ব্যতিক্রমি সৌন্দর্যের আধার যে স্থানগুলো

Author Topic: ব্যতিক্রমি সৌন্দর্যের আধার যে স্থানগুলো  (Read 1206 times)

Offline Farhana Israt Jahan

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 413
    • View Profile
ব্যতিক্রমি সৌন্দর্যের আধার যে স্থানগুলো

আমাদের কক্সবাজারের বিশাল সমুদ্র সৈকতের বুকে ক্রুদ্ধ গর্জন করে ছুটে আসা ঢেউ যখন অভিমানী প্রেমিকার মতন আলতো করে ভেঙ্গে পড়ে, কিংবা যখন বা নীলগিরির কঠিন সব পর্বতের বুক ছুঁয়ে বয়ে যায় শুভ্র তুলোর মতন মেঘ- কি সুন্দর দৃশ্যেরই না অবতারণা হয়। দেখে মনে হয় এসব স্থান যেন সৃষ্টিকর্তা নিজ হাতে সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়েছেন। শুধু আমাদের দেশ নয়, এমন অতিপ্রাকৃত সৌন্দর্যের খোঁজ মিলবে পৃথিবীর নানা স্থান জুড়েই। কোনটা অদ্ভুতুড়ে পাহাড়, আবার কোথাও বরফ হয়ে জমে থাকে বিশালাকার ঢেউ। আবার হয়ত কোন স্থান দেখলে মনে হবে তা আসল নয় মোটেই, একদম রুপকথার জগৎ। এমন সব স্থানের সংখ্যা পৃথিবী জুড়ে কম নয় মোটেও। এর মাঝে থেকেই আসুন জেনে নেই ভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর অপরূপ কিছু স্থান সম্পর্কে।-

নীলগিরি, বান্দরবান, বাংলাদেশঃ

নীলগিরির অবস্থান বাংলাদেশের বান্দরবান জেলায়। বান্দরবানের পাহাড়চূড়ায় অবস্থিত এই স্থানটি বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২২০০ ফিট উচ্চতায় অবস্থানের কারণে এই স্থানটি মেঘমন্ডিত হয়ে থাকে সব সময়। এই এলাকার পাহাড়চূড়া অন্য সব এলাকার পাহাড়ের মত রুক্ষ-শুষ্ক নয় বরং চারিদিকে রয়েছে সবুজের বিশাল সমারোহ।

ছোট একটি শহর আছে বান্দরবানে, তবে তা খুব একটা গোছানো নয়। অবশ্য তাতে খুব একটা সমস্যাও হয়না, কারণ এলাকার মুল আকর্ষণ এর শহর নয় বরং এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে আছে নানা আকারের ঢেউ খেলানো পাহাড়, যার পুরোটাই ছেয়ে আছে নানান ধরণের পাহাড়ি লতাপাতা ও গাছগাছালিতে। সেই সাথে এখানে দেখা মিলবে নানা প্রজাতির পশু পাখির। তবে নীলগিরিকে আর সব এলাকা থেকে যা আলাদা করে ফেলে তা হলো পাহাড়ের বুকের মাঝ দিয়ে জায়গা করে নিয়ে বয়ে চলা সারি সারি শুভ্র মেঘের দল। আকাশের মেঘ ছুঁয়ে দিতে চাওয়ার যে সুপ্ত বাসনা সবার মনে থাকে তা পুরণ করতে চাইলে ছুটে যেতে পারেন এখানে। পাহাড়ের পাশাপাশি আপনাকেও ছুঁয়ে দিবে মেঘমালার দল।

পিঙ্ক লেক, অস্ট্রেলিয়াঃ
বাংলাদেশ থেকে এবার চলুন ঘুরে আসি অস্ত্রেলিয়া থেকে। 'পিঙ্ক লেক' নামটি শুনেই নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন যে এই লেকের পানি আর সব সাধারন লেকের মত নয়, বরং সুন্দর গোলাপি রঙের পানির লেক এটি। এর অবস্থান পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার Goldfields-Esperance প্রদেশে। তবে যদি ভেবে থাকেন মিষ্টি রঙের পানি এই লেকের পানির স্বাদও মিষ্টি হবে, তাহলে কিন্তু ভুল ভাবছেন একদম। এটি একটি লবনাক্ত পানির লেক।
এই লেকের পানি যে সব সময় গোলাপি রঙ ধারন করে থাকে তা কিন্তু নয়। পানিতে যখন এক ধরণের বিশেষ green alga অথবা halobacterium এর পরিমাণ বেড়ে যায় তখন পানির রঙ পরিবর্তন হয়। আবার অনেক সময় পানিতে brine prawn নামে এক জাতীয় মাছের পরিমাণ বেড়ে গেলেও পরিবর্তিত হয় এই লেকের পানির রঙ। তবে শুধু পানির রঙের জন্য বিখ্যাত এই লেকটি তা কিন্তু নয়। এই লেকটিতে দেখতে পাওয়া যায় হরেক রকমের পাখির আনাগোনাও।

গ্লেন ব্রিটল, স্কটল্যান্ডঃ
অদ্ভুত পানির লেক তো দেখলেন এবার আসুন দেখে নেই অদ্ভুত সুন্দর ও দুর্লভ সব উদ্ভিদরাজির সমারোহ নিয়ে বয়ে চলা গভীর পানির লেক গ্লেন ব্রিটলকে। এই লেকটি দক্ষিন স্কটল্যান্ডের Skye এর তীর ঘেঁষে বয়ে চলেছে দীর্ঘ পরিসরে। যদিও নামে লেক তবে একে উল্লেখ করা যায় পাহাড়ি উপনদী হিসেবেই। খরস্রোতা এই উপনদী প্রবল বেগে দক্ষিণ থেকে উত্তর দিকে ধাবিত হয়ে ব্রিটল নদীতে গিয়ে মিশেছে। শুধু পাহাড় চিড়ে এই উপনদী সমান পথে বেয়ে চলেছে তা কিন্তু নয়। এর চলার পথে আছে চড়াই উৎরাই, আছে একটি রুপকথার মত সুন্দর পাহাড়ি ঝর্না যা গিয়ে পতিত হয়েছে ফেয়ারি পুলে। এই ঝর্না ও ফেয়ারি পুল তাদের নামের মতই জাদুকরী। শুধু টলটলে পানির বয়ে চলা নয় এই গ্লেন ব্রিটল বিখ্যাত তার নানা অদ্ভুতুড়ে ও দুর্লভ সব গাছপালার জন্য। নদী ঘিরে মাইলের পর মাইল কোথাও ছেয়ে আছে বেগুনি আবার কোথাও হলুদ, সবুজ উদ্ভিদের বনভূমি যা কিনা এই স্থানটিকে করে তুলেছে প্রকৃতির বিরল ও মূল্যবান এক সম্পদে।

ফ্রোজেন ওয়েভ, অ্যান্টার্কটিকাঃ
খরস্রোতা নদী তো দেখা হলো। একবার ভাবুনতো এই নদীর সব ঢেউ যদি এক মুহূর্তে জমাট বরফে পরিণত হয় তবে কেমন লাগবে? ভাবছেন তাও কি কখনো হয় নাকি? পানি না হয় বরফে পরিণত হবে তাই বলে কি ঢেউ জমে যাবে নিজের আকৃতি ঠিক রেখেই? যদি বলি এমনটা সম্ভব তবে হয়ত আমার কথা পাগলের প্রলাপ বলেই মনে হবে আপনার। কিন্তু পাগলের প্রলাপে নয়, এমন জমাটবাঁধা ঢেউ কিন্তু বাস্তবেই আছে। তবে সচক্ষে এর দেখা পেতে হলে আপনাকে যেতে হবে অ্যান্টার্কটিকা। তার আগে আসুন এখানে জেনে নেই এই ফ্রোজেন ওয়েভ বা জমাটবাধা ঢেউ সম্পর্কে।

নামে ফ্রোজেন ওয়েভ হলেও অতিরিক্ত ঠাণ্ডায় বরফে পরিণত হয়েছে পানির ঢেউগুলো তা কিন্তু নয়। মজার ব্যাপার হল আসল কারণ ঠিক এর উল্টোটা। বরফ জমে নয় বরং গ্রিন হাউস ইফেক্টের কারণে জমাট বাঁধা বরফ গলতে শুরু করার কারণে তৈরি হয়েছে এইসব ফ্রোজেন ওয়েভ। বরফ গলে তৈরি হয়েছে এইসব মজাদার আকৃতির যা দেখতে ঠিক বড় বড় ঢেউ এর মতই। কারণ যেটাই হোক, প্রকৃতির অদ্ভুত খেয়াল থেকে জন্ম নিয়েছে অস্বাভাবিক সুন্দর এই দৃশ্যের তা অস্বীকার করার উপায় কিন্তু নেই কোনভাবেই।

ক্রিসেন্ট লেক, চায়নাঃ
পাহাড়-পর্বত, নদী, লেক, সবই তো হলো। এবার একটু মরুভূমির দিকে নজর দেয়া যাক। তবে আরবের তপ্ত মরুভুমি নয়, বরং সুদূর চীনের মরুভূমির দিকে চোখ ফেরানো যাক। চায়নার Gansu Province এর Dunhuang শহর থেকে ৬ কিলোমিটার দক্ষিণে মরুভূমির মধ্যে অবস্থিত এই ক্রিসেন্ট লেকটি।

লেকটির নাম ক্রিসেন্ট রাখা হয়েছে এর আকৃতির কারণে। প্রায় ২০০০ বছরের প্রাচীন এই মরূদ্যান এখন পৃথিবীব্যাপী এতটাই জনপ্রিয় যে দানহুয়াং শহরের মুল চালিকাশক্তিতে পরিণত হয়েছে তা। বাঁকা চাদের আকৃতির ছোট এই লেকটিকে ঘিরে আছে একই আকৃতির সুন্দর মরূদ্যান যা প্রকৃতির অপরূপ নিদর্শন বলেই বিবেচিত হয় সবার কাছে। এমনিতেই এই লেকের গভীরতা খুব একটা বেশি নয়, সেই সাথে খুব একটা চওড়াও নয় প্রস্থে, কিন্তু ১৯৬০ সালের পর থেকে তা ধীরে ধীরে আরও কমতে শুরু করে। সর্বশেষ চীন সরকারের তত্তাবধানে ২০০৬ সালে নতুন করে পানি সংযোজোন করা হয় এই লেকে। এখন এর আকৃতি আগের থেকে দীর্ঘ হয়েছে সেই সাথে বেড়েছে এর গভীরতাও।
Farhana Israt Jahan
Assistant Professor
Dept. of Pharmacy