ফুটবল আর সংগীতের মধ্যে প্রধান মিল কী? প্রশ্নটি বেমক্কা মনে হতেই পারে। কেননা, ফুটবল আর সংগীত যে ভিন্ন দুটি জগত্। তবে হ্যাঁ, একটি জায়গায় সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যেতে পারে। নান্দনিক ফুটবলে যেমন মানুষকে মোহাবিষ্ট করে, মায়াবী সুরের মূর্ছনাতেও মানুষ মুগ্ধ হয় মুহূর্তের পর মুহূর্ত। কারও মধ্যে যদি উভয় সত্তার মেলবন্ধন ঘটে, তাহলে কেমন হবে? ফুটবল ও সংগীত—দুটোতেই সিদ্ধহস্ত, এমন কয়েকজন ‘বিরল প্রতিভা’র কথাই বলা হবে এখানে।
পিওতর চেকপিওতর চেক
মাথায় কালো মাস্ক মুড়িয়ে পিওতর চেকের প্রধান কাজ চেলসির গোলপোস্ট সুরক্ষিত রাখা। মাঠে যে হাত সদা তত্পর বল আটকাতে, অবসরে সেই হাতেই ওঠে ড্রাম স্টিক। কাঠির তালে বেজে ওঠে ড্রামের ঝংকার! কারণ, পিওতর চেক যে এডি স্টোইলো ব্যান্ডের ড্রামার! কয়দিন আগেই সখ্য হয়েছে জগদ্বিখ্যাত ব্যান্ড কুইনের ড্রামার রজার টেইলরের সঙ্গে। বোঝাই যাচ্ছে তাঁর লক্ষ্য অনেক দূরে। ‘অনেক দিন ধরেই বাড়িতে আমার এক সেট ড্রাম রয়েছে। আমি সেটা বাজাতে ভীষণ মজা পাই’, বললেন চেক। নতুন কিছু গানের তৈরির কথা ভাবছে তাঁর ব্যান্ড। ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এডি স্টোইলো এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি কনসার্টও করে ফেলেছে।|
অ্যালেক্সি লালাসঅ্যালেক্সি লালাস
যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে খেলেছেন ১৯৯৪ ও ১৯৯৮ বিশ্বকাপ। মেজর লিগ সকার তারকা অ্যালেক্সি লালাস রক গায়ক হিসেবেও পরিচিত। জীবনে নাকি ফুটবলের চেয়ে গানের পেছনেই বেশি সময় ব্যয় করেছেন তিনি। কেবল ভালো গাইতে পারেন না, ভালো গিটারও বাজান। তাঁর প্রথম একক অ্যালবাম ‘জিঞ্জার’ বেরিয়েছিল ১৯৯৮ সালে। এ পর্যন্ত তিনটি অ্যালবামও বেরিয়েছে।
পল ‘গাজ্জা’ গ্যাসকোয়েন
স্ত্রী নির্যাতন, মাত্রাতিরিক্ত সুরাসক্তি এবং নানা রকম অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের কারণে প্রায়ই সংবাদ শিরোনাম হন সাবেক ইংলিশ ফুটবল তারকা পল গ্যাসকোয়েন ওরফে গাজ্জা। তাঁর ফুটবল প্রতিভা নিয়ে সংশয় ছিল না কারও। খেলেছেন নিউ ক্যাসল, টটেনহাম ও লািসওর মতো ক্লাবে। ফুটবল প্রতিভা, উচ্ছৃঙ্খল জীবন তো বটেই তিনি সংবাদ শিরোনাম হন সংগীতগুণের কারণেও! নব্বই দশকের শুরুতেই একক অ্যালবাম বেরিয়েছিল। রীতিমতো হিটও হয়েছিল। তাঁর ‘ফগ অব দ্য টাইন’ গান তো ওই সময় টপ চার্টের দুই নম্বরে ছিল!
অ্যান্ডি কোল
সাবেক ম্যানইউ তারকা কোলের ফুটবল সত্তার সঙ্গে পরিচয় রয়েছে অনেকের। কিন্তু তিনি যে দারুণ সুর তুলতে পারেন গলায়, সেটি কি জানা আছে? তাঁর প্রথম ও শেষ একক অ্যালবাম বের হয় ১৯৯৯ সালে। ১৯৮২ সালে ‘গ্যাপ ব্যান্ডে’র ‘আউটস্ট্যান্ডিং’ গানটি গেয়েছিলেন। গানটি রীতিমতো হইচই ফেলে দিয়েছিল চারদিকে।
স্লাভেন বিলিচস্লাভেন বিলিচ
ক্রোয়েশিয়ার স্টাইলিশ কোচ হিসেবেই অধিক পরিচিত ছিলেন। খেলোয়াড় ও সমর্থকদের উজ্জীবিত করার আরেকটি মন্ত্রও জানা ছিল বিলিচের। সেটি হচ্ছে গান। ক্রোয়েশিয়ার অন্যতম জনপ্রিয় ব্যান্ড রব্যুর প্রধান গায়ক ও লিড গিটারিস্ট বিলিচ একই সঙ্গে গীতাকারও। ২০০৮ সালের ইউরো কাপে ক্রোয়েশিয়ার সমর্থকদের জন্য একটি গান তৈরি করেছিল রব্যু ব্যান্ড। গানটি সে সময় ক্রোয়েটদের মধ্যে ভীষণ সাড়াও ফেলেছিল।
কেভিন কিগানকেভিন কিগান
ছিলেন ইংল্যান্ড জাতীয় দলের কোচ। সামলেছেন নিউক্যাসল ইউনাইটেড, ফুলহাম ও ম্যানচেস্টার সিটির মতো বড় ক্লাব। ফলে কোচ হিসেবে কিগানের সুনাম নেহাত কম নয়। কেবল দল সামলাতেই পারঙ্গম নন, কণ্ঠে মধুও রয়েছে তাঁর! গাইতে পারেন বেশ। ক্রিস নরম্যান ও পিট স্পেন্সারের লেখা তাঁর বিখ্যাত গান ‘হেড ওভার হিলস ইন লাভ’ মুক্তি পেয়েছিল ১৯৭৯ সালের ৯ জুন। গানটি যুক্তরাজ্যের টপচার্টে ৩১ নম্বরে ঠাঁই করে নিয়েছিল সেবার। মাঝে ব্যান্ড তারকা স্পিন্সারের সঙ্গে জার্মানি পাড়ি জমিয়েছিলেন। জার্মানিতে স্পেন্সারের ব্যান্ড ‘স্মোকি’ আবার খুবই জনপ্রিয়। ফলে কিগানের গাওয়া গানটি যুক্তরাজ্যের তুলনায় জার্মানিতেই বেশি হিট হয়েছিল। একটা সময় বিদেশ বিভূঁই ছেড়ে স্বদেশে ফিরে আসেন। বের হয় তার দ্বিতীয় একক ‘ইংল্যান্ড’। এটির গায়ে অবশ্য ‘হিট’ তকমা লাগেনি।
ক্লিন্ট ডেম্পসি
যুক্তরাষ্ট্রের মিডফিল্ডার ও আমেরিকার মেজর লিগ সকারের সিয়াটল সাউন্ডার্স এফসির অধিনায়ক ক্লিন্ট ডেম্পসির সংগীত প্রতিভার কথা অজানা নয়। কেননা, ২০০৬ বিশ্বকাপে নাইকির প্রচারণার জন্য তৈরি জনপ্রিয় ‘ডোন্ট ট্রেড’ র্যাপ গানটি ছিল তাঁরই ফিচার করা। ডেম্পসি আমেরিকান হিপহপ মিউজিক জগতে বেশ জনপ্রিয়।
শোনা যায়, সাবেক চেলসি তারকা দিদেয়ের দ্রগবা ও ফ্লোরেন্ত মালুদা নাকি ব্যান্ড দল গড়ে তুলেছেন। ব্যান্ডের গিটারে দ্রগবা আর ড্রামে মালুদা। যদিও এর সত্যতা এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি।