গত বছরের শেষ কয়েক মাসে রাজনৈতিক অস্থিরতার পরও দেশের পণ্য রপ্তানি আয় ইতিবাচক ধারায় আছে। প্রধান পণ্য তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানি আনুপাতিক বাড়লেও সোনালি আঁশ হিসেবে পরিচিত পাট ও পাটজাত পণ্যে পেছনের দিকেই হাঁটছে। ছয় মাস ধরে এই খাতের রপ্তানির আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ও প্রবৃদ্ধি কোনোটিই অর্জিত হয়নি।
চলতি ২০১৩-১৪ অর্থবছরের প্রথম সাত মাস অর্থাৎ জুলাই-জানুয়ারি সময়ে দেশের মোট পণ্য রপ্তানির আয় হয়েছে এক হাজার ৭৪৩ কোটি ৯৫ লাখ ডলার। এর মধ্যে ৮১ দশমিক ২৯ শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক (নিট এবং ওভেন) খাত থেকে যার পরিমাণ এক হাজার ৪১৭ কোটি ডলার।
অন্যদিকে আলোচ্য সময়ে পাট ও পাটজাত পণ্য থেকে রপ্তানি আয় হয়েছে মাত্র ৪৬ কোটি ৫৬ লাখ ডলার। এই আয় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৭ দশমিক ৭৯ শতাংশ ও গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২১ দশমিক ২৪ শতাংশ কম। ২০১২-১৩ অর্থবছরের একই সময়ে ৫৯ কোটি ডলার আয় হয়।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) গতকাল রোববার রপ্তানির যে হালনাগাদ পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে, তা থেকে এসব তথ্য জানা যায়। এ থেকে দেখা যায়, মোট রপ্তানি আয় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে তিন দশমিক ০৪ শতাংশ এবং গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে সাড়ে ১৫ দশমিক ০৮ শতাংশ বেশি। এ ছাড়া শুধু জানুয়ারিতে ২৭৫ কোটি ৩৭ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। পোশাক খাতের পাশাপাশি হিমায়িত খাদ্য, কৃষিজাত পণ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যে রপ্তানি আয়ে ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
পাট রপ্তানি অর্ধেকে: আলোচ্য সময়ে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানিতে ৬৪ কোটি ডলারের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৪৬ কোটি ডলার আয় হয়। এর মধ্যে কাঁচাপাট, পাটের সুতা এবং পাটের বস্তা ও ব্যাগ রপ্তানিতে যথাক্রমে ছয় কোটি ৮৮ লাখ, ৩০ কোটি ও ছয় কোটি ৯৭ লাখ ডলার রপ্তানি আয় হয়। এ ছাড়া পাটের অন্যান্য পণ্য সামগ্রী রপ্তানিতে আয় হয় দুই কোটি ডলার।
ইপিবির তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে কাঁচা পাট এবং পাটের বস্তা ও ব্যাগ রপ্তানি কমেছে প্রায় ৫০ শতাংশ হারে। গত জুলাই ছাড়া কোনো মাসেই পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়নি। আর সাত মাসে একবারও রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছুঁতে পারেনি এই খাত।
এদিকে বিশ্বব্যাপী পাটজাত পণ্যের রপ্তানি কমে যাওয়ার কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করেছে বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি)। এর মধ্যে আছে থাইল্যান্ড, সুদান ও মধ্যপ্রাচ্যে রাজনৈতিক অস্থিরতা, সিরিয়ার বাজারে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বেড়ে যাওয়া, ইরানের ওপর আরোপিত অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা এবং ডলারের বিপরীতে ভারতীয় মুদ্রার মান কমে যাওয়া। এসব কারণে বিদেশে চাহিদা কমায় রপ্তানি কমেছে। এ ছাড়া গত বছরের শেষ কয়েক মাসের রাজনৈতিক অস্থিরতায় সময়মতো পণ্য পাঠানো যায়নি। ফলে অনেক পাটকলেই উৎপাদিত পণ্যের মজুত পড়ে আছে।
এ অবস্থায় করণীয় কি—জানতে চাইলে বিজেএমসির চেয়ারম্যান হুমায়ুন খালেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বাজার সম্প্রসারণের দিকে মনোযোগী হয়েছি। চীনকে লক্ষ্য করে আমরা এগোচ্ছি। আমি নিজেই চীনে যাচ্ছি। আশা করি, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।’
পোশাক খাতের প্রবৃদ্ধি: গত নভেম্বর ও ডিসেম্বরে পোশাক মালিকদের দুই সমিতি বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর নেতারা তাজরীন ফ্যাশনসের অগ্নিকাণ্ড, রানা প্লাজা ধস ও রাজনৈতিক অস্থিরতায় পোশাক রপ্তানি কমে যাওয়ার আশঙ্কার কথা জানান। তবে সব শঙ্কা কাটিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে তৈরি পোশাক খাত।
আলোচ্য সময়ে এক হাজার ৪১৭ কোটি মার্কিন ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়। এই আয় আলোচ্য সময়ের লক্ষ্যমাত্রা থেকে ৫ দশমিক ৯০ শতাংশ এবং গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৭ দশমিক ৭২ শতাংশ বেশি। পোশাক খাতের এই রপ্তানির মধ্যে ওভেন খাত থেকে সর্বোচ্চ ৭১৭ কোটি ও নিট পোশাক খাত থেকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬৯৯ কোটি ডলার রপ্তানি আয় হয়েছে। অবশ্য এই আয় সার্বিক রপ্তানি আয়ের মধ্যেও প্রথম ও দ্বিতীয় অবস্থানে।
জানতে চাইলে বিকেএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমান স্বাভাবিক অবস্থা বজায় থাকলে রপ্তানি আয় বেশি হবে। নতুন বাজারে ভালো করার কারণেই প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক বলে মনে করেন তিনি।
তবে বিজিএমইএর সহসভাপতি শহিদুল্লাহ আজিম বলেন, পোশাক খাতের সার্বিক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হলেও ডিসেম্বরের চেয়ে জানুয়ারিতে কমেছে।
অন্যান্য: চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে হিমায়িত খাদ্যে ৪১ কোটি, হোম টেক্সটাইলে ৪৪ কোটি, চামড়ায় ২৮ কোটি ৯২ লাখ, চামড়াজাত পণ্যে ১২ কোটি ৩০ লাখ, প্লাস্টিক পণ্যে চার কোটি ৫৮ লাখ, টেরিটাওয়েল চার কোটি ৪৬ লাখ, প্রকৌশল পণ্য রপ্তানি করে ২০ কোটি ডলার আয় হয়।