ত্বকের কুঁচকে যাওয়া ঠেকাতে কৃত্রিম পদ্ধতির চেয়ে খাবারের দিকে নজর দেওয়ার পরামর্শই দিচ্ছেন মার্কিন গবেষকেরা। এ নিয়ে বিস্তর গবেষণাও চলছে।
বলিরেখা দূর করার জন্য বিশেষ কিছু খাবারের পরামর্শ দিয়েছেন মার্কিন গবেষকেরা। লস অ্যাঞ্জেলেসের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ জেসিকা উ জানিয়েছেন, ত্বকের জন্য প্রয়োজনীয় খাবার বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। ‘ফিড ইওর ফেস’ নামের একটি বইও লিখেছেন জেসিকা।
জেসিকা জানিয়েছেন, মানুষ যেসব খাবার গ্রহণ করে তা হরমোনের ভারসাম্যের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে। ত্বকের বয়স বাড়ার সঙ্গে খাবারের ভূমিকা রয়েছে।
জেসিকার মতে, অলিভ ওয়েলকে ত্বকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে মনে করা হয়। ২০১২ সালে ‘প্লস ওয়ান’ সাময়িকীতে এক গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছিল যাতে এক হাজার ২৬৪ জনের ওপর পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা যায় প্রতিদিন ২ চা চামচ পরিমাণ অলিভ ওয়েল গ্রহণ করলে ৩১ শতাংশ ক্ষেত্রে ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা কমে। অলিভ ওয়েলে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ত্বক সজীব রাখে।
অলিভ ওয়েলের পাশাপাশি ত্বকের যত্নে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান টমেটো। যাঁরা প্রতিদিন পাঁচ চা চামচ পরিমাণ টমেটো স্যুপ খান এবং সঙ্গে এক চামচ করে অলিভ ওয়েল, তাঁদের ত্বক অন্যদের তুলনায় বেশি সজীব থাকে। ২০০৮ সালে যুক্তরাজ্যের গবেষকেরা পরীক্ষা করে দেখেছেন যাঁরা শুধু অলিভ ওয়েল গ্রহণ করেন তাদের তুলনায় টমেটো ও অলিভ ওয়েল গ্রহণকারীদের ক্ষেত্রে ৩৩ শতাংশ ক্ষেত্রে ভালো ফল পাওয়া যায়। গবেষকেরা বলেন টমেটো লাইকোপেন নামে বিশেষ অ্যান্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে যা ত্বকের সজীবতা আনতে পারে। এ ছাড়াও টমোটোর পুষ্টিগুণ থাকায় এটি ফুসফুস, অগ্ন্যাশয়, কোলন ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়ক।
ত্বক ভালো রাখতে গবেষকেদের পরামর্শ হচ্ছে গ্রিন টি পান করা। ২০১১ সালে ‘জার্নাল অব নিউট্রিশনে’ প্রকাশিত এক গবেষণা নিবন্ধে বলা হয় যারা ১২ সপ্তাহ ধরে দৈনিক গ্রিন টি পান করেন তাদের ত্বক বেশি মসৃণ ও নমনীয় হয়। এ ছাড়াও সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে ত্বক রক্ষা পায়। গ্রিন টিতে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ত্বকে রক্তের প্রবাহ বাড়াতে সাহায্য করে এবং ত্বক সুস্থ রাখে।
ত্বক ভালো রাখতে বেশি করে পানি খাবার বিকল্প নেই। ত্বকের ভাঁজ দূর করার পাশাপাশি বেশি করে পানি পান করলে শরীরে চিনি জমতে পারে না। শরীরে চিনির পরিমাণ বেড়ে গেলে ত্বকের নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। গবেষকেদের পরামর্শ হচ্ছে ত্বকের সমস্যা দূর করতে বেশি করে পানি পান করতে হবে।
পানির পাশাপাশি নিয়মিত কফি পান করলেও ত্বকের ক্ষেত্রে উপকার পাওয়া যেতে পারে। তবে কফি পানের পরিমাণ যেন মাত্রাতিরিক্ত না হয় সে বিষয়ে খেয়াল রাখার পরামর্শও দেন গবেষকেরা।
ত্বকের যত্নে ডিম উপকারী। ডিমে চর্বি কম প্রোটিন থাকে বেশি। গবেষকেরা বলেন, খাবারে যত চর্বি কম তত ত্বকের জন্য ভালো। ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশন সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণা নিবন্ধে বলা হয় ১৭ গ্রাম চর্বির বৃদ্ধিতে ২৮ শতাংশ ত্বকের কুচকে যাওয়া ভাব বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
ত্বকের যত্নে সবজি হিসেবে মিষ্টি কুমড়া এবং গাজরও উপকারী হতে পারে। মিষ্টি কুমড়ায় থাকা বিটা ক্যারোটিন শরীরে ভিটামিন এর চাহিদা পূরণ করে। ত্বককে সজীব ও নরম ও সতেজ রাখতে সক্ষম দৈনিক আধ কাপ পরিমাণ মিষ্টি কুমড়ার তরকারি।
গবেষকেরা বলেন, সুন্দর ত্বকের জন্য গাজর উত্কৃষ্ট খাবার। তাঁরা বেশি বেশি গাজর খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।