রমনের ব্যাপারে বাছবিচার থাকে অনেকেরই। কেউ সুন্দর সুন্দর শহর, স্থাপত্য, জাদুঘর দেখতে চান,কেউ বা প্রকৃতির কোলে হারিয়ে যেতে চান। প্রকৃতিপ্রেমীর মাঝেও রয়েছে কত ভাগ! কেউ হ্রদ, কেউ ঝর্ণা, কেউ পাহাড় আবার কেউ খোঁজেন বৃক্ষরাজি। কেউ বা ভাবেন, এই সবগুলোই যদি পাওয়া যেত একই সাথে! কিন্তু তা কি করে হবে? হবে, যদি তা হয় প্লিটভাইসের মত জায়গা!
মধ্য ক্রোয়েশিয়ার প্লিটভাইস লুকিয়ে ছিল এক নির্জন অরন্যের মাঝে। এই অরণ্যকে বলা হত “দ্যা ডেভিল’স গার্ডেন”, যে সাহস করে এই অরণ্যের মাঝে ঢুকতে পারবে তার ভাগ্যেই আছে প্লিটভাইসের সৌন্দর্য যা কল্পনাকেও হার মানায়! গাছের আড়ালে ঘুমিয়ে রয়েছে রত্নের মত ঝকঝকে রঙ্গিন সব হ্রদ, ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পাহাড় আর সুরেলা ঝর্নার এক রুপকথার দেশ!
প্লিটভাইস হল ক্রোয়েশিয়ার একটা ন্যাশনাল পার্ক। ১৯৪৯ সালে এটি স্থাপিত হয়। প্রতি বছর প্রায় বারো লাখ দর্শনার্থীর সমাগম হয় ৭৩,৩৫০ একর বিস্তৃত এই পার্কে। নীল এবং সবুজের চোখ ধাঁধানো সব মিশ্রণের ১৬ টা লেক আছে এখানে। গাড় নীল থেকে শুরু করে পান্না-সবুজ অথবা ধুসর রঙের স্বচ্ছ হ্রদগুলো সবসময় রঙ পরিবর্তন করছে। পানিতে কি পরিমাণে খনিজ বা কি কি প্রাণী আছে এবং পানিতে কিভাবে সূর্যরশ্মি পড়ছে তারই ওপরে নির্ভর করে এদের রঙ।
প্লিটভাইসের ঝর্ণাগুলো পৃথিবীবিখ্যাত। UNESCO World Heritage Sites এর মাঝে এদের খুঁজে পাওয়া যাবে। কয়েকটি ঝর্ণা মিলে তৈরি করেছে ২৫৫ ফুট অর্থাৎ ক্রোয়েশিয়ার সবচাইতে উঁচু জলপ্রপাত। আর এখানকার জলপ্রপাতের ধরনটাও ভীষণ অন্যরকম। একটা হ্রদ থেকে শুরু হয়ে সেই ঝর্ণা গিয়ে পড়ে আরেক হ্রদে, সেই হ্রদ থেকে আবার তৈরি হয় একাধিক জলপ্রপাত! আবার এসব হ্রদ, ঝর্ণা এবং গাছগাছালির মধ্য দিয়ে হেঁটে বেড়ানোর জন্য রয়েছে কাঠের রাস্তা।
শুধু মাটির ওপরেই নয় বরং মাটির নিচেও রয়েছে প্লিটভাইসের সৌন্দর্য। ঝর্নার পানির আঘাতে মাটির নিচে ফাঁকফোকর তৈরি হয়। রয়েছে পাথরের বিশাল সব গুহা এবং টানেল। ভঙ্গুর এবং স্পঞ্জের মত ফুটো ফুটো খনিজ পাথরে ভর্তি এলাকাটি।
গাছপালায় পূর্ণ পার্কের প্রায় ৮০ শতাংশ এলাকা। ভালুক, নেকড়ে এবং লিনক্স এর অভয়ারণ্য এই পার্ক। হ্রদগুলোতে বাস করে প্রচুর মাছ এবং হাঁস। বছরের একে সময়ে একেক রকম রূপ নিয়ে আসে এই পার্কের প্রকৃতি।
স্থানীয় গাইড সাথে নিয়ে হেঁটে বেড়ানো বা বড় হ্রদে নৌকা ভ্রমণের মাধ্যমে উপভগ করা যেতে পারে এই পার্কের মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ। আর যদি অ্যাডভেঞ্চারের নেশা থাকে আপনার তাহলে পাহাড়ে চড়ার চেষ্টা করে দেখতে পারেন। এত বৈচিত্র্য রয়েছে প্লিটভাইসে, যে কি করতে হবে সেটা বলে দেবার আর প্রয়োজন পড়ে না!