রাসূল(সাঃ) এর মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত [ ৬২০ খ্রিস্টাব্দ] ছিল ইসলামে শান্তি, সৌহার্দ্য, নিরাপত্তা, বিশ্বাস স্থাপনের এক অমূল্য নিদর্শন! যখন কুরাইশরা রাসূলের ইসলাম পালনে নানাবিধভাবে বাঁধাপ্রদান করছিল, নওমুসলিমদের উপর অকথ্য নির্যাতন চালাচ্ছিল, তখন মহান আল্লাহতাআলার নির্দেশে কোনরকম আক্রমণাত্মক অবস্থানে না গিয়ে মক্কা থেকে সরে গিয়ে মদিনায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। অথচ তখন নওমুসলিমদের তালিকায় ছিলেন ওমর(রাঃ) [যিনি ৬১৬ খ্রিস্টাব্দে ইসলাম কবুল করেন], হামযা (রাঃ) র মতো যোদ্ধা সাহাবী। এখানে উল্লেখ্য যে খোদ ইবলিশ শয়তান পর্যন্ত ওমর(রাঃ)কে ভয় পেতেন, উনি যে রাস্তায় হাঁটতেন, ইবলিশ সেই রাস্তার ধারে কাছে যেতেন না, আর উনি ছিলেন প্রকাশ্য মুসলিম। হামযা(রাঃ) পরিচিত হয়েছিলেন আল্লাহর সিংহ হিসেবে। শেষ পর্যন্ত ইসলামের জন্য জীবন দিয়ে তিনি হয়েছিলেন ইসলামের সকল শহীদের ‘নেতা’! অথচ এরকম আরো অনেক যোদ্ধা থাকা সত্ত্বেও আল্লাহতাআলা তখনই যুদ্ধ করার অনুমতি দেননি।
আরো ভাল কিছু অপেক্ষা করছিল আমাদের নবীকরীম(সাঃ) এর জন্য। মদিনায় আসার পরপরই মিনায় ১২ জন মদিনাবাসী রাসূলের (সাঃ) হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেছিল, সেসময়ে তিনি তার বক্তব্যে সাতটি মূল বিষয়ের কথা বলেছেন, যা বিভিন্ন ঐতিহাসিক গ্রন্থে স্থান পেয়েছে,
১। সকল বিশ্বাস এবং আনুগত্য কেবল আল্লাহতাআলার জন্য
২। জীবনে কখনো চুরি করবে না
৩। ব্যভিচার করবে না
৪। হত্যা করবে না
৫। কাউকে অপবাদ দিও না
৬। গীবত করো না
৭। ভাল কাজের চর্চা করো, এবং মন্দ থেকে বিরত থাক।
[সূত্রঃ ইবনে হিশাম, সিরাতুন্নবী, ভলিউম ২, পৃষ্ঠা ২৮১]
এই সাতটি পয়েন্টের মধ্যে কেবল একটিই ধর্মীয় আকীদাবিষয়ক। আর বাকী ছয়টিই মানুষের নৈতিক আচরণকে পুনর্গঠন ও সংশোধন করার জন্যে বলা হয়েছে। এসবগুলো সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বলা হয়েছে, এবং এগুলো ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সবার জন্যই সমানভাবেই প্রযোজ্য। এরপর রাসূল (সাঃ) প্রথম প্রকাশ্যে বক্তৃতা দিয়েছিলেন মদিনা যাবার পথে কুবার এক মসজিদে, হিজরতের পর প্রথম শুক্রবার ছিল সেদিন। রাসূল(সাঃ) সকল মুসলিমদের জন্য অবশ্যকরণীয় কিছু বিষয়ে বললেন,
১। আল্লাহর উপাসনা করা,
২। সত্যবাদী হওয়া
৩। সমাজের সকলকে ভালোবাসা
৪। সকল প্রতিজ্ঞা ও চুক্তি রক্ষা করা,
৫। হক ও বাতিলের পার্থক্য নিরূপণ করা,
৬। সদাচরণ করা
[সূত্রঃ ইবনে হিশাম, সিরাতুন্নবী, ভলিউম ৩, পৃষ্ঠা ৩০]
কৃতজ্ঞতাঃ শায়খুল ইসলাম ডঃ মুহম্মদ তাহির উল ক্বাদরী র বিশ্লেষণধর্মী লেখা ‘মদিনা সনদ, ৬৩ সাংবিধানিক আর্টিকেল’।
চলবে…