মহাকাশ গবেষণায় 'ই-ইএলটি'

Author Topic: মহাকাশ গবেষণায় 'ই-ইএলটি'  (Read 962 times)

Offline mshahadat

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 229
    • View Profile
মহাকাশ গবেষণায় 'ই-ইএলটি'
প্রদীপ সাহা
জ্যোতির্বিদরা এর সাহায্যে পৃথিবীতে বসেই সৌরজগতের বাইরের জগৎ দেখা এবং পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ পাবেন। অতিকায় এই টেলিস্কোপটি নির্মাণ করছে ১৫টি দেশের মিলিত সংস্থা 'ইউরোপিয়ান সাউদার্ন অবজারভেটরি' বা ইএসও। চিলিতে তাদের বেশ কয়েকটি মানমন্দির রয়েছে। তবে সংস্থার প্রকৌশলীরা মনে করেন, এই সংস্থার ৫০ বছরের ইতিহাসে ই-ইএলটি হবে সবচেয়ে বড় ও উচ্চাভিলাষী একটি উদ্যোগ।

কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটির এক্সপেরিমেন্টাল ফিলসফির অধ্যাপক গ্যারি গিলমোর এই প্রকল্পের সঙ্গে কাজ করছেন একেবারে শুরু থেকে। তিনি জানান, 'ইউরোপিয়ান এক্সট্রিমলি লার্জ টেলিস্কোপ' অর্থাৎ ই-ইএলটির পুরো নামের প্রতিটি শব্দই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত এটি পুরোপুরি ইউরোপীয় এবং দ্বিতীয়ত এটি সত্যিই অতিকায়। আয়না পর্যন্ত মাপ ধরলে এটি প্রায় ৪০ মিটার দীর্ঘ। এ পর্যন্ত যত টেলিস্কোপ বানানো হয়েছে, সেগুলোর যে কোনোটির চেয়ে এটি কয়েকগুণ বড়। আকৃতিতে এ টেলিস্কোপটি প্রায় একটি টেনিস কোর্টের মতো। আর এমনভাবে এর নকশা করা হয়েছে, যাতে রাতের আকাশে উঁচু মানের ছবি পাওয়া সম্ভব হবে।'

বাইরে থেকে দেখলে ই-ইএলটিকে আন্দেজ পর্বতমালায় 'ইউরোপিয়ান সাউদার্ন অবজারভেটরি' বা ইএসওর বর্তমান মানমন্দিরের মতোই মনে হয়। নতুন এই টেলিস্কোপ বসাতে চিলির সেরো আমাজোনা পাহাড়ের চূড়া বিস্ফোরক দিয়ে উড়িয়ে দিতে হবে প্রকৌশলীদের। চিলির উত্তরে উপকূলীয় পার্বত্য অঞ্চলের মাঝামাঝি এলাকা হওয়ায় মানমন্দিরের আবহাওয়া হবে শুষ্ক ও ঝকঝকে। জ্যোতির্বিদদের কাছে এ বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অধ্যাপক গিলমোর বলেন, 'পানি আর বাতাস দুটিই টেলিস্কোপের বড় শত্রু। রাতের আকাশ দেখার সময় এ দুটিই সবচেয়ে বড় সমস্যা সৃষ্টি করে। বাতাসের হাত থেকে রেহাই পেতে আপনাকে যতটা সম্ভব পাহাড়ের ওপরে উঠে যেতে হবে। আর ওই এলাকাকে হতে হবে যতটা সম্ভব শুষ্ক। বাতাসে জলীয় বাষ্প বেশি হলে টেলিস্কোপের দৃষ্টি ঘোলা হয়ে যাবে।'

অতিকায় এ টেলিস্কোপের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো এর আকৃতি নিয়ে। বিরাট আকৃতির প্রতিটি যন্ত্রপাতি খুব সাবধানতার সঙ্গে পর্বতের চূড়ায় তুলতে হবে। গুঁতো বা আঘাত লেগে কোথাও টোল পড়লে চলবে না, বেঁকে গেলেও হবে না। কাজেই সবচেয়ে সহজ সমাধান হলো পর্বতের মাথা ছেঁটে ফেলা। আর এজন্য ওই পাহাড় চূড়া থেকে কয়েক লাখ টন পাথর উড়িয়ে দিতে হবে। ইতিমধ্যে প্রকৌশলীরা এ কাজটি শুরু করে দিয়েছেন। ই-ইএলটির জন্য এই মানমন্দির গড়ে তুলতে অনেক কাঠ-খড় পোড়াতে হবে। তৈরি হয়ে গেলে ই-ইএলটির কাছে বিজ্ঞানীদের সবচেয়ে বড় প্রশ্নটি থাকবে_ 'এই মহাবিশ্বে আমরা কি একা?' অধ্যাপক গিলমোর বলেন, 'এই টেলিস্কোপ দিয়ে আমরা আমাদের প্রতিবেশী সৌরজগতের গ্রহগুলোর ওপর চোখ রাখতে পারব। আমাদের আশপাশের সৌরজগৎগুলোতে এ রকম কয়েক হাজার গ্রহ-নক্ষত্র রয়েছে। এই টেলিস্কোপের মাধ্যমে আমরা খুঁজতে পারব, এর মধ্যে কোনোটি আমাদের পৃথিবীর মতো গ্রীষ্মে সবুজ হয়ে ওঠে কি-না। আমরা এসব গ্রহের বদলে যাওয়া বুঝতে পারব, আবহাওয়া সম্পর্কেও জানতে পারব। দূর গ্রহ থেকে আমাদের দিকে তাকিয়ে কেউ হয়তো হাত নাড়বে না। শুধু তাই নয়, কোথাও ঘাস গজাল কি-না আমরা তা ঠিকই এখান থেকে বুঝতে পারব।'

শুধু এলিয়েন খোঁজা নয়, বিলিয়ন ইউরোর এই প্রকল্পের আরও অনেক কাজ থাকবে। আরও অনেক প্রশ্নের উত্তর জ্যোতির্বিদরা ই-ইএলটির কাছে চাইবেন। তবে সেজন্য তাদের অপেক্ষা করতে হবে আরও অনেক দিন। বর্তমানে কাজ শুরু হলেও নির্মাণ শেষ হতে সময় লাগবে ১০ বছরেরও বেশি। আর সেই টেলিস্কোপে চোখ রাখার সুযোগ অধ্যাপক গিলমোর হয়তো পাবেন না। প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, 'এত বড় একটি প্রকল্পের আইডিয়া পরিপকস্ফ হতে, সেই অনুযায়ী উন্নত প্রযুক্তি তৈরি করতে, রাজনৈতিক সমর্থন আদায় করতে, টাকা জোগাড় করতে, জুৎসই নির্মাণ কৌশল নির্ধারণ করতে এবং শেষ পর্যন্ত কাজ শুরু করতে ৩০-৪০ বছরও লেগে যায়। কাজেই যথেষ্ট তরুণ এবং সৌভাগ্যবান না হলে চূড়ান্ত সাফল্য দেখে যাওয়া সম্ভব হয় না। আমি নিজের জন্য এটা করছি না। এটা অনেকটা ওক গাছের চারা লাগানোর মতো, যার ছায়া হয়তো আপনার নাতি-নাতনিরা পাবে।' যথার্থই বলেছেন অধ্যাপক গিলমোর। তবে এই সফলতা যে পরবর্তী প্রজন্ম তথা সমগ্র বিশ্ববাসীর কাছে একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে_ এতে কোনো সন্দেহ নেই। আমরাও আশা করছি, বিজ্ঞানের এ আবিষ্কার সফলতার মুখ ঠিকই দেখবে। মহাকাশের তথ্য আরও সহজভাবে জানা এবং মহাকাশের দিকে বিজ্ঞানীদের নজর রাখার কাজটি বাস্তবিকভাবেই আরও সহজ হবে এ প্রত্যাশা আমরা অবশ্যই করতেই পারি।

http://www.samakal.net/2014/07/13/72007
Md.Shahadat Hossain Mir
Senior Administrative officer
Department of Law
Daffodil International University
Campus -3 ( Prince Plaza)
Mail: shahadat@daffodilvsarity@diu.edu.bd
Lawoffice@daffodilvarsity.edu.bd