সুদানে আবিষ্কৃত ৯০০ বছরের পুরনো মমি
কল্পনা করুন একেবারে অজ একটা জায়গা, কারো কাছে যার কোনও মুল্য নেই। এমন একটি স্থান থেকে যদি বের হয় যায় প্রাচীনকালের একটি/দুটি নয় বরং সাত-সাতটি মমি, তবে কেমন লাগবে? শুধু তাই নয়, এসব মমি ছিলো যে কক্ষে সেই কক্ষের চার দেয়ালে গুটি গুটি অক্ষরে লেখা আছে দুর্বোধ্য কিছু লিপি। সুদানের ওল্ড ডঙ্গোলা এলাকার এক আশ্রমের খননকার্য থেকে পাওয়া গেছে ঠিক এমনই এক সমাধিকক্ষ যা কিনা ৯০০ বছরের পুরনো।
এই সমাধিটি সর্বপ্রথম খুঁজে পাওয়া যায় ১৯৯৩ সালে। পোল্যান্ডের স্টেফান জ্যাকবিয়েলস্কির নেতৃত্বে থাকা একটি দলের মিশন চলাকালীন সময়ে এটি খুঁজে পাওয়া যায়। কিন্তু এখানে খননকার্য চালানো শুরু হয় ২০০৯ সালে। তখন সমাধি থেকে মমিগুলোকে সরিয়ে নিয়ে গবেষণা করা হয়, সমাধিকক্ষের দেয়াল পরিষ্কার করে পর্যবেক্ষণ করা হয় এবং এদের পাঠোদ্ধার করা হয়।
ওল্ড ডঙ্গোলা ৯০০ বছর আগে মাকুরিয়া নামের একটি খ্রিস্টীয় সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিলো। এই সাম্রাজ্য আশেপাশের ইসলামিক সাম্রাজ্যগুলোর সাথে সখ্যতা বজায় রাখতো। ধারণা করা হচ্ছে, এই মমিগুলোর মাঝে কোনও একটি হলো আর্চবিশপ জর্জেস এর, যিনি সে সময়ে ওই সাম্রাজ্যের সবচাইতে প্রভাবশালী ধর্মগুরু ছিলেন। তাঁর এপিটাফ অদূরেই পাওয়া যায় যাতে লেখা ছিল তিনি ১১১৩ সালে, ৮২ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।
Polish Archeology in the Mediterranean জার্নালে প্রকাশিত এই বিষয়ক গবেষণার তথ্যে এই সমাধিকক্ষের দেয়ালে লেখা প্রাচীন লিপির ওপরেও গুরুত্ব দেওয়া হয়। গবেষণার সাথে জড়িত ইউনিভার্সিটি অফ ওয়ারস এর অ্যাডাম লাটিয়ের এবং এবং লেইডেন ইউনিভার্সিটির জ্যাক ভ্যান ডার ভ্লিয়ে এর মতে, এই লিপি লেখার কারণ হলো মৃতদেহগুলোকে নিরাপত্তা দেওয়া। জীবন থেকে মৃত্যুর মাঝে পার হবার যে সন্ধিক্ষণ সে নিতান্তই সংকটময় সময়ে এই মানুষদের এবং এই সমাধিকক্ষকে নিরাপত্তা দেবার উদ্দেশ্যে এসব লিপি লেখা আছে। সাদা রঙ করা দেয়ালে কালো কালি দিয়ে লেখা আছে লুক, জন, মার্ক এবং ম্যাথিউ এর গসপেল থেকে নেওয়া লিপি, যাদুবিদ্যার প্রতীক এবং ভার্জিন মেরির একটি প্রার্থনা। গ্রিক এবং সাহিদিক কপ্টিক ভাষায় লেখা আছে এই লিপি। বিভিন্ন দেয়ালে স্বাক্ষর থেকে বোঝা যায় “ইয়াওনেস” নামের এক ব্যক্তির আঁকা এই লিপি। এই সমাধিকক্ষে যে সাতটি মমি পাওয়া যায় তাঁর প্রতিটিই প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ এবং ৪০ বছরের কম নয় তাদের কারোই বয়স। এই মমিদের ঢুকিয়ে দেওয়ার পরে সমাধিকক্ষের মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয় লাল ইটের ওপর কাদামাটি লেপে। মমিদের শরীরের কাপড় খুব একটা ভালো অবস্থায় নেই, কিন্তু গবেষণার পরে জানা যায় যে তাদের পোশাক আশাক ছিল সাধারণ লিনেনে তৈরি। এদের কয়েকজনের পরিধানে ছিলো ক্রুশ।
যে সময়ে এই সমাধি তৈরি করা হয় সে সময়ে মাকুরিয়া ছিল উৎকর্ষের শীর্ষে। সুদানের অনেকাংশে এই সাম্রাজ্য ছড়িয়ে যাচ্ছিল। ১১৭১ সালের দিকে মিশরে আইয়ুবী শাসন প্রতিষ্ঠা হবার পরে মাকুরিয়ার পতন কাছে চলে আসে। তারা মাকুরিয়া আক্রমণ করে এবং এক পর্যায়ে তারা পরাজিত হয়।