কেন ঘূর্ণিঝড়ের নাম মহাসেন স্যান্ডি আইলা নার্গিস রেশমি
আগে বিচ্ছিন্নভাবে নির্দিষ্ট কোনো ঝড়ের নামকরণ করা হলেও সাম্প্রতিককালে প্রতিটি ঝড়কে চিহ্নিত করতে আলাদাভাবে নামকরণ করা হয়। ঘূর্ণিঝড়ের উৎপত্তির যে বেসিনগুলো রয়েছে, প্রতিটি বেসিনে ঝড়ের পূর্বাভাস দেওয়ার জন্য আলাদা কর্তৃপক্ষ রয়েছে। তারাই পূর্ব থেকে ঝড়ের এ নামকরণ করে থাকেন।
যেমন, উত্তর আটলান্টিক বেসিনে পূর্বাভাসের দায়িত্বে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টার। এখানে উৎপন্ন হারিকেনের নাম তারাই দিয়ে থাকে। কাজের সুবিধার জন্য তারা নামকরণের একটি তালিকা আগেই বানিয়ে নিয়েছেন। যেটা বর্ণানুক্রমিকভাবে অনুসরণ করা হয়। অর্থাৎ বছরের প্রথম হারিকেনটির নাম হবে অ দিয়ে, যেমন: অ্যান্ড্রু। দ্বিতীয়টি হবে ই দিয়ে, যেমন: বার্থা। এ রকম ছয় বছরের জন্য তালিকা আগেই বাছাই করা হয়ে থাকে। সেখান থেকে নামগুলো পর্যায়ক্রমিকভাবে দেওয়া হয়। এভাবে ১০১০ সালের তালিকা ব্যবহার হবে ২০১৬ সালে।তবে কোনো ঘূর্ণিঝড় যদি ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে, তবে সেটা আর তালিকায় পরবর্তী সময়ে ব্যবহার করা হয় না। ২০০৫ সালে হারিকেন ক্যাটরিনা বিপুল ক্ষয়ক্ষতির কারণে বিখ্যাত হয়ে যাওয়ায় এটি নামকরণের তালিকা থেকে বাদ পড়ে।
আগে নারীদের নামে হারিকেনের নামকরণ করা হলেও ১৯৭৯ সাল থেকে প্রথম পুরুষের নাম অন্তর্ভুক্ত হয় এবং বর্তমান তালিকায় সমানভাবে পর্যায়ক্রমে মহিলা ও পুরুষের নাম রয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার আঞ্চলিক কমিটি। উত্তর ভারত মহাসাগরীয় এলাকায় পূর্বাভাসের দায়িত্বে আছে ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ। বাংলাদেশ, মায়ানমার, ভারত, পাকিস্তান, মালদ্বীপ, শ্রী লংকা, মায়ানমার এবং ওমান বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার একটি প্যানেলের সদস্য।
২০০০ সালে এই প্যানেল প্রথম প্রস্তাব করে এ অঞ্চলের ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করার জন্য। এ জন্য প্রতিটি দেশ থেকে ১০টি করে নাম জমা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। যেহেতু বিভিন্ন দেশ তাদের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী নাম দিয়েছে, তাই এখানকার ঝড়ের নামে কোনো বর্ণানুক্রম বা সামঞ্জস্য নেই। কোনো ঝড়ের নাম অগ্নি, আবার কোনোটার নাম নার্গিস। ২০০৪ সালে ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ এ অঞ্চলে প্রথম যে ঘূর্ণিঝড়টির নামকরণ করেছিল, তার নাম ছিল অনিল।
একটি নির্দিষ্ট সময়কালে সৃষ্ট সম্ভাব্য সব ঝড়ের জন্য সদস্য রাষ্ট্রগুলো পূর্বেই নাম প্রস্তাব করে রাখে। একেকটি ঝড় বাস্তবে সৃষ্টি হলে, তালিকা থেকে পর্যায়ক্রমে নাম নির্বাচন করা হয়। ঝড় যেহেতু মৃত্যু ও ধ্বংসের সঙ্গে জড়িত, তাই কোনো নাম পুনরাবৃত্তি করা হয় না।
এমিয়া অঞ্চলে সাম্প্রতিক কয়েকটি ঝড় ও তার নামকরণকারী দেশ হচ্ছে: সিডর (ওমান), নার্গিস (পাকিস্তান), রেশমি (শ্রী লংকা), খাই-মুক (থাইল্যাণ্ড), নিশা (বাংলাদেশ), বিজলি (ভারত), আইলা (মালদ্বীপ)।
স্যান্ডি: মৌসুমী বায়ুর ফলে সৃষ্ট স্রোতের কারনে পশ্চিম ক্যারিবিয়ান সাগরে ঘূর্ণি স্যান্ডির উৎপত্তি। এটি আটলান্টিক অঞ্চলের ঘূর্ণিঝড় মৌসুমের ১৮তম ঘূর্ণিঝড়। জন্মের ৬ ঘণ্টার মধ্যেই বায়ূর গতিবেগ বেড়ে দানবীয় শক্তি লাভ করে স্যান্ডি। হারিকেনে রূপ নিয়ে কিছু সময় পরই জ্যামাইকার উপকূলে আঘাত হানে। জামাইকার ওপর দিয়ে এটি ক্রমাগত উত্তরে অগ্রসর হয়ে আবার জলরাশির উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে শুরু করে এবং কিউবার মাটিতে দ্বিতীয় আঘাতটি হানে।
কিছু পড়ে এটি দ্বিতীয় ক্যাটাগরির হারিকেনে পরিণত হয়। এর পরদিন স্যান্ডি বাহামা দ্বীপপুঞ্জের ওপর আছড়ে পড়ে। তার পরদিন ভোরে এটি কিছুটা দুর্বল হয়ে হারিকেন থেকে মৌসুমি ঝড়ে রূপ নিলেও কয়েক ঘণ্টা পরই এর শক্তিবৃদ্ধি পায় এবং এটি ক্যাটাগরি ১ হারিকেনে পরিণত হয়।
পরে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলে ক্যাটাগরি ১ উত্তর-ক্রান্তিয় ঝড় হিসেবে আঘাত হানে। এক সপ্তাহের সফরে স্যান্ডি তোলপাড় করেছে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূল।
Source:
http://www.hello-today.com