‘অত্যন্ত আনন্দ ও আবেগপূর্ণ অনুভূতি নিয়ে জানাচ্ছি, আমি সম্প্রতি একটি শিশুপুত্রের বাবা হয়েছি। কিন্তু ওর মা নিজ পছেলে ক্রিস্টিয়ানো জুনিয়রকে নিয়ে রোনালদোর একান্ত মুহূর্তরিচয় গোপন রাখতে চায়। তবে ছেলেকে শুধু আমার তত্ত্বাবধানে রাখতে সে সম্মত হয়েছে। এ ব্যাপারে আর কোনো তথ্য প্রকাশ করা হবে না৷ আমার (ও শিশুটির) ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকারের প্রতি পূর্ণ সম্মান দেখাতে সবাইকে অনুরোধ করছি।’
বহুল আলোচিত বার্তাটি ২০১০ সালের ৩ জুলাই ফেসবুক ও টুইটারে প্রকাশ করেন রোনালদো। সবাই বিস্মিত। তিনি কোনো নারীর সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্কে জড়িয়েছেন, এমন কথা এত দিন ধরে কীভাবে গোপন ছিল! তাঁর সঙ্গে রাশিয়ান মডেল ইরিনা শায়াকের ঘনিষ্ঠতার খবর চাউর হয়েছিল বটে। পাপারাজ্জিরা ওই বছরের মে মাসে দুজনের একটি ছবিও প্রকাশ করে। কিন্তু তাতে ইরিনাকে দেখে তো অন্তঃসত্ত্বা মনে হয়নি!
রোনালদোর সন্তানের মা আসলে কে, সেটা নিয়ে ধোঁয়াশা থেকেই যায়। সংবাদমাধ্যমও কোনো কূলকিনারা পায় না। তবে রোনালদো-শায়াকের সম্পর্ক অটুট থাকার খবর আসে। কারণ, দুজনকে নিউইয়র্কের ম্যানহাটানে খুব ঘনিষ্ঠ সময় কাটাতে দেখা গেছে। কিন্তু শিশুটির কী অবস্থা? সে খুব আদরযত্নেই থাকে, দাদি দোলোরেসের নিবিড় পরিচর্যায়। রোনালদোর বোন কাতিয়া বলেন, ‘ছেলেকে পেয়ে ক্রিস্টিয়ানো অনেক, অনেক খুশি। ছেলেটির কালো চোখ আর বাদামি চুল ঠিক তার বাবার মতোই। এখন সে শুধু খায় আর ঘুমায়।’ পর্তুগিজ টেলিভিশন চ্যানেল আরটিপি জানায়, ক্রিস্টিয়ানো জুনিয়রের জন্ম হয়েছে ২৭ জুন। সেদিন তার বাবা দক্ষিণ আফ্রিকায় বিশ্বকাপের ম্যাচ খেলছিলেন৷ পর্তুগালের প্রতিপক্ষ ছিল আইভরিকোস্ট।
এই তথ্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ, সন্দেহ নেই। কিন্তু সবার কৌতূহল থেকে যায় ক্রিস্টিয়ানো জুনিয়রের মাকে নিয়ে। কে এই নারী? কেন তিনি নবজাতক সন্তানকে কাছে রাখলেন না? শুরু হয় নানা জল্পনা-কল্পনা। পর্তুগালের একটি পত্রিকা লেখে, রোনালদোর ছেলেটিকে যুক্তরাষ্ট্রে কৃত্রিম উপায়ে জন্ম দেওয়া হয়েছে। মার্কিন এক নারী এতে সহায়তা করেছেন। আরেকটি ট্যাবলয়েড পত্রিকা দাবি করে, ওই নারীকে নীরব রাখার পাশাপাশি ছেলেটিকে নিজের কাছে রাখার বিনিময়ে রোনালদোকে বড় অঙ্কের অর্থ গুনতে হয়েছে!
পর্তুগালের অন্যান্য সংবাদমাধ্যম এমনও খবর প্রচার করে, রোনালদো জুনিয়র শুধু একটি রাতের ফসল। আর সংশ্লিষ্ট তরুণীটি নিজের সন্তানকে নিতে চান না। আবার কয়েক দিন পর সংবাদমাধ্যম জানায়, ওই তরুণী এখন সন্তানকে ফিরে চান।
নানা বিতর্ক আর আলোচনার মুখে কাতিয়া আভেইরা যুক্তরাজ্যের দ্য সান পত্রিকাকে বলেন, ‘শিশুটির কোনো মা নেই। ওর মা মারা গেছেন। ও এখন আমাদেরই। ও কীভাবে পৃথিবীতে এসেছে, সে ব্যাপারে আমি কিছু বলতে চাই না। তবে আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, শিশুটি আমার মায়ের কাছে আছে। তিনিই ওর দেখাশোনা করেন ২৪ ঘণ্টা।’
দাদিমা দোলোরেসের কোলে ক্রিস্টিয়ানো জুনিয়রের ছবিও ছাপা হয়। রোনালদো ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি গোল উৎসর্গ করেন ছেলেকে। দাদিমার কোলে চড়ে সে বার্নাব্যুতে ৮ ডিসেম্বর একটি ম্যাচে বাবার নৈপুণ্য দেখতেও যায়! সেই খেলায়ও গোল করেন সিআর-সেভেন। বাবা হওয়ার অনুভূতি জানাতে গিয়ে রোনালদো বলেন, ‘এটা অন্য রকম দায়িত্বশীলতা। বিশেষ কিছু। আমি শিখছি। আর আগের চেয়ে বেশি আনন্দিত বোধ করছি। ওর কাপড় পাল্টাতে আমার বেশ লাগে। আমি চাই, ও আমার উত্তরসূরি হোক। তবে বড় হয়ে কী করবে, সেটা নিশ্চয়ই ওর নিজস্ব ব্যাপার।’
ছেলেটা বুঝি সৌভাগ্যের প্রতীক হয়েই এসেছে রোনালদোর জীবনে। ২০১০-১১ মৌসুমে তিনি লা লিগা, কোপা দেল রে এবং চ্যাম্পিয়নস লিগ মিলিয়ে মোট ৫৩টি গোল করেন। স্পেনের ক্লাব ফুটবল ইতিহাসে এটি রেকর্ড। এতে তিনি আনন্দ প্রকাশ করেন, তবে সন্তোষ নয়। কারণ তিনি আরও শিরোপা জিততে চান। এদিকে ফুটবল মাঠের বাইরেও তাঁর চাহিদা বাড়তে থাকে৷ হরেক রকম পণ্যের বিজ্ঞাপনে মডেল হিসেবে তাঁর উপার্জনও বেড়ে যায় বহুগুণ।
সূত্র: প্রথম আলোয় প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন, একাধিক ওয়েবসাইট এবং লুকা কাইয়োলির বই রোনালদো।