২০০৯-১০ মৌসুমে বার্সেলোনার হয়ে ৪৭ গোল করে ২০১০ বিশ্বকাপ খেলতে দক্ষিণ আফ্রিকা গিয়েছিলেন আর্জেন্টিনার লিওনেল মেসি। কিন্তু জার্মানির কাছে ৪-০ গোলে হেরে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নেয় তাঁর দল, টুর্নামেন্টে মেসি গোলের খাতাই খুলতে পারেননি৷
পরের মৌসুমেও কাতালানদের হয়ে অপ্রতিরোধ্য ছিলেন মেসি, সব ধরনের প্রতিযোগিতায় তাঁর ৫৭ গোল বার্সেলোনাকে জেতায় লা লিগা আর চ্যাম্পিয়নস লিগের ডাবল। আকাশি-নীল সমর্থকেরা আশায় বুক বাঁধল ম্যারাডোনার উত্তরসূরি তাদের ২০১১ কোপা আমেরিকা জেতাবেন, ভোলাবেন আগের বছরের বিশ্বকাপ-দুঃস্বপ্ন৷
কিন্তু আলবিসেলেস্তেদের আশায় গুড়ে বালি, উরুগুয়ের সঙ্গে টাইব্রেকারে হেরে সেই শেষ আট থেকেই বিদায় নিল মেসির দল, এবারও জাতীয় দলের জার্সি গায়ে গোল করতে ব্যর্থ হলেন চারবারের ব্যালন ডি’অর বিজয়ী। টানা দুই মৌসুমে বার্সেলোনার হয়ে মেসির পা থেকে যেখানে এসেছে ১০০ গোল, সেখানে ওই সময়ে বিশ্বকাপ আর কোপা আমেরিকার মতো বড় দুই টুর্নামেন্টে আর্জেন্টিনার হয়ে ৯ ম্যাচে মেসির গোলসংখ্যা ছিল শূন্য।
যখন মেসির পাঁড় সমর্থকদেরও বড় আসরে কিংবা জাতীয় দলে প্রিয় তারকার ব্যর্থতা নিয়ে সাফাই গাওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না, তখন আলেসান্দ্রো সাবেলা জাতীয় দলের কোচ হিসেবে দায়িত্ব পেয়ে অধিনায়কত্বের বাহুবন্ধনী তুলে দিলেন সেই মেসির হাতে। সাবেলা মেসিকে নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করতে সাহায্য করলেন, জাতীয় দলের হয়ে গোল করতে ভুলে যাওয়া মেসি ২০১৪ বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে করলেন ১০ গোল, আর্জেন্টিনা দক্ষিণ আমেরিকা থেকে সবার আগে পেল বিশ্বকাপের টিকিট৷
আকাশি-নীল জার্সি গায়ে মেসির গোলসংখ্যা ৩৮টি, এর অর্ধেকই এসেছে গত ১৭ ম্যাচে। সাবেলার অধীনে মেসির খেলা ২৫ ম্যাচের ২১টিতেই জালের ঠিকানা খুঁজে পেয়েছেন মেসি। আলবিসেলেস্তে সমর্থকেরা আবার আশায় বুক বাঁধছেন ব্রাজিল বিশ্বকাপে, চেনা পরিবেশে বিশ্বকাপ শিরোপা আবার আসবে আর্জেন্টিনায়।
সমালোচকদের অনেকেই এখন সুর পাল্টেছেন৷ শুধু ক্লাবের হয়ে ভালো খেলেন—প্রতিনিয়ত মেসিকে এমনটা আর শুনতে হয় না। বরং এই বিশ্বকাপে আলো ছড়াবেন রোজারিওতে জন্ম নেওয়া ফুটবল-জাদুকর, এমনটাই ভাবছেন অনেকে। এঁদেরই একজন ১৯৭৮ বিশ্বকাপজয়ী আর্জেন্টিনা দলের সদস্য ওসি আর্ডিলেস। ‘আমাদের দল যথেষ্ট শক্তিশালী আর আমাদের আছে বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়—লিওনেল মেসি। আশাবাদী না হওয়ার কোনো কারণ নেই’ টাইমস অব ইন্ডিয়ায় লিখেছেন সাবেক এই মিডফিল্ডার।‘ সবার চোখ থাকবে মেসির ওপর। বার্সেলোনার হয়ে এই মৌসুমে খুব একটা ভালো করেনি ও, কিন্তু বাছাইপর্বে জাতীয় দলের হয়ে ছিল দুর্দান্ত। এর পেছনে সাবেলার ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷’ ‘আমাদের বিশ্বকাপ জিততে হলে মেসিকে ওর সেরাটা খেলতে হবে। আমার বিশ্বাস ও পারবে৷’
গত পাঁচ মৌসুমের মধ্যে তুলনামূলক বিচারে এবারই মেসি সবচেয়ে কম গোল করেছেন। বিশ্বকাপের কথা মাথায় রেখে ক্লাবের হয়ে খেলার সময় নিজেকে বাঁচিয়ে খেলেছেন অনেকে এমনটাও বলেছেন চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের কাছে বার্সার হারের পর।
সত্যিই কি মেসি সেরাটা তুলে রেখেছেন বিশ্বকাপের জন্য?