সেবাখাতের ওপর ভর করে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালানো ইউনিট (প্রতিষ্ঠান) গত ১০ বছরে বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি।
180
0
1 Print Friendly and PDF
উত্তরাঞ্চলে উচ্চ মাত্রার প্রবৃদ্ধির কারণে এই সময়ে শহরাঞ্চলের তুলনায় গ্রামে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডও প্রায় আড়াইগুণ বেড়েছে বলে অর্থনৈতিক শুমারিতে উঠে এসেছে।
এতে দেখা যায়, অর্থনৈতিক ইউনিটের ৭২ শতাংশই এখন গ্রামে, কর্মসংস্থানের বড় একটা অংশ দখল করে নিয়েছে বাড়িভিত্তিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড।
একসময় মঙ্গাপীড়িত রংপুর বিভাগ অর্থনৈতিক ইউনিটের সংখ্যায় পেছনে ফেলে দিয়েছে খুলনাকে। রাজশাহী বিভাগ এখন তৃতীয় অবস্থানে।
প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, “আমাদের সম্ভাবনার সঙ্গে সঙ্গে অগ্রগতিও যে হচ্ছে, তা এ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। গত ১০ বছরে আমাদের অগ্রগতি অত্যন্ত শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছেছে।”
এদিকে অর্থনৈতিক ইউনিটের প্রায় অর্ধেকই দখল করে রয়েছে সেবা খাত, যার সমালোচনা করেছেন নীতি নির্ধারকরা।
রোববার আগারগাঁওয়ে নিজস্ব কাযালয়ে অর্থনৈতিক শুমারি ২০১৩ এর প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যা ব্যুরো (বিবিএস)।
বিবিএসের প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে, ২০১৩ সালে দেশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালানো ইউনিটের (প্রতিষ্ঠান) সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮০ লাখ ৭৫ হাজার ৭০৪টি। এর আগের শুমারিতে (২০০১ ও ২০০৩ সালে) এই ইউনিটের সংখ্যা ছিল ৩৭ লাখ ৮ হাজার ১৪৪টি।
অর্থ্যাৎ গত ১০ বছরে দেশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ইউনিট সংখ্যায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১৮ শতাংশ।
দেশে তৃতীয়বারের মতো গত মার্চ থেকে মে পযন্ত অর্থনৈতিক শুমারি করে বিবিএস। এর আগে দ্বিতীয়বারের মতো ২০০১ ও ২০০৩ সালে এবং প্রথমবারের মতো ১৯৮৬ সালে অর্থনৈতিক শুমারি করা হয়।
বিবিএস দেশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ইউনিটগুলোকে তিনভাগে ভাগ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে স্থায়ী কাঠামো, অস্থায়ী কাঠামো ও অর্থনৈতিক খানা।
স্থায়ী কাঠামো বলতে বোঝানো হয়েছে- বাড়ির বাইরে একটি নির্দিষ্ট ঠিকানায় স্থায়ী কাঠামো তৈরি। এর মধ্যে পড়ছে যাবতীয় উৎপাদনমুখী ও সেবামূলক শিল্প বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
অস্থায়ী কাঠামো হলো- রাস্তা বা বাজারের পাশে অস্থায়ী কাঠামো যার ছাউনি বা বেড়া যে কোনো একটি নাও থাকতে পারে।
আর খানা বলতে বোঝানো হয়েছে বাড়ির আঙিনায় কৃষি কর্মকাণ্ডের বাইরে ক্ষুদ্র শিল্প বা দোকান অথবা নিজস্ব অটোবাইক, রিকশা, ভ্যান কিংবা ভ্রাম্যমাণ দোকান।
গ্রামের অগ্রগতি
দেশে অর্থনৈতিক ইউনিট সবচেয়ে বেশি রয়েছে ঢাকা বিভাগে ৩২ শতাংশ, এরপর চট্টগ্রাম বিভাগে ১৭ শতাংশ, রাজশাহীতে ১৫ শতাংশ, রংপুরে ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ ও খুলনা বিভাগে ১২ দশমিক ৮ শতাংশ।
অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সবচেয়ে নিচের দিকে রয়েছে বরিশাল ও সিলেট বিভাগ। বরিশালে ৪ দশমিক ৮ শতাংশ এবং সিলেটে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ অর্থনৈতিক ইউনিট রয়েছে।
২০০১ ও ২০০৩ সালের শুমারিতে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের পরই ছিল খুলনার অবস্থান। গত ১০ বছরে রাজশাহী ও রংপুরে অর্থনৈতিক ইউনিট বেড়ে যাওয়ায় খুলনা পঞ্চম অবস্থানে চলে গেছে।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিবিএস বলেছে, “উত্তরাঞ্চলে উচ্চ মাত্রার প্রবৃদ্ধি গ্রামীণ অর্থনীতিকে বিকশিত করেছে। একদা দারিদ্র্যপীড়িত রংপুর বিভাগ এখন ব্যষ্টিক অর্থনৈতিক কার্যক্রমের বাস্তব প্রবৃদ্ধির অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে।”
প্রতিবেদন দেখানো হয়েছে, গত এক দশকে শহর এলাকায় অর্থনৈতিক ইউনিট বৃদ্ধির হার ৬২ দশমিক ৯০ শতাংশ আর গ্রামে বৃদ্ধির এ হার ১৫০ দশমিক ৬০ শতাংশ।
সেবা খাতের প্রাধান্য
অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সেবা খাতই প্রাধান্য বিস্তার করে আছে। এখাতের দখলে ৪৫ দশমিক ৯১ শতাংশ স্থান, যার মধ্যে রয়েছে মটর গাড়ি ও মটর সাইকেল মেরামতসহ খুচরা ও পাইকারি ব্যবসা।
এছাড়া পরিবহন ও মজুত ১৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ, উৎপাদন খাত ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ এবং অন্যান্য সেবা কার্যক্রম ৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ।
তবে উৎপাদন খাতের অগ্রগতি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, “সেবা খাত অনেক বেড়েছে। অর্থনীতির আকার যেভাবে বেড়েছে, উৎপাদন খাত সেভাবে বাড়েনি। উৎপাদন খাত একই কাতারে রয়ে গেছে।”
বেড়েছে অর্থনৈতিক খানা
বাড়ি ঘিরে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বেড়ে যাওয়ায় গত ১০ বছরে অর্থনৈতিক খানা বেড়েছে প্রায় ৭০০ শতাংশ। মোট অর্থনৈতিক ইউনিটের প্রায় ৩৮ শতাংশই এখন অর্থনৈতিক খানা।
এদিকে গত ১০ বছরে স্থায়ী কাঠামো প্রায় ৫২ শতাংশ বেড়ে বর্তমানে মোট অর্থনৈতিক ইউনিটের ৫৬ শতাংশ দখল করেছে।
এদিকে অস্থায়ী কাঠামোর প্রবৃদ্ধির সবচেয়ে কম। গত ১০ বছরে প্রায় ৪৯ শতাংশ বেড়ে মোট ইউনিটের প্রায় ৬ শতাংশ দখল করেছে।
খানার সংজ্ঞা নতুনভাবে নির্ধারিত করায় আগের চেয়ে এর সংখ্যা বেড়েছে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে বিবিএস।
তবে স্থায়ী কাঠামো বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতির ভিত্তি ক্রমশ শক্তিশালী হচ্ছে এবং প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের দিকে যাচ্ছে বলে মনে করছে সংস্থাটি।