চোটের কারণে লুইস সুয়ারেজের বিশ্বকাপ অনেকটাই অনিশ্চিত। ১৯৫০-এর পর প্রথম বিশ্বকাপ জেতার জন্য এডিনসন কাভানির দিকে তাকিয়ে থাকবে উরুগুয়ে। ফোরফোরটুকে নিজেও আশার কথা শুনিয়েছেন প্যারিস সেন্ট-জার্মেই স্ট্রাইকার
l বিশ্বকাপের একেবারেই আগমুহূর্তে কেমন লাগছে?
এডিনসন কাভানি: খুব ভালো লাগছে। উরুগুয়ে এবং আমি নিজে ভালো ফর্মে থেকে বিশ্বকাপে যাচ্ছি। আশা করি, টুর্নামেন্টেও আমরা এটা ধরে রাখতে পারব।
l বিশ্বকাপের ড্রয়ের পর ‘হোয়াটসঅ্যাপে’ কী বলেছিলেন আপনারা নিজেদের মধ্যে?
কাভানি: আমরা অধীর হয়ে অপেক্ষা করছিলাম কাদের সঙ্গে বিশ্বকাপে খেলব তা জানার জন্য। কিন্তু ড্র দেখে তো আমাদের চক্ষু চড়কগাছ! ইংল্যান্ড-ইতালি দুই দলেরই ফুটবল ইতিহাস বিশাল। এই মেসেজ গ্রুপ আমাদের নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রাখতে সাহায্য করছিল, কারণ আমরা একেকজন বিশ্বের একেক প্রান্তে খেলি।
l প্রথম রাউন্ড থেকেই সেরা দলগুলোর মুখোমুখি হওয়াটা কি কাজটা সহজ করে দেবে?
কাভানি: হ্যাঁ, আমি তাই মনে করি। বিশ্বকাপ জিততে হলে সেরা দলগুলোর সঙ্গে সামর্থ্যের সেরাটাই আমাদের ঢেলে দিতে হবে, ধরে রাখতে হবে গভীর মনোযোগ। টুর্নামেন্টে প্রথম থেকেই তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হতে হবে, যেটা আমি মনে করি এই প্রতিযোগিতার অন্যতম সৌন্দর্য, কারণ প্রথম থেকেই আপনাকে আপনার সেরাটা খেলতে হবে।
l এখন পর্যন্ত উরুগুয়ের কোনো খেলোয়াড় বিশ্বকাপে গোল্ডেন বুট জেতেননি। আপনি জিততে পারলে কেমন হবে ব্যাপারটা?
কাভানি: এটা হবে স্বপ্নের মতো। তবে প্রতি ম্যাচেই এটা মাথায় রেখে খেলতে নামলে আপনি আপনার এবং আপনার দলের জন্য পুরো ব্যাপারটা কঠিন করে ফেলবেন। কিন্তু যদি আমি এটা জিতেই যাই, যেমনটি হয়েছিল সিরি ‘আ’তে নাপোলির হয়ে খেলার সময়, সেটা হবে অসাধারণ।
l কাভানি ও সুয়ারেজ কী দুর্দান্ত জুটি!
কাভানি: হ্যাঁ, আশা করি এটা বজায় থাকবে। আমরা আমাদের সেরাটা নিয়েই ব্রাজিলে পা দিতে চাই। এটা আমাদের দুজনেরই স্বপ্ন। দক্ষিণ আফ্রিকায় একসঙ্গে খেলেছিলাম। এই চার বছরে দুজনই আরও পরিণত হয়েছি, বোঝাপড়াও বেড়েছে। এটা অনেকটা নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করে দলের জন্য সেরাটা বের করে আনা।
l এটা কি সত্যি, গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতা আপনার নায়ক ছিলেন?
কাভানি: নায়ক আমি বলব না, কিন্তু ওকে আমি অনুসরণ করতাম। সেরা সময়ে সে ছিল অসাধারণ৷ যেকোনো জায়গা থেকে গোল দিতে পারত, ওর গোল করার ধরন ছিল আর সবার থেকে আলাদা। আমি মনে করি নায়ক এমন কেউ যে সব সময় আপনার পাশে থাকবে, যাকে দেখে আপনি শিখবেন পেশাদার হওয়ার জন্য কী ত্যাগ স্বীকার করতে হয়৷ ছোটবেলায় আমার নায়ক ছিল আমার ভাই ওয়াল্টার, যাকে অল্প বয়সেই পরিবার থেকে দূরে থাকতে হয়েছে পেশাদার ফুটবলার হওয়ার জন্য। (ওয়াল্টার পরে ক্লাব ফুটবল খেলেন উরুগুয়ে, ফ্রান্স, মেক্সিকো, প্যারাগুয়ে এবং চীনে) । আমি সব সময় কমবেশি ওর মতো হওয়ার চেষ্টা করেছি। আমি জানি না ওর মতো হতে পেরেছি কি না, কিন্তু ও-ই আমার আদর্শ।
l বিশ্বকাপে গোল করার অনুভূতি কেমন?
কাভানি: এটা অসাধারণ। আমি ভাগ্যবান দক্ষিণ আফ্রিকায় গোল করতে পেরেছিলাম, যদিও একটাই গোল জার্মানির বিপক্ষে স্থাননির্ধারণী ম্যাচে। প্রথাগত উরুগুইয়ান গোল, মাঝমাঠে বলের দখল জিতে ত্বরিত গতিতে এগিয়ে গিয়ে। অসাধারণ আবেগময় এক মুহূর্ত।
l ব্রাজিলের মাঠে সেলেসাওদের বিপক্ষে গোল করেছেন। এই অভিজ্ঞতা কি আপনাকে সাহায্য করবে?
কাভানি: এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা। স্বাগতিকদের বিপক্ষে এত ভালো খেলা ছিল আমাদের জন্য বিশেষ কিছু, যদিও হেরে গিয়ে কনফেডারেশনস কাপের ফাইনালে উঠতে ব্যর্থ হই আমরা। ব্যক্তিগতভাবে ব্রাজিলের বিপক্ষে গোল করা আমার জন্য ছিল বিশেষ কিছু৷ ওটা ছিল একটা প্রমাণ যে আমি বড় দলের বিপক্ষে গোল করতে পারি৷
l আপনার প্রথম বিশ্বকাপ স্মৃতি...
কাভানি: আসলেই মনে পড়ছে না। আমার ১৩ বা ১৪ বছর বয়সে খুব যে ফুটবল দেখতাম তা নয় । ১৯৯৮ বিশ্বকাপের কিছু স্মৃতি মনে পড়ছে, ২০০২ আর ২০০৬-এর অনেক কিছুই মনে করতে পারি, কিন্তু কোনো নির্দিষ্ট ম্যাচের কথা বলতে পারছি না। তবে ছোটবেলায় টেলিভিশনে পুরো স্টেডিয়ামকে দুই দলের রঙে সাজতে দেখা ছিল অনন্য, টেলিভিশনের সামনে বসেও মাঠের উত্তাপ টের পেতাম। মনে মনে ভাবতাম একদিন আমিও দেশের জার্সি গায়ে বিশেষ কিছু করব।
l একজন উরুগুয়ান হিসেবে আপনি কি আরেক মারাকানাজোর কথা ভাবছেন?
কাভানি: সবাই আমাদের পূর্বসূরিদের সাফল্য নিয়ে কথা বলে, মারাকানাজো তো অবশ্যই। কিন্তু আমি এবং আমার সতীর্থরা আমাদের মতো করে ইতিহাস গড়তে চাই। আমাদের মূল উদ্দেশ্য, নিজেদের সেরাটা ঢেলে দেওয়া, এরপর মারাকানাজোর মতো কিছু হলে তো ভালো।