আইনের সহায়তা কম-বেশি সবারই দরকার হয়। কিন্তু সহায়তা নেওয়ার আগে প্রথমই ভাবনায় আসে আর্থিক দিকটির কথা। তাই তো সরকার চালু করেছে বিনা মূল্যে আইনি সহায়তা সেবা। এ জন্য ২০০০ সালে প্রণয়ন করা হয়েছে ‘আইনগত সহায়তা প্রদান আইন ২০০০’। এ আইনের আওতায় প্রণীত হয়েছে বিধিমালা। প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা। প্রতিটি জেলায় রয়েছে এর জেলা কমিটি। বর্তমানে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়েও আইনি সহায়তা কমিটি রয়েছে। আইন অনুযায়ী, নির্ধারিত ব্যক্তি, যারা সত্যিকার অর্থে দরিদ্র বা সহায়-সম্বলহীন, তারাই কেবল এ সহায়তা পাওয়ার যোগ্য। এ সেবা পেতে রয়েছে নির্ধারিত পদ্ধতি। এ পদ্ধতিগুলো মেনেই এ সেবা পাওয়ার জন্য আবেদন করতে হবে।
কারা আইনি সহায়তা পাবেন:
যেকোনো অসচ্ছল ব্যক্তি, যাঁর বার্ষিক গড় আয় ৫০ হাজার টাকার ঊর্ধ্বে নয়
কর্মক্ষম নন, আংশিক কর্মক্ষম বা কর্মহীন মুক্তিযোদ্ধা, যাঁর বার্ষিক গড় আয় ৭৫ হাজার টাকার বেশি নয়
বয়স্ক ভাতা পাচ্ছেন এমন ব্যক্তি, ভিজিডি কার্ডধারী দুস্থ মা
পাচারের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত নারী বা শিশু, দুর্বৃত্ত দ্বারা অ্যাসিডদগ্ধ নারী বা শিশু
অসচ্ছল বিধবা, স্বামী-পরিত্যক্তা ও দুস্থ নারী
উপার্জনে অক্ষম ও সহায়-সম্বলহীন প্রতিবন্ধী
আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে আদালতে অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে অক্ষম ব্যক্তি
বিনা বিচারে আটক ব্যক্তি, যিনি আত্মপক্ষ সমর্থন করতে অক্ষম
আদালত কর্তৃক ঘোষিত ‘অসচ্ছল’ ব্যক্তি
জেল কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সুপারিশকৃত ‘অসচ্ছল’ ব্যক্তি
যেসব মামলায় আইনি সহায়তা দেওয়া হয়:
দেওয়ানি ও ফৌজদারি উভয় মামলাতেই আইনি সহায়তা প্রদান করা হয়। সাধারণত স্ত্রীর বিনা অনুমতিতে স্বামী বিয়ে করলে, স্বামী শারীরিক নির্যাতন করলে, যৌতুক দাবি বা যৌতুকের জন্য নির্যাতন, অ্যাসিড নিক্ষেপ, পাচার, অপহরণ, ধর্ষণ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক আটক বা গ্রেপ্তারসংক্রান্ত যেকোনো ফৌজদারি মামলায় আইনি সহায়তা দেওয়া হয়। এ ছাড়া দেওয়ানি মামলার মধ্যে সন্তানের অভিভাবকত্ব, ভরণপোষণ, দেনমোহর আদায়, বিবাহবিচ্ছেদ, সম্পত্তির দখল পুনরুদ্ধার, দলিল বাতিল, স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা, সম্পত্তি বণ্টন বা বাঁটোয়ারা, ঘোষণামূলক মামলা ও চুক্তিসংক্রান্ত মামলার ক্ষেত্রে বিনা মূল্যে আইনি সহায়তা দেওয়া হয়।
কীভাবে আবেদন করবেন, কোথায় করবেন:
প্রতিটি জেলা আদালতে আইনগত সহায়তা কার্যালয় রয়েছে। সেখান থেকে আবেদনপত্র সংগ্রহ করে সরাসরি আবেদন করা যাবে। জেলখানায় অবস্থিত কারা কর্মকর্তা ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদকের কার্যালয়েও আবেদনপত্র পাওয়া যাবে। এ ছাড়া প্রতিটি জেলা আদালতের বেঞ্চ সহকারী (পেশকার) অথবা জাতীয় মহিলা সংস্থার জেলা ও উপজেলা কার্যালয়েও আবেদন ফরম পাওয়া যায়। এই আবেদন ফরম পূরণ করে জেলা আইনগত সহায়তা কার্যালয়ে জমা দিতে হবে। এ আবেদন যাচাইয়ের পর আবেদনকারীর পক্ষে আইনজীবী নিয়োগের মাধ্যমে সরকারি আইনি সহায়তা দেওয়া হয়।
লেখক: মো.জসিম উদ্দিন,সহকারী পরিচালক,জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা
Source:
http://www.prothom-alo.com/detail/date/2013-05-15/news/352191