বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের শরীরের উপর অনেক প্রভাব পরে। এর মধ্যে অন্যতম হল ত্বকের উপর প্রভাব। বয়স বাড়ার সাথে সাথে বুড়িয়ে যাওয়া অনিবার্য। কারও ৩০ এর পর বয়সের ছাপ পড়ে, কারও বা ৪০ আবার অনেকের এর পরেও বয়সের ছাপ পড়া শুরু করে। কিন্তু আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অনেক অভ্যাস আছে যা আমাদের বয়স ৩০ হওয়ার আগেই বুড়িয়ে যেতে সাহায্য করছে। তাই যদি আপনারও এমন কোন অভ্যাস থেকে থাকে, তাহলে অতিসত্বর এসব বদঅভ্যাস থেকে নিজেকে মুক্ত করার চেষ্টা করুন।
অহেতুক চোখ ঘষাঃ
ডার্মাটোলজিস্টদের মতে চোখের নিচে ও উপরের সুক্ষ্ণ অংশ ধরে ঘষা-টানা করলে চোখের নিচে ডার্ক-সার্কেল পরার সুবিধা বেশি থাকে। সাধারণত চোখের ভেতর কিছু ঢুকলে বা চোখ চুলকালে চোখ ঘষে আমরা আরাম পাওয়ার চেষ্টা করি যা একেবারেই ঠিক নয়। এর কারণে চোখের নিচের চামড়া পাতলা হয়ে যায় ও ঝুলে যায়।
চর্মসার(skinny)=৩০ এর আগেই বুড়িঃ
এখন স্কিনি বা চর্মসার হওয়াকে অনেকে ট্রেন্ডি মনে করে। শুকালে ভালো দেখায় ঠিকই, তবে শুকাতে শুকাতে যদি চর্মসারের পর্যায়ে চলে যান তাহলে আপনার মুখের চর্বি কমে যাবে ও মুখের চামড়া দমে যাবে ও কৃশকায় ভাব চলে আসবে যা বয়স বাড়ার আগেই আপনাকে বুড়ো দেখাতে সাহায্য করবে।
যদি রাতের পেঁচা হয়ে থাকেনঃ
১৫-২৫ বছর বয়সে সবচেয়ে বেশিরভাগ মানুষ রাত জাগতে পছন্দ করে। রাত জাগার ফলে শরীরের যে ক্ষয় হয় তা বুড়ো দেখানোর অন্যতম কারণ। কেননা পরিমিত ঘুমের অভাবে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পরে চোখের উপর। চোখের ক্লান্ততা আপনার বয়সকে ১০ বছর বাড়িয়ে দিতে পারে। দৈনিক কতটুকু ঘুম আপনাকে সেরা দেখাতে পারে জানার জন্য দুই সপ্তাহে আপনি মোট যত ঘন্টা ঘুমান ও শুয়ে থাকেন তা যোগ করে তাকে ১৪ দিয়ে ভাগ করে নিন।
শুধু ওজন কমানোর জন্যই ব্যায়ামঃ
হঠাৎ করে ওজন কমানোর ইচ্ছা হলেই অনেকে ব্যায়াম শুরু করে দেয়। ১ অথবা ২ সপ্তাহ পরে দেখা যায় অধিকাংশই ব্যায়াম ছেড়ে দেয়। অনেকে আবার প্ল্যান মত ওজন কমিয়ে তারপরেও বন্ধ করে দেয় ব্যায়াম করা। মনে রাখবেন এমনটি করলে কিন্তু আপনি নিজের আয়ুকেই ধোকা দেবেন। রিসার্চে দেখা গিয়েছে যারা নিয়মিত ব্যায়াম করে তাদের আয়ু বৃদ্ধি পায় ও বয়স সম্পর্কিত রোগ কম হয়। দৈনিক ২০ মিনিট ব্যায়াম আপনাকে তরুণ দেখাতে অনেক যাহায্য করবে। একবার ব্যায়াম শুরু করে ছেড়ে দিলে আপনার হারানো ওজন ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি এবং এর কারণে আপনাকে বয়স্কও লাগবে।
ধূমপানঃ
ধুমপানের স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয় এটি সবারই জানা। এখন জেনে নিন এর কারণে যে তারুণত্বও চলে যায় তারাতারি। ধূমপানের কারণে শরীরের বেশ কিছু এনজাইম কাজ করা শুরু করে যা ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা নষ্ট করে দেয় ফলে বুড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
পাশ ফিরে বা মুখের উপর ঘুমানঃ
অবাক হচ্ছেন জেনে? পাশ ফিরে বা পেটের উপর ভার দিয়ে ঘুমানোর কারণেও কিন্তু আপনার ত্বকের ক্ষতি হতে পারে। দৈনিক ৮ ঘন্টা বালিশের উপর মুখ চাপ দিয়ে ঘুমালে বলিরেখা পরতে পারে, ফলে আপনাকে দ্রুত বুড়ো দেখাবে।
মিষ্টির প্রতি দুর্বলতাঃ
চিনি ও চিনি জাতীয় খাবার শরীরের প্রতিটি অংশ বুড়িয়ে যাওয়ার জন্য খুব ভালো কাজ করে। তাই যত পারবেন মিষ্টি জাতীয় খাদ্য থেকে দূরে থাকবেন। এছাড়া মিষ্টি জাতীয় খাবার আপনার পেটে মেদ জমাবে যা আপনাকে মোটেও সুন্দর দেখাতে সাহায্য করবে না।
ফল ও সবজী না খাওয়াঃ
অনেকেই আছে যারা ফল ও সবজী না খেয়ে চলতে বেশি পছন্দ করে। যদি আপনি স্বাস্থ্যকর পক্কত্বা চান আপনার শরীরের জন্য তাহলে আপনাকে রঙ্গিন ফল ও সবজী খেতে হবে।
আক্রোশ ধারণ ও অসন্তুষ্টিঃ
জীবনে যা পেয়েছেন তাতে যদি সন্তুষ্ট না হয়ে থাকেন এবং অতীতে যা হয়েছে তা যদি ভুলতে না পারেন তাহলে আপনি আপনার জীবনে বার্ধক্যকে স্বাগতম জানাতে পারেন। কারও প্রতি আক্রোশ ধরে রাখলে শরীরে ও মনের উপর ধকল আসে যা শরীরে হরমোন করটিসলের স্তরকে উত্তোলন করে ও ঘুমের পরিমাণ কমিয়ে দেয়। করটিসল ওজন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে, ব্লাড স্যুগার ও প্রেসার বৃদ্ধি করে ও ডায়াবেটিকসের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। সব মিলিয়ে এর কারণে আপনার বয়স বাড়ার আগেই চেহারায় বয়সের ছাপ পড়ে যাবে।
স্ট্র (straw) দিয়ে চুমুক নেয়াঃ
এক্সপার্টদের মতে-"কোল্ড ড্রিঙ্কস বা অন্য কোন পানীয় পানের ক্ষেত্রে স্ট্র এর কোন বিকল্প নেই এটা ঠিকই তবে এর কারণে মুখের চারপাশে বলিরেখা পড়ার ঝুঁকি থাকে অনেক।" তাই মনে রাখবেন যত বেশি বলিরেখা তত বেশি আপনার বয়স ( যা চেহারায় ফুটে ওঠে)।
এরকম দৈনন্দিন জীবনে আরও অনেক বদঅভ্যাস আছে যার কারণে শরীরের নানা ক্ষতি হয় ও সময়ের আগেই মানুষ আপনাকে বয়স্ক ভাবতে শুরু করে। তাই দেরী না করে নিজেকে এসব অভ্যাস থেকে মুক্ত করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যান।