কারখানায় কাজ করা অবস্থায় কোনো শ্রমিক দুর্ঘটনার শিকার হলে, আহত কিংবা নিহত শ্রমিকদের অধিকার রয়েছে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার। সব শ্রমিকই শ্রম আইন অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ পাওয়ার হকদার। ২৪ এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজায় ভবনধসে শত শত পোশাকশ্রমিক যে দুর্ঘটনার শিকার হলেন, তাঁরাও এর বাইরে নন।
শ্রম আইন অনুযায়ী কোনো দুর্ঘটনার কারণে শ্রমিকের ক্ষতি হলে মালিক ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য থাকবেন। দুর্ঘটনায় কোনো শ্রমিকের মৃত্যু ঘটলে ক্ষতিপূরণ হিসেবে তাঁর পরিবার পাবে এক লাখ টাকা। কোনো শ্রমিক স্থায়ী পঙ্গুত্ব বরণ করলে এক লাখ ২৫ হাজার টাকা পাবেন। যদি কোনো শ্রমিকের অস্থায়ী অক্ষমতা ঘটে, তাহলে মাসিক হিসাবে ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে, যার মেয়াদ হবে সুস্থ হওয়ার সময় পর্যন্ত কিংবা এক বছর। এ ক্ষতিপূরণের পরিমাণ হবে প্রথম দুই মাসের জন্য মাসিক মজুরির সমান এবং পরবর্তী মাস থেকে মাসিক মজুরির অর্ধেক। যদি কোনো শ্রমিক পেশাগত কারণে অসুস্থ হন তাহলে অসুস্থ থাকাকালীন অবস্থায় মাসিক মজুরির অর্ধেক হারে প্রদান করতে হবে, তবে তা দুই বছরের বেশি সময়ের জন্য দেওয়া যাবে না।
শ্রম আদালতে চাওয়া যাবে ক্ষতিপূরণ
মালিককে ক্ষতিপূরণ অর্থ দিয়ে পরিশোধ করতে হবে এবং মালিক তা না দিলে শ্রম আদালতের মাধ্যমে তাঁকে পরিশোধ করতে বাধ্য করা যাবে। ক্ষতিপূরণের দাবি নিয়ে কোনো আহত শ্রমিক বা নিহত শ্রমিকের উত্তরাধিকারীরা শ্রম আদালতের দ্বারস্থ হতে পারেন। কোনো ক্ষতিপূরণের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত সেই মালিকের কাছে একটি নোটিশ পাঠাবেন। নোটিশ জারির ৩০ দিনের মধ্যে মালিককে নির্ধারিত ফরমে শ্রমিকের মৃত্যুর কারণ, পরিস্থিতি ও তিনি ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য কি না, তা উল্লেখ করে আদালতের কাছে জমা দেবেন। যদি তিনি মনে করেন যে ক্ষতিপূরণ দিতে তিনি বাধ্য, তবে নোটিশ জারির ৩০ দিনের মধ্যে তা জমা দেবেন। শ্রমিকের ক্ষতিপূরণ আদালতে জমা দিতে আদালত আদেশ দেবেন। শ্রমিক কিংবা শ্রমিকের প্রতিনিধিরা এই টাকা আদালত থেকে গ্রহণ করবেন। কোনো মালিক যদি নির্ধারিত ক্ষতিপূরণ প্রদান না করেন, তাহলে আদালত নোটিশ প্রদান করবেন ও নির্ধারিত টাকার অতিরিক্ত টাকা প্রদানের আদেশ দিতে পারেন। আইন অনুযায়ী কোনো কারখানা দুর্ঘটনার কারণে কোনো শ্রমিকের মৃত্যু ঘটলে দুর্ঘটনা ঘটার সাত দিনের মধ্যে শ্রম আদালতে মৃত্যুর কারণ ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা বর্ণনা করে প্রতিবেদন দাখিল করার বাধ্যবাধকতা আছে।
চিকিৎসা দিতে মালিক বাধ্য
কোনো শ্রমিক যদি কোনো দুর্ঘটনার শিকার হন ও তা সম্পর্কে নোটিশ প্রদান করেন তখন মালিক নোটিশ জারির তিন দিনের মধ্যে বিনা খরচে কোনো নিবন্ধিত চিকিৎসক দ্বারা শ্রমিককে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাবেন। এ ছাড়া চিকিৎসাও করাবেন। শ্রমিকের দুর্ঘটনা বা অসুস্থতা গুরুতর হলে, শ্রমিক যেখানে অবস্থান করছেন মালিক সেখানে তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার ব্যবস্থা করবেন। কোনো মালিক অথবা আঘাতপ্রাপ্ত শ্রমিক কোনো নিবন্ধিত চিকিৎসকের দেওয়া রিপোর্টে যদি সন্তুষ্ট না হন, তাহলে আবার মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক পদমর্যাদার কোনো চিকিৎসা-বিশেষজ্ঞের কাছে প্রেরণ করতে পারেন।
Source:
www.prothom-alo.com