Bangladesh > Law of Bangladesh

প্রথম স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া দ্বিতীয় বিয়ে?

(1/1)

shilpi1:
ক স্ত্রীর বর্তমানে আরেকটি বিয়ে করাই বহু বিবাহ। ইসলামী আইনে বলা হয়েছে, কেউ যখন বস্তুগত দিক দিয়ে এবং স্নেহ ভালবাসার দিক দিয়ে প্রত্যেক স্ত্রীর সাথে সমান আচরণ করতে পারবে কেবল তখনই সে চারটি পর্যন্ত বিয়ে করতে পারবে।

তবে বাস্তবে এটা কখনও সম্ভব নয়। কারণ, যে স্বামী নিজের স্ত্রীকে ভালবাসে তার দ্বিতীয় বিয়ে করার ইচ্ছেই হবে না। কাজেই পবিত্র কোরআনে বহু বিবাহকে অনুমতি দেওয়ার চেয়ে একটি বিয়ে করাই উত্তম বলে উল্লেখ করেছে।

আমাদের সমাজে একাধিক স্ত্রী গ্রহণের আইনগত অধিকার স্বামীদের থাকলেও নারীদের ক্ষেত্রে এ ধরণের বিধান নেই। এখানে উল্লেখ্য যে একই সঙ্গে স্বামী চারজনের অধিক স্ত্রী গ্রহণ করতে পারবে না।

বহুবিবাহের আর্থসামাজিক বাস্তবতা
ইসলামে বহুবিবাহের অনুমতি প্রদান করা হয়েছে ইসলাম আবির্ভাবের প্রথমদিকে একটি ভিন্ন আর্থসামাজিক ও অস্থিতিশীল রাজনৈতিক বাস্তবতায়।

মূলত বিধবা, এতিমদের নিরাপত্তা ও রক্ষার জন্যই ইসলামে এ ধরণের প্রতিকারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

সেসময়কার পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ওহুদের যুদ্ধে বহু মুসলিম পুরুষ শাহাদত বরণ করেন, ফলে স্বাভাবিকভাবে অভিভাবক ও স্বামীহীন নারীরা চরম নিরাপত্তাহীনতা বোধ করে।

এসব নারীদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তার জন্য বহুবিবাহ প্রথা চালু হয়।

কোরআন শরীফের বিধান
পবিত্র কোরআন শরিফের সূরা নিসায় পরিষ্কার উল্লেখ আছে, ‘যদি তুমি আশঙ্কা কর যে, এতিমদের প্রতি তুমি সুবিচার করতে পারবে, তবে তুমি এ ধরনের নারীদের বিয়ে করতে পারো যাকে ভাল লাগে তাদের মধ্যে থেকে দুই, তিন অথবা চার। কিন্তু যদি তুমি আশঙ্কা কর যে, এদের মধ্যে তুমি সুবিচার করতে পারবে না তবে তাদের মধ্যে থেকে অথবা যারা তোমার আশ্রয়ে রয়েছে তাদের মধ্য থেকে একজনকেই বিয়ে কর। অন্যায় এড়ানোর এটাই সহজ ও উত্তম ব্যবস্থা।’

এখানে সুবিচারের প্রশ্নে শুধু স্বামীর অর্থনৈতিক সচ্ছলতার সমান ব্যবহারের কথা বলা হয়নি বরং স্নেহ, মায়া, ভালবাসা, আদর সোহাগের বিষয়ে পরিষ্কার উল্লেখ রয়েছে।

একাধিক স্ত্রী গ্রহণের ক্ষেত্রে স্বামীরা কি আদৌ আদর সোহাগের মতো সূক্ষ্ম অনুভূতির ক্ষেত্রে ন্যায় বিচার করতে পারে? মূলত এটা অসম্ভব তাই বলা যায়, শর্তসাপেক্ষে অনুমোদন সাপেক্ষে বহু বিবাহকে কঠিন নিষেধাজ্ঞাতে পরিণত করেছে।

মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ ১৯৬১
আইনের ধারা ৬ মতে, দ্বিতীয় বিয়ের ক্ষেত্রে সালিশি পরিষদের নিকট থেকে অনুমতি না নিলে বিয়ে নিবন্ধন হবে না। অনুমতির জন্য ২৫ টাকা ফি দিয়ে সাদা কাগজে চেয়ারম্যানের নিকট আবেদন করতে হবে এবং আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিয়ের অনুমতি প্রদানে যে সব বিষয়ের প্রতি বিবেচনা করা হবে তার মধ্যে অন্যতম হলো:

১) বর্তমান স্ত্রীর বন্ধাত্য, ২) দৈহিক দৌর্বল্য, ৩) দাম্পত্য জীবন সম্পর্কিত শারীরিক অযোগ্যতা এবং ৪) দাম্পত্য অধিকার পুনর্বহালের জন্য কোনো উম্মত্ততা।

স্ত্রীর অধিকার লংঘনে আইনী প্রতিকার
কোনো পুরুষ যদি সালিশি পরিষদের অনুমতি ছাড়া দ্বিতীয় বিয়ে করেন তবে তিনি অবিলম্বে তার বর্তমান স্ত্রী বা স্ত্রীদের আশু বা বিলম্বিত দেন মোহরের সম্পূর্ণ টাকা তৎক্ষণাৎ পরিশোধ করবেন এবং মোহরানার টাকা পরিশোধ করা না হলে বকেয়া ভূমি রাজস্ব আদায়ের মতো আদায় করা হবে।

এছাড়াও অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হলে ১ বছর পর্যন্ত জেল ও ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড কিংবা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

পাশাপাশি দণ্ডবিধির ৪৯৪-এর বিধান মতে, স্বামী যা স্ত্রীর জীবনকালে পুনরায় বিয়ে করেন তবে সে ব্যক্তি যে কোনো বর্ণনার কারাদণ্ডে যার মেয়াদ সাত বছর পর্যন্ত হতে পারে তদুপরি অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবে।

তবে একটি বিষয় পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করা উচিৎ, বহু বিয়ের মামলায় বাদীকে সফল হতে হলে অবশ্যই প্রমাণ করতে হবে যে, দ্বিতীয় বিয়ের সময় প্রথম বৈধ বিয়ের অস্তিত্ব ছিল।

বহু বিবাহের আইনগত দিক
বাস্তবতা হলো এই যে, বেশিরভাগ মানুষ কেউ বুঝে, অথবা কেউ না বুঝেই এর অপব্যাখ্যা করেন। ফলে সমাজে কোনো কোনো পুরুষ যথেচ্ছাভাবে একাধিক বিয়ের মধ্য দিয়ে পারিবারিক জীবনে মহা জটিলতার সৃষ্টি করেন, যার ফলে উদ্বেগজনক প্রক্রিয়ায় বৃদ্ধি পাচ্ছে স্বামী পরিত্যক্ত নারীদের সংখ্যা।

এ ধরনের পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণের জন্য ১৯৬১ সালে আইন প্রবর্তন করা হয় যা মুসলিম পাবিরারিক আইন অধ্যাদেশ ১৯৬১ নামে পরিচিত।

এ আইন অনুযায়ী আগে সালিশী পরিষদের নিকট হতে লিখিত অনুমতি না নিয়ে কোনো পুরুষ একটি বিয়ে বলবৎ থাকাকালে আর একটি বিয়ে করতে পারবে না এবং পূর্বানুমতি গ্রহণ না করে এই জাতীয় কোনো বিবাহ হলে তা মুসলিম বিবাহ ও তালাক (রেজিষ্ট্রেশন আইন ১৯৭৪ মালের ৫২ নং আইন মোতাবেক রেজিষ্ট্রী হবে না)।

- বিয়ের অনুমতির জন্য নির্দিষ্ট ফি জমা দিয়ে নির্ধারিত পদ্ধতিতে চেয়ারম্যানের নিকট আবেদন করতে হবে এং আবেদনপত্রে প্রস্তাবিত বিবাহের কারণ এবং বর্তমানে স্ত্রী বা স্ত্রীগণের সম্মতি নেওয়া হয়েছে কিনা তা উল্লেখ করতে হবে।

- আবেদনপত্র পাঠাবার পর চেয়ারম্যান আবেদনকারী ও তার বর্তমান স্ত্রী বা স্ত্রীগণকে তাদের নিজ নিজ প্রতিনিধি মনোনয়ন করতে বলবে এবং সালিশী পরিষদ যদি মনে করে যে, প্রস্তাবিত বিয়েটি প্রয়োজন ও ন্যায়সঙ্গত তা  হলে কোনো শর্ত থাকলে সে সাপেক্ষে প্রার্থীর বিয়ের অনুমতি মঞ্জুর করতে পারেন।

- আবেদনপত্র সম্পর্কে সিদ্ধান্তকালে, সালিশী পরিষদ এ সিদ্ধান্তের কারণগুলো লিপিবদ্ধ করবে এবং কোনো পক্ষ নির্দিষ্ট ফি জমা দিয়ে নির্ধারিত পদ্ধতিতে নির্ধারিত সময়ে সংশ্লিষ্ট সহকারি জজের পুনর্বিচারের জন্য আবেদন করতে পারবে এবং এতে সহকারি জজের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে এবং এর বৈধতা সম্পর্কে কোনো আদালতে প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবে না।

- বর্তমান স্ত্রী বা স্ত্রীদের প্রাপ্য মুয়াজ্জল বা মু-অজ্জল দেনমোহরের টাকা তৎক্ষণাৎ পরিশোধ করবে। যদি সে টাকা পরিশোধ করা না হয় তা হলে বকেয়া ভূমি রাজস্ব রূপে আদায় করা হবে।

 বহু বিবাহেরে ক্ষেত্রে ইউপি চেয়ারম্যান সাহেবের দায়-দায়িত্ব
১. বহু বিবাহের ক্ষেত্রে চেয়ারম্যান সাহেব স্বামীকে অনুমতি দিতেও পারে আবার নাও দিতে পারে।
২. যদি কোনো স্বামী সালিশী পরিষদের মাধ্যমে অনুমতি পেয়ে যায় তাহলে চেয়ারম্যান সাহেব তাকে স্মারক নং-সহ দ্বিতীয় বিয়ের অনুমতি প্রদান করবে।
৩. অনুমতি ছাড়া স্বামী বহু বিবাহ করলে চেয়ারম্যান সাহেব তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বর্তমান স্ত্রীকে উদ্বুদ্ধ করতে পারবে।
৪. সালিশী পরিষদের অনুমতি ছাড়া কোনো ব্যক্তি যদি অন্য একটি বিয়ে করে, সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাহেব ম্যাজিষ্ট্রেটের কাছে একটি অভিযোগ দায়ের করতে পারবে।

বহু বিবাহের ক্ষেত্রে কাজী সাহেবের দায়-দায়িত্ব
বিবাহটি বরের বহু বিবাহ কিনা তা যাচাই করবে।

সলিশী পরিষদের লিখিত অনুমতি আছে কিনা তা দেখবে।

সত্যতা যাচাইয়ের জন্য কাজী সাহেব যে কোনো পন্থা অবলম্বন করতে পারেন আবার সন্দেহ হলে বিয়েটি নাও রেজিস্ট্রি করতে পারেন।

mahakash713:
যদিও দ্বিতীয় বিয়ের ইচ্ছা নাই  :P , তারপরেও একটা হেল্পফুল পোস্ট। ধন্যবাদ

abduarif:
Useful post! Thanks a lot.

Navigation

[0] Message Index

Go to full version