অশান্তির বিশ্বকাপ!

Author Topic: অশান্তির বিশ্বকাপ!  (Read 602 times)

Offline maruppharm

  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 1227
  • Test
    • View Profile
অশান্তির বিশ্বকাপ!
« on: June 10, 2014, 09:48:40 AM »
অ্যারেনা করিন্থিয়ানসের মিডিয়া সেন্টারের প্রবেশদ্বারের সামনে দাঁড়িয়ে মুখ তুললেই চোখে পড়ে দেয়াললিখনটা। উঁচু একটা ভবনের মাথায় লেখা: ‘...কাপ’। কাপের আগে যে শব্দটা, সেটি ছাপার অযোগ্য বলে বিবেচিত। ‘বিশ্ব’র বদলে নরনারীর শারীরিক ক্রিয়ানির্দেশক ওই শব্দটা এমনই কর্কশ যে, চোখে রীতিমতো ধাক্কা দেয়। বছর-মাস-দিন পেরিয়ে বিশ্বকাপের ক্ষণগণনা যখন প্রায় ঘণ্টায় এসে ঠেকেছে, উদ্বোধনী ম্যাচের ভেন্যুর দিকে তাকিয়ে যেন বিদ্রূপ করছে ওই দেয়াললিখন।
এটাই কি সেই ব্রাজিল? ফুটবল যেখানে ধর্মের মতোই জীবনাচরণের অংশ। এটাই কি সেই ব্রাজিল, যাদের কাছে বিশ্বকাপ মানেই বাকি বিশ্বকে দেখিয়ে দেওয়ার সুযোগ, ‘দেখো, তোমাদের অনেকের অনেক কিছু আছে। আমাদের আছে ফুটবল।’
সেই ব্রাজিলে বিশ্বকাপ ফুটবল ফিরছে ৬৪ বছর পর। অথচ চোখ কপালে তুলে দেওয়ার মতো সাম্প্রতিক এক জরিপের ফল বলছে, ৬১ শতাংশ ব্রাজিলিয়ান মনে করেন বিশ্বকাপটা আয়োজন না করলেই ভালো হতো! এটাই কি সেই ব্রাজিল?
গত শুক্রবার সাও পাওলোর মুরুম্বি স্টেডিয়ামে শেষ প্রস্তুতি ম্যাচ খেলল ব্রাজিল। সার্বিয়ার বিপক্ষে মাত্র এক গোলের জয় নিয়ে কাটাছেঁড়ার বদলে সবার মুখে মুখে কিনা নতুন বিক্ষোভের কথা! যার যা দাবি আছে, সব পূরণের সুযোগ যেন এই বিশ্বকাপ। এবার নেমেছেন পাতালরেলের কর্মীরা। দুই কোটি মানুষের বিশাল এই শহরে যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম এই পাতালরেল। ধর্মঘটের কারণে অর্ধেকের বেশি স্টেশন বন্ধ থাকায় রাস্তায় সেদিন ১২৫ মাইল দীর্ঘ যানজট! বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশকে কাঁদানে গ্যাস ছুড়তে হয়েছে। চালাতে হয়েছে লাঠি। এতে আরও খেপে গিয়ে পাতালরেলের কর্মীদের ইউনিয়ন হুমকি দিয়েছে, বাকি সবাইকে সঙ্গে নিয়ে আগামী বৃহস্পতিবার উদ্বোধনী ম্যাচের দিন অচল করে দেওয়া হবে সাও পাওলো।
গত বছর কনফেডারেশনস কাপ ছিল বিশ্বকাপের ড্রেস রিহার্সাল। বিক্ষোভের ড্রেস রিহার্সালও হয়ে গেছে তখনই। শুরুটা হয়েছিল বাসভাড়া বাড়ানো নিয়ে। সেটিই দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে ব্রাজিলের শহর থেকে শহরে। এখন আসল খেলা শুরু হওয়ার আগে চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিচ্ছে বিক্ষুব্ধরাও। কিছুটা রাজনীতি তো আছেই এর মধ্যে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট দিলমা রুসেফ অবশ্য দাবি করছেন, পুরোটাই রাজনীতি। এই বিক্ষোভ-আন্দোলন আসলে বিশ্বকাপের বিরুদ্ধে নয়, তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে ‘পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র’। কথাটায় কোনো সারবত্তা নেই বলা যাচ্ছে না। নইলে এক ইউনিয়ন নেতা কেন বলবেন, ‘জাতীয় দলের সঙ্গে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। ওদের আমরা বরাবরের মতোই সমর্থন করব। তবে ৫ অক্টোবর দিলমা রুসেফকে আমরা নরকে পাঠিয়ে দেব।’
নির্দিষ্ট করে ৫ অক্টোবর কেন? কারণ সেদিনই ব্রাজিলে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। রাজনীতি অবশ্যই আছে, কিন্তু তাই বলে ৬১ শতাংশ ব্রাজিলিয়ান বিশ্বকাপ আয়োজনের বিপক্ষে চলে যাবে কেন? সাও পাওলোতে পা রাখার পর থেকে এই প্রশ্নের অভিন্ন উত্তর পাচ্ছি। ব্লু ট্রি টাওয়ার্স হোটেলের রিসেপশনে কাজ করা ২৪ বছরের তরুণ ফার্নান্দো যেন ব্রাজিলের গণমানুষের মুখপাত্র, ‘আমিও ফুটবল ভালোবাসি। চাই, ব্রাজিল বিশ্বকাপ জিতুক। কিন্তু রাজনীতিবিদদের তো বুঝতে হবে কোনটা আগে। বিশ্বকাপ আয়োজন করতে অঢেল অর্থ ঢালা হচ্ছে, যা ব্যয় করা উচিত ছিল স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে।’
অঙ্কটা ‘অঢেল’-ই বটে। ১১৫০ কোটি ডলারের এই বিশ্বকাপ ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়বহুল। যে বিশ্বকাপ প্রেসিডেন্ট দিলমা রুসেফের নির্বাচনী প্রচারণার হাতিয়ার হতে পারত, সেটিই এখন বুমেরাং হতে বসেছে। দিশেহারা রুসেফ তাই তোপ দাগছেন ফিফার দিকেও। ফিফা থেকে প্রতিশ্রুত অর্থ না পাওয়াতেই নাকি জনগণের টাকায় হাত দিতে হয়েছে। ভবিষ্যৎ বিশ্বকাপ আয়োজকদের ফিফার সঙ্গে চুক্তি করার সময় সতর্ক থাকারও ‘সুপরামর্শ’ দিচ্ছেন তিনি।
রুসেফের অভিযোগের ব্যাপারে ফিফার প্রতিক্রিয়া এখনো জানা যায়নি। তবে রুসেফ তোপ তাগার এক দিন আগেই বিশ্বকাপ আয়োজক হিসেবে ব্রাজিলের প্রতি পূর্ণ সমর্থনের কথা জানানো হয়েছে ফিফার কংগ্রেস থেকে। কে যে কাকে সমর্থন জোগায়! রুসেফের ব্রাজিলের মতো ফিফাও তো গৃহদাহে জেরবার। কাতারের ২০২২ বিশ্বকাপ পাওয়ার পেছনের আসল কাহিনি ক্রমেই বেরিয়ে আসছে। টাকার কাছে ফিফার বিক্রি হয়ে যাওয়া নিয়ে সানডে টাইমস সর্বশেষ বোমা ফাটানোর পর ফিফা এখন রীতিমতো টালমাটাল। বিশ্বকাপের মূল ছয় স্পনসর, ফিফা যাদের আদর করে ‘পার্টনার’ বলে ডাকে, ব্যতিক্রমী ঘটনার জন্ম দিয়ে তারা প্রকাশ্যে এ নিয়ে সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানাচ্ছে। বিশ্বকাপের সঙ্গে নাম জড়াতে পারার মূল্য হিসেবে গত ছয় বছরে ফিফাকে ১৮ কোটি ডলার দিয়েছে ছয় পার্টনার। অ্যাডিডাস-সনি-ভিসা যৌক্তিক প্রশ্ন তুলেছে, কেলেঙ্কারির সঙ্গে নাম জড়াতে তো আর এত টাকা ঢালা হয়নি।
ব্রাজিল অশান্ত, ফিফাতে অশান্তি। এর মধ্যেই বিশ্বকাপের আবাহন। মাঠের খেলা শুরু হওয়ার পর ফুটবল উন্মাদনা হয়তো ভাসিয়ে নিয়ে যাবে বাকি সবকিছু। তবে আপাতত ‘ব্রাজিল ২০১৪’কে অনায়াসেই ‘অশান্তির বিশ্বকাপ’ নাম দিয়ে দেওয়া যায়!
Md Al Faruk
Assistant Professor, Pharmacy