চার বছর পর আসে ফুটবল বিশ্বকাপ। আর সেখানে লুকিয়ে থাকে চাওয়া-পাওয়া, নতুন কিছুর আবির্ভাব, সুখ-দুঃখের আনন্দ অশ্রু, ভাল-মন্দের সংমিশ্রন। এমনকি বিশ্বকাপ কখনো কখনো মৃত্যুকে হার মানায়। প্রিয় দলকে সমর্থন করতে গিয়ে প্রান হারান কেউ কেউ।
ফুটবল মাঠে কেউ তৈরি করেন নতুন রেকর্ড। আবার কখনও আকাশ থেকে খশে পড়ে উজ্জ্বল তারা। যাদের কাছে প্রত্যাশার যায়গাটা বেশি থাকে। তাদেরও পতন দেখা যায় ফুটবলের এ মহা আসরে। বাংলানিউজের পাঠকদের জন্য এক নজরে ব্রাজিল বিশ্বকাপের আলোচিত খবর গুলো দ্বিতীয় পর্বে তুলে ধরা হলো।
সুপার ফ্লপ তারকারা:
এ আসরে অনেক স্বপ্ন নিয়ে এসেও শেষ পর্যন্ত সুপার ফ্লপ হয়েছেন অনেক তারকা। দলের অনেক চাওয়া থাকলেও পারেননি ইংল্যান্ডের ওয়েন রুনি, পর্তুগালের ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, স্পেনের ইকার ক্যাসিয়াস ও ইতালির মারিও বালোতেল্লিরা। এদের অনেকের ব্যক্তিগত ব্যর্থতার পাশাপাশি তাদের দলও ব্যর্থদের সারিতে অর্থাৎ বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পড়েছে আগেভাগেই।
দর্শক রেকর্ড:
দর্শক উপস্থিতিতে রেকর্ড তালিকায় দ্বিতীয় শীর্ষস্থান দখল করল ব্রাজিল বিশ্বকাপ। জার্মানির ২০০৬ বিশ্বকাপের ৫২,৪৯১ টপকে এ বিশ্বকাপের
দর্শকের গড় ছিল ৫২,৭৬২ জন। ফুটবলের নিয়ন্ত্রণ সংস্থা ফিফা জানায়, দর্শক উপস্থিতি তালিকায় এখনও সবার শীর্ষে ১৯৯৪ সালের যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বকাপ। সে আসরে দর্শকের গড় উপস্থিতি ছিল ৬৮,৯৯১ জন।
কালোবাজারি:
ব্রাজিল বিশ্বকাপে টিকেট কালোবাজারির সঙ্গে দেশটির পুলিশ বাহিনী ও ফিফার কর্মকর্তারা জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। বিশ্বকাপের মাঝামাঝি সময়ের দিকে টিকেট কালোবাজারির আন্তর্জাতিক চক্রের ১১জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এই চক্রটি বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ৭০০ কোটি টাকা আয় করে।
শাকিরার লা লা লা...:
এবারও ফুটবল পাগল পপস্টার শাকিরা, ব্রাজিল বিশ্বকাপে তার গাওয়া ‘লা লা লা’ গানের সঙ্গে মাতিয়ে তুলেছিলেন ১৩ তারিখের সমাপনী অনুষ্ঠান, ব্রাজিলের রাজধানী রিও ডি জেনিরোর বিশ্বকাপ স্টেডিয়ামে। শাকিরার এটি বিশ্বকাপের সমাপনীতে হ্যাটট্রিক পারফরম্যান্স ছিল। এর আগে তিনি ২০০৬ ও ২০১০ সালের বিশ্বকাপ সমাপনীতে পারফর্ম করেছিলেন। অথচ ব্রাজিল বিশ্বকাপের থিম সং ‘উই আর ওয়ান’র অন্যতম গায়িকা হলেও টুর্নামেন্টের কিকঅফের আগে অনুষ্ঠেয় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পারফর্ম করেন নি জেনিফার লোপেজ। সাও পাওলোর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে একই মঞ্চে থিম সংয়ের সহ-গায়ক ক্লদিয়া লেইতে (ব্রাজিল) ও পিটবুলের (কিউবান আমেরিকান) সঙ্গে গান গাওয়ার কথা ছিল লোপেজের। শাকিরার দক্ষিণ আফ্রিকার বিশ্বকাপের থিম সং ‘ওয়াকা ওয়াকা’র সঙ্গে পাল্লা দিতে মাঠে নেমেছিলেন লোপেজ। কিন্তু টেক্কায় টিকলেন না। তার গাওয়া ‘উই আর ওয়ান’ তো জনপ্রিয়তা পায়নি-ই, বরং গানের বেশ কিছু অংশ নিয়ে বিতর্কও তৈরি হয়।
বিশ্বকাপে এক ম্যাচে সবচেয়ে বেশি গোলদাতা যারা:
ওলেগ সালেনকো রাশিয়ান ফুটবলার। ১৯৯৪ সালে ক্যামেরুনের বিপক্ষে গ্রুপ ম্যাচে তিনি ৫টি গোল করেছিলেন একাই। এমিলিও বুট্রাগুয়েনো ১৯৮৬ সালে স্পেনের এ খেলোয়াড় ডেনমার্কের বিপক্ষে রাউন্ড অব সিক্সটিনে ৪টি গোল করেন। আরনেস্ট উইলিমোওস্কি পোল্যান্ডের হয়ে ১৯৩৮ সালে ব্রাজিলের বিপক্ষে প্রথম রাউন্ডে ৪টি গোল করেন। ইউসেবিও পর্তুগালের এই খেলোয়াড় কোরিয়ার বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে ৪টি গোল করেছেন।
সমর্থকের মৃত্যু:
বাড়ির ছাদে প্রিয় দল ব্রাজিলের পতাকা উড়াতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয় আশুলিয়ার পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র রাফিল (১২)। চার দিন পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সে মারা যায়। রাফিল সাভার ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড স্কুলের ছাত্র ছিল। অপরদিকে, নক আউটের প্রথম ম্যাচে ব্রাজিল পেনাল্টি শুট আউটে চিলিকে পরাজিত করে। আর এই শুট আউট দেখার সময় হৃদ যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গিয়েছিলেন এক ব্রাজিলিয়ান সমর্থক।
বিশ্বকাপে বাজি ধরে তিন হাজার ডলারের বেশি অর্থ হেরে গিয়ে আত্মহত্যা করেছিল এক চীনা কলেজ ছাত্র। নিহত ওই ছাত্রের নাম লিন। কলেজ ভবনের সাত তলা থেকে লাফ দেন লিন।
হ্যাটট্রিক:
এবারের বিশ্বকাপে হ্যাট্রিক করেন সুইজারল্যান্ডের তারকা মিডফিল্ডার জেরদান শাকিরি। হন্ডুরাসের বিপক্ষে খেলার ৬, ৩১ ও ৭১ মিনিটে তিনটি গোল করেন তিনি। এটি বিশ্বকাপ ইতিহাসের ৫০তম হ্যাটট্রিক। ২০১৪ সালের ব্রাজিল বিশ্বকাপে জার্মানির স্ট্রাইকার থমাস মুলারও পর্তুগালের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেন।
পুরস্কার:
এবারের ব্রাজিল বিশ্বকাপে জয়ী দল হিসেবে জার্মানি সোনালি ট্রফি ছাড়াও পেয়েছে ৩৫ মিলিয়ন ডলার। আর রানার্স আপ দল আর্জেন্টিনা পেয়েছে ২৪ মিলিয়ন ডলার। এসবের বাইরেও খেলায় ব্যক্তিগত নৈপুণ্য প্রর্দশনের জন্য বেশ কিছু পুরস্কার ছিল।
টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত পারফর্ম করে লিওনেল মেসি পেয়েছেন গোল্ডেন বল । সিলভার বল পেয়েছেন থমাস মুলার। সর্বোচ্চ গোলদাতা জেমস রদ্রিগেজ পেয়েছেন গোল্ডেন বুট। সেরা গোলকিপার হিসেবে গোল্ডেন গ্লাভস পেয়েছেন জার্মানির ম্যানুয়েল ন্যুয়ের।
এছাড়া সেরা তরুণ খেলোয়াড় হিসেবে পুরস্কার জিতেন ফ্রান্সের পল পগবা এবং ফেয়ার-প্লে অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে কলম্ববিয়া দল। আর প্রতি ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় ম্যান অব দ্যা ম্যাচের ট্রফি তো ছিলই।
প্রযুক্তির ব্যবহার:
গোল বিভ্রাট ঠেকাতে এবারের ব্রাজিল বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো গোললাইন টেকনোলজি ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা ফিফা।
বিশ্বকাপে ১২টি স্টেডিয়ামে অত্যাধুনিক মানের ১৪টি ক্যামেরা বসানো হয়েছিল। এগুলো মাঠের চারদিকে বসানো ছিল। ৭টি ক্যামেরা ছিল গোলবারের দিকে মুখ করে। প্রতিটি ক্যামেরা ‘ফোর ডি’ মানের ছবি তুলতে সক্ষম। সেকেন্ডে ৫০০টি করে ছবি তুলতে সক্ষম এই ক্যামেরাগুলো বিশ্বকাপের আগে ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন ম্যাচে ২৪০০ বার ব্যবহার করা হয়েছে। প্রতিবারই সফল হয়েছে এই গোললাইন টেকনোলজির ক্যামেরাগুলো। সেই সঙ্গে ছিল রেফারির কাছে ‘ভ্যানিশিং স্প্রে’। ফ্রি কিক হলে প্রায়ই ভোগান্তিতে পড়তে হতো রেফারিদের। কিন্তু এবার তার ব্যতিক্রম দেখা গেছে। রেফারিদের কোমড়ে ছিল এই স্প্রে। তারা সেটা দিয়ে বল ও ফুটবলারদের স্থান ঠিক করে দিতেন।
প্রথম লাল ও হলুদ কার্ড:
ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ব্রাজিলের প্রাণভোমরা নেইমার ২৭ মিনিটের মাথায় হজম করেন বিশ্বকাপের প্রথম হলুদ কার্ড। তারকা ফরোয়ার্ড লুকা মড্রিচকে ফাউল করার কারণে তাকে হলুদ কার্ড দেখান রেফারি নিশিমুরা। প্রথম লাল কার্ড পেয়েছেন উরুগুয়ের ম্যাক্সি পেরিরা, কোস্টা রিকার বিপক্ষে। সবচেয়ে বেশি হলুদ কার্ড পেয়েছে স্বাগতিক দল। আর বেশি হলুদ কার্ডের স্বাদ নিয়েছেন থিয়াগো সিলভা, তিনবার। মোট লাল কার্ড পেয়েছেন ১০জন ও মোট হলুদ কার্ড পেয়েছেন ১৮৭ জন।
- See more at:
http://www.banglanews24.com/beta/fullnews/bn/308507.html#sthash.duWLqXQq.dpuf