শারীরিক যন্ত্রণা নাকি বিরক্তি—কোনটি আপনার পছন্দ? সুযোগ দেওয়া হলে অনেকেই প্রথমটিই বেছে নেবে বলে বিজ্ঞানীরা দাবি করছেন। মানুষ একটি কক্ষে একা একা ১৫ মিনিট অলস বসে থাকার পরিবর্তে নিজেদের শরীরে হালকা বৈদ্যুতিক আঘাত (ইলেকট্রিক শক) নেওয়ার বিষয়টিকেই বেছে নেয়। সায়েন্স সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, ‘ওই গবেষণার ফলাফলে এটাই প্রমাণ হয় যে নিজেদের ভাবনাও অনেক সময় মানুষের জন্য অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আর সেসব ভাবনা নিয়ন্ত্রণ করাটাও আমাদের জন্য কঠিন।’
কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানী মালিয়া ম্যাসন বলেন, একাকী অবস্থায় শুধু চিন্তাভাবনার মধ্যে সময় কাটাতে মানুষের অস্বস্তি হতে পারে। কারণ তারা কোনো না কোনো বিনোদনের জন্য সব সময় নিজের মনোজগতের বাইরের পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে থাকে।
ম্যাসনের গবেষণার আগে ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানী টিমোথি উইলসন ও তাঁর সহযোগীরা অপর একটি গবেষণা সম্পন্ন করেন। তাঁরা স্নাতক পর্যায়ের ছাত্রছাত্রীদের মুঠোফোন লুকিয়ে রেখে একটি সুসজ্জিত নির্জন কক্ষে গিয়ে ১৫ মিনিট বসে থাকতে বলেন। এ পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ৪০৯ জন ছাত্রছাত্রীর প্রায় অর্ধেকের ভাষ্য, নিঃসঙ্গ অবস্থায় বসে থাকার অভিজ্ঞতাটি সুখকর ছিল না।
উইলসন বলেন, মানুষের মস্তিষ্কে অনেক সুখস্মৃতি জমা থাকে। আর গল্প বলা বা কল্পনা করার সামর্থ্যও তাদের আছে। তিনি নিজেও (উইলসন) ঘুমানোর সময় নিজেকে আনন্দ দেওয়ার উদ্দেশ্যে কল্পনা করতে থাকেন, যেন তিনি একাকী পড়ে আছেন জনবিচ্ছিন্ন কোনো দ্বীপে। ব্যাপারটা তেমন কঠিন ভাবা উচিত নয়। অস্বস্তিটা আসে মূলত মানসিক নিয়ন্ত্রণের ঘাটতির কারণে। নিঃসঙ্গ অবস্থায় মনকে জোর করে একটি বিষয়ের ওপর লম্বা সময় ধরে ভাবতে বাধ্য করা বেশ কঠিন।
একা থাকার বাস্তব অভিজ্ঞতা নেওয়ার ব্যাপারটাকে সহজতর করার লক্ষ্যে উইলসন ও তাঁর সহযোগীরা শিক্ষার্থীদের নিয়ে নির্জন কক্ষে সময় কাটানোর ওই পরীক্ষাটি চালান। নিজেদের ঘরে গিয়েও তাঁদের একই ধরনের পরীক্ষায় অংশ নিতে বলা হয়। কিন্তু দেখা যায়, এক-তৃতীয়াংশ ছাত্রছাত্রীই এ ব্যাপারে ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ স্বীকার করেন। কারণ, বাধ্য হয়ে একা সময় কাটালেও ব্যাপারটা তাঁদের ভালো লাগেনি। গবেষকেরা বলেন, ওই শিক্ষার্থীরা সম্ভবত টানা ১৫ মিনিট ধরে ভাবার মতো কোনো বিষয় খুঁজে পাননি।
এখন প্রশ্ন হলো, পরীক্ষাটা কতটা অস্বস্তিকর ছিল? পরবর্তী পরীক্ষায় ওই শিক্ষার্থীদের হালকা ইলেকট্রিক শক নিতে বলা হয়। এরপর মতামত জানতে চাইলে চার ভাগের তিন ভাগ ছাত্রছাত্রীই বলেন, তাঁরা নির্জন কক্ষে সময় কাটানোর পরিবর্তে একাধিকবার ওই ইলেকট্রিক শক নিতে রাজি আছেন। নেচার।Source:
www.prothom-alo.com