গরমে যেসব স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে
গরমের কারণে শরীরে প্রচুর ঘাম হয়। এই ঘামের সঙ্গে বেরিয়ে যায় শরীরের প্রয়োজনীয় উপাদান লবন ও পানি। শরীর থেকে এই লবন ও পানি বেরিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে দেহের রক্তচাপও কমে যেতে থাকে। সেই সঙ্গে প্রস্রাবের পরিমাণও কমে যেতে থাকে। পাশাপাশি অবসাদ এসে শরীরে ভর করে। সবকিছু মিলিয়ে একপর্যায়ে গরমের কারনে কোনো ব্যক্তি জ্ঞান হারাতে পারেন। তাছাড়া গরমের সময়ে ঘামাচি এবং ঘামের দুর্গন্ধও সমস্যার সৃষ্টি করে।
১ম পর্যায় করণীয়
# গরমে যতটা সম্ভব রোদে চলাফেরা বন্ধ করতে হবে।
# মাথায় ছাতা ব্যবহার করা যেতে পারে।
# ঢিলেঢালা সুতি পোশাক পরিধান করতে হবে।
# সিনথেটিক এবং আটসাঁট পোশাক না পরাই ভালো। কারণ সিনথেটিক কাপড়ের মধ্য দিয়ে বাতাস সুবিধাজনকভাবে চলাচল করতে পারে না।
# পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। যারা কায়িক পরিশ্রমের কাজ করেন এবং যাদের বেশি ঘাম হওয়ার প্রবণতা আছে তাদের ক্ষেত্রে পানি পানের পরিমান পরিমানটা একটু বাড়িয়ে দিতে হবে। স্বাভাবিকভাবে একজন পূর্ণ বয়স্ক লোকের ক্ষেত্রে ৩ লিটার পানি পান করা দরকার। গরমের সময় সেই পানি পানের পরিমাণ আরো বাড়িয়ে দিতে হবে। মোট কথা যতক্ষণ না প্রস্রাবের পরিমাণ স্বাভাবিক হবে ততক্ষণ ধরে পানি পান করে যেতেই হবে।
# শরীরে ঘাম বেশি হলে সেক্ষেত্রে পানিতে খানিকটা লবণ মিশিয়ে পান করা যেতে পারে। তবে খাবার স্যালাইন পান করতে পারলে সবচেয়ে ভালো হয়।হিটস্ট্রোক গরমের কারণে সৃষ্ট সবচে’ মারাত্মক অবস্থা। হিটস্ট্রোক হলে রোগী অজ্ঞান হয়ে যায়, এমনকি এ থেকে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
# হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত ব্যক্তি অচেতন হয়ে পড়ে।
# শরীরের ত্বক তখন শুষ্ক ও গরম থাকবে যা দ্বিতীয় পর্যায়ে ঠিক বিপরীতধর্মী উপসর্গ।
# চোখ দুটো স্থির ও ভাবলেশহীন তাকিয়ে থাকবে।এ অবস্থায় রোগীর খিঁচুনিও হতে পারে।
# শরীরে অক্সিজেন এর ঘাটতি দেখা দেয়ার ফলে শরীর বিশেষ করে মুখমন্ডল নীলাভ হয়ে যেতে পারে। এ অবস্থাকে আরো বেশি খারাপ অবস্থা বলে গণ্য করতে হবে।
# অজ্ঞান বলে রোগী প্রস্রাব-পায়খানা নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলতে পারে। তাই অজ্ঞান অবস্থায় রোগী পায়খানা-প্রস্রাব করে দিতে পারে।
# তাছাড়া প্রস্রাবের পরিমাণ কমে গিয়ে তা কিডনির উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।
হিট স্ট্রোক হলে করণীয়
হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত ব্যক্তির গায়ে সঙ্গে সঙ্গে স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি ¯েপ্র্র কিংবা ঢেলে শরীর ভিজিয়ে দিতে হবে। রোগী অজ্ঞান হলেও এই কাজটি করতে হবে। রোগীর শরীরে যে পানির প্রদাহ দেয়া হবে তা ঠান্ডা হওয়ার দরকার নেই। পানি খুব ঠান্ডা হলে সমস্যা আছে। ঠান্ডা পানি শরীরের প্রান্তীয় রক্তনালীসমূহকে সংকুচিত করে ফেলে , এতে রক্ত প্রবাহ কমে যায়। আর কোথাও রক্ত প্রবাহ কম থাকা মানেই সেখানে অক্সিজেন সরবরাহ কম থাকা। যা মোটেও বাঞ্ছনীয় নয়।
এছাড়া রোগীর শরীরের পরিধেয় যতটুক সম্ভব খুলে ফেলতে হবে এবং ঘরের ফ্যান কিংবা এ.সি চালিয়ে দিতে হবে। এসবের ব্যবস্থা না থাকলে পাখা দিয়ে বাতাস দিতে হবে।
ইতি মধ্যে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। মনে রাখতে হবে হিট স্ট্রোক একটি মেডিক্যাল ইমারজেন্সি। হিট স্ট্রোকে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই এক্ষেত্রে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে পাঠানোটা খুবই জরুরি।
হাসপাতালে নেয়ার পর ডাক্তার রোগীকে পরীক্ষা করে , বিশেষ করে নাড়িস্পন্দন (পাল্স) , রক্তচাপ, শ্বাস-প্রশ্বাস ইত্যাদি দেখবেন। সেই সঙ্গে শিরাপথে স্যালাইন চালু করে উপসর্গ অনুযায়ী অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।
ডা. সজল আশফাক, স্বাস্থ্য নিবন্ধকার ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, কমফোর্ট ডক্টরস চেম্বার, গ্রীনরোড, ঢাকা