Entrepreneurship > Fishery

Fisheries & Entrepreneurship (বহুমুখী কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে মৎস্য খাত)

(1/1)

Badshah Mamun:
বহুমুখী কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে মৎস্য খাত
লেখক : কলামিস্ট  এস এম মুকুল

পৃথিবীতে প্রায় ২১ হাজার ৭০০ প্রজাতির মাছ আছে। লোনাপানির মাছ ১৩ হাজার ৩০০ এবং মিঠাপানির মাছ আট হাজার ৮০০। মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে মৎস্যসম্পদ। প্রাণিজ আমিষের প্রধান উৎস এ মৎস্যসম্পদ এবং বাংলাদেশে প্রাপ্ত প্রাণিজ আমিষের মধ্যে মাছ থেকে পাওয়া যায় ৬৩ ভাগ। বাংলাদেশের মাছের ফেলে দেওয়া অংশ দিয়ে তৈরি স্যুপ বিক্রি হচ্ছে পূর্ব এশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশের নামিদামি রেস্তোরাঁয়। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, অপ্রচলিত এই পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশ বছরে আয় করছে শতকোটি টাকা। জানা গেছে, ঢাকা ও চট্টগ্রামের হাতেগোনা কয়েকজন ব্যবসায়ী মাছের ফেলে দেওয়া অংশ রফতানি করছে। ইউরোপসহ পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এসব অপ্রচলিত পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। রফতানিকারকদের সূত্রে জানা যায়, কার্পজাতীয় মাছের আঁশ, চিংড়ির মাথা ও খোসা, কাঁকড়ার খোলস, মাছের বায়ু থলি, হাঙরের লেজ, ডানা, চামড়াসহ বিভিন্ন পণ্য বাংলাদেশ থেকে রফতানি হচ্ছে Ñ ইতালি, জাপান, কোরিয়া, চীন, জার্মানি, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, হংকংসহ বিভিন্ন দেশে। বাংলাদেশ থেকে চীন ও ভিয়েতনামে প্রতি মাসে প্রায় ১০০ টন চিংড়ির খোসা, মাথা এবং প্রায় ৫০ টন কাঁকড়ার খোলস রফতানি হয়। এ ছাড়া কোরাল, লাক্কা, ঘোড়ামাছ, আইড়, বোয়াল, কামিলা, রুই, কাতলাসহ বিভিন্ন মাছের বায়ুথলি রফতানি হচ্ছে ইউরোপ ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে। বাংলাদেশ থেকে গড়ে প্রতি মাসে ১০টি কনটেইনারে ১০০ টন ফোৎনা বা বায়ুথলি রফতানি হচ্ছে। শুধু মাছের ফোৎনা রফতানি করে প্রতি মাসে বাংলাদেশ আয় করছে ২০ লাখ ডলার। এ ছাড়া প্রায় ২০০ টন মাছের আঁশ রফতানি হচ্ছে ইতালি, জার্মানি, কোরিয়া, চীন ও ভিয়েতনামে। প্রতি মাসে গড়ে আটটি কনটেইনারে প্রায় ৮০ টন হাঙরজাত পণ্য রফতানির মাধ্যমে আয় হচ্ছে প্রায় ১৫ লাখ ডলার।

আমাদের দেশে মোট বদ্ধ জলাশয়ের পরিমাণ চার লাখ ১২ হাজার ৩৪১ হেক্টর। তার মধ্যে ২৬ হাজার হেক্টর পুকুর, পাঁচ হাজার ৪৮৮ হেক্টর বাঁওড় এবং এক লাখ ৪১ হাজার ৩৫৩ হেক্টর চিংড়ি খামার। বর্তমানে অভ্যন্তরীণ মৎস্য উৎপাদনে চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়ার পরপরই বাংলাদেশের অবস্থান। বাংলাদেশের জাতীয় মাছ ইলিশ। বর্তমানে দেশে প্রায় ১০০টি নদনদীতে ইলিশ পাওয়া যায়। বাংলাদেশের ইলিশের প্রধান প্রজননক্ষেত্র মেঘনা নদীর ঢলচর, মনপুরাদ্বীপ, মৌলভীরচর ও কালিরচর। মৎস্য খাতে প্রায় ২০ লাখ লোকের পূর্ণকালীন কর্মসংস্থান হয়েছে। এদের মধ্যে ১৪ লাখ লোক মাছ ধরা, মাছ চাষে নিযুক্ত বাকিরা মাছ পরিবহন, বিপণন, প্যাকিং ও প্রক্রিয়াজাতকরণে নিযুক্ত। আবার বাংলাদেশের সামুদ্রিক জলাশয়ের পরিমাণ এক লাখ ৬৬ হাজার বর্গকিলোমিটার। বিশেষজ্ঞদের অভিমত, দেশের প্রায় দুই লাখ ৩০ হেক্টর জমিতে থাইল্যান্ডের মতো অর্থনৈতিক ও পরিবেশবান্ধব উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে আড়াই লাখ টন চিংড়ি উৎপাদন করা সম্ভব। বর্তমানে দেশের প্রায় এক লাখ হেক্টর জমিতে সামাজিকভাবে প্রচলিত পদ্ধতিতে ৩৫ হাজার মেট্রিক টনের চিংড়ি উৎপাদিত হয় প্রতি বছর।

সঠিকভাবে চিংড়ি চাষ করা সম্ভব হলে শুধু ময়মনসিংহ অঞ্চলে প্রতি বছর পাঁচ হাজার কোটি টাকার চিংড়ি উৎপাদন করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে। বৃহত্তর খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীর পর প্রাকৃতিক ও অবকাঠামোগত সুবিধাসহ বিভিন্ন নিয়ামকের কারণে এখন বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলে গলদা চিংড়ি চাষের বিপুল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বিগত দুই দশকে সরকারি সাহায্য ছাড়াই সম্পূর্ণ নিজস্ব উদ্যোগে বৃহত্তর ময়মনসিংহের আনাচে-কানাচে তরুণ উদ্যোক্তারা এসব খামার গড়ে এ অঞ্চলে এক নীরব বিপ্লবের সূচনা করে। তাদের এ প্রচেষ্টা নিজেদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে যেমন সাহায্য করেছে, তেমনি দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তাদেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। বর্তমানে জেলার সদর, ত্রিশাল, ভালুকা ও ফুলবাড়িয়া উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় অসংখ্য ক্ষুদ্র ও মাঝারি মৎস্য খামারের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠিত শিল্পোদ্যোক্তাদের পুঁজি নিয়ে বেশ কিছু বৃহৎ খামার গড়ে উঠেছে। মৎস্য বিজ্ঞানীরা মনে করেন, বেসরকারি উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে ময়মনসিংহ অঞ্চলে গলদা চিংড়ি চাষের প্রসার ঘটানো গেলে এ অঞ্চলটি দেশের সর্বোত্তম চিংড়ি চাষ এলাকায় পরিণত হবে। ইতোমধ্যে ময়মনসিংহের মতো বৃহত্তর নোয়াখালী জেলার বিভিন্ন এলাকা মৎস্য চাষে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে। বর্তমানে দেশে প্রতি বছর যে ৩৫ কোটি চিংড়ি পোনার চাহিদা রয়েছে তার মধ্যে ২৫ কোটি থেকে ২৭ কোটি পোনা বৃহত্তর নোয়াখালী এলাকা থেকে উৎপাদিত হয়। বৃহত্তর নোয়াখালীতে যেখানে গড়ে বর্তমানে প্রতি একরে ২০০ কেজি গলদা চিংড়ি উৎপাদিত হচ্ছে, সেখানে ময়মনসিংহের বাস্তবতায় এ অঞ্চলে প্রতি একর জমিতে ৬০০ কেজি গলদা চিংড়ি উৎপাদন সম্ভব। কাজেই অফুরন্ত সম্ভাবনার এই মৎস্য খাতকে কাজে লাগাতে হলে এখনই উদ্যোগ নিতে হবে।


Source: Daily Orthonity Protidin (January 29, 2014)

Navigation

[0] Message Index

Go to full version