শিশুর বয়স ছয় মাস পেরোলেই, দাঁতহীন মাড়ি দিয়ে সে সবকিছু কামড়ে দিতে চায়। আচরণেই বোঝা যায়, শিশুর নতুন দাঁত উঠছে। দাঁত নিচের মাড়িতেই সাধারণত প্রথম দেখা যায়।
শিশুর মুখে প্রথম দাঁত ওঠার সময় ছয় মাস বলা হলেও ঠিক ওই সময়ে যে দাঁত দেখা যাবে এমনটা কিন্তু না-ও হতে পারে। যখন শিশুর বয়স দুই থেকে আড়াই বছর হবে তখন তার মুখে থাকবে মোট ২০টি দাঁত। এ দাঁতগুলোর যত্ন নিতে হবে প্রথম থেকেই। আবার ১২ থেকে ১৩ বছরের মধ্যে সব দাঁত পড়ে নতুন স্থায়ী দাঁত জায়গা করে নেয়। কেমন করে শিশুর দুধ দাঁত আর স্থায়ী দাঁতের যত্ন নিতে হবে, জেনে নিন তার আদ্যোপান্ত।
যত্ন নিতে হবে দাঁত ওঠার আগে থেকেই। প্রতিবার খাওয়ার পর ভেজা কাপড় দিয়ে দাঁতহীন মাড়ি মুছে দিন।
যখন মুখে দাঁত দেখা যাবে, শিশুদের জন্য তৈরি বিশেষ টুথব্রাশ দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করে দিতে হবে দুই বেলা।
শিশুদের উপযোগী টুথপেস্ট ব্যবহার করুন।
খেয়াল রাখতে হবে, শিশু যেন পেস্টের সবটাই গিলে না ফেলে। তাই ব্রাশে পেস্ট লাগাতে হবে খুব অল্প করে।
খাবারের তালিকায় অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। আর খাওয়াতে হলে, খাওয়া শেষে মুখ ধুয়ে দিন।
আস্তে-ধীরে বোতলে করে খাবার খাওয়ানোর অভ্যাস পরিবর্তন করে নিন। বোতল অনেকক্ষণ ধরে দাঁতের সংস্পর্শে থাকলে দাঁতে ক্ষয় (ক্যারিজ) হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
কোমল পানীয় শিশুর দাঁতের জন্য ক্ষতিকর। একদমই খাওয়ানো উচিত নয়।
দুধ দাঁত কোনো দুর্ঘটনায় পড়ে গেলে আতঙ্কিত না হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। প্রয়োজনে খোলা পরা যায় এমন কৃত্রিম দাঁত লাগিয়ে নিতে পারেন, তাতে পাশের দাঁতগুলো হেলে পড়ার অশঙ্কা কমবে।
দুধ দাঁত নড়তে শুরু করলে, চাইলে বাড়িতে বসেই ফেলে দিতে পারেন সেটি, সে ক্ষেত্রে নড়া দাঁতটির চারধারে অবশ করা জেল দিয়ে, দাঁতটি ফেলে দিলে শিশু একদমই ব্যথা পাবে না।
নড়া দাঁত বেশি দিন মুখে রাখা ঠিক নয়, সে ক্ষেত্রে স্থায়ী দাঁত বাঁকা হয়ে উঠতে পারে।
শিশুকে নিয়মিত শাকসবজি ও তাজা ফলমূল খাওয়ান, দাঁতের জন্য যেমন ভালো, শরীরের জন্য ভালো তো বটেই।
শিশুর বয়স যখন এক বছর পূর্ণ হবে, তাকে অবশ্যই দন্তচিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। তাঁর কাছ থেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জেনে নিন শিশুর উপযোগী খাদ্যতালিকা, নিয়ম মেনে দাঁত ব্রাশ করার পদ্ধতি, আর কেমন করে ফ্লোরাইড দাঁতের উপকার কিংবা ক্ষতি করে সেটি।
লেখক: দন্তচিকিৎসক