Bangladesh > Law of Bangladesh

নারী অধিকার ও নারী সমাজের উন্নয়ন

(1/1)

shilpi1:
দ্ধি হবার পর থেকে নারী অধিকার বিষয়ে শুনে আসছি। কখনও ইসলামে নারীর অধিকার, কখনও প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য কিংবা অন্য ধর্মের সাথে নারী অধিকার বিষয়ক তুলনামূলক আলোচনা শুনেছি, পড়েছি।

আলোচনাগুলো আমার চিন্তা ধারাকে সময়ে সময়ে পরিবর্তন করেছে। যখন কিশোরী ছিলাম তখন নারী হিসেবে পর্যবেক্ষণ করেছি মাকে, খালা, দাদী, নানী, ফুপু এবং গৃহিনী কিংবা কর্মজীবি প্রতিবেশীদের। তখন মনে হতো ছেলে-মেয়েদের প্রতিপালন, স্বামীর তুষ্টি সাধন এবং অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনদের  খেদমত করাই গৃহিনীর একমাত্র কাজ।

তাই সেই কৈশোরেই ঠিক করেছিলাম আমি বড় হলে চার দেয়ালে আটকে থাকা সেবিকা মা-র মতো নারী হবো না। আমি সমাজে আমার অবস্থানও মর্যাদা তৈরী হয়,  সৃষ্টিকর্তার বিষ্ময়কর সৃষ্টি এই মানব মগজের যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে নিজের অবস্থান এই সমাজে কতটুকু তা উপলব্ধি করবো- ইনশা আল্লাহ।

পরর্বতীকালে বিয়ের পর উচ্চ শিক্ষার অনেক সুযোগ এসেছিল। সে সময় অবুঝ দুগ্ধপোষ্য সন্তানদের কথা ভেবে উচ্চ শিক্ষার আকাঙ্ক্ষা পরিত্যাগ করি।

আমি চরম ভাগ্যবান এ কারণে যে  আমার জীবনের লক্ষ্য বা আকাঙ্ক্ষাগুলোর অনেকাংশেই বাস্তবে রূপ দেবার জন্য আল্লাহ আমাকে এজন্য যোগ্য, বন্ধুতুল্য জীবনসঙ্গী প্রেরণ করেছেন।

কুরআনের ভাষায় স্বামী স্ত্রীর সম্পকর্কে বলা হয় “তোমরা একে অপরে পরিচ্ছেদ তুল্য”। আল্লাহর এ বাণী যেন আমার জীবনের জন্য প্রযোজ্য। এ ক্ষেত্রে আমার উপলব্ধি হলো কোনো নারী জীবনে একা একা বড় হতে পারে না।

তার জন্য প্রথমত মহান সৃষ্টিকর্তার করুণা এবং একজন পুরুষের কিংবা একজন যোগ্য ব্যক্তির নিরবচ্ছিন্ন সমর্থনের প্রয়োজন। যেমনটি ঘটেছিল মহিয়সী নারী বেগম রোকেয়ার জীবনে। যিনি তাঁর ভাই ও স্বামীর সহযোগীতায় নারী শিক্ষায় অগ্রগতির ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রাখেন।

আমার দুগ্ধপোষ্য সন্তানদের গড়ে তোলার জন্য আমার উচ্চ শিক্ষার সুযোগ হারানোর বেদনাটাও তেমনই সুখকর মনে করি। যদি ও সে সময় সিদ্ধান্তটি জীবনের চরম ভুল বলে মনে হয়েছিল। কিন্তু পরে আমি যখন প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তির হিসাব কষতে বসি এবং যখন প্রাপ্তির পরিমাণ বেশী মনে হয় তখন আল্লাহর অশেষ অনুগ্রহ মনে করি এবং কৃতজ্ঞতায় সিজদাবনত হয়ে যাই।

সমাজে অবুঝ ছেলে-মেয়েদের বিশৃংখল জীবনযাপন দেখে এক সময় মনে হতো মেয়েদের বাল্য বিবাহই ভালো ছিলো। আবার যখন দেখি বাল্য বিবাহ কারো কারো জীবনে গভীর দুঃখ কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায় তখন মনে হয় সব নারীদের সমাজে নিজেদের অবস্থান গড়ার মতো যোগ্যতা অর্জন না হওয়া পর্যন্ত বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া উচিত নয়।

মানুষের মনগড়া বলা ও লেখা নারী অধিকারগুলো বাস্তবতাবির্বজিত, অলীক এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে নারীর জন্য মর্যাদাহানিকর।

বেইজিং বিশ্ব নারী সম্মেলন কিংবা নিউইর্য়ক নারী সম্মেলনের কতিপয় ঘোষণা অভিন্ন। যা নারীর জন্য শুধু মর্যাদাহানিকরই নয় বরং বর্তমান পৃথিবীর অস্তিত্ব, শৃংখলার জন্য হুমকিস্বরূপ। যেমন ”উভয় সম্মেলনে যৌন সম্পর্কের স্বাধীনতাকে উৎসাহিত করা হয়েছে এবং সীমিত সন্তান গ্রহণ ও গর্ভ বিনষ্টকে আইনগত মর্যাদা দেয়ার প্রস্তাব করা হয়।”

কোনো সুস্থ ব্যক্তিই নীতি নৈতিকতা বিবর্জিত জীবনযাপন করতে পছন্দ করবেন না।

আর আমাদের বুঝে আসে না জৈবিক চাহিদার স্বাধীনতা নিশ্চিত করে কীভাবে নারী স্বাধীনতা বা নারী উন্নয়ন সম্ভব? তাহলে কি নারীরা এ পৃথিবীতে শুধুই ভোগ্য পণ্য ? প্রকৃতপক্ষে নারী উন্নয়নের জন্য নারীর ঘরে বাইরে চলাফেরার নিরাপত্তা বিধান, পরিবার ও সমাজে তার অবস্থান সুষ্পষ্ট ও সুদৃঢ় করা, তার মতপ্রকাশের স্বাধীনতা প্রদান প্রভৃতি যা নারীকে পুরুষের মতো একজন বোধশক্তি সম্পন্ন মানুষ অথবা ‘মানব জাতির’ অর্ন্তগত সুনিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ নারী উন্নয়নের সোপান হতে পারে।

কিন্তু লিঙ্গ সমতার নামে নারীকে ভোগ্যপন্য এবং পুরুষে পরিণত করার মধ্যে কখনই নারীর উন্নয়ন হতে পারে না। কারণ সৃষ্টি ও প্রকৃতিগত ভাবেই নারী ও পুরুষের শারিরীক ও মানসিক অবস্থার মধ্যে বিশাল ফারাক রয়েছে যা কেউই অস্বীকার বা অগ্রাহ্য করতে পারে না।

যে সৃষ্টিকর্তা আমাদের সৃষ্টি করেছেন তিনিই একমাত্র জানেন কীভাবে আমাদের উন্নয়ন সম্ভব। আর তা জানবার জন্য তিনি নারী পুরুষ সবার জন্য জ্ঞানার্জনকে ফরয করেছেন। পবিত্র কুরআনের প্রথম যে ওহী নাযিল হয় তা ছিল ‘ইকরা’ অর্থ ‘পড়’। এর পর যিনি আমাদের পরম করুণায় সৃষ্টি করেছেন তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার নিয়ম শিখিয়ে দিয়ে বলেছেন “পড়, পড় তোমার প্রভুর নামে”।

অতএব পড়া-লেখায় বিকল্প নেই। এখানে শারিরীক যৌন জৈবিক ক্ষুধা নিবৃত্তের লেশ পর্যন্ত নেই।

জৈবিক চাহিদা তো প্রতিটি মানুষের (পুরুষের বা নারীর ) একটি শারিরবৃত্তিয় সুস্থ স্বাভাবিক চাহিদা বৈ কিছু নয়। কিন্তু এটি চিন্তার বিষয় যে এতো সমস্যা থাকতে নারী উন্নয়নের নীতি নির্ধারকদের শুধু এই একটি বিষয়ের স্বাধীনতা নিয়ে কেন এতো মাথাব্যথা। তারা কি মনে করেন এই পৃথিবীর বুক থেকে পরিবারের বন্ধন ভেঙ্গে মাতৃত্বের আনন্দ কেড়ে নিয়ে নারীদের উন্নতির দুয়ার খুলে যাবে?

যদি তাই হতো পাশ্চাত্য থেকে আমাদের শিক্ষা নেয়া উচিত। ইউরোপ, আমেরিকায় নারীদের ভোগ করে আস্তাকুঁড়ে ফেলে রাখা হয়। বৈবাহিক জীবনের কোন মূল্য নেই, সন্তানদের কাছে তাদের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়, হতাশা আর কষ্ট ভুলতে যাদেরকে বিনোদনের জন্য নাইট ক্লাবের আশ্রয় নিতে হয়, নারী নির্বাচনে ভোট চাইতে গেলে তার প্রতি অশ্লীল বাক্য ছুঁড়ে মারা হয়, যেখানে সম্পর্ক তৈরি হয় আত্মার বন্ধনে নয় বরং যৌন ক্ষুধা নিবৃত্তির ভিত্তিতে।

কিন্তু যদি আমরা নারীর উন্নয়নের জন্য ইসলামের বা কুরআন ও সুন্নাহর দিকে ফিরে তাকাই তাহলে দেখতে পাই সেখানে বলা হয়েছে -
১। মনুষ্যত্বের ক্ষেত্রে নারী ও পুরষের পরিপূর্ণ সাম্যের কথা এবং সবরকমের ভেদাভেদ ও বৈষম্য প্রত্যাখানের ঘোষণা করা হলো। (সুরা নিসা ১) আর রাসূল (সাঃ) বলেছেন “নারীগণ পুরুষদের সহোদরা”।
২। যে ব্যক্তি সৎ কাজ করবে, চাই সে  পুরুষ হোক বা নারী। সে যদি মুমিন হয়, তবে আমি অবশ্যই পবিত্র ও নিরাপদ জীবন যাপন করাবো এবং তার কৃতকর্মের বিনিময়ে যথোচিত পুরস্কার প্রদান করবো।
৩। রাসূল (সাঃ) বলেছেন, প্রত্যেক মুসলমানের জন্য জ্ঞানার্জান ফরয। 
৪। পবিত্র কুরআনে বলা হয় “পড় তোমার প্রভুর নামে”। শুধু পুরুষ নয় নারী তথা পুরো মানবজাতিকে পড়তে বলা হয়েছে।
৫। কোরআন বলেছে “স্ত্রীদের যেমন দায়-দায়িত্ব রয়েছে তেমনি ন্যায় সঙ্গত অধিকারও রয়েছে।” রাসূল (সাঃ) বলেছেন “তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তি উত্তম যে তার স্ত্রীর নিকট উত্তম।”
৬। কোরআন আরো বলে “নারী যা  অর্জন করে তা নারীর প্রাপ্য”।
৭। হাদীসে আরো বলা হয় “সর্বোত্তম সম্পদ হলো আল্লাহর স্মরণকারী জিহ্বা কৃতজ্ঞ অন্তর ও মুমিন স্ত্রী যে আল্লাহর পথে স্বামীকে সাহায্য করে”
৮। হাদীসে পিতার চেয়ে মাতার মর্যাদা তিনগুণ বেশি বলা হয়েছে।

কুরআন ও হাদীসের ভিত্তিতেই যদি নারী উন্নয়ন সম্ভব, তবে এখানে একটি প্রশ্ন সবার মনে উঁকি দেয়- মুসলমান নারীরা কেন নিগৃহীত ও সুবিধাবঞ্চিত ? রক্ষণশীল মুসলমান নারীদের অবস্থা কেন আরো করুণ ?

বর্তমান মুসলমান আলেম সমাজদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করলে আমরা দেখতে পাই কিছু সুবিধাবাদী আলেম আল্লাহকে ভয় না করে দ্বীনের আহকামগুলোকে কিংবা কুরআন ও হাদীসের শানে নুযুল ব্যাখা না করে কতিপয় আয়াত ও হাদীস মুসলমানদের সামনে এমনভাবে তুলে আনে তাতে মনে হয় নারীদের এ পৃথিবীতে একমাত্র কাজ হলো ধর্মীয় শিক্ষাগ্রহণ। সন্তান জন্মদান লালন-পালন এবং স্বামী ও তার সংসারের খেদমত করা।

ইসলামের ইতিহাস কখনই এমন অবিবেচক, কর্মহীন প্রাণহীন অন্ধকার কুপমুন্ডুক নারী জীবনের কথা বলে না। বরং ইসলামের স্বর্গযুগ নামে পরিচিত, সে যুগে ফিরে গেল আমরা দেখতে পাই একজন নারী নিবিঘ্নে মক্কা থেকে সানাই গহনা পরিহিতা অবস্থায় একা নিরাপদ ও নিশ্চিতে গমন করতে পারতো। হযরত আয়েশা (রা) কে গুরু মেনে নারী পুরুষ নির্বিশেষে শিক্ষা গ্রহণ করতে আসতো। যুদ্ধে ক্ষত-বিক্ষতদের সেবা করতে সে সময় এগিয়ে আসতো নারীরাই। সংসারের আয় বৃদ্ধির জন্য অর্থনৈতিক কার্যক্রমে নারীদের অংশগ্রহণ করতে দেখা যেতো।

রাসূল (সাঃ) যথার্থই তাঁর শেষ ভাষণে বলেছিলেন “তোমরা যতদিন কুরআন-সুন্নাহকে আকঁড়ে ধরে থাকবে ততদিন কেউ তোমাদেরকে সরল পথ থেকে বিচ্যুত করতে পারবে না”।

তাই আজ মুসলমান নারীদের এমনতর পরিস্থিতিতে নারী উন্নয়নের সঠিক নীতিগুলো নির্ধারণ করতে  হবে এবং সেগুলো প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করতে হবে। এতে শুধু মুসলমান না বরং গোটা সমাজের উন্নয়ন ও নিরাপত্তা নিহিত।

কোরআন ও হাদীসের আলোকে নারী পুরুষের মধ্যে বিদ্যমান সবরকম বৈষম্য বিলোপ সাধন করা সম্ভব। কিন্তু এর জন্য  আমাদেরকে এখন থেকেই কুরআন হাদীস ভিত্তিক গবেষণার মাধ্যমে নীতিগুলো নির্ধারণ করে সেই আলোকে জীবনকে পরিচালিত করতে হবে। তবেই সমাজে ধর্ষণ, নিপীড়ন, পতিতাবৃত্তি, নারী পুরুষ বৈষম্য, নারীর মানহানি, সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা, নারীর অবমূল্যায়ন রোধ করা সম্ভব হবে।

বর্তমান যুগ ও প্রযুক্তিকে সামনে রেখে ইজমা-কিয়াস ভিত্তিক গবেষণা অতীব জরুরি। যেমন- “পড়, পড় তোমার প্রভুর নামে”। --এই আয়াত বিশ্লেষণ করলে আমরা দেখতে পাই এখানে নারী পুরুষসহ পুরো মানবজাতিকে পড়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এই ‘পড়া’ টা যেহেতু প্রভুর নামে, এতএব এ কথার অর্থ এই দাঁড়াতে পারে যে সৃষ্টিকর্তার সকল সৃষ্টির সম্পর্কে জ্ঞানার্জনের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু অনেকেই জ্ঞানার্জনের ক্ষেত্রকে নারী পুরুষের জন্য ভাগ করে ফেলেছেন। তারা নারীদের জন্য জ্ঞানার্জন বলতে শুধু কুরআন পড়তে পারার মতো দ্বীনি শিক্ষা, সন্তান লালন-পালন ও গৃহস্থলী কাজ কর্ম করতে পারার মতো শিক্ষা অর্জনই যথেষ্ট মনে করেন, অথচ স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আল আমীনের ওহী প্রাপ্ত নাযিলকৃত কুরআনের কোথাও নারীদের জ্ঞানার্জনের ক্ষেত্রগুলোকে পৃথক করা হয়নি বরং সহিষ্ণুশীল, পরম মমতাময়ী নারীদেরকে শান্তির আধার’ বলে আখ্যা করেছেন।

এ কথা বলা যায় যে প্রকৃতিগত ও জন্মগতভাবে কোমলময়ী মমতাময়ী নারীকে নিজের সংসারকে প্রাধান্য দিয়ে পর্দার মধ্যে থেকে অন্য সকল কাজে অংশগ্রহণ করতে বলা হয়েছে। আবার সংসার দেখার দায়িত্ব শুধু নারীরই নয় বরং পুরুষেরও তা রাসূল (সাঃ) নিজে গৃহস্থালির কাজকর্ম করে প্রমাণ করে গেছেন।

এখানে উল্লেখ্য যে, নারীকে ইসলাম কোন অতিরিক্ত দায়িত্ব চাপিয়ে দেয়নি যেমন দেয়া হয়েছে পুরুষদেরকে। পিতার অনুপস্থিতিতে সংসারে সকলের ভরণপোষণ, স্ত্রী ও সন্তানদের ভরণপোষণ একজন পুরুষের উপর বর্তায়। এক্ষেত্রে নারীদের জন্য তা ঐচ্ছিক। তার প্রাপ্য থেকে নারীরা ব্যয় করতে পারে বা নাও করতে পারে। প্রকৃতপক্ষে আমাদের মুসলমান নারীদেরকে কুসংস্কারচ্ছন্ন, কুপমুন্ডকতার গন্ডী থেকে বের করে আনার জন্য কুরআন হাদীসের আলোকে সুষ্পষ্টভাবে সংরক্ষিত অধিকারগুলো জানতে হবে এবং নিজেদের জীবনে প্রয়োগের জন্য পরস্পরকে সহযোগিতার মাধ্যমে অধিকার প্রতিষ্ঠায় সোচ্চার হতে হবে।

নারীর ব্যক্তিত্ব হবে তার জ্ঞান, আমল, ইলম-এর ভিত্তিতে। তাকে তার যোগ্যতা দিয়ে সমাজে স্থান করে নিতে হবে। পোশাক বা সৌন্দর্য এক্ষেত্রে গৌণ। পর্দা সমাজে শৃংঙ্খলার প্রতীক। কারণ পর্দা করে চলাফেরা করলে সব বয়সের নারীরা উচ্ছৃংখল কতিপয় যুবকদের উত্যক্ততা থেকে রক্ষা পায় এবং নিরাপদে রাস্তা-ঘাটে চলাচল করতে পারে, কর্মক্ষেত্রেও নিরাপদে কাজ করতে পারেন।

আল্লাহ পর্দা শুধু মহিলাদের করতে বলেননি বরং পুরুষদেরকেও দৃষ্টি অবনত করে চলাফেরা করতে বলেছেন যা পর্দার শামিল।

পুরুষদেরকে নারীর বেশ এবং নারীদেরকে পুরুষদের বেশ ধারণ করতে নিষেধ করা হয়েছে। অতএব দেখা যাচ্ছে কুরআনে আল্লাহ কোনো কোনো ক্ষেত্রে পুরুষদেরকে দায়িত্ব বেশি দেবার কারণে অগ্রাধিকার দিয়েছেন আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে নারীদের দায়িত্ব বেশি দেবার কারণে অগ্রাধিকার দিয়েছেন।

আর এই অগ্রাধিকারকে বৈষম্য হিসেবে দেখা হয়। যা ভুল। কারণ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় গঠনগত ও প্রকৃতিগতভাবে পার্থক্যের কারণেই এই অগ্রাধিকার যথার্থ হয়েছে।

কুরআনে আল্লাহ বলেছেন “স্ত্রীদের যেমন দায়-দায়িত্ব রয়েছে তেমনি ন্যায়সঙ্গত অধিকারও রয়েছে।। তবে তাদের উপর পুরুষদের কিছু অগ্রাধিকার রয়েছে।” অনুরূপ নারীদের জন্য মা হিসেবে তিনগুণ বেশি পিতার চেয়ে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। আবার তার জীবনসঙ্গীর ভালো বা মন্দ কিনা তা নির্ধারণ করার সার্টিফিকেট আল্লাহ নারীকে প্রদান করেছেন।

সহাবস্থান বলতে নারী পুরুষ পাশাপাশি অবস্থান না বুঝিয়ে যদি একই কাজ নারী ও পুরুষ দুটি ভিন্ন পরিবেশে করাকে সহাবস্থান বুঝাতো তবে সবাপের্ক্ষা উত্তম হতো।     

পরিশেষে উপরের আলোচনার ভিত্তিতে নারী সমাজের উন্নয়নের জন্য কিছু পরামর্শ সুপারিশমালার পেশ করা হলোঃ
১। সর্বপ্রথম নারী অধিকারগুলো সুস্পষ্টভাবে চিহ্নিত করে নারী সমাজের উন্নয়নের জন্য প্রধান করণীয় বিষয়গুলো নির্ধারণ করতে হবে।
২। জৈবিক চাহিদার স্বাধীনতাকে উপেক্ষা করে প্রকৃতই যে অধিকারগুলো নারীকে সমাজে গুরুত্বপূর্ণ গ্রহণযোগ্য অবস্থান তৈরীতে সাহায্য করবে সেই অধিকারগুলোকে নিশ্চিত করতে হবে।
৩। রাজনীতি, প্রশাসন, অন্যান্য কর্মক্ষেত্র, আর্থ-সামাজিক কার্যক্রম, শিক্ষা, সংস্কৃতি, ক্রীড়া ও পারিবারিক জীবনে সর্বত্র আল্লাহ প্রদত্ত বিধানের আলোকে নারীর জন্য ন্যায্য অধিকারপ্রতিষ্ঠার জন্য সকল কাজে নারীর মতামত প্রকাশ ও অংশগ্রহণের নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে।
৪। সহশিক্ষা কার্যক্রমকে নারী পুরুষের সহাবস্থান না ভেবে একই কর্মকে নারী ও পুরুষের দুটি ভিন্ন পরিবেশে করার আবহ সৃষ্টি করা বুঝাতে হবে। এবং সেইভাবে কাজ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৫। সমাজে নারী পুরুষ জনিত নির্যাতন, বিশৃঙ্খলা রোধকল্পে নারী ও পুরুষের অবাধ মেলামেশার সুযোগ গুলো বন্ধ করতে হবে।
৬। নারীর অধিকার যথাযথভাবে সংরক্ষনে আইন শুধু প্রণয়নই নয় যথাযথ প্রয়োগের ব্যবস্থা নিতে হবে।
৭। নারীকে শালীন ও পর্দার মাধ্যমে চলাফেরা ও কর্মক্ষেত্রে বিচরণের জন্য উদ্বুদ্ধ প্রয়োজনে শালীন Dress Code এর ব্যবস্থা করতে হবে।
৮। আল্লাহ প্রদত্ত আইন অনুসারে মোহরানা ও সম্পত্তিতে নারীর অধিকার যথাযথভাবে প্রদানের কঠিন আইন করে সম্পত্তিতে নারী অধিকার নিশ্চিত করে তা আদায়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
৯। সর্বোপরি নারীকেই নারী উন্নয়নের দ্বার প্রশস্ত করার জন্য পরস্পর পরস্পরকে সহযোগিতা করতে হবে।
১০। যেহেতু নারী উৎপাদনক্ষম তাই স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

উপসংহারে বলতে চাই পুরুষ শাসিত কিংবা নারী শাসিত সমাজ ব্যবস্থা নয় বরং উভয়ের সমন্বয়ে মনুষ্যত্বের, সাম্যের সমঝোতামূলক শান্তির সমাজব্যবস্থা চাই যা সপ্তম শতাব্দীতে মানবতার মুক্তির দিশারী মোহাম্মদ (সাঃ) নিশ্চিত করেছিলেন। আর কুরআনের ভাষায় “মুমিন নারী ও পুরুষ পরস্পরের বন্ধু ও সহযোগী। তারা সৎকাজের আদেশ দেয় এবং অসৎকাজে নিষেধ করে”।

Navigation

[0] Message Index

Go to full version