন্বেষণ করবে তার থেকে তা গ্রহন করা হবে না। এবং সে পরকালে ক্ষতি গ্রস্থদের দলভূক্ত হবে।” [সূরা আলে ইমরান: ৮৫]

দশমঃ সম্পূর্ণ রূপে আল্লাহর দ্বীন হতে বিমুখ থাকা। সে ব্যাপারে জ্ঞানার্জন না করা, তদানুযায়ী আমল না করা, এই ধরণের মন-মানষিকতার ব্যক্তিও কাফের বলে পরিগণিত হবে। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “ঐ ব্যক্তি অপেক্ষা কে বেশী যালিম (অত্যাচারী) হতে পারে, যাকে উপদেশ দেওযা হয়েছে স্বীয় প্রতিপালকের আয়াত সমূহ দ্বারা অত:পর সে উহা হতে বিমুখ হয়েছে? নিশ্চয় আমি অপরাধীদের থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ কারী।” [সূরা সাজদাহ্‌: ২২]

কোন লোক এ সকল বিষয়ে লিপ্ত হলে সে কাফের বলে বিবেচিত হবে চাই সে মজা করার জন্য এ সকল কাজ করুক বা গুরুত্ব সহকারে করুক, সেচ্ছায় করুক বা ভয়ে করুক। অবশ্য কাউকে যদি  বাধ্য করা হয় তবে তার ব্যাপার আলাদ।  এ সমস্ত ইসলাম বিধ্বংশ বিষয় অত্যন্ত মারাত্মক। তার পরও তা ব্যাপকভাবে এসব সংগঠিত হয়ে থাকে। সুতরাং মুসলিম ব্যক্তির উপর অপরিহার্য কর্তব্য হল এ সকল বিষয় থেকে সতর্ক থাকা। আমরা আল্লাহর নিকট তার ক্রোধ অবধারিত কারী বিষয় হতে এবং তাঁর যন্ত্রনা দায়ক শাস্তি হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। সৃষ্টির সেরা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর, তাঁর পরিবারের উপর, সাহাবীগণের উপর আল্লাহ রহমত ও শান্তির ধারা অবতীর্ণ হোক। [এখান থেকেই শাইখুল ইসলাম মুহাম্মাদ বিন সুলায়মান আত তামীমী (রহ:) এর বক্তব্য শেষ]।

উল্লেখিত চতুর্থ প্রকার ইসলাম বিধ্বংশী বিষয়ের অন্তর্ভূক্ত হবে ঐ ব্যক্তি যে বিশ্বাস করে যে, মানুষ যে সমস্ত সংবিধান রচনা করেছে উহা ইসলামী সংবিধানের চেয়েও উত্তম, অথবা উহার সম পর্যায়ের অথবা এই বিশ্বাস করে যে, ঐ সমস্ত মানব রচিত বিধানের নিকট ফায়সালা তলব করা জায়েয, যদিও শরীয়তের বিধানকেই সে উত্তম মনে করে- এধরণের সকল বিশ্বাসই চতুর্থ প্রকার ইসলাম বিধ্বংশী বিষয়ের অন্তর্ভূক্ত।

অনুরূপভাবে যদি কেউ বিশ্বাস করে যে ইসলামের বিধি-বিধান এই বিংশ শতাব্দীতে বাস্তবায়ন যোগ্য নয়। অথবা এই বিশ্বাস করে যে, ইহাই মূলত: মুসলিমদের পশ্চাদ মুখী হওয়ার কারণ। অথবা উহাকে সে স্বীয় প্রতি পালকের সাথে সর্ম্পর্কত করার মধ্যেই সীমিত রাখে, জীবনের অন্যান্য বিষয়ের কোন কর্তৃত্ব নেই বলে ধারণা করে।অর্থাৎ বলে যে শরীয়ত ব্যক্তিগত জিনিস, সমাজ, রাষ্ট বা জীবনের অন্য ক্ষেত্রে শরীয়তের প্রয়োজন নাই তাহলে সেও চতুর্থ প্রকার ইসলাম বিধ্বংশকারী আমল সম্দপনকারী কাফেরদের দলভূক্ত হবে।

অনুরূপ ভাবে চতুর্থ প্রকারে শামিল হবে ঐ ব্যক্তির কথা যে এমনটি ধারণা করে যে, চোরের হাত কাটা, বিবাহিত ব্যাভিচারীকে পাথর মেরে হত্যা করা ইত্যাদী আল্লাহর বিধান বাস্তবায়ন করা আধুনিক যুগের জন্য উপযোগী নয়।

অনুরূপ ভাবে চতুর্থ প্রকারের অন্তর্ভূক্ত ঐ ব্যক্তির কথা, যে বিশ্বাস করে যে বৈষয়িক বিষয় সমূহ এবং দণ্ডবিধি ইত্যাদির ব্যাপারে শরিয়ত ব্যতীত অন্য বিধান দিয়ে ফায়সালা করা জায়েয। যদিও সে এই বিশ্বাস না রাখে যে উহা শরীয়তের বিধান অপেক্ষা উত্তম। (তবুও সে কাফের বলেই গণ্য হবে) কারণ সে এর মাধ্যমে এমন বিষয়কে হালাল করেছে যা আল্লাহ হারাম করেছেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর হারাম কৃত বিধানকে হালাল করবে যার হারাম হওয়া দ্বীন ইসলামে সর্বজন বিদিত। যেমন: ব্যাভিচার করা, মদ্যপান করা, সূদী কারবার করা, আল্লাহর শরীয়ত ব্যতীত অন্য বিধান দ্বারা ফায়সালা করা ইত্যাদী বিষয়কে যে হালাল মনে করবে সে মুসলমানদের সর্ব সম্মতিক্রমে কাফের বলে গণ্য হবে।

আমরা আল্লাহর সমীপে এই কামনা করি, তিনি যেন সকলকে তাঁর সন্তুষ্টি মূলক কাজের তাওফীক দেন এবং আমাদেরকে এবং সমস্ত মুসলিমদেরকে সঠিক পথের হেদায়াত দান করেন। নিশ্চয় তিনি সর্ব শ্রোতা ও নিকটবর্তী। আল্লাহ্‌ তাআলা নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, তাঁর পরিবার বর্গ ও সাহাবীদের উপর রহমত ও শান্তির ধারা অবতীর্ণ করূন।

আমীন!!


Source:https://quraneralo.net/10-nulifiers-of-islam/
Mrs, Anjuara Khanom
Library Assistant Officer,
Daffodil International University
DSC Campus
02224441833/34