প্রবীণদের ডায়াবেটিস (বহুমূত্র)
আমাদের পেটের ভিতরে পিঠের কাছে অগ্ন্যাশয় নামে একটি গ্রন্থি আছে। এই গ্রন্থি থেকে ইনসুলিন নামক এক প্রকার রস (হরমোন) তৈরি এবং নিসৃত হয়। আমরা যে খাদ্য গ্রহণ করি তা হজমের পর গ্লুকোজ নামক চিনিতে রূপান্তরিত হয়। এই গ্লুকোজ থেকেই আমাদের শরীর শক্তি পেয়ে থাকে। গ্লুকোজ থেকে শক্তি বের করার কাজে ইনসুলিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ডায়াবেটিস রোগে এই ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমে যায় অথবা অগ্ন্যাশয় প্রয়োজনীয় ইনসুলিন তৈরিতে সম্পূর্ণ অসমর্থ হয়ে পড়ে। যার ফলে শরীরে গ্লুকোজ থেকে শক্তি তৈরি করতে পারে না। এই অসুখে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ দীর্ঘস্থায়ী ভাবে বেড়ে যায় এবং বিভিন্ন প্রকার অসুবিধা ও জটিলতার সৃষ্টি হয়।
ডায়াবেটিস কাদের হতে পারে
ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র কোন সংক্রামক ব্যাধি নয়। এই রোগের কোন জীবাণু নেই।
ডায়াবেটিস কেন হয় তা সম্পূর্ণভাবে এবং সঠিকভাবে জানা না গেলেও কিছু বৈশিষ্ট্য, কিছু অভ্যাস এই অসুখের সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত ।
বংশানুক্রম এমন একটি বৈশিষ্ট্য যা ডায়াবেটিসের কারণ হতে পারে। মা এবং বাবা উভয়েরই অথবা যে কোন একজনের যদি ডায়াবেটিস থাকে তবে সন্তানেরও এই অসুখে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা থাকে।
যারা কায়িক পরিশ্রম কম করেন এবং প্রধানত মেধাজনিত পেশায় নিয়োজিত তারা এই রোগের ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী।
শারীরিকভাবে স্থূল ব্যক্তি।
রোগের লক্ষণ
বেশি প্রস্রাব হওয়া, ঘন ঘন পিপাসা, মুখ শুকিয়ে যাওয়া ।
বেশি ক্ষুধা, পর্যাপ্ত খাদ্য গ্রহণ সত্বেও মাত্রাধিক দুর্বলতা অনুভব করা, শরীর শুকিয়ে যাওয়া, কোন ক্ষতস্থান সহজে ভালো না হওয়া।
অধিকাংশ ডায়াবেটিস রোগীই প্রাথমিক এই লক্ষণগুলো বুঝতে পারেন না। বয়স্ক রোগীদের মধ্যেও অনেক সময়ে ডায়াবেটিস রোগের লক্ষণগুলো দেখা যায় না। সাধারণত কোন কারণে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করলেই এই অসুখ ধরা পড়ে।
রোগের প্রকারভেদ
বহুমূত্র বা ডায়াবেটিস রোগ কয়েক প্রকার হয়ে থাকে :
ইনসুলিন নির্ভরশীল ডায়াবেটিস: এই রোগীদের বেঁচে থাকতে হলে ইনসুলিন ইনজেকশন নিতেই হবে আমাদের দেশে এই রোগীর সংখ্যা খুব বেশি নয়।
ইনসুলিন নির্ভরশীল নয় এমন ডায়াবেটিস: প্রায় ক্ষেত্রেই খাদ্য নিয়ন্ত্রণ, ব্যায়াম এবং কিছু ক্ষেত্রে মুখে খাবার ঔষধের মাধ্যমে এই প্রকার বহুমূত্র রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। কখনো বা ইনজেকশনের প্রয়োজন হতে পারে।
অপুষ্টিজনিত ডায়াবেটিস
গর্ভকালীন ডায়াবেটিস
নিরাময়
ডায়াবেটিস সারা জীবনের অসুখ। এ অসুখ চিকিৎসা করে সারিয়ে তোলা যায় না। নিয়মমাফিক জীবন যাপনের মাধ্যমে এ রোগ সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রাখা যায়। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকলে রোগী সম্পূর্ণ স্বাভাবিক থাকতে পারেন।
অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের জটিলতা
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে কি অসুবিধা হতে পারে। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস থেকে বিভিন্ন জটিল ও মারাত্মক উপসর্গ দেখা দিতে পারে। যেমন :
হৃদরোগ
কিডনী রোগ
মস্তিস্কের রোগ
পক্ষাঘাত
চোখের বিভিন্ন অসুখ এমন কি অন্ধত্ব
পায়ে পচনশীল ক্ষত
মাড়িতে ঘা ও বিভিন্ন প্রকার চর্মরোগ ইত্যাদি।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ
ডায়াবেটিস সারানো যায় না কিন্তু সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
এই অসুখ নিয়ন্ত্রণে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়। যেমন:
খাদ্য নিয়ন্ত্রণ করা
নিয়মিত ব্যায়াম করা
শৃংখলা মেনে জীবন যাপন করা
ঔষধ (কিছু ক্ষেত্রে) সেবন করা
প্রতি রোগীর নিজস্ব খাদ্য তালিকা থাকতে হবে
নির্দিষ্ট পরিমাণ খাবার সময় মতো খেতে হবে
চিনি, গুড়, মধু ইত্যাদি জাতীয় খাদ্য বাদ দিতে হবে
খাদ্য নিয়ন্ত্রণ : খাদ্য নিয়ন্ত্রণ অর্থ কম খাওয়া নয়। রোগীর উচ্চতা এবং ওজন অনুযায়ী ঠিক যতটুকু খাদ্য প্রয়োজন ততটুকু খেতে হবে। একবারে বেশি খেয়ে দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকলে চলবে না।
ব্যায়াম : ব্যায়াম ইনস্যুলিনের কার্যকারিতা বাড়িয়ে দেয়। প্রতিদিন বিকালে অন্তত ৪৫ মিনিট ব্যায়ামে করলে তা ডায়াবেটিস সহায়ক হয়।
শৃংখলা: ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে শৃংখলার গুরুত্ব অপরিসীম। নিয়মিত সুষম খাদ্য গ্রহণ, নিয়মিত ব্যায়াম, ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ, শরীরের (বিশেষতঃ পায়ের) যত্ন নেয়া, পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকা ইত্যাদি শৃংখলারই অংশ।
ঔষধ : খাদ্য নিয়ন্ত্রণ ও ব্যায়ামের মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে ঔষধের প্রয়োজন হয়। রক্ত পরীক্ষা এবং রোগীর শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা করে ডাক্তার ঔষধ নির্ধারণ করবেন। এ ব্যাপারে নিয়মিত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ রাখতে হবে।
ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র নিয়ন্ত্রণে রাখার উপায়
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলা
খাদ্য নিয়ন্ত্রণ। নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ খাবার গ্রহণ করা
মিষ্টি জাতীয় খাদ্য সম্পূর্ণ পরিহার করা
শরীরের বাড়তি ওজন (স্থূলতা) কমানো
প্রতিদিন বিকালে অন্তত ৪৫ মিনিট হাঁটা
ঔষধের প্রয়োজন হলে ডাক্তারের পরামর্শমত নির্দিষ্ট মাত্রার ঔষধ সেবন
পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা
ধূমপান থেকে মুক্ত থাকা
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো
শারীরিক কোন অসুবিধা দেখা দিলে বিলম্ব না করে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া
এভাবে নিয়মিত সুশৃংখল জীবন যাপনের মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
চিকিৎসার জন্য যোগাযোগ
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
জেলা সদর হাসপাতাল
মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
বিশেষায়িত সরকারী/বেসরকারী হাসপাতাল