Bengali to Brail Converter Software: An achievement of Bangladeshi Scientist

Author Topic: Bengali to Brail Converter Software: An achievement of Bangladeshi Scientist  (Read 1323 times)

Offline najnin

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 134
  • Test
    • View Profile
পৃথিবীতে কিছু কিছু মানুষ থাকেন যাদের কর্ম পৃথিবীটাকে, সমাজটাকে অনেক বদলে দেয়। সেরকম একজন মানুষ ডঃ আখতার স্যার।  সেদিন কথা বলছিলাম উনার সাথে, গিয়েছিলাম নিজের ডিপার্টমেন্টের একটা প্রয়োজনে। পাশের ডিপার্টমেন্ট সিএসই-র প্রফেসর এবং বিভাগীয় প্রধান তিনি। নানান কথার মাঝেই জানতে পারলাম উনার জীবনে করা একটি উল্লেখযোগ্য কাজ যা যেকোন গবেষকের জন্য একটি অনুপ্রেরণার বিষয়। গল্পটা উনি বলছিলেন এভাবেই, প্রায় দশ বারো বছর আগে এক ছড়া বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের অনুষ্ঠানে গিয়েই তার মনের ভিতরে দারূণ আলোড়ন সৃষ্টি হয়। বইটি ছিল দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য ব্রেইল পদ্ধতিতে লেখা বাংলায় প্রথম ছড়ার বই। এর আগে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য বাংলায় কোন সাহিত্যের বই ছিল না। তাছাড়া এই বইটি কম্পোজ করতে অনেক কষ্ট হয়েছিল, প্রায় এক মাস লেগেছিল ব্রেইল পদ্ধতিতে বইটি লিখতে। ব্রেইল পদ্ধতিতে কম্পিঊটারে এডিটিং এবং কম্পোজ করা ছিল অত্যন্ত দূরূহ একটি কাজ। এ ব্যাপারটি শুনেই আখতার স্যার অনেক বেশি আবেগে আপ্লুত হয়েছিলেন। এটা নিয়ে ভাবতে লাগলেন কিভাবে কি করা যায়। কিছুদিন পর এমআইএসটির কিছু ছাত্র আসলো উনার কাছে থিসিসের কাজ করতে। উনিও সে সুযোগটা আর হাতছাড়া করলেন না। উঠে পড়ে লেগে গেলেন কিভাবে ব্রেইল ভাষাকে সহজে বাংলায় পরিণত করা যায়। কাজটি মোটেও সহজসাধ্য কিছু ছিল না। উনি এবং ক্ষুদে গবেষক দল প্রথমে ব্রেইল ভাষাটি রপ্ত করলেন, সেটির ব্যকরণ শিখলেন। তারপর ডিজিটাল ইমেজ প্রসেসিং-এর বিশেষ শাখা প্যাটার্ন রিকগনিশনের মাধ্যমে তৈরী করতে লাগলেন ব্রেইল থেকে বাংলা অনুবাদ করার ডিজিটাল টুলস। এর মাঝে স্যার জার্মানে গিয়েছিলেন পোস্ট ডক্টরেটের জন্য। সেখানে গিয়েও তার কাজ থেমে থাকেনি। স্কাইপি, ই-মেইল ইত্যাদি নানা ইলেক্ট্রনিক্স যোগাযোগ মাধ্যমের সহায়তায় ছাত্রদেরকে তিনি তত্ত্বাবধান করে গেছেন। অবশেষে তার দল একটি পূর্নাংগ সফটওয়্যার তৈরী করতে সমর্থ হয় যেটা দিয়ে খুব সহজেই ব্রেইল থেকে বাংলা বা বাংলা থেকে ব্রেইল এ লেখা অনুবাদ করা যায়। এ কাজের অংশ হিসেবে প্রথমেই তারা ডঃ মুহম্মদ জাফর ইকবালের 'মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস' বইটি ব্রেইল ভাষায় অন্নুবাদ করে ফেলেন। যেটি পেয়ে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মানুষেরা অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন, অনেক আগ্রহ নিয়ে তারা বইটি পড়েন। তাদের মনে এক ভীষণ ক্ষুধা ছিল সাহিত্য পড়ার, সেটা কিছুটা হলেও মিটেছে এই বইটি হাতে পেয়ে।
এর পর আর থেমে থাকেনি বিষয়টি, বেঙ্গেলনেসিস প্রকাশনা সংস্থা থেকে প্রতি মাসে যে 'জল পড়ে পাতা নড়ে' সাহিত্যপাতাটি বের হয়, তার ব্রেইল ভার্শনও বের হয় স্যারের করা এই সফটওয়্যারটি দিয়ে, স্যার তাদের বিনামূল্যেই দিয়েছেন এটি। তবে শর্ত দিয়েছেন প্রতিটি দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সংস্থায় যেন সফটওয়্যারটি বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়। এছাড়া জাতীয় শিক্ষাবোর্ড নবম এবং দশম শ্রেণীর সব পাঠ্যবই এই সফটওয়্যার দিয়ে ব্রেইলে রূপান্তর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং সেগুলো ছাপানোর কাজও এগিয়ে চলছে। এছাড়া ডঃ আখতার স্যার এবং তার ছাত্রদের এবিষয়ের উপরে লেখা দুটো আন্তর্জাতিক জার্নালও প্রকাশ করেছেন। একটি আন্তর্জাতিক মানের বইয়ের চ্যাপ্টার তৈরী হয়েছে এ সফটওয়্যারটির এলগরিদম নিয়ে। এদিকে জাফর ইকবাল স্যারের তত্ত্বাবধানে আরেকদল ক্ষুদে গবেষক কাজে নেমেছেন কি করে সহজ উপায়ে ব্রেইল সাশ্রয়ী প্রিন্টার তৈরী করা যায়।
এটিএন বাংলাতে স্যারের একটি সাক্ষাৎকার প্রচারিত হয়েছে, এছাড়াও একটি সেমিনারে উনি এই কাজটি সবার সামনে তুলে ধরেছেন। আসলে এই ধরণের দেশীয় গবেষণাকর্ম আমাদের উৎসাহ জোগায় কিভাবে নিজেদের প্রযুক্তিজ্ঞান দেশের প্রয়োজনে লাগানো যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাব্বানী স্যার, বুয়েটের কায়কোবাদ স্যার, সাস্টের জাফর ইকবাল স্যার, ডেফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের আখতার স্যারের মতো মানুষেরা আমাদের মতো নবীশ গবেষকদের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবেন।
« Last Edit: March 16, 2013, 09:05:57 AM by Badshah Mamun »