প্রতিদিনই মানুষের মাথা থেকে গড়ে ১০০টি চুল ঝরে পড়ে যায়। এটা স্বাভাবিক একটি ব্যাপার। চুলপড়া ব্যাপারটি তখনই দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায় যখন মাথার চুল স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি ঝরতে থাকে।
চুলপড়ার পেছনে নানা ধরনের কারণ থাকে। যেমন দুশ্চিন্তা, অনিদ্রা, হরমোনের সমস্যা, ধুলাময়লা ইত্যাদি। আরেকটি কারণে চুল পড়ে যায় আর তা হলো সঠিক পুষ্টির অভাব। খাদ্যাভ্যাস সুনিয়ন্ত্রিত না হলে চুলপড়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে। আপনার খাদ্যতালিকায় কিছু খাবার নিয়মিতভাবে থাকলে চুলপড়ার পরিমাণ কমে যেতে পারে অনেকখানি। আসুন জেনে নিই এমন কিছু খাবার সম্পর্কে।
মাছ :
চুলের গঠনের মূল উপাদান হলো প্রোটিন। তাই চুলপড়া রোধে আমিষজাতীয় খাবার সাহায্য করবে এটা খুবই স্বাভাবিক! আমিষের উত্স হিসেবে বিভিন্ন ধরনের মাছ অতুলনীয়! আমিষজাতীয় খাবারের মধ্যে মাংসও রয়েছে। তবে মাংসে উপকারী উপাদানের পাশাপাশি অপকারী উপদানের উপস্থিতিও রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে।
যেমন কোলেস্টেরল, চর্বি ইত্যাদি। কিন্তু মাছে সে তুলনায় উপকারটাই বেশি। এছাড়া সামুদ্রিক মাছে রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড যা চুলের জন্য খুবই উপকারী। এটা চুলপড়া রোধ করে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে এবং চুলকে করে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল।
ডিম ও দুগ্ধজাত খাবার :
ডিম এবং লো ফ্যাটের দুগ্ধজাত খাবারে রয়েছে আমিষ, প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ ও বি। এসব উপাদান চুলের জন্য খুবই উপকারী। চুলপড়া হ্রাস তো করেই সেই সাথে চুলের গোড়াকে করে শক্ত ও মজবুত।
বীজজাতীয় খাবার :
বীজজাতীয় খাবার ও বীজের তেল যেমন সয়াবিন, সূর্যমুখীর তেল, জলপাইয়ের তেল, শিমের বিচি ইত্যাদিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই যা চুলের জন্য খুবই উপকারী। এসব খাবারে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা চুলপড়া রোধে সহায়তা করে এবং মাথার ত্বকের খেয়াল রাখে। এছাড়া চুলপাকা রোধেও সাহায্য করে এ ধরনের খাবার।
শস্যজাতীয় খাবার :
শস্যজাতীয় খাবার যেমন গম, ভুট্টা, ডাল ইত্যাদি খাবারে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি৭, যা চুলপড়া হ্রাস করে এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। এছাড়া মাথার ত্বককে রাখে রোগমুক্ত। চুলপাকা রোধেও এসব খাবার সাহায্য করে।
চিংড়িমাছ :
চুলের জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো জিংক, যা চিংড়িতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে। গবেষণায় দেখা গেছে অতিরিক্ত জিংক গ্রহণ চুলপড়ার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। কিন্তু আপনি যদি পরিমিত পরিমাণে জিংক গ্রহণ করেন তাহলে তা চুলপড়া রোধে সহায়কের ভূমিকা পালন করে। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের জিংকের প্রত্যহিক চাহিদা ১১ মিলিগ্রাম। এই পরিমাণ জিংক গ্রহণ করলে তা চুলের জন্য সুফল বয়ে আনবে। কারণ চুলের ঘনত্বের পেছনে জিংক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বাদাম :
চিনাবাদাম, কাঠবাদাম এবং আখরোট চুলের জন্য খুবই উপকারী। এসব বাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। এসব উপাদান নতুন চুল গজাতে খুবই কার্যকর ভূমিকা রাখে। চুলপড়া এবং চুলপাকা রোধেও এসব উপাদান উপকারী।
ভিটামিন সি যুক্ত ফল :
যদি চুলপড়া রোধে ফলের সহায়তা নিতে চান তাহলে অবশ্য প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি আছে এমন ফল বেছে নিন। যেমন কামরাঙ্গা, কমলা, মালটা, স্ট্রবেরি, লেবু ইত্যাদি। এমনকি খেতে পারেন কাঁচা মরিচও! ভিটামিন সি হলো অতি উচ্চ মানের এক ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা কিনা ত্বক ও চুলের জন্য খুবই উপকারী। ভিটামিন সি চুলপড়া হ্রাস করে এবং চুল করে তোলে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ঝলমলে। এছাড়া চুলের জন্য আরেকটি উপকারী উপাদান আয়রন যা শোষিত হতে ভিটামিন সি সাহায্য করে।
গাজর :
গাজর চোখ ও ত্বকের জন্য খুবই উপকারী এটা আমরা সবাই জানি। গাজর কিন্তু চুলের জন্যও খুব উপকারী। গাজর মাথার ত্বককে দেয় সুরক্ষার পরত। মাথার ত্বকের কোষগুলোকে পুনর্গঠন করতে সাহায্য করে গাজর। এতে চুলপড়া যেমন হ্রাস হয় তেমনি নতুন চুলও গজায়। চুল ঝলমলে উজ্জ্বল করে তুলতেও গাজরের জুড়ি নেই! Ref: বিডি হেরাল্ড ডটকম