যেদিন কাউয়াঠুটি গাছটা ঝড়ে উপড়ে গেলো, সেদিন গাছটাতে থাকা ক্যাসপার ভূতেদের কি চিৎকার চেচামেচি . . . আমার দাদীও সেদিন চিৎকার করছিলেন, আমি ছোট বলে ক্যাসপারের চিৎকার শুনতে পাই নি . . . দাদীর চিৎকারে কাউয়াঠুটি গাছটা দেখতে বাগানে যাই . . . দেখি শৈশবের বন্ধু এই গাছটা মাঝ বড়াবড় ভেঙ্গে গেছে . . . পুরান ঢাকার সিমসন ময়দানটা ছিলো আমার দাদুর নামে, ময়দানের পাশেই আমাদের ভৌতিক বাড়িটায় তখন ক্যাসপারদের উৎপাত বেড়ে যায়, ওরাই বা কি করবে ? ওদের বসতি এভাবে ভেঙ্গে যাবে ওরাও ভাবতে পারে নি। ক্যসপারেরা বসতি হারিয়ে ছন্ন ছাড়ার মতো আমাদের পুরান বাসাটায় আনাগোনা করতে লাগলো। ভাগ্য ভালো তখন আমার বড় দাদু বেচে নেই . . . বড় দাদুকে তো ক্যসপারেরা ভয় পেতো, ওরা দাদুর বশীকরণ মন্ত্রের জন্যে ভয়ে ভয়ে থাকতো . . .
একদিন একটা ক্যাসপারের সাথে আমার সখ্য হয়, সেদিন থেকে আমি মানুষ হয়েও ক্যাসপার হয়ে আছি . . . সেই ক্যাসপারটা আমাকে চুপি চুপি বলেছিলো, আমি যখন আম্মুনির পেটে, তখন আম্মুনি কাউয়াঠুটি গাছের নিচ দিয়ে যাবার সময় ক্যাসপারেরা প্লান করেছিলো, আমি জন্মানোর সঙ্গে সঙ্গে আমাকে ওরা চুরি করে নিয়ে আসবে, ক্যাসপারেরা আমার সাথে খেলবে, আর কত্ত কি ?
কাউয়াঠুটি গাছটা উপড়ে পড়ায় ক্যাসপারেরা তো তাদের বাড়িঘর হারালো, ডালে ঝুলে মজা করা, পাকা কাউয়াঠুটি ফল পেড়ে খাবার সুযোগটাও মিস হলো তাদের . . . আবার কাউয়াঠুটি গাছটার নিচে দিয়ে দাদুর চলাচলের সময়. . . সিমসন, ওই সিমসন বলে ডাকার চান্সটাও মিস হলো, এমনকি কাচা কাউয়াঠুটি ছুড়ে বড় চাচাকে উৎপাত করার সুযোগটাও হাতছাড়া হলো . . . শেষতক এই আমিই ক্যাসপারদের বন্ধু হয়ে উঠলাম, কাউয়াঠুটি গাছের পাশে বুনলাম নতুন একটা ডাউয়্যা গাছ . . . তাতে ক্যাসপারেরা বসতি গড়লো . . . আর আমি ক্যাসপার রাজার জাদুমন্ত্রে মানুষ আর ক্যাসপার দুটোই হয়ে রইলাম . . .
এই আমি যখন সংবাদপত্রের কাজে পুরান ঢাকার অলিগলি চিনি না, তখন ক্যাসপারেরা আমাকে চিনিয়ে দেয়, এরা আমাকে বংশাল পুকুরে সাতার কাটার সময় ভারসাম্যহীন হলে অদৃশ্য হাতে তুলে আনে ডাঙ্গায়, এরা আমাকে সকালের নাস্তায় ঘোল খাওয়ায় . . . ক্যাসপারেরা আমাকে এমবিএ ভর্তি পলীক্ষায় ২০০ মার্কসে ১৮৯ পাইয়ে দেয় . . . আমি ভর্তি পরীক্ষায় ফাস্ট হই . . . ক্যামেরার ভিউ ফাইন্ডারে আমি যখন চোখ রাখি, তখন ক্যাসপারদের কেউ একজন চিপে দেয় শাটার, আমি সবচেয়ে ভালো ছবিটা পাই . . . আবার অফিসে যাবার পথে বাসে ক্যাসপারোর আমাকে সঙ্গ দেয়, দুইটাকার পত্রিকা কেনার সময় ওরা আমাকে বারণ করে . . . ক্যাসপারের জাদুমন্ত্রে তুমুল রাগ করার সময়ও আমি হাসিমুখে কথা বলি, হয়তো একটা ফিচার লিখছি, ক্যাসপারেরা আমার কীবোর্ডে হাত ছোয়ায়, ফিচারটি হয়ে উঠে মানুষ আর ক্যাসপারের মিলনে অতিমানবিক কিম্বা অতি ক্যাসপারিক কিছু . . .
এত্ত এত্ত কিছুর পরেও ক্যাসপারোর আমার থেকে কিছু নেয় না, আমি ঈদে ওদের জামা দিতে চাই . . . বৈশাখে ইলিশ ভাজার দাওয়াত দেই . . . ওরা হাসে . . . ওরা শুধু সঙ্গ চায় . . . আমি কৃতজ্ঞ ক্যাসপারদের কাছে . . .সিমসন দাদু . . . বড় দাদু . . . ওদের মতো জমিদারী চাইলে হয়তো ক্যাসপারেরা আমাকে তাই দেবে, কিন্তু আমি অমন জমিদারি চাই না . . . সামন্ত যুগ তো ফুরিয়েছে সেই কবে, তাহলে জমিজমা দিয়ে কি হবে ?
এই যে এত্ত এত্ত সব মিরাক্যাল ক্যাসপারেরা ঘটিয়ে চলছে . . . এত কিছু দিচ্ছে . . . এত্ত সহযোগীতা করছে . . . এর কারণ কী ? ক্যাসপারদের জবাব, বড় দাদুর আমলের কাউয়াঠুটি গাছটা ছিলো ওদের রাজ্য . . . আর সেই রাজ্যে ক্যাসপারেরা ছিলো দেড়শো বছর . . . তখন বড় দাদু . . . সিমসন দাদু কিম্বা বাবা, চাচারা খাজনা নেননি . . . ক্যাসপারেরা সেই বকেয়া খাজনা আমাকে শোধ করছে . . . তাই ওদের, আমার প্রতি এত্ত মায়া . . . আর আমিও কম কিসে ? আমিও ওদের একজনই তো ? তাই না ?