রাত্রির আকাশের দিকে তাকিয়ে কখনো ধূমকেতু দেখেছেন? প্রায় স্থির চাঁদ-সূর্য বা তারাদের সাথে ধূমকেতুর একটি পার্থক্য হলো, আকাশের বুক চিরে দ্রুত এর ছুটে যাওয়া। পৃথিবী থেকে যেসব ধূমকেতু দেখা যায় তার পেছনে থাকে একটি পুচ্ছ বা লেজ। এর কারণ হলো, সূর্যের তাপে রান্না হয়ে যায় এই ধূমকেতু! বিশ্বাস হচ্ছে না তো? সম্প্রতি গ্রিনবোল্টে নাসা’র গডার্ড স্পেস ফ্লাইট সেন্টারের অ্যানিমেটরেরা তৈরি করেন এমন একটি শর্ট মুভি যাতে দেখা যায় কিভাবে সূর্য একটা ধূমকেতুকে রান্না করে ফেলছে!
সৌরজগতের মাঝে দিয়ে একটি ধূমকেতুর যাত্রা যেমন বিপজ্জনক তেমনি দুর্ধর্ষ! সূর্যের এত কাছ দিয়ে এরা যায় যে সূর্যের শরীর থেকে উঠে আসা একটা মাত্র সোলার ফ্লেয়ারে এর পুচ্ছ একবারে ছিঁড়েখুঁড়ে যেতে পারে। এটা মঙ্গলে গ্রহের কাছাকাছি অর্থাৎ সূর্য থেকে ২৩০ মিলিয়ন মাইল দূরে থাকা অবস্থাতেই সূর্যের তাপে ধূমকেতুর পানি ফুটতে শুরু করে। ধূমকেতুর মৃত্যুর প্রথম ঘণ্টা হলো এটা। এর যদি সে এই উত্তাপ সহ্য করেও টিকে থাকে, তবে সূর্যের আরও কাছে এলে এর মৃত্যুর আশঙ্কা আরও বেড়ে যায়।
কমেট আইসোন হলো এমনি একটি ধূমকেতু যা সৌরজগতের মাঝে ভ্রমন করছে। উর্ট মেঘ নামের একটি বিশাল গ্যাসীয় পুঞ্জ থেকে জন্ম নিয়ে এই ধূমকেতু সূর্যের দিকে ছুটে যাচ্ছে। এই নভেম্বরের ২৮ তারিখে সে সূর্যের সবচাইতে কাছে পৌঁছাবে। সূর্যের উপরিভাগের ৭৩০,০০০ মেইল উপর দিয়ে যাবে এই ধূমকেতু। এটা যদি অক্ষত অবস্থায় সূর্যকে চক্কর দিয়ে আসতে পারে, তবে একে খালি চোখেই দেখা যাবে উত্তর গোলার্ধ থেকে। আর বিজ্ঞানীদের মতামত থেকে জানা যায়, আইসোন বেশ উজ্জ্বল এবং সুন্দর একটা ধূমকেতু হিসেবে মানুষের চোখে ধরা পড়বে।
আইসোন যদি সূর্যকে পাক দিয়ে ঘুরে আসার সময়েই বিলীন হয়ে যায়, তার পরেও বিজ্ঞানীদের চোখে এর গুরুত্ব কম নয় বই কি! এর ব্যাপারে গবেষণা করে বিজ্ঞানীরা জানতে পারছেন এই ধূমকেতু কি দিয়ে তৈরি, এটি বিভিন্ন পরিবেশে কি প্রতিক্রিয়া দেখায় আর সৌরজগতের উৎপত্তির রহস্য সমাধানে এর কি ভুমিকা থাকতে পারে। সূর্যের কাছাকাছি এসে প্রচণ্ড উত্তপ্ত এবং বৈরি পরিবেশে এই ধূমকেতু কি আচরণ করে তা থেকে স্বয়ং সূর্যের ব্যাপারেও অনেক কিছু জানা যাবে বলে আশা করছেন তারা।(priyo.com)