তাঁর আসার কথা ছিল সকাল ১০টায়।
ভারতীয় ক্রিকেট দলকে নিয়ে বাসটা যখন ইডেন গার্ডেনসের সামনে থামল, ঘড়িতে ১১টা। স্টেডিয়ামের ঢোকার গেট থেকে ড্রেসিংরুমের পথে আগে থেকেই দাঁড়িয়ে একদল শিশু-কিশোর। ১৯৯ জন! সবার পরনে তাঁর মুখ আকা টি-শার্ট। মাঠের আশপাশে উৎসাহী দর্শনার্থী আরও কয়েক গুণ বেশি। যাঁরা আবার তাঁর একটু বেশি ভক্ত, সে রকম অনেকে পাঁচিল টপকে নিরাপত্তাপ্রহরীদের ফাঁকি দিয়ে ঢুকে গেছেন ভেতরেও। এঁদের সংখ্যাটা একটু একটু করে যখন বাড়ছে, নিরাপত্তাপ্রহরীদের টনক নড়ল। কিন্তু আর সামলানোর সময় ছিল না।
যাঁর অপেক্ষায় এত কিছু, বাস থেকে তিনি ততক্ষণে নেমে গেছেন! শচীন টেন্ডুলকার।
রাশি রাশি গোলাপের পাপড়ি ছেটানো হলো। এই ফুলেল পথেই তিনি হেঁটে এগিয়ে গেলেন। কী শান্ত আর স্বাভাবিক! অন্য রকম কিছুই নয়—এ যেন স্রেফ আরেকটা টেস্ট ম্যাচের আগে অনুশীলনে আসা! ড্রেসিংরুমের সামনেই একটা মোমের মূর্তি। তাঁরই। একেবারে মেপে মেপে ৫ ফুট ৫ ইঞ্চির ‘শচীন টেন্ডুলকার’ বানিয়ে সাজিয়ে রেখেছে ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গল (সিএবি)। সেটা দেখে মুচকি হাসলেন কেবল, আর বেশি কিছু নয়। তারপরই ড্রেসিংরুমে, কিছুক্ষণ পর প্যাড পরে ব্যাট হাতে অনুশীলনে। দেখে কে বলবে এই লোকটাই কাল থেকে এই মাঠে ক্যারিয়ারের শেষের আগের টেস্টটা খেলতে নামবেন! কে বলবে তাঁর বিদায় নিয়ে ভারতসহ পুরো ক্রিকেট-বিশ্বে কী উন্মাদনা চলছে। তিনি যে গত ২৪ বছরের যেকোনো দিনের মতোই স্বাভাবিক, শান্ত!
অনুশীলনের জন্য দুটি নেট করা হয়েছিল। একটিতে বল করছেন পেসাররা, অন্যটিতে স্পিনাররা। দুটোই ব্যস্ত তখন। এই ফাঁকে মিনিট দশেক কোচ ডানকান ফ্লেচারের সঙ্গে কথা বললেন। তারপর তাঁর পালা এল। প্রথম পেস বোলিংয়ের নেটে ইশান্ত শর্মা আর মোহাম্মদ সামিদের খেললেন কিছুক্ষণ, পরে পাশের নেটে গিয়ে নিজেকে বাজিয়ে দেখলেন অমিত মিশ্র আর প্রজ্ঞান ওঝাদের বিপক্ষেও। দুয়েকবার পরাজিত হয়েছেন বটে, কিন্তু ব্যাট হাতে এই চল্লিশেও কী স্বছন্দ!
এর আগে ক্যারিয়ারের ১৯৯তম টেস্ট খেলতে পরশু রাতে যখন কলকাতায় পা রাখেন, নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু বিমানবন্দরে হাজারো মানুষ। ১৯৯টি গোলাপ দিয়ে তাঁকে বরণ করেছেন সিএবি সভাপতি বিশ্বরূপ দে। শুভাকাঙ্ক্ষীদের দেওয়া ফুলের মালায় ঢেকে গেছে গায়ের ছাইরঙা টি-শার্ট। ভিড় সামলাতে গিয়ে নিরাপত্তাপ্রহরীরা এতটাই হিমশিম খেলেন, একবার তাঁকে বের করতে গিয়ে আবার ঢুকিয়ে নেওয়া হয় ভেতরে। শেষ পর্যন্ত যখন কড়া নিরাপত্তায় হাসি মুখে সমর্থকদের উদ্দেশে হাত নাড়তে নাড়তে বেরিয়ে গেলেন, বিমানবন্দর যেন ভরা গ্যালারির জীবন্ত স্টেডিয়াম!
টেন্ডুলকার বিদায়ের এটা তো শুধু ট্রেলার। আসল সিনেমা শুরু হবে ইডেনে কাল থেকে! ওয়েবসাইট।