ডায়াবেটিস কিংবা হৃদরোগের ঝুঁকি এড়াতে আপনার জিমনেসিয়ামে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যায়ামের কোনো দরকার নেই। দিনে ৩০ মিনিট হেঁটে কিংবা সাইকেল চালিয়ে এ ঝুঁকি আপনি সহজেই এড়াতে পারেন। তাহলে আপনাকে আর ডাক্তারের কাছেও ছুটতে হবে না। সম্প্রতি এক গবেষণায় এমন ফলাফল পাওয়া গেছে।
গবেষণাটি লন্ডনের ইমপেরিয়াল কলেজ এবং ভারতের পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশন (পিএইচএফআই) যৌথভাবে পরিচালনা করে। লক্ষ্ণৌ, নাগপুর, হায়দ্রাবাদ, ব্যাঙ্গালোর এই চারটি শহরের পোশাক কারখানা শ্রমিকদের উপর গবেষণাটি পরিচালিত হয়। এসব শ্রমিকরা পায়ে হেঁটে কিংবা সাইকেলে চড়ে কর্মস্থলে যান।
গবেষণায় দেখা যায়, যারা গাড়িতে চড়ে কর্মস্থলে যান তাদের তুলনায় এসব কর্মীদের অতিরিক্ত ওজন, স্থূলতা, উচ্চ রক্তচাপ কিংবা ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভবনা ৫০ শতাংশ কম।
পিএইচএফআই এর দক্ষিণ এশিয়া নেটওয়ার্ক ফর ক্রোনিক্যাল ডিজিজের প্রধান গবেষক সুতাপা আগারওয়াল বলেন, “আমরা ৩৯০২ পোশাক শ্রমিকদের উপর গবেষণাটি পরিচালনা করেছি। তাদের শারীরিক অবস্থার তথ্য সংগ্রহ করেছি। এর মধ্যে ১৩৬৬ জন গ্রামের এবং ২৫৩৬ জন শহুরে শ্রমিক। এদের মধ্যে গ্রামে ৬৮.৩% বাইসাইকেলে করে এবং ১১.৯% পায়ে হেঁটে কর্মস্থলে যান। আর শহরের ১৫.৯% সাইকেলে এবং ১২.৫% লোক পায়ে হেঁটে কর্মস্থলে যান। বাকিরা প্রাইভেটকার কিংবা বাসে চড়ে কর্মস্থলে যান।”
তিনি বলেন, “যেসব লোক প্রাইভেটকারে কর্মস্থলে যান তাদের অর্ধেক এবং যারা বাসে চড়ে কর্মস্থলে যান তাদের ৩৮% স্থূলতা, অতিরিক্ত ওজন, উচ্চ রক্তচাপ কিংবা ডায়াবেটিসের সমস্যায় ভুগছেন।”
ইম্পেরিয়াল কলেজের পাবলিক হেলফ বিভাগের অধ্যাপক ডা. ক্রিস্টোফার মিলেট বলেন, “মানুষ কাজে যাওয়ার ক্ষেত্রে সক্রিয় ভ্রমণের (হাঁটা কিংবা সাইকেল চালানো) মাধ্যমে তাদের শারীরিক ব্যায়াম সেরে ফেলতে পারেন। এটি করলে জিমনেসিয়ামে গিয়ে তাদের অতিরিক্ত সময় ব্যায় করতে হবে না।”
মিলেটের বলেন, “সক্রিয় ভ্রমণের মাধ্যমে ভারতে অতিরিক্ত ওজন, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ইত্যাদি সমস্যার সমাধান হতে পারে।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব সমস্যা দূরীকরণে হাঁটা কিংবা বাইসাইকেল চালানোর উপর জোর দেয়া উচিত। নেদারল্যান্ড, ডেনমার্ক, জার্মানির মতো উন্নত দেশের জনগণ সুস্থ থাকতে সক্রিয় ভ্রমণের মাধ্যমে কর্মস্থলে যাওয়ার কার্যকর অভ্যাস গড়ে তুলেছেন।
দিল্লীর সাকেটের ম্যাক্স হসপিটালের হৃদরোগ বিভাগের প্রধান ড. সুজিৎ ঝার মতে, পায়ে হেঁটে কিংবা সাইকেলে চড়ে কর্মস্থলে যাওয়ার অভ্যাস সকলেরই গড়ে তোলা উচিত। তিনি বলেন, “এটি ইনসুলিনের দক্ষতা বৃদ্ধি, অক্সিজেনের প্রবাহে সহায়তা এবং হৃদপিণ্ডের সঞ্চালনে সহায়তা করে।”