আমারও ইচ্ছে করে হিমু হয়ে যেতে। কিন্তু চাইলেতো পারি না। হিমুদের কোনো পিছুটান নেই। আমারতো পিছুটান আছে। আমার দুই সন্তান এবং তার কিছু স্বপ্ন বাস্তবায়ন না করে আমি এ চরিত্রের মতো জীবনযাপন করতে পারি না। একটা চরিত্রকে হৃদয়ে ধারণ করার জন্য হিমু ভালো চরিত্র তবে হিমু হওয়া সহজ নয়।
শনিবার দুপুরে গাজীপুর নুহাশ পল্লীতে প্রয়াত নন্দিত কথাসাহিত্যিক ও নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে হিমু চরিত্র নিয়ে কথা উঠতেই বাংলানিউজের কাছে এভাবেই বললেন তার স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন।
এদিন হিমু পরিবহন নামে একটি দল হলুদ পাঞ্জাবি আর খালি পায়ে ঢাকা থেকে নুহাশ পল্লীতে প্রবেশ করেন। হুমায়ূনের হিমু চরিত্র এবং তার কিছু বিষয় নিয়ে শাওনের সঙ্গে কথা হয় বাংলানিউজের। এর আগে সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বিভিন্ন গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন শাওন।
প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত শেষে হুমায়ূনের সমাধির কিছুটা সামনে হিমু প্রসঙ্গে বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে শাওন বলেন, অনেকেই হিমু হতে চায় কিন্তু চাইলে তা পারা যায় না। প্রত্যেক মানুষেরতো পিছুটান আছে। কিন্তু হিমুর পিছুটান নেই। হুমায়ূনের মৃত্যুর পর আমার ইচ্ছে করে হিমু হয়ে যেতে। হিমু হতে হলে যেটা করতে হয় জাগতিক সমস্ত চাহিদা, সমস্ত বোধ, আনন্দ, দুঃখ এগুলো বাদ দিতে হয়। হিমুদের কোনো পিছুটান নেই। কিন্তু আমার দু’সন্তান, হুমায়ূনের স্বপ্নগুলো বাস্তবায়ন, আমার পরিবার...।
এদিন যারা হিমু সাজে নুহাশ পল্লীতে এসেছে তাদের প্রসঙ্গ আসে কথায়। তিনি বলেন, এখানে আজ যারা হিমু হয়ে এসেছে (হিমু পরিবহন নামে একটি সংগঠন) তারা সবাই তরুণ। হুমায়ূনের প্রতি ভালোবাসা থেকেই তারা এখানে এসেছে। ওরা নাকি হিমু কাউন্টার করেছে। হিমু পরিবহন করেছে। আমি তাদের বলি হিমু পরিবহন কেন করেছে, এটাতো পরিবহন কোনো সংগঠন নয়। তাছাড়া হিমুতো গাড়িতে চড়তো না। হিমু চরিত্র পদব্রজ করতো।
হিমু, মিসির আলীর মতো এসব চরিত্র বাঙালি অনেকদিন মনে রাখবে বলে তিনি মনে করেন।
হুমায়ূন আহমেদের স্বপ্ন ক্যান্সার হাসপাতালের বিষয়ে কথা উঠতে তিনি বলেন, তিনি একটি ক্যান্সার হাসপাতালের স্বপ্ন দেখেছেন। এটা শুধু ভিত্তিপ্রস্তরের মধ্যে স্বপ্ন দেখেন নি। পুরোপুরি সম্পন্ন করা তার স্বপ্ন ছিলো। এটার জন্য অনেক শক্তি দরকার। তবে হুমায়ূন আহমেদ ক্যান্সার হাসপাতাল হবে। আশা করছি ৫ বছরের মধ্যে হবে।
হুমায়ূনবিহীন দু’বছর কেমন কাটলো এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ২০১২ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত অনেক পরিবর্তন হয়েছে। আমার মধ্যে কোনো পার্থক্য আসেনি। আমি ভালো থাকার ভান করতে শুরু করেছি। আমি যখন নুহাশ পল্লীতে আসি প্রতিদিনই জিয়ারত করি। আজকেও এসেছি স্বাভাবিক নিয়মে। পার্থ্যক্য শুধু এটুকুই অন্যান্য সময় মিডিয়া থাকে না।
মিডিয়ার উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমি হুমায়ূনকে কোনো সিজনাল দিন হিসেবে চাই না। বিশেষ দিন আসলে আমার কাছে বিভিন্ন মিডিয়া থেকে ইন্টারভিউ চায়। একটা লেখা চান। এটা আমাকে খুব কষ্ট দেয়। আমি চাই হুমায়ূনকে নিয়ে প্রতিনিয়ত কাজ হোক। শুধু বিশেষ দিনে তাকে স্বরণ হবে এটা আমি চাই না।
নুহাশ পল্লীর ভবিষ্যত নিয়ে কথা উঠতে তিনি বলেন, আমি পারবো নুহাশ পল্লীকে আরও সুন্দর করতে। আমার সঙ্গে শুভাকাঙ্খীরা আছেন। দশ বছর পরে নুহাশ পল্লী দশগুণ সুন্দর করতে না পারলে আমি নিজেকে সফল মনে করবো না।
শনিবার সকাল থেকেই নুহাশ পল্লীতে হুমায়ূন আহমেদের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে। সকালে কোরানখানি এবং সন্ধ্যায় ইফতারের আয়োজন করা হয়েছে। বেলা সাড়ে ১২টায় শাওন তার দুই শিশু সন্তান নিশাদ ও নিনিত ও পরিবারের স্বজনদের নিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে মোনাজাত করেন। এসময় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা হুমায়ূন ভক্তরা নুহাশ পল্লীতে এসে প্রয়াত এ লেখক ও নির্মাতার সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।