Religion & Belief (Alor Pothay) > Allah: My belief

সভায়/আড্ডায়/বিতর্কে ব্যক্তিআচরণ তথা পাবলিক ইন্টারকেশান কেমন হওয়া ভাল

(1/1)

najnin:
মানবজীবনের নানা পর্যায়ে, বিভিন্ন কাজে-কর্মে কিভাবে কথা বলতে হবে, কিভাবে আচরণ করতে হবে, কি কি নিয়ম মানতে হবে এসব নিয়ে কুরআনে এবং হাদিসে বিস্তারিতভাবে অনেক কিছুই বলা আছে।

এই যেমন কুরআনে বলা আছে, তোমাদের গলার স্বর নিচুর কর…সবচেয়ে নিকৃষ্ট স্বর হচ্ছে গাধার স্বর…

মুসলিম শরীফে বর্ণিত আছে যে, একদা রাসূল(সাঃ ) তাঁর সাহাবিদের জিজ্ঞ্যেস করলেন, বল তো তোমাদের মাঝে দেউলিয়া কে? একজন জবাব দিলেন, যার কোন টাকা পয়সা নেই, সম্পদ নেই সেই-ই দেউলিয়া। রাসূল জবাব দিলেন, না, আমার জাতির মাঝে যে ব্যাক্তি কেয়ামতের দিন নামাজ, রোযা, জাকাত নিয়ে আল্লাহ্‌র সামনে দাঁড়াবে কিন্তু সে দুনিয়াতে গালিগালাজ, খারাপ আচরণ, অপরকে অপমান করা, আঘাত করা এসব কাজে অভ্যস্ত ছিল সে-ই হবে দেউলিয়া। কারণ, তার দ্বারা আঘাতপ্রাপ্তরা তার ভাল কাজগুলোর বিনিময়ে পুরষ্কারপ্রাপ্ত হবে, এদিকে সে তাদের পাপের বোঝা বহন করবে এবং শাস্তিপ্রাপ্ত হবে।

কি ভীষণ কথা! আমরা কয়জনে এ কথাগুলো মনে রাখতে পারি?

তাই আজকের পোস্টে ইসলামের আলোকে কোন সভাস্থলে বা গ্রুপ আড্ডার আচরণবিধি নিয়ে কিছু কথা বলবো। এবং এটা ব্লগীয় বা ফোরামের পরিবেশের জন্যও প্রাসঙ্গিক হবে আশা করি।

উপযুক্ত আলোচনার বিষয়বস্তু নির্ধারনঃ

যখন কেউ কোথাও কথা বলবে, তাকে খেয়াল রাখতে হবে ঐখানে ঐ মুহুর্তে ঠিক কি বিষয়ে কথা হচ্ছে, সেই বিষয়েই কথা বলা উচিত এবং সংক্ষেপে বলা উচিত। যদি সে সেই আলোচনাসভায় বা আড্ডাস্থলে জুনিয়র লেভেলের কেউ হয় তাহলে তার মতামত জানতে না চাওয়া পর্যন্ত কথা বলা ঠিক নয়। তবে যদি এমন হয় যে তার কিছু কথা বা মতামত সেখানে কোন ইতিবাচক প্রভাব রাখবে তাহলে সে তা বিনয়ের সাথে বলতে পারে। কখনোই অনেক লম্বা সময় ধরে কথা বলা ঠিক নয়। আর কথা বলতে হবে পর্যাপ্ত স্বরে, স্পষ্ট উচ্চারণে। বুখারি শরীফে বর্ণিত হাদিসে বলা আছে, রাসূল(সাঃ ) এমনভাবে কথা বলতেন যে তার প্রতিটা শব্দ গোণা যেত। আর কথাগুলো ছিল সুস্পষ্ট এবং গোছালো। খুব বেশিও বলতেন না, আবার কমও না। খুব উচ্চস্বরে বা রাগতস্বরে কথা বলা পছন্দ করতেন না।

যখন কোন গল্প-গুজব বা আলোচনার মাঝখানে আজান শোনা যাবে, সাথে সাথে আলোচনা বন্ধ করে মনোযোগ সহকারে আযান শুনতে হবে এবং তার জবাব দিতে হবে। আজান হলো আত্মার খাবার যা কিনা বিশ্বাস ও আনুগত্যের দিকে আহবান করে। আমরা অনেক সময়ই গল্পে এতো মশগুল থাকি যে কখন যে আজান হয়ে যায় টেরই পাই না। আর বিদেশের মাটিতে মসজিদের সেই আজানের ধ্বনি শোনার তো তেমন সুযোগই হয় না। যদি পিসির সামনে বসে থাকা হয় আর কানে হেডফোন লাগানো থাকে সময়মতো তাহলেই কেবল শোনার ভাগ্য হয়।

পর্যাপ্ত স্বরে কথা বলাঃ

আগের প্যারাতেও এ নিয়ে কিছু কথা বলা হয়েছে। যে কোন মানুষ ঘরে-বাইরে গ্রুপ আড্ডায় বা একাকি যে কোন অবস্থাতেই থাকুক না কেন নিচুস্বরে, স্পষ্ট উচ্চারণে কথা বলা উচিত, আর তা যেন হয় শ্রুতিমধুর। উচ্চস্বরে কথা বলাটা বেশ অশোভনীয় এবং এতে করে শ্রোতাদের প্রতি এক ধরণের অশ্রদ্ধাও প্রকাশ পায়। এবং বন্ধু বলি, কলিগ বলি, সিনিয়র বা জুনিয়র কেউ, অথবা অপরিচিত কেউ, সবার ক্ষেত্রেই এটা মনে রাখতে হবে। ইমাম বুখারী বর্ণনা করেছেন আবদুল্লাহ্‌ বিন আল জুবায়ের বলেছেন যখন ওমর(রাঃ ), রাসূল(সাঃ )-এর সাথে কোন কথা বলতেন তখন উনি এতোটাই নিচুস্বরে কথা বলতেন যে রাসূলের শুনতে কষ্ট হতো।

বন্তব্য শোনার অভ্যাস গড়ে তোলাঃ

যখন কেউ কোন বিষয়ে কথা বলা শুরু করে, তখন সে বিষয়ে যাকে বলা হচ্ছে তার জানা থাকলেও চুপ করে শুনে যাওয়া উচিত যেন সে এইমাত্রই কথাগুলো শুনছে। ইমাম মালিক, আল-লাইথ বিন সা’দ এবং আল-থাওরীর সংগী ইমাম আবদুল্লাহ্‌ বিন ওয়াহাব আল কুরেশী আল-মারসী বলেছেন, কখনো কখনো কেউ আমাকে কোন কথা বলতে এসেছে যা আমি তার বাবা-মায়ের বিয়ের আগে শুনেছি, তবুও আমি এমন মনোযোগের সেগুলো শুনেছি যেন এই প্রথম শুনলাম। আসলে কারো কথার মাঝে বাঁধা দেয়াটা একধরণের রূঢ়তা ও বাজে আচরণের প্রকাশ।
ভালভাবে কথা বলার পাশাপাশি ভালভাবে শোনাও চর্চার বিষয়। আর ভালভাবে শোনা মানে হলো আই কনটাক্ট রক্ষা করা, বক্তাকে তার বক্তব্য শেষ করতে দেয়া এবং নিজেকে বক্তার বক্তব্যে বাঁধা দেয়া থেকে বিরত রাখা।

আলোচনা এবং বিতর্কঃ

কেউ যদি কোন আলাপচারিতায় কোন আলোচনা বুঝতে না পারে সে যেন ধৈর্য সহকারে বক্তার বক্তব্য শেষ হবার জন্য অপেক্ষা করে। তারপর যথাযথভাবে প্রাথমিক কিছু ভূমিকাসহ বিনয়ের সাথে প্রশ্ন উত্থাপন করবে। তবে বক্তব্যের মাঝে বাঁধা দেয়া ঠিক নয়। আবার স্থানটি যদি হয় ক্লাশরুম বা কোন মতবিনিময় সভা, সেখানে কেবল শুনে গেলেই চলবে না, একেকটা টপিক শেষে প্রশ্ন করা, আলোচনা করা, বিতর্ক করা বাঞ্ছনীয়। এতে করে জ্ঞানের দ্বার উন্মুক্ত হয়। শুধুই অনুসরণ করার চেয়ে প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করে কোন বিষয়ে গভীরভাবে জানা বা প্রাসঙ্গিক বিতর্ক উত্থাপন করার মাধ্যমেই প্রকৃত জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব।

যদি কারো সহপাঠী বা সহকর্মী কোন কিছু না বুঝলে তার সিনিয়র কলিগ বা স্কলারকে কিছু জিজ্ঞ্যেস করে জানতে, তাহলে তারও সেটা মনোযোগ দিয়ে শোনা উচিত। হয়তো সে ব্যাপারটা আগে থেকেই কিছু জানে, কিন্তু তবুও বারবার শোনার ফলে কোন বিষয়ে জ্ঞানের গভীরতা আরো বাড়ে, বিষয়বস্তু সম্বন্ধে ধারণা আরো স্বচ্ছ হয়।

যখন বড় কেউ বা কোন স্কলার কোন বিষয় নিয়ে কথা বলেন, তখন সেতা মনোযোগ দিয়ে শুনতে হয়। ওইস সময়ে পাশেরজনের সাথে গল্পে মেতে যাওয়া ঠিক নয়।
কারো কোন বিষয়ে ভালোভাবে জানা না থাকলে তা নিয়ে ভুল কনফিডেন্স দেখানো ঠিক নয় বা অযথা তর্কে জড়ানো ঠিক নয়। কারো সাথে কোন বিষয়ে মতপার্থক্য দেখা দিলে কখনো বিপরীত মতের মানুষের সাথে রূঢ় আচরণ করা ঠিক নয়। কাউকে তার ভিন্নমত পোষণের জন্য অবজ্ঞা করা ঠিক নয়। কারো কোন কথায় যদি ভুল ধরা পড়ে সেটা বিনয়ের সাথে বুঝিয়ে বলা উচিত।কারো ভুল প্রমাণিত হলে তাকে তিরষ্কার করা ঠিক নয়। আমাদের সবারই আচার-আচরণে দয়ালু এবং কথাবার্তায় ভদ্রতা বজায় রাখতে হবে।

আল্লাহ্‌র নামে কসম খাওয়াঃ

অনেকের মাঝে এ অভ্যাস আছে যে কিছু বলার সময়ে আল্লাহ্‌র নামে কসম কাটে। আবার অনেকে খুব সহজেই কথায় কথায় প্রতিজ্ঞা করে। এগুলো খুবই বাজে অভ্যাস। বলা যায় না, কারো হয়তো পদস্খলন হতে পারে, বা পূর্বের অবস্থান থেকে সরে যেতে পারে। তাহলে এটা ভীষণ রকমের গোনাহের কাজ হয়। রাসূল (সাঃ ) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌তাআলা ও হাশর দিবসের ভয় রাখে, সে যেন হয় ভাল কথা বলে, না হয় চুপ থাকে। (বুখারি, মুসলিম)

প্রশ্নের জবাব দেয়াঃ

কেউ কোন প্রশ্ন করলে তাড়াহুড়ো করে বা রূঢ়ভাবে তার জবাব দেয়া উচিত নয়। ভাল হচ্ছে কাউকে কোন ব্যাপারে জিজ্ঞ্যেস করা না হলে সে বিষয়ে চুপ থাকা। এটাই উৎকৃষ্ট পন্থা। এতে করে তার বক্তব্য শোনার প্রতি মানুষের আগ্রহ তৈরী হয় এবং শ্রদ্ধা বাড়ে।
সাহাবী মুজাহিদ ইবনে জাবর বলেছেন, জ্ঞানী লোকমান(আঃ ) তার পুত্রকে উপদেশ দিয়েছেন যে যখন কাউকে কোন প্রশ্ন করা হয়, তখন তুমি আগ বাড়িয়ে তার কোন জবাব দিবে না যেন এটা কোন পুরষ্কার অর্জনের প্রতিযোগিতা। এতে করে যাকে প্রশ্ন করা হচ্ছে তাকে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়, অন্যদিকে প্রশ্নকারীকেও বিব্রত করা হয়। এবং এতে করে তোমার বোকামি এবং খারাপ আচরণের প্রতিই মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়।

মোটামুটি এই হলো কোন জনসমাগমে বা আড্ডাস্থলে বা সভাস্থলে কিভাবে ইসলামের শেখানো পন্থায় আচরণ করতে হবে বা কথা বলতে হবে। আমরা অনেকেই জেনে না জেনে উপরে উল্লেখিত এক বা একাধিক ভুলগুলো করে ফেলি। যেমন আমার নিজের ক্ষেত্রেই দেখেছি খুব ঘরোয়া পরিবেশে শোনার আদব-কায়দা সবসময়ে মেনে চলতে পারি না। কেউ যদি কোন পুরোনো বিষয় নিয়ে বার বার কথা বলতে শুরু করে, অনেক সময়েই আমি বলে ফেলি, আরে জানি তো! এক কথা শুনতে শুনতে কান পঁচে গেল, এটা তো সেই ১৯৫৩ সালের কথা………

আল্লাহ্‌তাআলা আমাদের সবাইকে আরো ধৈর্যশীল হতে সাহায্য করুক। আমীন।

কৃতজ্ঞতা:

১। Islamic manners: Shaykh Abdul Fattah Abu Guddah

২। Aspects of Islamic Etiquette

russellmitu:
GOOD

Navigation

[0] Message Index

Go to full version