“তোমরাই ঐক্যবদ্ধ জাতি”

Author Topic: “তোমরাই ঐক্যবদ্ধ জাতি”  (Read 1048 times)

Offline russellmitu

  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 1576
  • Test
    • View Profile
“তোমরাই ঐক্যবদ্ধ জাতি”
« on: December 01, 2013, 03:09:30 PM »
মুসলিম জাতির সুদৃঢ় ভিত্তি:
পরম করুণাময়, দয়ালু, সুমহান আল্লাহ্‌ তা’আলার জন্যই সকল প্রশংসা। যিনি সমগ্র জগতের প্রতিপালক। সর্বশেষ ও শ্রেষ্ঠ রাসূল মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর প্রতি আল্লাহর রহমত ও বরকত নাযিল হোক। যাঁকে আল্লাহ্‌ পাক সুষ্পষ্ট সত্য পথ নির্দেশনাসহ প্রেরণ করেছেন, এমন একটি যুগ সন্ধিক্ষণে, যখন বিশ্ববাসী তাদের বিশ্বাস ও আচরণসহ জীবনের সর্ব ক্ষেত্রে গভীর অজ্ঞতা ও পথভ্রষ্টতায় নিমজ্জিত ছিল।
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছিলেন সত্য-ন্যায়ের মূর্ত প্রতীক। উদারতা, বদান্যতাসহ যাবতীয় মহৎ গুণের অধিকারী ছিলেন তিনি। নবুয়াত প্রাপ্তির পূর্ব চল্লিশ বছর পর্যন্ত তিনি স্বগোত্রের মানুষদের নিকট ছিলেন সর্বোত্তম ব্যক্তিরূপে খ্যাত। তাই অহী প্রাপ্তির প্রাক্কালে কখনোই কেউ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কোন বিরোধিতা করে নি।
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নবুয়াত লাভ করার পর মানব জাতিকে সরল, সঠিক, মুক্তির পথে আহ্বান জানালেন। জাতিকে ইহ-পরকালীন কল্যাণ ও মুক্তির বাণী শোনালেন এবং স্বীয় আদর্শের নিশ্চিত সফলতায় পূর্ণ বিশ্বাসী হয়ে তিনি একান- নিষ্ঠা ও পরম ধৈর্যের সাথে সম্মুখে অগ্রসর হতে থাকেন। রাসূলগণের (আঃ) মধ্যে তিনি ছিলেন শ্রেষ্ঠতম।
আমাদের প্রিয় নবী ছিলেন নিরক্ষর, অথচ বিষ্ময়কর এক পবিত্র মহাগন্থ আল কুরআন জগত বাসীর নিকট পেশ করলেন। কুরআন সর্বোত্তম আসমানী কিতাব, এ বিষয়ে সন্দেহকারী মানুষ্য ও জ্বিন জাতিকে তিনি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলেন। আল্লাহ্‌ বলেনঃ

“(হে রাসূল!) আপনি বলুন! যদি মানব-দানব একত্রিত হয়ে এই কুরআনের অনুরূপ কিছু আনয়ন করতে চায়, তবু তারা তা আনতে সক্ষম হবে না। যদিও পরষ্পর তারা সহযোগী হয়।” (সূরা ইসরা- ৮৮)

 

রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জগতের জন্য কল্যাণকর, বিবেক-বুদ্ধি সমর্থিত, সহজ-সরল এবং ন্যায় সঙ্গত এক বিধান নিয়ে আসলেন। যা মানব জাতির স্বভাব ও প্রকৃতির পূর্ণ অনুকূল। যা তাদের পরিশুদ্ধির জন্য অপরিহার্য। তাই দূরদৃষ্টি সম্পন্ন মহান অন-র বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ সে বিধানকে আনন্দচিত্তে গ্রহণ করলেন এবং এর হেফাযত ও বাস-বায়নে সীমাহীন নিপীড়ণ-নির্যাতন সহ্য করলেন। এমনকি এ পথে সহাস্য জীবন বিসর্জনেও তাঁরা সামান্যতম কুন্ঠাবোধ করেননি। যা মুসলিম মিল্লাতের জন্য চির অনুসরণীয়।
আল্লাহ্‌ তা’আলা যাকে ইচ্ছা তাকে রাসূলের মাধ্যমে সঠিক পথ দেখালেন। আর যারা এ পথের সন্ধান পেয়ে ধন্য হলেন, তাঁরা সুদৃঢ়ভাবে অনুসৃত আদর্শের অনুসরণ করতে থাকেন। জীবনের সর্বক্ষেত্রে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কেই একমাত্র আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করেন। এটাই সত্য ন্যায়ের পথ, আর সত্যের বিজয় সুনিশ্চিত। আল্লাহ্‌ বলেনঃ

“হে রাসূল আপনি ধৈর্য ধারণ করুন। নিশ্চয় মুত্তাক্বীদের (আল্লাহ্‌ ভীরুদের) জন্যই শুভ পরিণতি।” (সূরা হুদ- ৪৯)

 

সীসা ঢালা প্রাচীর:
আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীনের প্রতি অগাধ বিশ্বাস ও ভালবাসার মাধ্যমে যে সম্পর্ক গড়ে উঠে, তাই শ্রেষ্ঠ ও সম্মান জনক সম্পর্ক। যে বন্ধনের ভিত্তি হল আল্লাহ্‌ তা’আলার প্রতি পূর্ণ আনুগত্য প্রদর্শন এবং তাঁর মহান বিধানকে ধর্ম ও আদর্শরূপে জীবনের সকল ক্ষেত্রে পরিগ্রহ করণ। আল্লাহ্‌ বলেনঃ

“যারা আল্লাহকে এবং তাঁর রাসূলকে ও মুমিনদেরকে ভালবাসবে, (তারাই আল্লাহ্‌র দলভূক্ত) আর আল্লাহর দলই বিজয়ী হবে।” (সূরা মায়েদা ৫৬)

 

উক্ত ভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে ইসলামী জীবন বিধানে মৌলিকত্ব প্রদান করা হয়েছে। আল্লাহ্‌ তা’আলা বলেনঃ

“নিশ্চয় মুমিনগণ পরষ্পর ভাই ভাই। সুতরাং তোমরা তোমাদের ভ্রাতৃদ্বয়ের মাঝে মীমাংসা কর।” (সূরা হুজুরাত- ১০)

 

আল্লাহ্‌ পাক আরো বলেন:

“মু’মিন নর-নারীগণ পরষ্পর পরষ্পরের বন্ধু।” (সূরা তওবা- ৭১)

প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ

“তোমরা মু’মিন না হলে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। আর ততক্ষণ পর্যন্ত কেউ পূর্ণ মু’মিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমরা পরষ্পরকে ভালবাসবে। আমি কি তোমাদের জানিয়ে দেব না, কি করে পরষ্পরে ভালবাসা সৃষ্টি হবে? (তা হল,) তোমরা পরষ্পরকে বেশী বেশী সালাম প্রদান করবে।” (মুসলিম)

 

রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেন,

 “একজন মুসলমান অন্য মুসলমানের ভাই। তার উপর যুলুম করবে না। তাকে উপহাস করবে না। তাকে হীন প্রতিপন্ন করবে না। তারপর রাসূল (ছাঃ) নিজের বুকের দিকে ইঙ্গিত করে তিনবার বললেন, তাক্বওয়া (আল্লাহ্‌ ভীরুতা) এখানেই। একজন মুসলিম ভাইকে হীন প্রতিপন্ন করাই পাপের জন্য যথেষ্ট। প্রতিটি মুসলমানের উপর হারাম করা হয়েছে অন্য মুসলমানের রক্ত, সম্পদ ও সম্মানের ক্ষতি সাধন।” (বুখারী ও মুসলিম)

 

সকল মুসলমানের রক্ত, সম্পদ ও সম্মানের হেফাযতে প্রয়াস চালানো প্রতিটি মুসলমানের একান্ত দায়িত্ব। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুসলমানদের সাদৃশ্য প্রদান করেছেন ‘সীসা ঢালা প্রাচীরের ন্যায়’ বলে এবং ‘একটি দেহের সাথে’ তাদের তুলনা করেছেন। তাঁর ছাহাবীগণ ছিলেন এর জীবন্ত উদাহরণ। মক্কা হতে আগত মুহাজিরদের সাথে মদীনাবাসী আনছারগণ যে আচরণ করেছেন, সে সম্পর্কে আল্লাহ্‌ বলেনঃ

“যারা মুহাজিরদের আগমনের পূর্বে এই স্থানে (মদীনায়) বসবাস করছিল এবং ঈমান এনেছিল, তারা মুহাজিরদের ভালবাসে। আর মুহাজিরদের যা কিছু প্রদান করা হয়েছে সে জন্য তারা নিজেদের হৃদয়ে কোন ঈর্ষা পোষণ করে না। আর নিজেরা অভাবগ্রস- হয়েও তাদেরকে (মুহাজিরদের) অগ্রাধিকার প্রদান করে থাকে।” (সূরা হাশর-৯)

.

মুসলিম জাতির শ্রেষ্ঠতা:
মুসলিম এক মহান জাতি, যাদেরকে আল্লাহ্‌ তা’আলা তাঁর সর্বশেষ ও শ্রেষ্ঠ রাসূল মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অনুসরণের জন্য নির্বাচন করেছেন এবং তাদেরকে ‘মুসলিম জাতি’ হিসেবে নাম করণ করেছেন। আল্লাহ্‌ বলেন,

“তোমরা আল্লাহর পথে জিহাদ কর; যথাযোগ্য জিহাদ। তিনিই তোমাদেরকে নির্বাচিত করেছেন। ধর্মের ব্যাপারে তোমাদের উপর কোন কঠোরতা আরোপ করেন নি। ইহা তোমাদের পিতা ইবরাহীমের মিল্লাত (ধর্ম)। তিনি পূর্বে তোমাদের নাম করণ করেছেন ‘মুসলিম’।” (সূরা হাজ্জ- ৭৮)

 

আল্লাহ্‌ তা’আলা মুসলামনদের শীর্ষতা প্রদান করেছেন- শ্রেষ্ঠতম আসমানী কিতাব ‘আল কুরআন’ দিয়ে। তাই অন্য ধর্ম হতে মুসলমানদের কিছু গ্রহণ করার আদৌ প্রয়োজন নেই।
আল্লাহ্‌ তা’আলা মুসলমানদের ক্বিবলা হিসেবে নির্ধারণ করেছেন, তাঁর পূত-পবিত্র ঘর কা’বা শরীফকে। তা যিয়ারত করে তারা ধন্য হয় এবং তারই হজ্জ ও ওমরা তারা আদায় করে থাকে।

ছালাত আদায় করার জন্য আল্লাহ্‌ মুসলানদের প্রদান করেছেন একটি সুন্দরতম যিকির (আযান)। আবদুল্লাহ্‌ ইবনু ওমার (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,

আযানের প্রথা প্রবর্তিত হওয়ার পূর্বে মুসলমানগণ মদীনায় আগমনের পর একত্রিত হয়ে ছালাতের জন্য অপেক্ষা করতেন। অত:পর এ বিষয়ে ছাহাবীগণ আলোচনায় বসলেন। কেউ বললেন: নাছারাগণের মত ঘন্টা বাজানো হোক! কেউ বললেন বরং ইহুদীদের শিঙ্গার মত কর্নেট (এক প্রকার বাঁশী) ব্যবহার কার হোক।

হযরত ওমার (রাঃ) বললেন, ছালাতের আহ্বানের জন্য কোন মানুষকে পাঠালে হয় না?

তারপর রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাঃ) বললেন: “হে বেলাল! উঠ এবং ছালাতের জন্য আহ্বান কর (আযান দাও)।”

 

এছাড়া মুসলমানদের জন্য রয়েছে সমষ্টিগত সাপ্তাহিক ইবাদত ‘জুম্‌আর ছালাত’। তা এমন এক মহান দিবসে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে, যে দিবসে মানব সৃষ্টির সূচনা করা হয়েছে। এ দিবসে তারা সম্মিলিত হয়ে আল্লাহর জন্য ছালাত আদায় করে এবং তাঁরই সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে দান-খায়রাত করে ও মহান প্রভুর মহত্ব বর্ণনা করে। এ সবই মুসলমানদের শীর্ষতার পরিচায়ক।

আল্লাহ্‌ তা’আলা মুসলমানদের সতর্ক করে দিয়েছেন ধর্ম, আচরণে যেন তারা অমুসলিমদের সাদৃশ্যাবলম্বন না করে। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:

“যে ব্যক্তি কোন জাতির সাদৃশ্য গ্রহণ করবে, সে ব্যক্তি ঐ জাতির অন্তর্ভূক্ত।” (আহ্‌মাদ, আবু দাঊদ)

 

সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে আল্লাহর রশিকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধর:
তাওহীদের উপর ভিত্তিশীল মুসলিম ভ্রাতৃত্ব ও ঐক্য তখনই সুদৃঢ় হবে, যখন তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক হবে আল্লাহ্‌ তা’আলার সন্তুষ্টি ও ছওয়াব লাভের উদ্দেশ্যে নিবেদিত। যেমন আল্লাহ্‌ বলেন:

“তারা (মুমিনগণ) আল্লাহর ভালবাসা লাভের প্রত্যাশায় অভাবগ্রস্থ, ইয়াতীম ও বন্দীদেরকে আহার্য দান করে থাকে। তারা বলে যে, আমরা কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে তোমাদেরকে আহার্য দান করে থাকি এবং তোমাদের নিকট থেকে কোন প্রতিদান ও কৃতজ্ঞাত কামনা করি না।” (সূরা দাহার- ৮-৯)

 

আল্লাহ্‌ আরো বলেন:

“তারা যেন তাদেরকে ক্ষমা করে দেয়, মার্জনা করে দেয়; তোমরা কি চাও না যে, আল্লাহ্‌ তোমাদের ত্রুটি ক্ষমা করেন। বস’ত: আল্লাহ্‌ পরম ক্ষমাশীল, অতীব দয়ালু।” (সূরা নূর- ২২)

 

মুসলামানদের যাবতীয় সমস্যা, মতভেদ-মতবিরোধ সমাধানের সিদ্ধান- নিতে হবে পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহ্‌ হতে। এর কোন বিকল্প নেই। আল্লাহ্‌ বলেন:

“হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ্‌র আনুগত্য কর এবং রাসূলের আনুগত্য কর ও (তার উপর ভিত্তিশীল) নেতৃবর্গের অনুসরণ কর। কোন বিষয়ে তোমাদের মধ্যে মতানৈক্য দেখা দিলে, উহাকে আল্লাহ্‌ ও তদীয় রাসূলের বিধানের দিকে ফিরিয়ে দাও- যদি তোমরা প্রকৃতই আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূলের উপর ঈমান পোষণ করে থাক। এটাই উত্তম এবং পরিণাম হিসেবে অতি সুন্দর।” (সূরা নিসা-৫৯)

 

ইমাম আবু হানীফা (রঃ) ও ইমাম শাফেয়ী (রঃ) সঙ্গতই বলেছেন,

“ছহীহ হাদীছ অনুযায়ী চলাই আমার মাযহাব।”

জীবনের সকল পর্যায়ে ছোট-বড় সর্ব বিষয়ে পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহ্‌ হতেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ অপরিহার্য। আর তা হলেই কেবল মাত্র আল্লাহ্‌ মুসলমানদের অস্তিত্ব ও ঐক্য বজায় রাখবেন এবং তাদেরকে উভয় কালীন কল্যাণ ও সফলতা প্রদানে ধন্য করবেন যখন তারা আল্লাহ্‌ ও তদীয় রাসূলের আদেশ-নিষেধের একান্ত অনুসরণ করবে এবং এ পথে আহ্বান করবে, এ পথে পরস্পরে সহযোগিতা করবে। অন্যথায় কি বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে তার জন্য আল্লাহর বাণীটি ভেবে দেখুন:

“যারা নিজেদেরকে নাছারা বলে দাবী করে আমি তাদের নিকট হতে অঙ্গীকার গ্রহণ করেছি। অত:পর তাদেরকে যে উপদেশ প্রদান করা হয়েছিল তার একাংশ তারা ভুলে বসেছে। পরিণামে আমি ক্বিয়ামত দিবস পর্যন্ত তাদের মধ্যে শত্রুতা ও আক্রোশের সৃষ্টি করেছি। আর আল্লাহ তাদের কর্ম কান্ড সম্পর্কে তাদেরকে অচিরেই অবহিত করবেন।” (সূরা মায়েদা- ১৪)

 

এছাড়া রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সৎ কাজের আদেশ ও অন্যায়ের নিষেধ ত্যাগকারীদের কঠোরভাবে সতর্ক করেছেন, যেন একে অপরের বিরূদ্ধে লড়াইয়ে জড়িয়ে না পড়ে। যেমনটি বাণী ইসরাঈলীদের ব্যাপারে বলা হয়েছে, তারা পরস্পরকে মন্দ হতে নিষেধ করত না। আল্লাহ্‌ বলেনঃ

“তারা যে অন্যায় অপকর্ম করত তা হতে তারা পরস্পরকে নিষেধ করত না। তাদের কর্ম কান্ড কতই না জঘণ্য ছিল।” (মায়েদা- ৭৯)

 

বর্তমান মুসলিম সমাজে সর্বোচ্চ বিপদ জনক অপকর্মগুলোর মধ্যে জঘণ্যতম বিষয় হল, আল্লাহর সাথে শির্ক করা। চাই তা আল্লাহর বিধান পরিপন্থী সংবিধান অনুযায়ী ফায়সালা প্রদানের মাধ্যমে বা আল্লাহর দুশমনদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপনের মাধ্যমে বা তাঁর প্রদত্ত ধর্মের কিছু অংশের সাথে উপহাসের মাধ্যমে অথবা ধর্মে নেই এমন কিছু ইবাদত প্রভৃতি উদ্ভাবনের মাধ্যমে বা আল্লাহ্‌ ছাড়া অন্য কারো নিকট দু’আ করার মাধ্যমে অথবা আল্লাহ্‌ ছাড়া অন্য কারো সন্তুষ্টির জন্য যবেহ করার মাধ্যমে। অথবা যাদু করা, গণক ও ভেল্কিবাজদের নিকট যাওয়া ও তাদের বিশ্বাস করার মাধ্যমে। তাদের নিকট হতে চিকিৎসা বা সমাধান তলবের মাধ্যমে। অনুরূপভাবে মারাত্মক অন্যায় হল, ফরয ইবাদত সমূহ ছেড়ে দেয়া, যার শীর্ষ পর্যায়ে রয়েছে ছালাত আদায় না করা ও যাকাত প্রদান না করা। এ দুটি ফরয ইবাদত সম্পাদনের মাধ্যমে একজন ব্যক্তিকে আল্লাহ্‌ মুসলিম হিসেবে গণ্য করেছেন। আল্লাহ্‌ বলেনঃ

“যদি তারা তওবাহ্‌ করে, ছালাত প্রতিষ্ঠা করে ও যাকাত প্রদান করে তবেই তারা তোমাদের দ্বীনী ভাই হবে।” (তওবাহ্‌- ১১)

এছাড়াও ব্যাপকভাবে মুসলিম সমাজে ছড়িয়ে পড়া মহাপাপ, অন্যায়-অপকর্মের সীমা নেই। যার মধ্যে জঘণ্যতম কয়েকটি হল, খুন, ধর্ষণ, লুন্ঠন, চুরি, ডাকাতি, মদ্যপান, ব্যাভিচার, সুদ, ঘুষ, মিথ্যাবাদিতা, প্রতারণা, গান-বাজনা, পর্দাহীনতা, বর্বরতা, পিতা-মাতার সাথে অসদাচরণ, রক্তের সম্পর্ক ছিন্ন করণ, স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের প্রতি নির্যাতন… ইত্যাদি।

বর্তমান যুগের মত দু’শ বছর পূর্বে আরব উপদ্বীপে শির্কসহ অন্যান্য পাপাচারের ভীষণ ব্যাপকতা ছিল। সেখানে ছিল না কোন নিরাপত্তা, বরং চরম শংকা ও সীমাহীন নৈরাজ্যকর অবস্থা বিরাজমান ছিল। অত:পর আল্লাহ্‌ অনুগ্রহ করে মুহাম্মদ বিন আবদুল ওহাব (রহঃ) এবং মুহাম্মদ বিন সঊদ (রহঃ)কে তাওফীক দিলেন। তাঁরা দু’জন মিলে উক্ত বিশাল এলাকার মানুষের মধ্যে আল্লাহর রহমতে তাঁর দ্বীনকে পুন:প্রতিষ্ঠিত করলেন। ফলে ঐক্য সুপ্রতিষ্ঠিত হল, শান্তি-শৃংখলা ফিরে এল, জাতির কল্যাণের দ্বার হল উম্মোচিত। এভাবেই কুরআন-সুন্নাহ্‌র আইন প্রবর্তিত হলে ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে জাতির প্রতিটি পর্যায় পর্যন্ত সুখ-সমৃদ্ধি আসবে ইনশাআল্লাহ্‌ এবং জান্নাতের পথ হবে সুপ্রসস্ত। আল্লাহ্‌ আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে কুরআন ও সুন্নাহ্‌র পথে চলার তাওফীক দিন। আমীন॥
KH Zaman
Lecturer, Pharmacy