পিরামিড তৈরির সময়কার রাজারাজড়াদের ইতিহাস তো জানা হয়েছে। এবার চলুন একটু চোখ দেওয়া যাক সাধারণ মানুষের দিকে। আর এর সাথে জড়িয়ে রয়েছে আরও একটি প্রসঙ্গ, আর তা হলো পিরামিডের প্রতিষ্ঠা।
পিরামিড নিয়ে জল্পনা কল্পনা রয়েছে অনেক। তবে সবচাইতে বেশি কৌতূহলের ব্যাপার হলো, এই বিশাল সব স্থাপনা কারা তৈরি করলো? বিভিন্ন তত্ব রয়েছে এর ব্যাপারে। একটা প্রচলিত তত্ব হলো, ইহুদী দাসেরা তৈরি করেছিলো এই পিরামিড এবং মুসা নবী পরে তাদেরকে স্বাধীন করেন। কিন্তু মুসা নবীর আসার আরও অনেক আগেই এসব পিরামিড তৈরি হয়েছিল। এ ধরণের সম্ভব তত্বের পাশাপাশি রয়েছে একেবারেই অদ্ভুতুড়ে তত্ব। অনেকের মনেই রয়েছে বদ্ধমূল ধারণা যে এসব পিরামিড তৈরি করার প্রযুক্তি সে সময়ের মানুষের ছিল না, এবং এগুলো তৈরির পেছনে রয়েছে এলিয়েনের হাত! হারানো নগরী আটলান্টিসের মানুষের দ্বারাও এটি তৈরি হতে পারে বলে ধারণা আছে। কিন্তু সত্যটা কী?
গ্রিক ইতিহাসবিদ হেরোডোটাস এ ব্যাপারে লেখেন, এক লাখের মত মানুষ বিশ বছর ধরে পরিশ্রম করে খুফুর পিরামিড তৈরি করেন। তিনি আরও জানতে পারেন, খুফু ছিল খুবই অত্যাচারী এক শাসক যে কিনা একেবারে অমানুষের মত আচরণ করত এসব শ্রমিকের ওপর। তাদেরকে পেটানো হত নির্মমভাবে, খাবার দেওয়া হতো না পর্যাপ্ত এবং এসব অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে অনেকেই পিরামিড প্রতিষ্ঠা হবার সময়কালে মারা যায়।
এই তথ্য নিয়ে বর্তমানের গবেষকদের মধ্যে রয়েছে যথেষ্ট মতভেদ। বেশিরভাগ এই মত ব্যক্ত করেন যে, হেরোডোটাস সে সংখ্যা বলেছিলেন তার মাত্র এক তৃতীয়াংশ পরিমাণ শ্রমিক দরকার হবার কথা একটা পিরামিড তৈরিতে। এদের বেশিরভাগই ছিল শ্রমিক। নীল নদের বন্যায় যখন ফসলি জমি ভেসে যেতো তখনই তাদেরকে এসব কাজে লাগানো হত। আর তাছাড়া, বন্যার পানির ওপর দিয়ে চুনাপাথর ভাসিয়ে নেওয়া সহজ হত তখন। নীল নদের পূর্ব পাড়ের পাথর কোয়ারি থেকে এসব পাথর নিয়ে যাওয়া হত পশ্চিম পাড়ের পিরামিড তৈরির এলাকায়। পরীক্ষা করে দেখা গেছে, পিরামিড তৈরিতে ব্যবহৃত চুনাপাথরের চাঁই অনেক বড় হলেও সে সময়ে মিশরীয়দের প্রযুক্তি এতটাই উন্নত ছিল যে মাত্র ছয় জন মানুষ মিলে একটি চাঁই বয়ে নিয়ে যেতে পারতো। সুতরাং বর্তমান ধারণা হলো, ১০ হাজারের মত শ্রমিক কাজ করেছিলো পিরামিড তৈরিতে।
এসব শ্রমিকদের ওপর অত্যাচারের ব্যাপারটাও একেবারে ঠিক বলে ধরে নেওয়া যায় না। গিজার পিরামিডের পেছনে এক লুকানো সমাধীস্থল খুঁজে পাওয়া যায় ১৯৯০ সালে। এতে সংরক্ষিত মৃতদেহগুলো ছিল পিরামিড প্রস্তুতে নিয়োজিত শ্রমিকদের। গবেষণার পর ধারণা করা হয়, তারা দাস ছিল না বরং মিশরের দরিদ্র পরিবার থেকে আসা এসব শ্রমিকরা সাধারণ শ্রমজীবী ছিল। বেশ শ্রদ্ধার সাথে সমাধিস্থ করা হয় তাদেরকে এবং মিশরীয় ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী তাদের মরদেহের পাশে রাখা ছিল মদ এবং রুটির পাত্র। তারা নিম্নমানের দাস হলে এত সম্মানের সাথে তাদেরকে সমাধিস্থ করা হত না বলে মনে করেন গবেষকরা। তবে দাস না হলেও যথেষ্ট পরিশ্রমের জীবন কাটাতে হত এসব শ্রমিকের। তাদের শরীরের অবস্থা দেখে ভারী কায়িক পরিশ্রমের প্রমাণ পাওয়া যায় এবং এদের অনেকেরই ছিল আরথ্রাইটিসের সমস্যা।