গুরুত্বপূর্ণ প্রেজেন্টেশনের আগে:::
একটি ভালো প্রেজেন্টেশনের গুরুত্ব কতখানি, তা দক্ষ নির্বাহী মাত্রই জানেন। ভালো প্রেজেন্টেশন তৈরির জন্য ভালো গবেষণা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। তাই প্রতিটি প্রেজেন্টেশনই আলাদাভাবে গুরুত্ব বহন করে। প্রতিটি প্রেজেন্টেশনই একেকটি নতুন চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আপনার জন্য দশ পরামর্শ_
এক.
প্রেজেন্টেশনের বিষয়, আঙ্গিক, উদ্দেশ্য আর গুরুত্বের ওপর প্রস্তুতি নির্ভর করে। আপনি প্রেজেন্টেশনে কী কী বিষয় বলতে চাচ্ছেন সে সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা দরকার। শুধু ভাবনায় বা ধারণায় নয়, শুরু থেকেই কাগজে-কলমে পরিকল্পনা করুন।
দুই.
বিষয়গুলো গুরুত্ব অনুযায়ী সাজিয়েছেন, নাকি কৌশল অনুযায়ী সাজিয়েছেন? যেভাবেই সাজানো হোক না কেন, সাজানোর পেছনের কারণটা যুক্তিসংগত হওয়া দরকার। প্রেজেন্টেশনের দুর্বল আর শক্তিশালী জায়গাগুলো চিহ্নিত করে সাজানো দরকার।
তিন.
বিষয়গুলো যেভাবে মনে আসে সেভাবেই মনে মনে একবার বলুন। এবার গুরুত্ব ও কৌশল অনুযায়ী সাজিয়ে বলুন। এরপর সাজানো বিষয়গুলো ক্রমান্বয়ে লিখে ফেলুন। মাথা খাটাতে হবে_আপনি কেন এভাবে সাজাতে চাচ্ছেন? এভাবে সাজালে আপনার উদ্দেশ্য কতটা সফল হতে পারে?
চার.
যা বলতে চাইছেন তাকে আরো হৃদয়গ্রাহী করে তুলতে কৌশল ঠিক করুন। বক্তব্যের পাশাপাশি তথ্য-উপাত্ত, প্রমাণ, দলিল, উৎসসহ হাজির করুন। এ বিষয়গুলো একে একে লিখুন। এরপর পরিকল্পনা করুন। প্রেজেন্টেশন যে শুধু পাওয়ার পয়েন্টেই হতে হবে এমন তো কথা নেই! বিষয় ও লক্ষ্যভেদে হাজারো সৃষ্টিশীল উপায় ব্যবহার করা যেতে পারে। একঘেয়ে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের সঙ্গে যদি সৃষ্টিশীল কিছু যোগ করতে পারেন তাহলে প্রেজেন্টেশন আরো হৃদয়গ্রাহী ও উপভোগ্য হতে পারে।
পাঁচ.
একটা খসড়া পরিকল্পনা তৈরির পর প্রথমে রিহার্সাল শুরু করুন। দেখবেন কিছু জায়গা ঠিক ভালো লাগছে না। সেগুলো আবার পরিবর্তন করতে বসুন। দ্বিতীয় খসড়া পরিকল্পনা করুন। আবার রিহার্সাল করুন। এবারও কিছু জায়গা পাবেন, যা ঠিক আপনার মনের মতো করে হলো না। এবার একটু বিরতি নিন। এক কাপ চা বা শরবত খান। ভাবনার ব্যাকগ্রাউন্ডে গান শুনুন। তবে সাবধান, মনোযোগ যাতে পুরো বিচ্ছিন্ন না হয়ে যায়। এবার তৃতীয় খসড়া তৈরির কাজে হাত দিন। নিজেই টের পাবেন পার্থক্যটা কোথায়।
ছয়.
তৃতীয় খসড়া রিহার্সাল করার সময় পুরো প্রেজেন্টেশন অডিও ট্র্যাকসহ ভিডিও রেকর্ড করুন। এবার দেখুন দৃশ্যগত সম্পাদনার জায়গাগুলো কোথায় কোথায়। প্রয়োজনীয় ব্যক্তি বা সহকর্মীদের মতামত নিন, এরপর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করুন।
সাত.
খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রেজেন্টেশন হলে সহকর্মীদের কয়েকজনকে মিটিং রুমে ডাকুন (অথবা একদম ভিন্ন ক্ষেত্রের বন্ধুর মতামত নিতে পারেন)। প্রথমে আপনার প্রেজেন্টেশনের বিষয় ও উদ্দেশ্য সংক্ষেপে তাঁদের বুঝিয়ে বলুন। এবার তাঁদের সামনে আপনার প্রেজেন্টেশন তুলে ধরুন। এরপর তাঁদের মতামত নিন। তাঁদের কাছে আইডিয়া-সাহায্যও নিতে পারেন। দেখবেন, তাঁদের কাছ থেকে যা আপনি কল্পনাও করেননি, এমন দারুণ কিছু আইডিয়া বা দিক পেয়ে গেছেন।
আট.
সহকর্মী বা বন্ধুদের যেকোনো মতামত সহজভাবে নিন। ভাবুন, কোনো কিছু নতুন পাচ্ছেন কি না, যা আপনার প্রেজেন্টেশনকে আরো শক্তিশালী করতে পারে। তাঁদের প্রশ্ন করুন এবং তাঁদের মতামত বিশ্লেষণ করে ভালোভাবে বুঝে নিন, কী করা দরকার।
নয়.
টানা কাজ না করে চূড়ান্ত পর্যায়ের আগে কয়েক দিন বিরতি নিন। তখন এই প্রেজেন্টেশন নিয়ে একদম ভাববেন না। দু-এক দিন পর আবার বসুন। দেখুন, নতুন করে আরো কিছু মাথায় আসছে কি না।
দশ.
সবচেয়ে দরকার আপনার আত্মবিশ্বাস, যা প্রেজেন্টেশনের সময় আপনার কণ্ঠে, চোখেমুখে, সারা শরীরে ফুটে উঠবে। মনে রাখবেন, আপনার পোশাক-পরিচ্ছদ, অঙ্গভঙ্গি, স্থান-কাল-পাত্র, যার উদ্দেশে প্রেজেন্টেশন করছেন তার মুড, রুমের তাপমাত্রা, শব্দমাত্রা, নির্ঝঞ্ঝাট যান্ত্রিক ব্যবস্থা_এ সব কিছুই প্রেজেন্টেশনের উপাদান। কোথাও এতটুকু হেরফের হলে তা আপনার প্রেজেন্টেশনের লক্ষ্য অর্জনে প্রভাব ফেলবে।
Original Source: kalerkantho.com