আলঝেইমার্স- মস্তিষ্ককে প্রায় অচল করে দেওয়া এই রোগটি বয়স্ক মানুষদের মাঝে বেশী দেখা যায়। কিন্তু বিজ্ঞানীদের মতে এই রোগটি হবার আশঙ্কা শনাক্ত করা যায় একেবারে শিশুকাল থেকেই। জেনেটিকভাবে যাদের আলঝেইমার্সের ঝুঁকি থাকে তাদের মস্তিষ্কের গঠনে কিছু ভিন্নতা দেখা যায় এ সময়েই। JAMA Neurology জার্নালে এই তথ্য প্রকাশিত হয়। ব্রাউন ইউনিভার্সিটির অ্যাডভান্সড বেবি ইমেজিং ল্যাবে এই গবেষণা করা হয়।
এই গবেষণায় ১৬২ শিশুর মস্তিষ্ক স্ক্যান করে দেখা হয়। এদের মাঝে ৬০ জনের শরীরে ছিলো APOE-e4 নামের একটি জিন যা ৬৫ বছর বয়সের পরে আলঝেইমারস হবার আশঙ্কা বৃদ্ধি করে। যাদের কোষে এই জিন রয়েছে, তাদের মস্তিষ্কের মধ্য এবং পেছনের দিকে বৃদ্ধি কম হয়। এই অংশেই পরবর্তীতে আলঝেইমার্স দেখা দেয়। আর এদের মস্তিষ্কের সামনের দিকের বৃদ্ধি হয় অন্যদের থেকে বেশী। গবেষকরা বলছেন এই গবেষণা এখনও রয়েছে প্রাথমিক পর্যায়ে আর যেসব শিশুর মস্তিষ্কে এই রকমের গঠন দেখা যায় তাদের যে আলঝেইমার্স হবেই এমনটা নয়।
তবে কি বলছে এই গবেষণা? দেখা যাচ্ছে যে, শিশুকালে মস্তিষ্কের কিছু পরিবর্তনের সাথে APOE-e4 যোগসূত্র আছে। এর ফলে কিভাবে আলঝেইমার্স হবার সম্ভাবনা থাকে, বা আলঝেইমার্স হবার আগেই এসব লক্ষণ দেখে থেরাপির মাধ্যমে এর আশঙ্কা কমিয়ে আনা যায় কিনা তা নিয়ে ভাবছেন বিজ্ঞানীরা।
আমেরিকার ২৫ শতাংশ মানুষের মাঝে APOE-e4 জিনের উপস্থিতি দেখা যায়, কিন্তু তাদের সবার মাঝে আলঝেইমার্স দেখা যায় না। যার কোষে যত বেশী এই জিনের কপি থাকবে, তার এই ঝুঁকি তত বেশী। আলঝেইমার্সে আক্রান্ত মানুষের মাঝে ৬০ শতাংশর কোষে এই জিনের অন্তত একটি কপি থাকতে দেখা যায়। ঠিক কিভাবে আলঝেইমার্সের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় APOE-e4 তা ঠিক নিশ্চিত করে বলা যায় না তবে সম্ভবত অন্যান্য প্রভাবক জিন এবং পরিবেশের উপস্থিতিতে এটি মস্তিষ্কের গঠনে পরিবর্তন আনে যা থেকে আলঝেইমার্স হতে পারে।
এই জিন বাচ্চাদের শরীরে থাকার ফলে তাদের মানসিক কোনও সমস্যা হচ্ছে- এমনটা কিন্তু দেখতে পান নি বিজ্ঞানীরা। এই গবেষণায় কিছু শিশুর মস্তিষ্ক স্ক্যান করা হয় তাদের বয়স ছিলো ২ মাস থেকে ২ বছর পর্যন্ত এবং এদের পারিবারিক ইতিহাসে আলঝেইমার্স বা অন্য মানসিক রোগের কোনও নজির নেই। এসব শিশু যখন ঘুমিয়ে ছিলো তখন MRI দিয়ে তাদের মস্তিষ্ক স্ক্যান করা হয়। আর এই গবেষণার জন্য যেসব শিশুর মস্তিষ্ক স্ক্যান করা হয় তাদের পিতামাতাকে জানানো হয়নি তাদের শিশুর শরীরে এই জিন আছে কি না।(priyo.com)