দেনমোহরঃ নারীর অধিকার; ‘স্ট্যাটাস সিম্বল’ নয় !

Author Topic: দেনমোহরঃ নারীর অধিকার; ‘স্ট্যাটাস সিম্বল’ নয় !  (Read 3494 times)

Offline Saeed Ahsan Khalid

  • Newbie
  • *
  • Posts: 14
  • Test
    • View Profile
দেনমোহর নিয়ে আমাদের সমাজে নানান বিভ্রান্তি প্রচলিত আছে। অধিকাংশ নারী দেনমোহর থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বর্তমানে বিয়েতে উচ্চ দেনমোহর নির্ধারণ না করলে পরিবারের স্ট্যাটাস বাঁচেনা! তাই দেনমোহর এখন সমাজে ‘স্ট্যাটাস সিম্বল’ হয়ে দাঁড়িয়েছে; তা পরিশোধের সক্ষমতা আছে কি নেই তা নিয়ে কারো ভাবান্তর নেই।

দেনমোহর কী?

পবিত্র কুরআনে দেনমোহরকে বিভিন্ন শব্দে বিশেষায়িত করে বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন- বলা হয়েছে, ‘নিহলা’ (স্বতঃস্ফূর্তভাবে/সন্তষ্টচিত্তে), ‘ফারিদা’ (নির্ধারিত বা বাধ্যবাধকতা), ‘আজর’ (বিনিময়), ‘সাদুকাহ’ (আন্তরিক দান) ইত্যাদি। ইসলামি শরিআহর পরিভাষায়, দেনমোহর হচ্ছে বিবাহবন্ধন উপলক্ষে স্বামী কর্তৃক বাধ্যতামূলকভাবে স্ত্রীকে নগদ অর্থ, সোনা-রুপা বা স্থাবর সস্পত্তি দান করা। এটা পরিশোধ করা স্বামীর জন্য বাধ্যতামূলক। এটা স্ত্রীর প্রতি স্বামীর করুণা নয়, স্ত্রীর অধিকার। দেনমোহর বিবাহিত মুসলিম নারীর একটি বিশেষ অধিকার। এই অধিকার মুসলিম আইনের উৎস পবিত্র কুরআন দ্বারা স্বীকৃত। মুসলিম আইন অনুযায়ী দেনমোহর হলো বিয়ের একটি শর্ত এবং স্ত্রীর একটি আইনগত অধিকার। দেনমোহর স্ত্রীর কাছে স্বামীর ঋণ এবং অবশ্যই পরিশোধযোগ্য। বিয়ের সময় যদি দেনমোহর নির্ধারণ করা না হয় এমনকি স্ত্রী পরবর্তীতে কোন দেনমোহর দাবী করবে না এ শর্তেও যদি বিয়ে হয় তাহলেও স্ত্রীকে উপযুক্ত দেনমোহর দিতে স্বামী বাধ্য।

দেনমোহরের পরিমাণ নির্ধারণ ও সময়সীমাঃ

দেনমোহর নির্ধারিত থাকতে পারে, আবার অনির্ধারিতও হতে পারে। হানাফি আইন অনুসারে, নির্ধারিত দেনমোহরের সর্বনিম্ন পরিমাণ হবে ১০ দিরহাম এবং মালিকি আইনে তিন দিরহাম। কিন্তু সর্বোচ্চটা অনির্ধারিত। সাধারণত দেনমোহর নির্ধারণ করতে কয়েকটি বিষয়ের ওপর জোর দেওয়া হয়-পাত্রীর পারিবারিক অবস্থা, বংশ মর্যাদা, আর্থিক অবস্থা, ব্যক্তিগত যোগ্যতা তার পরিবারের অন্য মহিলাদের (যেমন : ফুফু, বোন) দেনমোহরের পরিমাণ, এই বিষয়টির ভিত্তিতেও দেনমোহর নির্ধারিত হয়। এছাড়া পাত্রের আর্থিক সঙ্গতি, সামাজিক এবং পারিবারিক অবস্থানও দেনমোহর নির্ধারণে বিশেষ বিবেচনায় নিতে হবে।

নির্ধারিত দেনমোহরের দু’টি অংশ থাকে। একটি অংশ হলো তাৎক্ষণিক দেনমোহর-‘মোহরে মু’আজ্জাল’ বা নগদে প্রদেয় এবং আরেকটি অংশ হলো বিলম্বিত দেনমোহর-‘মোহরে মুয়াজ্জাল’ বা বাকিতে প্রদেয়। আমাদের দেশে মোহরানা বাকি রেখে বিয়ে করার প্রথাটিই বহুল প্রচলিত। আর এ কারণেই মোহরানা বাকি থাকে এবং এক পর্যায়ে স্বামী সেটা বেমালুম ভুলে যায়। তাই মোহরানা নগদে বিয়ের মজলিশে বা বিয়ের স্বল্পতম সময়ের মধ্যেই পরিশোধ করে দেয়া উত্তম। ইসলামি শরিআহর দৃষ্টিতে পুরো মোহরানা বিয়ে অনুষ্ঠিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কিংবা প্রথম মিলনের রাতের আগেই নগদে পরিশোধ করা সবচেয়ে উত্তম। বকেয়া অংশও অত্যন্ত স্বল্প সময়ের মধ্যেই পরিশোধ করা উচিত। কোনো অবস্থায়ই মোহরানার পাওনা যুগ যুগ ধরে বাকি রেখে স্ত্রীর সাথে দাম্পত্য জীবন যাপন করা যাবে না। এটা দেনমোহরের মূল চেতনার পরিপন্থী। দেনমোহর একবার নির্ধারণ করার পর এর পরিমাণ কমানো যায় না। তবে স্বামী নিজ উদ্যোগে তা বাড়াতে পারে। যদি কেউ আদালতে দেনমোহর দাবি করেন (বিয়ের সময় দেনমোহর নির্ধারিত না থাকলে) তবে আদালত স্ত্রীর মর্যাদা এবং স্ত্রীর পিতৃকুলের অন্যান্য মহিলার দেনমোহরের পরিপ্রেক্ষিতে দেনমোহর নির্ধারণ করতে পারেন।

স্ত্রীর মোহরানা তলব করার অধিকারঃ

তাৎক্ষণিক দেনমোহর স্ত্রীর প্রতি স্বামীর এক প্রকার ঋণ। যে কোন সময় স্ত্রী তার পাওনা দেনমোহরের দাবি জানাতে পারে এবং স্বামীকে অবশ্যই দেনমোহর পরিশোধ করতে হয়। বিলম্বিত দেনমোহরের প্রশ্ন আসে স্বামীর মৃত্যুর পর বা বিয়ে বিচ্ছেদের পর। স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রী দেনমোহরের টাকা পরিশোধের জন্য কোন সম্পত্তির দখল বজায় রাখতে পারে এবং এই দখল চালিয়ে যেতে পারে ততদিন পর্যন্ত যতদিন পর্যন্ত না দেনমোহরের টাকা পরিশোধিত হয়। এই ধরনের দখল বজায় রাখার জন্য স্বামীর অথবা তা উত্তরাধিকারীদের কোনরকম সম্মতির প্রয়োজন নেই। একজন বিধবার দখল বজায় রাখা সম্পত্তিতে তার অধিকার দুই রকমের। একটি হচ্ছে সম্পত্তি থেকে সে তার প্রাপ্য বিলম্বিত দেনমোহর আদায় করবে। অন্যটি হচ্ছে একজন উত্তরাধিকারী হিসাবে হিস্যা পাবে।

তাৎক্ষণিক দেনমোহর চাওয়া মাত্র পরিশোধ করতে হয়। কাজেই এ দেনমোহর স্ত্রী বিয়ের পর যেকোন সময় চাইতে পারেন এবং স্বামী তাৎক্ষণিক দেনমোহর পরিশোধ করতে বাধ্য থাকেন। যদি কোনো স্ত্রী স্বামীর কাছে তাৎক্ষণিক দেনমোহর চেয়ে না পায়, তবে সেই স্ত্রী স্বামীর সঙ্গে বসবাস করতে ও দাম্পত্য মিলনে অস্বীকৃতি জানাতে পারে। এমনকি সে পৃথক-আলাদা বসবাস করতে পারে এবং এ সময় স্বামী স্ত্রীকে ভরণপোষণ দিতে বাধ্য থাকবে। এরকম ক্ষেত্রে স্বামী যদি দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধারে মামলা করেন তবে সেই মামলা খারিজ হয়ে যাবে। কারণ সে স্ত্রীর প্রাপ্য দেনমোহরের টাকা পরিশোধ করেননি। স্বামী দেনমোহর দিতে অস্বীকার করার পর তিন বছরের মধ্যে পারিবারিক আদালতে মামলা করতে হবে। কিন্তু সে যদি এভাবে তিন বছর কাটিয়ে দেয় এবং দেনমোহরের জন্য মামলা না করেন তবে সে মামলা করার অধিকার হারাবে।

বিলম্বিত দেনমোহর পরিশোধের কোন সময়সীমা বেঁধে দেয়া নেই বলে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে তালাক বা স্বামীর মৃত্যু ঘটলে তার তিন বছরের মধ্যে দেনমোহরের জন্য স্ত্রীকে মামলা করতে হবে। তিন বছর পার হয়ে গেলে স্ত্রী মামলা করার অধিকার হারাবেন। স্বামীর মৃত্যুর পর অপরিশোধিত দেনমোহর স্ত্রীর কাছে স্বামীর ঋণস্বরূপ। অন্যান্য ঋণের মতোই মৃতের এই ঋণ শোধ করতে হয়। দাফন-কাফনের খরচ করার পর অবশিষ্ট সম্পত্তি থেকে দেনমোহর এবং অন্যান্য ঋণ পরিশোধ করতে হবে। বিবাহিতা থাকা অবস্থায় স্ত্রী তাৎক্ষণিক দেনমোহর না চাইলে বিয়ে বিচ্ছেদের পর তাৎক্ষণিক ও বিলম্বিত সম্পূর্ণ দেনমোহর পাবার অধিকারী হবেন।

দেনমোহর নিয়ে প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণাঃ

দেনমোহর পরিশোধের ব্যাপারে আমাদের মধ্যে রয়েছে চরম অজ্ঞতা কিংবা সজ্ঞান উদাসীনতা। নিয়মিত নামাজ-রোজা আদায় করেন এমন অনেক মানুষও দেনমোহরের বিষয়ে সচেতন নন। এ বিষয়ে উদাসীনতা এতো প্রকট যে, তারা নফল নামাজ পড়াকে যতোটা গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন, স্ত্রীর মোহর আদায়কে তার সিকিভাগও গুরুত্ব দেন না। তাই দেনমোহর পরিশোধের ব্যাপারে বাংলাদেশের চিত্র বলতে গেলে অনেকটা হতাশাব্যঞ্জক ও লজ্জাজনক। এখানে অধিকাংশই দেনমোহর সন্তুষ্টচিত্তে পরিশোধ করতে চান না। এ বিষয়ে নানা টালবাহানার আশ্রয় নেয়া হয়। অনেকে বাসর রাতেই কৃত্রিম ভালোবাসার অভিনয়ে স্ত্রীকে ভুলিয়ে তার কাছ থেকে দেনমোহরের দাবি মাফ করিয়ে নেন।সদ্য বিবাহিত স্ত্রী আবেগের বশে এবং লজ্জাবশত তা মাফ করে দেন। যে মেয়েটি তাঁর বাবা-মা, ভাইবোন, আত্মীয়-পরিজনকে ছেড়ে একটি নতুন পরিবেশে মাত্র প্রবেশ করেছে তাঁকে বাসর রাতের মতো আবেগীয় মুহূর্তে দেনমোহর মাফ করতে বলা টা ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল, হীনতা আর কাপুরুষতা ছাড়া আর কিছু নয় পক্ষান্তরে, স্ত্রীর দেনমোহর বাকি রেখে দাম্পত্য জীবন শুরু করে অনেকে ইচ্ছে করেই তা আর পরিশোধ করেন না। স্ত্রীর দেনমোহরের কথা ভুলে যান। এ অবস্থায় স্বামী মারা গেলে পড়শীরা এসে স্বামীর মৃতদেহ খাটিয়ায় উঠানোর আগে তার স্ত্রীর কাছে মোহরানার দাবি মাফ চায়। একজন সদ্য বিধবা স্ত্রীর পক্ষে এরকম একটা নাজুক মুহূর্তে কি আর মোহরানার দাবি মুখে আনা সম্ভব হয়? সে তখন মাফ করতে বাধ্য হয়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এভাবে স্বামী কর্তৃক প্রথম রাতের ছলনায় বা শবযাত্রার খাটিয়ায় শুয়ে মোহরানার দাবি মাফ চাইলে আর স্ত্রী সেটা মাফ করে দিলে কি মাফ হয়ে যাবে? রাসুল (সা.) বলেছেন, কোনো মুসলমানের জন্য কারো সম্পদ হালাল হবে না যদি না সে তাকে সন্তুষ্টচিত্তে দান করে। সুতরাং শরিআহ বিশেষজ্ঞদের মতামত হলো, এভাবে মোহরানার দাবি স্ত্রী মাফ করে দিলেও আসলে তা মাফ হবে না। কেননা, এটা স্ত্রীর উপরে এক প্রকার বলপ্রয়োগ। অতএব বলপ্রয়োগের ক্ষমা আর আন্তরিক ক্ষমা দুটো এক নয়।

একটি ভুল ধারণা বাংলাদেশে প্রচলিত আছে। যেমন বরের এক লক্ষ টাকা দেনমোহর পরিশোধের ক্ষমতা আছে, কিন্তু কাবিননামায় কনে পক্ষের সামাজিক মর্যাদা রক্ষার অজুহাতে জোরপূর্বক লেখানো হয় দশ লক্ষ টাকা। কনেপক্ষ ভাবে, মোহরানার অর্থ বেশি হলে বর কখনো কনেকে তালাক দিতে পারবে না। আর ছেলের পক্ষ ভাবে, যতো খুশি মোহরানা লিখুক। ওটা তো আর পরিশোধ করতে হবে না। এটি নিয়ে বর ও কনে পক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ডা লেগেই থাকে।এ কথাটি ঠিক যে, দেনমোহরের কোন সুনির্দিষ্ট পরিমাণ নেই। যেকোন পরিমাণ অর্থ দেনমোহর হিসেবে নির্ধারিত হতে পারে। কিন্তু দেনমোহরের পরিমাণ এত বেশি রাখা উচিত নয় যা স্বামীর পক্ষে দেয়া অসম্ভব। দেনমোহর যেহেতু স্ত্রীর আর্থিক নিরাপত্তার জন্য দেয়া হয় সেহেতু এর পরিমাণ এত কম রাখাও উচিত নয় যা স্ত্রীর আর্থিক নিরাপত্তা বিধানে বিন্দুমাত্র সহায়ক হবে না। সে জন্য বর এবং কনে পক্ষ বিয়ের সময় সঠিক দেনমোহর ধার্যের ব্যাপারে বাস্তবতাকে মাথায় রাখতে পারে। এভাবে আর্থিক সক্ষমতার বিষয়টি বিবেচনা করে দেনমোহর ধার্য করলে স্বামী তা সহজেই পরিশোধ করতে পারবেন এবং প্রাপ্য দেনমোহরের অধিকার থেকে নারীরা বঞ্চিত হবে না। মোহরানা পরিশোধ না করার নিয়তেই যে স্বামী অধিক পরিমাণ মোহরানা নির্ধারণপূর্বক স্ত্রীকে বিয়ে করে তার সাথে দাম্পত্য জীবন শুরু করে, সেটা আসলে প্রতারণা দিয়েই দাম্পত্য জীবন শুরু করার শামিল। কেননা, দেনমোহরের কারণেই স্ত্রী তার স্বামীর জন্য হালাল হয়েছিল। অতএব দেনমোহরই যেখানে পরিশোধ করা হলো না, সেখানে স্ত্রীর সাথে দৈহিক সম্পর্ক হালাল হয় কিভাবে?

অনেক স্বামী মনে করেন, স্ত্রীর ভরণ-পোষণসহ যাবতীয় ব্যয়ভার তো তিনিই বহন করছেন। অতএব এর মধ্যে আবার আলাদা করে তাকে মোহরানা পরিশোধ করতে হবে কেন? কিন্তু দেনমোহরের সঙ্গে ভরণপোষণের কোনো সম্পর্ক নেই। দুটি সম্পূর্ণ আলাদা অধিকার। বিয়ের পর স্ত্রীর ভরণপোষণের যাবতীয় খরচ কোনোভাবেই দেনমোহরের অংশ বলে ধরে নেয়া যাবে না। বিবাহিত নারী বিবাহকালীন এবং বিবাহ বিচ্ছেদ হলে ইদ্দতকালীন সময়ে ভরণপোষণের অধিকারী। ভরণপোষণের খরচ কে কোন অবস্থাতেই দেনমোহরের অংশ হিসেবে পরিশোধ করা হচ্ছে বলে ধরা যাবে না।

অনেক স্বামী স্ত্রীকে দামী কিছু উপহার দিলে মনে করেন যে দেনমোহর পরিশোধ হয়ে গেছে। এটিও ভ্রান্ত ধারণা। স্বামী স্ত্রীকে যে উপহার দেবে তা অবশ্যই দেনমোহর নয়। বিয়ের পর স্বামী স্ত্রীকে প্রেমের নিদর্শনস্বরূপ অনেক কিছুই দিতে পারে। স্বামী যদি দেনমোহর হিসেবে স্ত্রীকে কিছু দেয়, তবেই তা দেনমোহর বলে বিবেচিত হবে। জমি হস্তান্তরের দলিলে ‘দেনমোহর বাবদ’ কথাটি লেখা না থাকলে এরূপ জমি উপহার দেয়া দেনমোহর হিসেবে ধরা হবে না।

আবার অনেকে সোনার অলংকার বা ব্যাংকে স্ত্রীর নামে অর্থ ফিক্সড ডিপোজিট করে দেন দেনমোহর পরিশোধ করছেন উল্লেখ করে অথচ দেখা যায় সেই অলঙ্কার বা অর্থে স্ত্রীর কোন নিয়ন্ত্রন নেই, সেই অলংকার বা অর্থ স্ত্রী তার নিজের ইচ্ছেমতো ব্যবহার করতে পারে না। সেটা নিয়ন্ত্রিত থাকে অন্যের হাতে। যদি তাই হয়, তবে এভাবে মোহরানা আদায় হবে না। কেননা, বিশেষজ্ঞদের অভিমত হচ্ছে, মোহরানা এমনভাবে প্রদান করতে হবে যাতে তার উপর স্ত্রীর নিঃশর্ত মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং স্ত্রী নিজ ইচ্ছামতো বিনা বাধায় তা ব্যবহার, খরচ, দান, ভোগ বা ঋণ দিতে পারে।

আরেকটি কু অভ্যাস প্রচলিত আছে তা হল- বিয়ের সময় স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে প্রদত্ত উপহার সামগ্রী যেমন স্বর্ণালঙ্কার, কসমেটিকস, কাপড়-চোপড় কে ধরা হয় মোহরানার অর্ধেক উসুল হিসেবে আবার অনেক সময় স্বল্প দামের জিনিসপত্র উপহার দিয়ে বেশি পরিমানে দেনমোহর উসুল দেখানো হয় অথচ উপহার দেনমোহর হিসেবে গন্য হতে পারেনা যা আমি আগেই বলেছি।

সবচেয়ে প্রচলিত বড় ভুল ধারণা হল-স্ত্রী যদি নিজে স্বামীকে তালাক দেয় (তালাক-ই-তাফইজ)তাহলে স্বামীকে দেনমোহর পরিশোধ করতে হবেনা। কিন্তু দেনমোহর সর্বাবস্থায় স্বামীর ঋণ। দেনমোহর কখনোই মাফ হবেনা। ১৯৩৯ সালের মুসলিম বিবাহ-বিচ্ছেদ আইনের ৫ ধারায় বলা হয়েছে, অত্র আইনে সন্নিবেশিত কোনো কিছুই কোনো বিবাহিত মহিলার বিবাহ-বিচ্ছেদের ফলে মুসলিম আইন অনুযায়ী তাঁর প্রাপ্য দেনমোহর অথবা তাঁর কোনো অংশের ওপর তাঁর অধিকারকে ক্ষুণ্ন করবে না। ওই ধারা অনুসারে প্রমাণিত হয় যে কোনো মুসলিম নারী আদালতের মাধ্যমে তাঁর স্বামীকে তালাক দিলেও ওই নারীর দেনমোহরের অধিকার লোপ পায় না। মুসলিম পারিবারিক আইন ১৯৬১ অনুযায়ী সালিসি পরিষদের অনুমতি ছাড়া আরেকটি বিবাহ করলে তাঁকে অবিলম্বে তাঁর বর্তমান স্ত্রীর বা স্ত্রীদের তাৎক্ষণিক অথবা বিলম্বিত দেনমোহরের যাবতীয় টাকা পরিশোধ করতে হবে এবং ওই অর্থ পরিশোধ করা না হলে তা বকেয়া রাজস্বের মতো আদায় হবে। নিকাহনামায় বা বিবাহের চুক্তিতে দেনমোহর-ঋণ পরিশোধের পদ্ধতি নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ না থাকলে দেনমোহরের সমগ্র অর্থ চাহিবামাত্র দেয় বলে ধরে নিতে হবে।

দেনমোহরের দাবি কখন মাফ হয়ঃ

কেউ যদি তার স্ত্রীকে ফুসলিয়ে দেনমোহর মাফ করিয়ে নেয়, তবে সেটা মাফ হবে না। সেটার দাবি থেকে স্বামী কোনোদিন মুক্তি পাবে না। অবশ্য কোনো প্রকার চাপ, হুমকি, শঠতা, ছলনা, প্ররোচনা ব্যতীত সম্পূর্ণ স্বেচ্ছায় যদি স্ত্রী তার মোহরানার কোনো অংশ বা পুরো অংশের দাবি মাফ করে দেয়, তবেই কেবল স্বামী তা থেকে মুক্তি পাবে। নচেৎ নয়। অবশ্য এটাও ইসলামি শরিআহর কথা যে, স্বামীর আর্থিক অবস্থা কোনো কারণে অসচ্ছল হলে, মোহরানা পরিশোধে তাকে স্ত্রীর সময় বাড়িয়ে দেয়া উচিত। আর স্বামী যদি একেবারেই আর্থিকভাবে অসচ্ছল হয়, তবে স্ত্রীর উচিত দেনমোহরের দাবি থেকে স্বামীকে সম্পূর্ণ মুক্ত করে দেয়া।

শেষ কথা হল স্বামীর একচ্ছত্র তালাকের ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে দেনমোহর। এতে স্ত্রীর সামাজিক ও আর্থিক নিরাপত্তা কিছুটা হলেও নিরাপদ হয়। কিন্তু বিয়ে শুধুই দুটি দেহের যৌন চাহিদা পূরণের একটি দেওয়ানি চুক্তি নয়, দুটি হৃদয়ের ও মিলন ঘটে এর মাধ্যমে। তাই বেশি দেনমোহর ধার্য করে হয়তো স্ট্যাটাস দেখানো যায়, স্বামীর অক্ষমতাকে পুঁজি করে বিয়ে বিচ্ছেদ কে হয়তো কিছুটা ঠেকিয়ে রাখা যেতে পারে কিন্তু মেলবন্ধনহীন সেই সম্পর্কে হৃদয়ের উষ্ণতা কতটুকু থাকবে তাও ভাবার বিষয়-বিয়ে যেন কারো ঘাড়ে লাশের বোঝা না হয়ে যায়!

-------------------------------------------------------------------------------------------------
SAEED AHSAN KHALID
Senior Lecturer
Department of Law
Daffodil International University.
« Last Edit: October 04, 2013, 08:42:07 AM by Saeed Ahsan Khalid »

Offline farzanamili

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 471
  • Word has power, use it wisely!
    • View Profile
touched by your post here....you pointed out the real matter of a marriage which matters...often the society or society people mis-interpret this right either to show-off or to deprive the women...very often women are emotionally blackmailed that if they really love, why they are seeking dower...its really embarrassing for them...hope that mental set-up of all will be changed positively....
Mirza Farzana Iqbal Chowdhury
Senior Lecturer
Department of Law
Daffodil International University.

Offline Saeed Ahsan Khalid

  • Newbie
  • *
  • Posts: 14
  • Test
    • View Profile
Thanks Maa'm for your insightful feedback. Your observation is quite worthy. It is sad but true that women are often denied of their dower rights here because of stereotyped social norms and patriarchal attitude. I appreciate your pledges to change the mindset positively. Keep fine.

Offline Ferdousi Begum

  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 823
  • Don't give up.
    • View Profile
Miss you sir, You wrote about reality of life. In a marriage, both person should live with dignity and honour, so, while determining the amount of dower, we should keep this in our mind.

Offline farzanamili

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 471
  • Word has power, use it wisely!
    • View Profile
Now-a-days, dower is seen in most of the cases as the symbol of status...if high amount, that means the bride is from a good family, average amount equates with average family and low dower is replaced by 'Dowry' from women to men. what I mentioned is not applicable in all cases, whatever i have seen, its just expression of that! sometimes these are felt as awkward, sometimes as real life fun!
Mirza Farzana Iqbal Chowdhury
Senior Lecturer
Department of Law
Daffodil International University.

Offline Ferdousi Begum

  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 823
  • Don't give up.
    • View Profile
স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে তালাক প্রদানের পর স্ত্রী যেই আদালতের এলাকায় বসবাস করেন ওই আদালতে দেনমোহর ও খোরপোষ দাবি করে মামলা দায়ের করতে পারেন। মোজাহেদুল ইসলাম বনাম রওশন আরা (২২ ডি.এল.আর, পৃষ্ঠা-৬৭৭) মামলায় বলা হয়েছে, দেনমোহর কখনই মাফ হয় না। স্বামী যদি মারাও যায় তবে সে স্বামীর সম্পদ হতে দেনমোহর আদায় করা যায়। কেননা ইসলামী আইনে দেনমোহরকে দেনা বলে বিবেচনা করা হয়। দেনমোহরের পরিমাণ যত বেশি হোক না কেন, পক্ষগুলোর মধ্যে স্বীকৃত হলে স্বামী তা সম্পূর্ণরূপে স্ত্রীকে পরিশোধ করতে বাধ্য থাকবে। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক বাস্তবতায় আদালতগুলো দেনমোহরের দাবিকে স্বীকৃতি দেয়। এমনকি স্বামীর আর্থিক সঙ্গতি না থাকলেও আদালত দেনমোহরানার দায় হতে স্বামীকে মুক্তি দেবে না।

আরেকটি কেস স্টাডিতে দেখা যায়, রুমী নামের একটি মেয়ের বিয়ের দুই দিনের মাথায় স্বামীর সঙ্গে তালাক হয়ে যায়। দেনমোহরের মামলায় কাবিননামায় যে পরিমাণ অর্থ উল্লেখ ছিল সে পরিমাণ অর্থ স্ত্রী দাবি করে ওই স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করে। ওই মামলায় স্বামী অর্থাৎ মামলায় যিনি বিবাদিপক্ষ তিনি দাবি তোলেন যে, কাবিননামায় উলি্লখিত অর্থের পরিমাণ ঠিক নয়। বিবাদী পক্ষ ওই মামলার জবাবে দম্পতির সহবাস সংঘটনের আগে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে বলে দাবি করে সাকুল্য মোহরানার অর্ধেক পরিশোধ করতে রাজি হয়। এ ক্ষেত্রে যদি স্বামী সমুদয় অংশ প্রদান করেন তবে কোনো সমস্যা নেই; কিন্তু সহবাস যদি হয়ে থাকে, তবে স্বামী সমুদয় মোহরানার টাকা পরিশোধ করতে বাধ্য। তবে বলে রাখা উচিত সহবাস হয়েছিল কি না তা প্রমাণের সম্পূর্ণ দায় বাদীপক্ষের অর্থাৎ স্ত্রীর।

দেনমোহর আদায় সংক্রান্ত মামলা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই গ্রামবাংলার অশিক্ষিতদের মধ্যে সাধারণত হয়ে থাকে। কেননা গ্রামের অল্প শিক্ষিত মানুষের মধ্যে দেনমোহরের পরিমাণ, তাৎপর্য ইত্যাদি সম্পর্কে সচেতনতা নেই বললেই চলে। অসচেতনতা ও অজ্ঞতা তাদের সমস্যার মুখোমুখি করে দেয়। ১৯৭৪ সালের মুসলিম বিবাহ ও বিবাহ বিচ্ছেদ নিবন্ধীকরণ আইন থাকা সত্ত্বেও গ্রামপর্যায়ে অশিক্ষিত দরিদ্রদের মধ্যে এখনো বিশালসংখ্যক বিয়ে প্রতিনিয়ত অনিবন্ধিত থেকে যায়। ফলে কাবিননামার অভাবে মামলায় দেনমোহরানার পরিমাণ নিয়ে বিরোধ আরো জটিল আকার ধারণ করে। সুতরাং নারী অধিকার সংরক্ষণের জন্য দেনমোহর ও খোরপোশ সংক্রান্ত আইন বিষয়ে সর্বস্তরে ব্যাপক গণসচেতনতা দরকার।
« Last Edit: November 30, 2013, 02:00:27 PM by Ferdousi Begum »

Offline farzanamili

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 471
  • Word has power, use it wisely!
    • View Profile
Mirza Farzana Iqbal Chowdhury
Senior Lecturer
Department of Law
Daffodil International University.

Offline Ferdousi Begum

  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 823
  • Don't give up.
    • View Profile