তবুও লতিফ সিদ্দিকী একজন ভাল লোক!!!

Author Topic: তবুও লতিফ সিদ্দিকী একজন ভাল লোক!!!  (Read 1745 times)

Offline Mohammad Nazrul Islam

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 178
  • Test
    • View Profile
তবুও লতিফ সিদ্দিকী একজন ভাল লোক




2001 সালের কথা। আমি তখন বর্তমান টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী জনাব লতিফ সিদ্দিকীর ব্যক্তিগত তথ্য সরবরাহক হিসাবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস নিয়ে কাজ করি ঢাকার ধানমন্ডীতে বি.এন.পির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক এ্যানির শশুড়ের বাসায়, 68/এতে। তখন বি.এন.পি সরকার ক্ষমতায়। 2013 সালে বাংলা একাডেমীর সাহিত্য পুরষ্কার প্রাপ্ত সাংবাদিক ও ছড়াকার জনাব আক্তার হুসেন, বাংলা একাডেমীর সাবেক পরিচালক হান্নান ঠাকুর, বর্তমান আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নূহ-উল-আলম লেনিন এর একান্ত স্নেহভাজন (বর্তমান আওয়ামী লীগ ধানমন্ডি অফিসে কর্মরত) আমার সুহৃদ বন্ধু জামিনুর রহমান একত্রে কাজ করতাম। কাজের ফাকেঁ ফাকে জনাব লতিফ সিদ্দিকী আমাদের সকলের মাঝখানে বসে গোশ-গল্পে মেতে উঠতেন। কখনো কখনো চা-কফির এই আড্ডায় আমার আর জামিনুরের মুখে তার খাওয়া আধখানা বিস্কুট একান্তই স্নেহভরে; আমাদের মুখে গোজে দিতেন। আবার কখনো কখনো তার রাজনীতির প্রথম যৌবনে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর এ.পি.এস থাকাকালীন অবস্থায় সোহরাওয়ার্দীর হাতের চড় খাওয়ার সমৃতিকথা বলতে বলতে জোরে জোরে হা-হা-হা করে হেঁসে উঠতেন। মাঝে মধ্যে আমার শ্রদ্ধেয় ভাই, জনাব আক্তার হুসেনের কাছে আক্ষেপ করে বলতেন  ‘আমি যদি মন্ত্রী হই; তবে ছয় মাসের মধ্যেই পদত্যাগ করে রাজণীতি থেকে আবসার নিব ইত্যাদি ইত্যাদি।
নিত্য দিনের অবশ্য মত, একদিন দুপুর বেলা আমাদের মাঝে বাসতে গিয়ে হঠাৎ করে চেয়ার থেকে পিচ্ছলে পড়ে লংকা কান্ড ঘটিয়ে ছাড়লেন। চেয়ার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের চৌদ্দ গোষ্ঠির রাম-ধূলাই দিতে ওোঁ-অ্যা শব্দে কুকাতে লাগলেন।আমি আর জামিনুর রহমান এই বিশালদেহী মানূষটিকে কোন মতে টেনে তুললাম। লতিফ সিদ্দিকী দাম্ভবীক হলেও অনেকটাই নিরহংকার ও নির্ভেজাল মানুষ একথা নিঃসন্দেহে বলা যায়। তবে  তিনি বর্ডি ল্যাগুয়েজের ভক্ত।  2001 সালের দিকে জনাবের পারপার্শিক ও আর্থিক অবস্থা মোটেও অনুকূলে ছিল না। অনেকটাই টানাটানি করে চলতে হয়েছে। এই ব্যাপারে ‘ইসলাম গ্রুপ অব ইন্ড্যাষ্ট্রিজ-এর মালিক প্রয়াত জহিরুল ইসলামের ছেলে মঞ্জুরুল ইসলাম তাকে সাহায্য করতেন বলে অনেকের কাছে শুনেছি। একদিন তিনি জহিরুল ইসলামের জীবন ও কর্ম সম্পর্কীত (বর্তমান বাজারে প্রচলিত) বইখানি পূর্ণ মূল্যায়নের কথা চিন্তা করে ছিলেন । সম্ভাব্য জিয়া সরকারের সাথে জনাব জহিরুল ইসলামের সর্ম্পক পূর্ন মূল্যালনের পক্ষে ছিলেন তিনি। এই সময় তিনি ‘বাংলাদেশের আওয়ামীলীগের ইতিহাস নামক’ একটি বইও লেখার আগ্রহ প্রকাশ করেন।বর্তমান বাজারে প্রচলিত ‘আওয়ামী লীগ সর্ম্পকীত’ দুইটি-খন্ডি বই আওয়ামী লীগকে জানার জন্য যথেষ্ট নয় বলে তার বিশ্বাস। ব্যক্তিগত তথ্য সরবরাহক হিসাবে আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল এই তথ্য উদ্ধারের জন্য। আমি ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের’ তথ্য সরবরাহের জন্য দীর্ঘ চার বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরী, জাতীয় গ্রন্থশালা, কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরী, ন্যাশনাল আর্কাইভসহ বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ শ্রেষ্ঠ লাব্রেরী গুলোতে কাজ করেছি। কিন্তু শেষাব্দি বইটি লেখা হয়নি।
এই গ্রন্থটি সর্ম্পূন করার জন্য প্রচুর গবেষনা এবং অর্থের প্রয়োজন দেখা দিলে তিনি আওয়ামী লীগের উচ্চ্ মহলের সুদৃষ্টি কামনা করেন। কিন্তু সেই সময়  আশানুরুপ সারা পাননি। তাছাড়া বি.এন.পি সরকারের অত্যাধীক নজরদারীর কারনেও তিনি এই সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে আসেতে পারেন!।
2004 সালের দিকে আমি গাজীপুরের কালিয়াকৈরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কলেজে ইতিহাস প্রভাষক পদে চাকুরী নেই। এই সময় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কলেজের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ছিলেন দেশের সুনামধন্য ব্যারিষ্টার জনাব রফিক-উল-হক। অত্র কলেজে নতুন ডিগ্রী শাখা খোলার লক্ষ্যে  ব্যারিষ্টার সাহেবের  নিদের্শেই প্রতি বিষয়ে দুইজন করে প্রভাষক নিযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু নিয়োগ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করার আগেই সম্ভব্্য তাকে পাশ কাটিয়ে তৎকালীন স্থানীয় বি.এন.পির নেতারা প্রত্যেক চাকুরী প্রার্থীদের কাছ থেকে প্রায় কোটিটাকা ডোনেশন আদায় করেন এবং স্থানীয় অপেক্ষাকৃত কম মেধাবী অগ্রধীকার দেন। চাকুরী প্রার্থী হিসাবে আমাকেই উক্ত ডোনেশনের টাকা প্রদান করতে হয়;  অনেকটা ব্যাধ হয়ে। কিন্তু অল্প কিছুদিন যেতে না যেতেই আমরা নতুন নিয়োগ প্রাপ্তরা শুনতে পাই; কলেজের ম্যানেজিং কমিটি থেকে ব্যারিষ্টার সাহেব পদত্যাগ করেছেন। ফলে হতাশ হই। ইতিমধ্যে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জনাব জাহাঙ্গীর আলম বিভিন্ন অযুহাতে নতুন নিয়োগ প্রাপ্ত 24 জন প্রভাষকের কাছ থেকে বিভিন্ন অযুহাতে চাদাঁ আদায় করতে থাকেন।
দেশে রাজনৈতিক বিপর্যয়ের কারনে হঠাৎ করেই তত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসে। এই সরকার দুনীর্তির বিরোদ্ধে কঠোর অবস্থান নিলে আমরা সচেতন হই। চন্দ্রা চৌরাস্তা মোড়ে সুবর্ন ক্লিনককে ব্যারিষ্টার রফিক-উল-হক সাহেবের বাগান বাড়ীতে (বি.এন.পি সমর্থিত) ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জনাব জাহাঙ্গীর আলম সাহেবের বিভিন্ন প্রকার ডোনেশন ও চাদাঁবাজীর কথা জনাবের কাছে তুলে ধরি। ফলে তিনি আমাদেরকে যৌথবাহিনী বরাবর আবেদনের কথা বলেন। তার কথামত আমি একের পর এক যৌথবাহিনী, শিক্ষাউদেষ্টা, জেলাপ্রশাসক, ও পুলিশ সুপার বরাবর আবেদন করি। ফলে অধ্যক্ষসহ তার সুহৃদরা (স্থানীয় বি.এ.পির নেতৃবৃন্দ) আমাকে প্রানে মারার চেষ্ঠাসহ কলেজ থেকে বহিষ্কার করার যড়ষন্ত্রে লিপ্ত থাকেন। আমার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের মামলাসহ কোটি কোটি টাকার মানহানী মামলা দায়ের করেন। আমি ব্যারিষ্টার সাহেবের কাছে আইনি সহায়তা চাই কিন্তু তিনি আমাকে নিরাশ করলেও আমি হারমানি নাই। শেষ পযর্ন্ত অধ্যক্ষ ও বি.এন.পি দলীয় লুটেরা আমাকে গোপনে আপোষ প্রস্তাব  দেয়। আমি তাতেও রাজী না হলে আমাকে মিথ্যা অযুহাতে কলেজ থেকে সামরিক বহিষ্কার করা হয়। যৌথবাহিনীর কাছে দুনীর্তির আবেদনের পরিপেক্ষিতে ইতিমধ্যে কালিয়াকৈর থানা শিক্ষা অফিসারদ্বয় 12 দফায় অধ্যক্ষকে দায়ী করে প্রায় এক কোটি টাকা আত্মসাতের 180পৃষ্ঠা সম্বলিত একটি প্রতিবেদন প্রেস করেন কিন্তু  প্রতিবেদনটি তৎকালীন কলেজ ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি (বি.এন.পি সরকার কর্তৃক এডহক ভিত্তিতে নিয়োগকৃত তৎকালীন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের গনসংযোগ ও পরিচালনা পরিষদের সভাপতি) জনাব মোয়াত্তের হোসেন গ্রহন করেনি। উল্টো তিনি আমাকে শাসিয়ে অধ্যক্ষ সাহেবের সাথে তাড়াতাড়ি আপষ করতে বলেন। তাই, বাধ্য হয়ে আমরা ব্যারিষ্টার সাহেবকে বিষয়টি জানিয়ে ছিলাম। ব্যারিষ্টার সাহেব প্রমান পত্রসহ রির্পোটি যৌথবাহিনী গাজীপুর-এর কমান্ডিং অফিসারের কাছে পৌছে দিতে বলেছিলেন। আমরা তার কথামত  রিপোর্টটি যথারীতি পৌছানোর ব্যবস্থা করলেও তৎকালীন যৌথবাহিনীর কমান্ডিং অফিসার (ধানগবেষনা ইনসটিটিউট) সম্ভাব্য তারিক মাসুদ  (র্যা বের সিও, বর্তমানে আটকৃত নারায়রগঞ্জ 7খুনের মামলার অন্যতম আসামী) তৎকালীন বি.এন.পির নেতা কালিয়াকৈর পৌর প্রশাসক মজিবর বহমানের কাছ থেকে প্রচুর ঘুষ খেয়ে  তা গ্রহন করেনি। পরবর্তীতে পুলিশ সুপার, জেলাপ্রশাসকের কাছে প্রমান পত্র নিয়ে হাজির হলেও তারা, আমাকে বিমূখ করেছিল। তাই বাধ্য হয়ে কলেজের চাকুরী ছেড়ে পালিয়ে এসে কোন মতে জীবন বাচিঁয়েছিলাম। 2008 সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে কালিয়াকৈর-গাজীপুরের এমপি মাননীয় প্রতি-মন্ত্রী জনাব আ.ক.ম মোজাম্মেল সাহেবের কাছে বিচার প্রার্থী হয়ে ছিলাম । তিনি  জনাব লতিফ সিদ্দিকীর টেলিফোন ও রেফারেন্সে আমার  নিয়োগকৃত কাগজপত্র পরীক্ষা নিরীক্ষা করে আমার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহরসহ এমপিওভুক্তির আশ্বাস দিলেও পরবতীর্তে রাজনৈতিক ব্যালেন্স ও তেলেসমতি করবারে শেষ পযর্ন্ত তা করেননি তবে লতিফ সিদ্দিকীর ভয়ে বিশ্বদুনীর্তিবাজ জাহাঙ্গীর আমার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো আর পরিচালনা করতে সাহস পাননি। সেই থেকে আজ অব্দি আমিও আর প্রান ভয়ে  কলেজে ঢুকতে পারি নাই!!!
গত 05/06/14 তারিখে আমার প্রানপ্রিয় নেতা জনাব লতিফ সিদ্দিকীর সাথে দেখা করতে গিয়ে ছিলাম। তিনি আমাকে আগের মতেই সৌজন্য স্বাক্ষাৎ দিয়েছেন যদিও তিনি আমার হাতে নিয়ে যাওয়া কাজটি করেননি তবু তার কাছে আমি অজীবন কৃতজ্ঞ। কারন তার টেলিফোনের কারনে জেল-জরিমানা থেকে রক্ষা পেয়েছি। ভাত না পেলেও জীবন নিয়ে বেচেঁ আছি ।