পারস্যের কবি ওমর খৈয়ামকে আমরা রুবাইয়াতের কবি হিসেবেই চিনি। অপূর্ব ছন্দের চার লাইনের হাজার খানেক কবিতা লিখেই তিনি তাক লাগিয়ে দিয়েছেন সারা দুনিয়ার কবিদের।
১১২৩ সালের ৪ ডিসেম্বর অর্থাৎ আজকের এই দিনে তিনি চির বিদায় নেন। খৈয়ামের জন্ম ১০৪৮ সালে ইরানের খোরাসান রাজ্যের নিশাপুরে। আমৃত্যু খৈয়ামের একমাত্র নেশা ও পেশা ছিল জ্ঞানার্জন করা। আর এ কারণেই তিনি একাধারে গণিতে, জ্যোতিষ শাস্টে্প এবং সাহিত্যে অসামান্য অবদান রেখে গেছেন।
ওমর খৈয়াম শৈশবে শিক্ষা লাভ করেন নিশাপুরের শ্রেষ্ঠ ইমাম মাওবাফিক উদ্দিনের কাছে। সেখানে তার সহপাঠী ছিলেন আলী ইসহাক তৌসী ও হাসান বিন সাব্বা। এই তিন সতীর্থ ওই সময় প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, তাদের মধ্যে পরর্বতীকালে কেউ সমৃদ্ধবান হলে তিনি তার সৌভাগ্য অপর দু'জনের সঙ্গে ভাগ করে নেবেন।
পরর্বতী জীবনে তৌসী পারস্যের সুলতানের উজির হন এবং নিজাম-উল-মুলক উপাধি পান। তখন অপর দুই বন্দু তার সঙ্গে দেখা করলে তিনি তার প্রতিজ্ঞা রক্ষা করেছিলেন। তিনি খৈয়ামকে দিতে চেয়েছিলেন জায়গির, উপাধি এবং জাগতিক ধন-সম্পত্তি; কিন্তু ওমর নির্জনে জ্ঞানচর্চার সুযোগ করে দেওয়ার অনুরোধ জানান। নিজাম-উল-মুলক তার অনুরোধ রাখেন এবং খাজাঞ্চিখানা থেকে ১২ শ' স্ট্র্বণমদু্রা বার্ষিক বৃত্তির ব্যবস্থা করে দেন।
ওমর খৈয়াম কবি হিসেবে পরিচিতি লাভের আগেই বিখ্যাত হন গণিতবিদ হিসেবে। গণিত শাস্টে্প তার বড় অবদান হলো জ্যামিতিক উপায়ে ত্রিঘাত সমীকরণের সমাধান বের করা। তিনি বীজগণিতের চূড়ান্ত উন্নতি সাধন করেন। ইউক্লিডের জ্যামিতির সমস্যাবলির ব্যাখ্যা দেন খৈয়াম। তার সৌরবষরাউর হিসাব ছিল নিখুঁত, যার দৈর্ঘ্য ৩৬৫.২৪২ দিন। পারস্যের সুলতানের অনুরোধে তিনি পারস্যের পঞ্জিকা সংস্কারের দায়িত্ব নেন।
খৈয়ামের রুবাইয়াত বিশ্বসাহিত্যের অন্যতম সেরা একটি ক্ল্যাসিক। নিশাপুরেই রচিত হয়েছে কবির অন্তিম শয্যা। তাঁবু আকৃতির এই সমাধি ক্ষেত্রের চারপাশে রয়েছে ফুলবাগান। ফুল ঝরে পড়ছে কবির সমাধি-বক্ষে, ঠিক যেমনটি তিনি চেয়েছিলেন।
আবদুল্লাহ আরিফ, ৪ ডিসেম্বর, ২০০৬। Source:
http://www.samakal.net/print_edition/archive/details.php?news=9&view=archiev&y=2006&m=12&d=04&action=main&menu_type=&option=single&news_id=43063&pub_no=413&type=