মাত্র কয়েকটা স্পর্শে হাতের স্মার্টফোনটি তারহীন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে যুক্ত হয় সারা বিশ্বে। কিন্তু এই ইন্টারনেটের দৌড় কেবল পানির উপরিভাগ পর্যন্ত। জলপৃষ্ঠের নিচেও যে আরেকটা জগৎ আছে, সেখানে ইন্টারনেট পৌঁছাবে কীভাবে? পানির ওপর ও নিচ—এ দুই জায়গাকে সেন্সরের মাধ্যমে যুক্ত করে একই নেটওয়ার্কের আওতায় আনার চেষ্টা করছেন গবেষকেরা। প্রযুক্তির এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে বৈজ্ঞানিক তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে জানা যাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগাম সংকেত।
ইন্টারনেটের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য (প্রটোকল) প্রতিনিয়তই উন্নত হচ্ছে। কিন্তু সমস্যা হলো, পানির নিচের ইন্টারনেট-ব্যবস্থায় সর্বজনস্বীকৃত কোনো মানদণ্ড নেই। পানির ওপরে থাকা আইপি (ইন্টারনেট প্রটোকল) নেটওয়ার্ক-ব্যবস্থার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হয়, পানির নিচে এমনই এক সেন্সরভিত্তিক ইন্টারনেট-ব্যবস্থার প্রচলন ঘটানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন ইউনিভার্সিটি অব বাফেলোর গবেষকেরা। যাতে এ দুই ধরনের নেটওয়ার্ক একত্র হয়ে পানির ওপরে থাকা বিভিন্ন তারহীন যন্ত্রকে যুক্ত করতে পারে।
বর্তমানে প্রচলিত তারহীন ইন্টারনেট-ব্যবস্থা পানির নিচেও সম্প্রসারণ করা যাবে, বিষয়টা আসলে এমন সহজ নয়। তারহীন যোগাযোগের ক্ষেত্রে ব্যবহূত উচ্চ কম্পাঙ্কের বেতার তরঙ্গ পানির নিচে খুব একটা ভালো কাজ করে না। আর ঠিক এই কারণে বিজ্ঞানীরা পানির নিচে গবেষণার কাজে বেতার তরঙ্গের বদলে শব্দ তরঙ্গভিত্তিক যোগাযোগব্যবস্থা নিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ কাজ করছেন। সাগরতলে বৈজ্ঞানিক গবেষণা চালানো আমেরিকান সংস্থা ন্যাশনাল ওসেনিক অ্যান্ড অ্যাটমসফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (নোয়া) সমুদ্র তলদেশে তাদের সুনামি সেন্সর থেকে প্রাপ্ত তথ্য শব্দ তরঙ্গের মাধ্যমে সমুদ্রপৃষ্ঠে ভেসে থাকা বয়াতে সংকেত পাঠায়। তারপর সেটি বেতার তরঙ্গে পরিবর্তিত হয়ে কৃত্রিম উপগ্রহে (স্যাটেলাইট) চলে যায়। এই প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে একদিকে যেমন প্রাকৃতিক দুর্যোগের নির্ভরযোগ্য আগাম সতর্কসংকেত তাৎক্ষণিকভাবে জানা সম্ভব হবে, তেমনি মহাসামুদ্রিক তথ্য অথবা দূষণ স্তরের পর্যবেক্ষণ-ব্যবস্থায়ও ঘটবে উন্নতি।