ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বর বলে কিছু নেই- স্টিফেন হকিং এমন মত প্রকাশ করার পর অভিমান ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভারতীয় এক বিজ্ঞানী। তিনি বলছেন এক যুগ আগেই তিনি যা বলেছিলেন এখন ঠিক তা-ই বলছেন হকিং।
গত মাসে প্রকাশিত এক প্রবন্ধে বিশ্ববিখ্যাত ব্রিটিশ পদার্থবিদ স্টিফেন হকিং ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বর বলে কিছু নেই বলে মত প্রকাশ করেছেন। এতে বিজ্ঞান বিশ্ব বিস্মিত হলেও ভারতীয় পদার্থবিজ্ঞানী আভাস মিত্র মোটেও বিস্মিত হননি।
কারণ কৃষ্ণগহ্বর কখনও গঠিত হয়নি বলে এক যুগ আগেই মত দিয়েছিলেন এই বিজ্ঞানী, জানিয়েছে এনডিটিভি।
মুম্বাইয়ের ভাবা অ্যাটোমিক রিসার্চ সেন্টারের (বিএআরসি) বিজ্ঞানী মিত্র বলেন, “এক যুগ আগেই আমি বলেছি, আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্বের কৃষ্ণগহ্বর সমাধান আসলে শূন্য ভরের সমতুল্য আর তা কখনও গঠিত হয়নি। এতে এই বোঝায় যে, তথাকথিত কৃষ্ণগহ্বরগুলো অবশ্যই ধূসরগহ্বর বা ছদ্ম-কৃষ্ণগহ্বর।”
“হকিং এখন একই কথা বলছেন।”- বলেন মিত্র।
২০০০ সাল থেকেই বিভিন্ন বিজ্ঞান সাময়িকীতে প্রকাশিত প্রবন্ধে মিত্র দাবি করে আসছেন, মহাবিশ্বে ‘পুরোপুরি চুপসে যাওয়া’ বস্তু থাকতে পারে কিন্তু সেগুলো পুরোপুরি কৃষ্ণগহ্বরের মতো নয়। এ পর্যন্ত কেউ তার মত চ্যালেঞ্জ করেননি।
তিনি অনুযোগ করে বলেন, “আমার এই ধারণা শীর্ষস্থানীয় পদার্থবিজ্ঞানীরা উপেক্ষা করে গেছেন, গণমাধ্যমগুলোও তাদের অনুসরণ করেছে। এখন অনলাইনে হকিংয়ের দুই পাতার একটি প্রবন্ধে যখন একই কথা বলা হল তা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যগুলোর কাছে গরম খবর হয়ে গেল।”
কয়েকজন আমেরিকান জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানী তার অনুমান যাচাই করে দেখার পরও এমনিটি ঘটেছে বলে জানান তিনি। ২০০৬ সালে এ বিষয়ে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটি প্রেস রিলিজও ছাড়া হয়েছিল বলে জানান তিনি।
জ্বালানি ফুরিয়ে অতি ভরসম্পন্ন কোনো তারার শক্তি উৎপাদন প্রক্রিয়া (নিউক্লিয়ার ফিউশন) বন্ধ হয়ে গেলে মহাকর্ষের চাপে সেই তারাটি চুপসে গিয়ে কৃষ্ণগহ্বরে পরিণত হয়, কৃষ্ণগহ্বর সংক্রান্ত প্রস্তাবে এমনই বলা হয়েছে। কৃষ্ণগহ্বরের পুরোটাই ফাঁকা, শুধু কেন্দ্রিয় অংশের অসীম ঘনত্বের একটি বিন্দু ছাড়া, যাকে “সিঙ্গুলারিটি” (অনন্যতা) বলা হয়।
কৃষ্ণগহ্বরের তত্ত্ব এগিয়ে নিলে, কৃষ্ণ গহ্বরের চারপাশে ‘ঘটনা দিগন্ত’ (ইভেন্ট হরাইজন) নামের কাল্পনিক একটি সীমা আছে। এই সীমার মধ্যে থাকা সবকিছু বা এর মধ্যে কোনো কিছু প্রবেশ করলে ঘটনা দিগন্তের ভেতরের অসীম মহাকর্ষের টানে তা আর বের হতে পারে না, এমনকি আলোও বের হতে পারে না।
‘ঘটনা দিগন্ত’ অতিক্রম করে যা-ই ভেতরে ঢুকেছে তা চিরকালের।