Famous > History

বাংলাদেশকে আক্রমণ করতে ভয় পেয়েছিল বিশ্ববিজয়ী বীর আলেকজান্ডার

(1/1)

nayeemfaruqui:
ভাগীরথী ও পদ্মা এ দুইটি হল গঙ্গা নদীর দুইটি স্রোত। প্রাচীন গ্রীক লেখকদের মতে, ভাগীরথী ও পদ্মার মাঝখানে ‘গঙ্গরিডাই’ নামে এক জাতির বসবাস ছিল। ড. রমেশ্চন্দ্র মজুমদার তাঁর ‘বাংলা দেশের ইতিহাস’ বইয়ে খুব স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন, “গ্রীকগণ গঙ্গরিডাই নামে যে এক পরাক্রান্ত জাতির উল্লেখ করিয়াছেন, তাহারা যে বঙ্গদেশের অধিবাসী, তাহাতে কোন সন্দেহ নাই”। তার মানে আমরা সিদ্ধান্তে আসতে পারি যে, ‘গঙ্গরিডাই’ ও ‘বাঙালি’ জাতির মধ্যে কোন তফাৎ নেই। অর্থাৎ, ‘গঙ্গরিডাই’ ও ‘বাঙালি’ এক ও অভিন্ন জাতি।



প্রাচীন গ্রীক ও রোমান লেখকদের মতে, ‘গঙ্গরিডাই’ ছিল একটি সমৃদ্ধ রাজ্য। রোমান কবি ভার্জিল তাঁর কবিতায় ‘গঙ্গরিডাই’ রাজ্যের ঐশ্বর্য ও সমৃদ্ধির কথা উল্লেখ করেছন। রোমান পন্ডিত প্লিনি লিখেছেন, গঙ্গরিডাই রাজ্যের মধ্য দিয়ে গঙ্গা নামক নদী প্রবাহিত হয়ে সমুদ্রে পতিত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এই রাজ্যের রাজা যুদ্ধে যাবার সময় ৬০০০০ সৈন্য, ১০০০ অশ্বারোহী ও ৭০০ হাতি সঙ্গে নিয়ে যান। টলেমী লিখেছেন, গঙ্গার পানি বিভিন্ন প্রবাহের মধ্য দিয়ে সমুদ্রে পড়েছে। টলেমী আরো বলেন, গঙ্গরিডাই রাজ্যের রাজধানীর নাম গঙ্গে।

খ্রিস্টপূর্ব ৩২৭ সালে মহাবীর আলেকজান্ডার ভারতবর্ষ আক্রমণ করেছিলেন। তখন বাংলার রাজা কে ছিল এ বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায় না। তবে প্রাচীন গ্রীক ও লাতিন লেখকরা এই রাজার যে রকম বর্ণনা দিয়েছেন তাতে অনুমান করা হয়ে থাকে এ রাজা ছিলেন নন্দ বংশীয় কোন রাজা। বাংলাদেশ বহুদিন আর্য সভ্যতার বাহিরে ছিল, যার ফলে বাংলাদেশের মানুষদেরকে শূদ্র হিসেবে ধরা হত, একই সাথে নন্দ বংশকেও অনার্য বা শূদ্র হিসেবে ধরা হত।

নন্দ বংশীয় এই রাজা ছিলেন ব্যাপক শক্তিধর। পাশাপাশি জাতি হিসেবে গঙ্গরিডাই ছিল খুবই সমৃদ্ধ। ‘গঙ্গরিডাই’ জাতি সম্পর্কে একজন গ্রীক পন্ডিত লিখেছেন, ভারতবর্ষে যত জাতি আছে তাদের মধ্যে গঙ্গরিডাই জাতি সর্বশ্রেষ্ঠ। এ জাতির তখন ৪০০০ এর চেয়ে বেশি সুসজ্জিত রণতরী ছিল, যার কারণে কোন রাজা এ রাজ্যকে জয় করতে পারে নি। খ্রিস্টপূর্ব ৩২৭ সালে মহাবীর আলেকজান্ডার ভারতবর্ষ আক্রমন করলেও গঙ্গরিডাই বা বাংলাদেশকে আক্রমন করার মত সাহস পান নি। এই বিষয়ে একজন প্রাচীন গ্রীক লেখক বলেন, “স্বয়ং আলেকজান্ডারও গঙ্গরিডাই রাজ্যের এই সব হাতির বিবরণ শুনে এই জাতিকে দমন করার দুরাশা ত্যাগ করেছিলেন”।



এই ইতিহাস থেকে আমরা সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারি যে, বাঙ্গালী জাতির ইতিহাস ঠুনকো ইতিহাস নয়। এ জাতিরও রয়েছে সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী ইতিহাস। গ্রীস কিংবা রোমের মত আমাদের প্রাচীন সভ্যতাও ঐতিহাসিকভাবে অতীব গুরুত্বপূর্ণ।

পশ্চিমবঙ্গের চেয়ে শক্তিশালী ইতিহাস রয়েছে পূর্ববঙ্গের অর্থাৎ আমাদের প্রিয় বাংলাদেশের। যার প্রমাণ পাওয়া যায় মহাকবি কালিদাসের ‘রঘুবংশ’ নামক কাব্যগ্রন্থ থেকে। তাঁর এ কাব্যে পূর্ববঙ্গের মানুষদেরকে পশ্চিমবঙ্গের মানুষদের তুলনায় বীর ও সাহসী হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এ কবিতায় আরও বলা হয়, পশ্চিমবঙ্গের শাসকরা পূর্ববঙ্গের বীর রঘুর সম্পর্কে জানতে পেরে তাঁর সামনে মাথা নত করতে বাধ্য হয়।

সুতরাং, একজন বাংলাদেশি হিসেবে সবসময় মাথা উঁচু করে পৃথিবীর বুকে আমাদেরকে দাঁড়াতে হবে। বাংলাদেশি হয়ে যারা হীনমন্যতায় ভুগেন, তারা হয়তো তাদের ইতিহাস জানেন না অথবা তারা ভুলের মধ্যে আছেন।

Navigation

[0] Message Index

Go to full version