One relevant story!
হাসিন এবং সামির দুইজন খালাতো ভাই। হাসিন বাংলাদেশে আর সামির আমেরিকা জন্মগ্রহণ করেছে ২০০২ সালের ফেব্রুয়ারি এবং মে মাসে । তাই এদের দুইজনের বয়স প্রায় একই বলা যায়। কেবল কয়েক মাসের পার্থক্য। হাসিন এখন ক্লাস টু পড়ে। বাংলা, অঙ্ক, সমাজ, ধর্ম, ইংলিশ ইত্যাদি বিষয়গুলো পড়তে হয় সাথে বাংলা ব্যাকরণ, রচনা এবং ইংলিশ ব্যাকরণ, রচনা, লেটার, প্যারাগ্রাফ ইত্যাদি পড়তে হয়।
অঙ্ক করতে গিয়ে হাসিনকে ১, ২, ৩, ৪….. ১০০ থেকে লক্ষ কোটি গণনা শিখতে হয়েছে! সামিরও আমেরিকাতে একই পড়াশুনা করেছে।
সামির নামতা শিখেছে ১০ পর্যন্ত এবং বেসিক যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ শিখে বাকী সব বড় বড় যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ করতে কেলকুলেটর ব্যাবহার করে শিখছে। সামির তার পরাশুনার একটি ভাগ কমপিউটার মাধ্যমে লিখেই শিখে ফেলে!
কিন্তু হাসিন ১, ২, ৩, ৪, ৫,……। ২০ পর্যন্ত নামতা শিখতে হয়েছে। যোগ বিয়োগ, গুণ ভাগ বেসিক কেন সব বড় বড় যোগ, বিয়োগ, গুন, ভাগ নিজের হাতে গুনে গুনে শিখছে। হাসিন এভাবেই এইসএসসি পাশ করে বিসিএস পরীক্ষার সময়ও সায়েনটিফিক ক্যালকুলেটর ব্যবহার করতে পারবে না! কিন্তু কেন? সঠিক মেধা যাচাই কি শুধু মৌখিক হিসাব দিয়ে বুঝা যায় কিংবা বানান জ্ঞান দিয়ে? বেসিক জানা দরকার আছে কিন্তু তাই বলে বিসিএস হল পর্যন্ত এই নিয়ম বাড়াবাড়ি।
সামিরের মা এ তথ্য জানতে পেরে রীতিমত অবাক! বলিস কি? আমাদের এখানে তো সামির ক্যালকুলেটর ব্যবহার করে! আর হাসিনকে এতো পড়াস কেন? আমরা তো এখানে এতো চাপ নেই বাচ্চাদের। ওদের বাচ্চাদের দিয়ে শুধু পাঠ্য পুস্তক পরায় না। যেমন একটি সময় থাকে যেদিন লাইব্রেরিতে গিয়ে বই এনে পড়তে পারবে যে কোনো বই। সামির এখন আমেরিকার সকল প্রেসিডেন্টের আত্মজীবনী জানে। কারণ তার এই সম্পর্কে জানার আগ্রহ বেশি। ক্লাসে দ্রুত অঙ্ক করে দিতে পারলে কয়েন দেয়া হয় এবং একটি নির্দিষ্ট সংখ্যায় কয়েন জমলে সেই কয়েন দিয়ে খেলনা, টুকিটাকি কিনে আনতে পারে! সে জন্য বাচ্চাদের মধ্যে কাজ করে দ্রুত কাজ শেষ করার।
হাসিন যদি বিদেশে কোনো স্কুলে ভর্তি হয় পারবে কিনা ওদের সাথে তাল মিলিয়ে পড়তে এই মাঝ বয়সে ! কারন একে তো হাসিন পরেছে বাংলা মাধ্যমে অপরদিকে বিদেশ গেলে পুরো ইংলিশ মাধ্যম তাও ৯/১০ বছর বয়সে! এর উত্তরে জানা গেলো “বাংলাদেশি ছেলে মেয়েদের জন্য এই পড়াশুনা পান্তা ভাত! “ওরা খুব সহজেই নিজদের অন্যদের সাথে মিলায়ে নিতে পারবে।
বয়সের তুলনায় বাচ্চাদের এতো পড়াশুনার চাপ থাকে যে ওদের সুন্দর শৈশব কেড়ে নেয় বাড়তি পড়াশুনার চাপ! যার সাথে তাল মিলাতে বাবা-মাকেও পড়াশুনা করতে হয় সন্তানদের সাথে! শুধু কি তাই বাবা-মার দৌঁড় আর মানসিক চাপ সন্তানের উপর পরে খুব বাজে ভাবে।
আমরা যে ভাবে প্রতি বছরের শুরুতে সন্তানকে একটি ভালো স্কুলেএ ভর্তি করতে দৌঁড়াই উন্নত দেশগুলোয় এমন কোনো বালাই নাই। ওদের ভাষ্য সব স্কুলই এক। একটিতেই ভর্তি করলেই হল! কিন্তু এটি আমাদের কাছে আকাশ কুসুম কল্পনা এবং না ভাবলেই আমি শেষ!
বহু বছর আগে থেকেই আমরা হিসাব নিকাশ করতে ক্যালকুলেটর ব্যবহার করি বাস্তব জীবনে, কর্ম জীবনে এবং গত প্রায় ২০ বছর যাবত কাগজে কলমে লিখাও কমে গেছে। সব কিছু কমপিউটারের মাধ্যমে আমরা সেরে নেই। কেবলমাত্র সাইন করার জন্য নিজের হাত আর কলম ব্যবহার করা হয়!
যখন আমরা ২০১৩ এসে দাঁড়িয়ে বলছি, ডিজিটাল দেশ ডিজিটাল পৃথিবী, তখন অনেক দেশে আসলেই ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে সকল কাজ কর্ম এবং পড়াশুনা করছে।