Ramzanul Mubarak according to Quran-Hadith

Author Topic: Ramzanul Mubarak according to Quran-Hadith  (Read 1009 times)

Offline yousuf miah

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 173
    • View Profile
Ramzanul Mubarak according to Quran-Hadith
« on: June 30, 2013, 11:23:58 AM »
হিজরীবর্ষের নবম মাসটির নাম রমাযানুল মুবারক। এ মাসের মর্যাদা ও মাহাত্ম্য বলার অপেক্ষা রাখে না। এ মাস আল্লাহ তা’আলার অধিক থেকে অধিকতর নৈকট্য লাভের উত্তম সময়, পরকালীন পাথেয় অর্জনের উৎকৃষ্ট মৌসুম। ইবাদত-বন্দেগী, যিকির-আযকার এবং তাযকিয়া ও আত্মশুদ্ধির ভরা বসন্ত। মুমিন বান্দার জন্য রমযান মাস আল্লাহ তা’আলার অনেক বড় নেয়ামত। তিনি এই মাসের প্রতিটি দিবস-রজনীতে দান করেছেন মুষলধারা বৃষ্টির মত অশেষ খায়ের-বরকত এবং অফুরন্ত কল্যাণ। মুমিনের কর্তব্য, এই মহা নেয়ামতের জন্য কৃতজ্ঞ ও আনন্দিত হওয়া।

 

ইরশাদ হয়েছে, ‘(হে নবী) আপনি বলুন! এটা আল্লাহর অনুগ্রহ ও তাঁর রহমতেই হয়েছে। সুতরাং এতে তারা যেন আনন্দিত হয়। তারা যা কিছু সঞ্চয় করে, এটা তার চেয়ে উত্তম। (সূরা ইউনুস, আয়াত-৫৮)

 

এ মাসে বান্দা পার্থিব সকল চাহিদা বিসর্জন দিয়ে আল্লাহর দয়া ও রহমত লাভ করবে, অতীতের সকল পাপাচার থেকে ক্ষমা চেয়ে নতুনভাবে ঈমানী জিন্দেগীর উত্তাপ গ্রহণ করবে, তাকওয়ার অনুশীলনের মাধ্যমে পুরো বছরের ইবাদত ও ইতাআতের শক্তি সঞ্চয় করবে, চিন্তা-চেতনা ও কর্ম-সাধনায় আল্লাহর আনুগত্যে নিজেকে সমর্পিত করবে-এই হচ্ছে মুমিনের আনন্দ।

 

আল্লাহ তা’আলা এই পবিত্র মাসকে যেসব গুণ ও মর্যাদা দ্বারা বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত করেছেন, যত রহমত, বরকত এবং দয়া ও অনুগ্রহ দ্বারা একে মহিমান্বিত করেছেন, এ মাসের নেক আমলগুলোর যত সওয়াব ও প্রতিদান নির্ধারিত করেছেন তার হিসাব-নিকাশ মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। তবুও কুরআন মজীদের বিভিন্ন আয়াতে এবং হাদীস শরীফের বিস্তৃত বর্ণনায় যে গুরুত্ব ও বৈশিষ্ট বর্ণিত হয়েছে, তার কিছু দৃষ্টান্ত এখানে উল্লেখ করার চেষ্টা করব।

 

১. সিয়াম ও কিয়ামের মাস

মুসলিম উম্মাহর নিকট রমযান মাসের আগমন ঘটে প্রধানত রোযা ও তারাবীহর বার্তা নিয়ে। এটি রমযান মাসের বিশেষ আমল। তাই প্রত্যেক মুমিনের কর্তব্য, পূর্ণ নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে এ দুই বিষয়ে যত্নবান হওয়া।

 

আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেছেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরয করা হয়েছে, যেমন ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের প্রতি; যাতে তোমরা তাক্বওয়া অবলম্বনকারী (মুত্তাকী) হতে পার। (সূরা বাকারা , আয়াত-১৮৩)

 

অন্য আয়াতে ইরশাদ করেছেন, ‘সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাস (রমযান) পাবে, সে যেন অবশ্যই তার রোযা রাখে। আর তোমাদের মধ্যে কেউ যদি অসুস্থ হয় বা সফরে থাকে, তবে অন্য সময় সে সমান সংখ্যা পূরণ করবে। (সূরা বাকারা, আয়াত-১৮৫।

 

হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘যখন রমযান মাসের আগন ঘটলো, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন, তোমাদের নিকট বরকতময় মাস রমযান এসেছে। আল্লাহ তা’আলা তোমাদের জন্য এ মাসের রোযা ফরয করেছেন। এ মাসে জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর শয়তানদেরকে শিকলে বন্দী করা হয়। এ মাসে এমন একটি রাত আছে, যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। যে এর কল্যান থেকে বঞ্চিত হল, সে তো প্রকৃতপক্ষেই বঞ্চিত। (মুসনাদে আহমদ, হাদীস-৭১৪৮ সুনানে নাসায়ী-হাদীস-২৪১৬, মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস ৮৩৮৩ মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হাদীস ৮৯৫৯)

 

২. কুরআন নাযিলের মাস

রমাযানুল মুবারকের আরেকটি বড় বৈশিষ্ট্য হল তা কুরআন নাযিলের মাস। এই পবিত্র মাসেই আল্লাহ তা’আলা পূর্ণ কুরআন মজীদ লওহে মাহফুয থেকে প্রথম আসমানে অবতীর্ণ করেন। অতপর রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট কুরআনের সর্বপ্রথম অহীও এ মাসেই নাযিল হয়। রমযান মাসের অন্য কোনো ফযীলত যদি উল্লেখিত না হত, তবে এই এক ফযীলতই তার মর্যাদা ও বিশেষত্বের জন্য যথেষ্ট হতো। রমযান মাসের পরিচয় ও গুরুত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে আল্লাহ তা’আলা সর্বপ্রথম এই বৈশিষ্ট্যের কথাই উল্লেখ করেছেন।

 

ইরশাদ হয়েছে, ‘রমযান মাস, যাতে কুরআন নাযিল হয়েছে, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সুপথ প্রাপ্তির সুস্পষ্ট পথনির্দেশ আর হক্ব-বাতিলের মধ্যে পার্থক্যকারী। সুতরাং তোমাদের যে কেউ এ মাস পাবে সে যেন অবশ্যই এর রোযা রাখে। (সূরা বাকারা, আয়াত- ১৮৫)

 

শুধু কুরআন মজীদ নয়, হযরত ইবরাহীম আ. এর সহীফা, তাওরাত, যবুর, ইঞ্জিলসহ সকল আসমানী কিতাব এ মাসে অবতীর্ণ হয়েছে। তাবারানী বর্ণিত একটি সহীহ হাদীসে এই বৈশিষ্ট্যও উল্লেখিত হয়েছে।

 

৩. মুসলমানদের জন্য সর্বোত্তম মাস

হযরত আবু হুরায়রা ((রা.)) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহ তা’আলার কসম! মুসলমানদের জন্য রমযানের চেয়ে উত্তম কোনো মাস আসেনি এবং মুনাফিকদের জন্য রমযান মাসের চেয়ে অধিক ক্ষতির মাসও আর আসেনি। কেননা মুমিনগণ এ মাসে (গোটা বছরের জন্য) ইবাদতের শক্তি ও পাথেয় সংগ্রহ করে। আর মুনাফিকরা তাতে মানুষের উদাসীনতা ও দোষত্রুটি অন্বেষণ করে। এ মাস মুমিনের জন্য গনীমত আর মুনাফিকের জন্য ক্ষতির কারণ।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদীস ৮৩৬৮, মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হাদীস-৮৯৬৮, সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস-১৮৮৪, তাবারানী হাদীস-৯০০৪, বাইহাকী শুয়াবুল ঈমান, হাদীস-৩৩৩৫)

 

৪. রহমতের মাস

এ মাসে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর শয়তানদেরকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়।

 

ইতোপূর্বে উল্লেখিত একটি হাদীসে এ বিষয়টি বর্ণিত হয়েছে। এ ছাড়া আরও হাদীসে তা আছে।

 

হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘যখন রমযান মাসের আগমন ঘটে, তখন জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর শয়তানদেরকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়। (সহীহ বুখারী, হাদীস-১৮৯৮, সহীহ মুসলিম, হাদীস-১০৭৯ (১), মুসনাদে আহমদ হাদীস-৮৬৮৪, সুনানে দারেমী, হাদীস-১৭৭৫)

 

হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘রমযান মাস শুরু হলেই রহমতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানদেরকে শিকলে আবদ্ধ করা হয়। (সহীহ মুসলিম হাদীস-১০৭৯-২)

 

সহীহ বুখারী বর্ণনায় রয়েছে, ‘রমযান আরম্ভ হলে আসমানের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়, ...।’ (হাদীস-১৮৯৯)

 

মুহাদ্দিসীনে কেরাম বলেন, মুমিন বান্দাগণ যাতে রমযান মাসের অতি মূল্যবান ও বরকতপূর্ণ সময় নেক কাজে ব্যয় করতে পারে এবং মুনাফিকদের মত খায়ের ও বরকত থেকে বঞ্চিত না থাকে, তাই আল্লাহ তা’আলা এ মাসের শুরু থেকেই সৃষ্টিজগতে এমন আবহ সৃষ্টি করেন, যা পুরো পরিবেশকেই রহমত-বরকত দ্বারা আচ্ছাদিত করে দেয় এবং মুমিনদেরকে ইবাদত-বন্দেগী ও নেক আমলের উৎসাহ-উদ্দীপনা জোগাবে। তাদের পূণ্য ও প্রতিদানের সুসংবাদ দিতে জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয় এবং পাপাচার ও খারাপ কাজ হতে বিরত রাখতে জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। সব ধরনের ফিতনা-ফাসাদ ও অনিষ্ট হতে রক্ষা করতে কুমন্ত্রণাদাতা দুষ্ট জ্বিন ও শয়তানদেরকে শিকল লাগিয়ে আবদ্ধ করা হয়। তারপর কল্যাণের পথে অগ্রগামী হওয়ার ও অন্যায় থেকে নিবৃত্ত থাকার আহবান জানানো হয়।

 

আবু হুরায়রা (রা.) থেকেই বর্ণিত এক হাদীসে আছে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যখন রমযান মাসের প্রথম রাতের আগমন ঘটে, তখন দুষ্ট জ্বিন ও শয়তানদের শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়। জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয়, তার একটি দরজাও খোলা হয় না এবং জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়, তার একটি দরজাও বন্ধ করা হয় না। আর একজন ঘোষক ঘোষণা করতে থাকে-হে কল্যাণের প্রত্যাশী! অগ্রসর হও, হে অকল্যাণের প্রার্থী! থেমে যাও। আর আল্লাহ তা’আলা এ মাসের প্রতি রাতে অসংখ্য জাহান্নামীকে মুক্তি দান করেন।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদীস ১৮৭৯৪, ৫; বাইহাকী শুয়াবুল ঈমান, হাদীস-৩৬০১, সুনানে তিরমিযী, হাদীস-৬৮২, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস-১৬৪২ মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস-১৫৭২ মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস-৮৯৬০)

 

৫. জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের মাস এবং দুআ কবুলের মাস

পূর্বের হাদীসেই বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহ তা’আলা এ মাসের প্রতি রাত্রে অসংখ্য জাহান্নামীকে মুক্তি দান করেন। সুতরাং আমাদের কর্তব্য, বেশি বেশি নেক আমল এবং তাওবা-ইস্তিগফারের মাধ্যমে নিজেদেরকে এই শাহী ফরমানের অন্তর্ভুক্ত করা।

 

এ প্রসঙ্গে অন্য হাদীসে হযরত জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘অবশ্যই আল্লাহ তা’আলা রমযান মাসে প্রতি ইফতারের সময় অসংখ্য ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন। প্রতি রাতেই তা হয়ে থাকে।’ (সুনানে ইবনে  মাজাহ, হাদীস-১৬৪৩, মুসনাদে আহমদ, হাদীস-২২২০২, তবারানী হাদীস-৮০৮৮. বায়হাকী-৩৬০৫)

 

হযরত আবু হুরায়রা (রা.) অথবা আবু সাঈদ খুদরী (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘অবশ্যই আল্লাহ তা’আলা রমযান মাসের প্রত্যেক দিবস ও রাত্রিতে অসংখ্য ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন। এবং প্রত্যেক মুমিন বান্দার একটি করে দুআ কবুল করেন।’ (মুসনাদে আহমদ হাদীস ৭৪৫০, মুসনাদে বাযযার, হাদীস-৯৬২)

 

হযরত জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘রমযান মাসের প্রতিটি দিবস ও রজনীতে আল্লাহ তা’আলা অসংখ্য ব্যক্তিকে জাহান্নাম  থেকে মুক্তি দান করেন। প্রত্যেক মুসলিমের একটি দুআ, যা সে করে, কবুল করা হয়।’ (মুসনাদে বায্যার, হাদীস ৩১৪১, মাযমাউয যাওয়াইদ, ১৭২১৫)

 

৬. দানশীলতার মাস

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রা.) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন মানুষের মাঝে সর্বশ্রেষ্ঠ দাতা। তাঁর দানশীলতা (অন্য সময় হতে) অধিকতর বৃদ্ধি পেত রমযান মাসে, যখন জিব্রাইল আ. তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন। জিব্রাইল আ. রমযানের প্রতি রাত্রে আগমন করতেন এবং তাঁরা পরস্পর  কুরআন শুনাতেন। তো আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন কল্যাণবাহী বায়ুর চেয়েও অধিক দানশীল।’ (সহীহ বুখারী, হাদীস-৬, সহীহ মুসলিম হাদীস-২৩০৮, মুসনাদে আহমদ, ২৬১৬)

 

হযরত যায়েদ ইবনে খালেদ আলজুহানী (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো রোযাদারকে ইফতার করাবে, সে তার (রোযাদারের) অনুরূপ প্রতিদান লাভ করবে। তবে, রোযাদারের প্রতিদান হতে বিন্দুমাত্রও হ্রাস করা হবে না।’ (সুনানে তিরমিযী, হাদীস-৮০৭, মুসনাদে আহমদ, হাদীস-১৭০৩৩, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস-১৭৪৬, সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস-৩৪২৯, সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস-২০৬৪)

 

হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো রোযাদারকে পানাহার করিয়ে ইফতার করাবে, সে তার অনুরূপ সওয়াব লাভ করবে।’ (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক হাদীস-৭৯০৬)

 

৭. আমলের সওয়াব বহুগুণ বৃদ্ধির মাস

রমযান মাসের আরেকটি বৈশিষ্ট্য এই যে, এ মাস মুমিনের নেক আমলের প্রতিদান বৃদ্ধির মাস এবং আখেরাতের সওদা করার শ্রেষ্ঠ সময়। দুনিয়ার ব্যবসায়ীদের যেমন বিশেষ বিশেষ মৌসুম থাকে, যখন খুব জমজমাট ব্যবসা হয় এবং বছরের অন্য সময়ের তুলনায় আয়-উপার্জন ও মুনাফা বেশি হয়, তেমনি আখেরাতের ব্যবসায়ীদের জন্য ব্যবসার শ্রেষ্ঠ মওসুম হচ্ছে রমযান মাস। এ মাসে আমলের দ্বারা অনেক বেশি মুনাফা লাভ করা যায়।

 

এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, ‘হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক আনসারী নারীকে বললেন, তুমি কেন আমাদের সঙ্গে হজ্ব করতে যাওনি? তিনি বললেন, আমাদের পানি বহনকারী দু’টি মাত্র উট রয়েছে। একটিতে আমার ছেলের বাবা (স্বামী) ও তাঁর ছেলে হজ্ব করতে গিয়েছেন, অন্যটি পানি বহনের জন্য আমাদের কাছে রেখে গিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, রমযান মাস এলে তুমি উমরা করবে। কেননা এ মাসের উমরা একটি হজ্বের সমতুল্য।’

 

সহীহ মুসলিমের অন্য বর্ণনায় আছে, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, রমযান মাসের উমরা একটি হজ্বের সমতুল্য। অথবা বলেছেন, আমার সঙ্গে একটি হজ্বের সমতুল্য (সওয়াবের হিসাবে)। (সহীহ বুখারী, হাদীস, ১৭৮২, সহীহ মুসলিম-১২৫৬, মুসনাদে আহমদ, হাদীস-২০২৫)

 

হযরত উম্মে মাকিল (রা.) হতে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘রমযান মাসে উমরা হজ্বের সমতুল্য।’ (সুনানে তিরমিযী, হাদীস-৯৩৯, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১৯৮৬)

 

অন্য বর্ণনায় রয়েছে, উম্মে মাকিল (রা.) বলেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি তো হজ্ব করতে ইচ্ছুক। কিন্তু আমার উটটি দুর্বল। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি রমযান মাসে উমরা করো। কেননা রমযান মাসে উমরা (সওয়াব হিসেবে) হজ্বের সমতুল্য ‘ ( মুসনাদে আহমদ, হাদীস ২৭২৮৫)

 

৮. পাপ মোচন ও গুনাহ থেকে ক্ষমা লাভের মাস

হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন, ‘পাঁচ ওয়াক্ত নামায, এক জুমুআ থেকে আরেক জুমুআ এবং এক রমযান থেকে আরেক রমযান মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহসমূহকে মুছে দেয় যদি সে কবীরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকে।’ (সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৩৩/৩)

 

পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, রমযান মাস হল মাগফিরাত লাভের মাস, যে মাসে সকলের জন্য ক্ষমার দুয়ার উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। ক্ষমা লাভের এমন সূবর্ণ সুযোগ পেয়ে যে ব্যক্তি নিজের পাপসমূহ ক্ষমা করাতে পারে না সে সত্যিই ক্ষতিগ্রস্ত।

 

হযরত কাব ইবনে উজরা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে বললেন, তোমরা মিম্বরের নিকট সমবেত হও। আমরা সকলেই তথায় উপস্থিত হলাম। যখন তিনি মিম্বরের প্রথম সিড়িতে পা রাখলেন, তখন বললেন, আমীন, যখন দ্বিতীয় সিঁড়িতে পা রাখলেন বললেন, আমীন, যখন তিনি তৃতীয় সিঁড়িতে পা রাখলেন বললেন, আমীন।’

 

হযরত কাব ইবনে উজরা (রা.) বলেন, ‘যখন তিনি (মিম্বর থেকে) অবতরণ করলেন, আমরা জিজ্ঞেস করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আজ আমরা (মিম্বরে উঠার সময়) আপনাকে এমন কিছু কথা বলতে শুনেছি, যা ইতোপূর্বে কখনো শুনিনি। উত্তরে তিনি বললেন, জিব্রাইল (আ.) আমার নিকট আগমন করেছিলেন, যখন আমি প্রথম সিড়িতে পা রাখলাম, তখন তিনি বললেন, ধ্বংস হোক ওই ব্যক্তি যে রমযান মাস পেল, তবুও তার গুনাহ মাফ হল না। আমি বললাম, আমীন। যখন দ্বিতীয় সিঁড়িতে পা রাখলাম তখন বললেন, ধ্বংস হোক ওই ব্যক্তি যার নিকট আপনার (রাসুল সা.) নাম উচ্চারিত হল অথচ সে আপনার প্রতি দরূদ পড়ল না। আমি বললাম আমীন। যখন তৃতীয় সিঁড়িতে পা রাখলাম, তখন বললেন, ধ্বংস হোক ওই ব্যক্তি যে বৃদ্ধ পিতা-মাতা উভয়কে অথবা একজনকে পেল অথচ তারা উভয়ে তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাতে পারল না। অর্থাৎ তাদের খেদমতের মাধ্যমে নিজেকে জান্নাতবাসী করতে পারল না। আমি বললাম, আমীন।’ (মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস - ৭৩৩৮, মাযমাউয যাওয়াইদ, হাদীস-১৭৩১৭)

 

হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘রমযান মাস লাভকারী ব্যক্তি-যে উত্তমরূপে সিয়াম ও কিয়াম (রোযা, তারাবী ও অন্যান্য আমল) পালন করে-তার প্রথম পুরস্কার এই যে, সে রমযান শেষে গুনাহ থেকে ওই দিনের মতো পবিত্র হয় যেদিন মায়ের গর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হয়েছিল।’ (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদীস-৮৯৬৬)

 

৯. লাইলাতুল কদরের মাস

আল্লাহ রাববুল আলামীনের পক্ষ হতে মুসলিম উম্মাহর জন্য আরেকটি বিশেষ দান হল এক হাজার রাত অপেক্ষা উত্তম লাইলাতুল কদর। এই রাত এত মর্যাদাশীল ও বৈশিষ্ট্যপূর্ণ যে, এক হাজার রাত ইবাদত করলে যে সওয়াব হতে পারে, এই এক রাতের ইবাদতে তার চেয়েও বেশি সওয়াব পাওয়া যায়।

 

আল্লাহ তা’আলা এ রাত সম্পর্কে ইরশাদ করেছেন, ‘লাইলাতুল কদর এক হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। এ রাতে ফেরেশতাগণ ও রূহ (জিব্রাইল আ.) তাদের পালনকর্তার আদেশক্রমে প্রত্যেক কল্যাণময় বস্তু নিয়ে পৃথিবীতে অবতরন করেন। যে রাত পুরোটাই শান্তি, যা ফযর হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।’ (সূরা কদর, আয়াত- ৩-৫)

 

এই রাতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হওয়া চরম দুর্ভাগ্যের বিষয়।

 

হযরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) বর্ণনা করেন, ‘রমযান মাসের আগমন ঘটলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের উদ্দেশে বললেন, তোমাদের নিকট এই মাস সমাগত হয়েছে, তাতে এমন একটি রাত রয়েছে, যা এক হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। যে ব্যক্তি এ রাতের কল্যান থেকে বঞ্চিত হল, সে প্রকৃতপক্ষে সকল কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত। একমাত্র (সর্বহারা) দুর্ভাগাই এ রাতের কল্যান থেকে বঞ্চিত হয়।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস-১৬৪৪)

 

তাই প্রত্যেক মুসলমানের উচিত, ইবাদত-বন্দেগী, যিকির-আযকার, তাসবীহ-তাহলীল ও অন্যান্য নেক আমলের মাধ্যমে এ রাতের খায়ের-বরকত লাভে সচেষ্ট থাকা।




Md.Yousuf Miah
Accounts Officer
Daffodil International University
« Last Edit: July 03, 2013, 11:57:24 AM by Shamim Ansary »