দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধার মামলা

Author Topic: দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধার মামলা  (Read 3362 times)

Offline shilpi1

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 135
    • View Profile
কারো স্ত্রী যদি আইনগত কোনো কারণ ছাড়াই তার স্বামীর সাথে একত্রে বসবাস না করে, সেক্ষেত্রে স্বামী দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধারের জন্য তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে পারিবারিক আদালতে মামলা দায়ের করতে পারে।

কিন্তু এর দু’টি ব্যতিক্রম আছে-
ক. বিয়েটি স্ত্রীর ইদ্দতকালে অনুষ্ঠিত হলে, দাম্পত্য মিলন ঘটে থাকলেও স্বামী দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধারের জন্য কোনো আদেশ বা ডিক্রি পাবে না।
খ. স্ত্রীর নাবালকত্বকালে বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার পর যদি বৈধভাবে তার বিচ্ছেদ ঘটে থাকে তাহলে স্বামী তার বিরুদ্ধে কোন ডিক্রি পাবে না ।

দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধারের মামলায় বাদীকে অবশ্যই প্রমান করতে হবে যে, সে নির্দোষ ও নিরীহ মনোভাব নিয়েই আদালতের কাছে বিচার প্রার্থী হয়েছে। স্ত্রী যদি প্রমাণ করতে পারে যে, স্বামী তার সাথে নিষ্ঠুর আচরণ করেছে, তবে স্বামী ডিক্রি পাবে না।

নিষ্ঠুরতার আকার প্রকৃতি এমন হতে হবে যে, ওই অবস্থায় স্ত্রীর পক্ষে স্বামীর ঘরে যাওয়া নিরাপদ নয় , তখন সেটা হবে একটি উত্তম বৈধ প্রতিরক্ষামূলক চুক্তি ।

আশু দেনমোহর যতক্ষণ পর্যন্ত পরিশোধ করা না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত স্ত্রী তার স্বামীর সাথে বসবাস করতে ও তাকে দাম্পত্য মিলনের সুযোগ দিতে অস্বীকার করতে পারে।

দাম্পত্য মিলন হওয়ার আগে দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধারের দাবিতে স্বামী তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করলে সেই ক্ষেত্রে দেনমোহর অপরিশোধিত রয়েছে বললে আনীত মামলায় এটি একটি উত্তম প্রতিরক্ষামূলক চুক্তি হবে এবং আনীত মামলাটি নাকচ করা হবে।

কিন্তু স্ত্রীর সম্মতিক্রমে দাম্পত্য মিলন হওয়ার পর মামলাটি দায়ের করা হলে ‘আশু দেনমোহর’ প্রদানমূলক শর্তমূলক দাম্পত্য অধিকারের পুনরুদ্ধার সংক্রান্ত ডিক্রি দেওয়া যাবে।

তবে দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধারের জন্য একটি বৈধ বিবাহের অস্বিত্ব থাকতে হবে।

বিয়ের আগে সম্পাদিত কোনো চুক্তিতে যদি বলা হয় যে বিয়ের পর স্ত্রী তার পিতা-মাতার সাথে বসবাস করতে পারবে, তাহলে এটি অবৈধ হবে এবং এ জাতীয় কোনো চুক্তি দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধারের জন্য আনীত মামলায় কোনো জবাব হিসেবে গ্রহণযোগ্য হবে না।

একইভাবে বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পাদিত চুক্তিতে যদি উল্লেখ করা হয় যে এখন তারা একত্রে বসবাস করবে এবং যদি স্বামীর প্রস্তাবে একমত হতে না পারে তাহলে সেখানে চুক্তিটি স্ত্রী স্বামীকে ত্যাগ করতে পারবে, সেখানে চুক্তিটি অবৈধ হবে এবং স্বামী কর্তৃক আনীত দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধারের মামলায় এটা উত্তম যুক্তি বলে গন্য হবে না।

তবে দ্বিতীয় স্ত্রীকে বাড়িতে বসবাস করার অনুমতি দান করে তাকে ভরণপোষণ প্রদানে সম্মত হয়ে তার সাথে সম্পাদিত চুক্তি আইন দ্বারা কার্যকর হবে।

তবে স্ত্রী নিম্নোক্ত কারণে স্বামীর দাম্পত্য অধিকার পূণরুদ্ধার দাবী অস্বীকার করতঃ বিপরীত দাবী করতে পারে। যথাক্রমে-
ক. স্বামীর নিষ্ঠুরতা
খ. স্বামী হতে পৃথক থাকার ক্ষমতা দান
গ. আশু মোহরানা পরিশোধ না করা
ঘ. স্ত্রীর বিরুদ্ধে স্বামী কর্তৃক মিথ্যা অভিযোগ আনয়ন
ঙ. স্বামীকে সমাজচ্যূতকরণ;
চ. বিবাহের মিথ্যা দাবী সংক্রান্ত মামলা
ছ. ওয়াদা ভঙ্গের দাবী ও
জ. স্ত্রী অপহরণ

দাম্পত্য অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবির ক্ষেত্রে আইনবিদদের মধ্যে রয়েছে দ্বিমত। বিভিন্ন মামলার নজিরেও ভিন্নমত পাওয়া গেছে। এতে অভিযোগ উঠেছে, কেউ যদি স্বাধীনচেতা হন, পূর্ণাঙ্গভাবে আলাদা থাকতে চান এতে সংবিধানের ২৭, ৩১ ও ৩২ অনুচ্ছেদের সঙ্গে দাম্পত্য অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার একতরফা দাবির কোনো সংঘাত হবে কি-না।

১৮ বিএলডি (১৯৯৮)-এ খোদেজা বেগম বনাম মোঃ সাদেক মামলার রায়ে বলা হয়, ‘দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধার স্বামী-স্ত্রী উভয়ের জন্য একটি পারষ্পরিক অধিকার। সংবিধানের কোনো অনুচ্ছেদের সঙ্গে এটি বৈষম্যমূলক কিংবা অসামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।’

হোসেন জাহান বনাম মো: সাজাহান মামলায় (১৮ বিএলডি, ১৯৯৮) বলা হয়, ‘বিনা  কারণে যদি কোনো স্ত্রী দাম্পত্য মিলনে অস্বীকার করেন তাহলে স্বামী মামলা করতে পারেন।’

আরেকটি মামলার (১৬ বিএলডি,১৯৯৬ পৃষ্টা ৩৯৬-৩৯৮) লিপিবদ্ধ বর্ণনায় নিম্ন আদালত থেকে স্বামীর পক্ষে ডিক্রি এবং আপিলের রায়ের বিরুদ্ধে স্ত্রী রিভিশন মামলা করলে হাইকোর্ট বিভাগের দ্বৈত বেঞ্চ (বিচারপতি গোলাম রব্বানী ও বজলুর রহমান তালুকদারের সমন্বয়ে গঠিত) এ ডিক্রি বাতিল করেন এবং দাম্পত্য অধিকার মোকদ্দমা ডিসমিস করেন।

ওই রায়ে সৈয়দ আমির আলীর মোহামেডান “ল” গ্রন্থ থেকে বিয়ের সংজ্ঞা বিশ্লেষণ করা হয় এবং বলা হয়-
‘কোনো দেওয়ানি বা ধর্মীয় আইনের চোখে ইসলামী আইন অধিক কঠোর, যা একজন মহিলাকে তাঁর বিবাহিত জীবনের অত্যাচার থেকে রক্ষা করে। ইসলামি আইনে এ অত্যাচার স্বামী কর্তৃক কেবল দৈহিক বা মানসিক অত্যাচার বোঝায় না, স্বামীর সঙ্গে বসবাসে স্ত্রীর অনিচ্ছুকতাও বোঝায়।’

দাম্পত্য পুনরুদ্ধার মোকদ্দমার ক্ষেত্রে স্বামীরা এ প্রতিকার বেশি চাইলেও ৯০ শতাংশ ডিক্রিই স্ত্রীর পক্ষে যায়। আর এ ধরনের প্রতিকার স্বামী বা স্ত্রীকে দাম্পত্য অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ডিক্রি কোনো পক্ষ পেলেও সাধারণত ডিক্রি কার্যকর হয় না। এ ডিক্রি প্রাপ্তির ফলে কেবল স্বামী বা স্ত্রীর ওপর দাম্পত্য অধিকারটি স্থাপিত করা যায়, যাতে অপর পক্ষ দ্বিতীয় বিয়ে কিংবা বিনা কারণে তালাক না চান।

তবে তাঁকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপরে জোর করা যায় না। এতে সংবিধানে লিপিবদ্ধ মৌলিক অধিকার লংঘিত হয়। তবে কেউ যদি তালাক চান, তাহলে আলাদাভাবে তা কার্যকর করতে হবে। আর স্বামী-স্ত্রীর ঘর-সংসার করার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও যদি শ্বশুরবাড়ির লোকজন এতে বাঁধা দেয়, তাহলে ফৌজদারী আদালতের আশ্রয় নেওয়া যায়।

Offline monirulenam

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 295
  • Test
    • View Profile