Career Development Centre (CDC) > Appreciation, Patience, Tolerance & Ethics
সন্তানের সবচেয়ে বড় শিক্ষক বাবা-মা'ই
(1/1)
mshahadat:
কে যেন বলেছিলেন কথাটা। শিশুরা হচ্ছে কুমারের হাঁড়ি-কুড়ি তৈরির কাদা-মাটির মতো। যেভাবে গড়তে চাইবেন, সেভাবেই তারা তৈরি হবে। ছোটবেলায় যে শিক্ষা, যে আদর্শকে তাদের দৈনন্দিন অভ্যোসে পরিণত করবেন, সেই অভ্যেস, সেই আদর্শ নিয়েই তারা বড় হবে। শিশুদের প্রাথমিক অভ্যেস সাধারণত গড়ে ওঠে বাবা-মা’কে অনুসরণ করে, সেক্ষেত্রে বাবা-মা’ই হচ্ছে শিশুর প্রথম শিক্ষা। বাবা-মা’রা শিশুকে যেভাবে, যে আঙ্গিকে গড়ে তুলবেন, শিশু সাধারণসত সে আঙ্গিকেই গড়ে ওঠে। তাই সন্তান জš§ দিয়েই বাবা-মায়ের দায়িত্ব শেষ হয়ে যাওয়ার নয়, তাঁকে সঠিক আদর্শে গড়ে তোলার ব্যাপারটিও বাবা-মা’য়ের দায়িত্ব ও কর্তব্যের মধ্যেই পড়ে।
বাড়িতে মুক্তিযুদ্ধের ওপর লেখা অসংখ্য বইয়ের সংগ্রহ একটি বেসরকারি কলেজের শিক্ষক শানিলা শারমিনের। মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়ক বিভিন্ন বই পড়া নিয়ে প্রচণ্ড আগ্রহ। সন্তানের জšে§র পর থেকে বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস কিংবা একুশে ফেব্র“য়ারি উপলক্ষ্যে আয়োজিত বিভিন্ন অনুষ্ঠিানে তিনি বাচ্চাকে নিয়ে গেছেন। বাচ্চারও নাকি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে দারুণ আগ্রহ। ওকে ঘুম পাড়ানোর সময় সুয়োরানি-দুয়োরানি নয়, শোনাতে হয় মুক্তিযুদ্ধের গল্প। বিভিন্ন যুদ্ধের বর্ণনা। শানিলা বললেন, বাচ্চার এই আগ্রহটা আমার কাছ থেকেই হয়েছে, এটা বুঝতে পারি। কিছুদিন আগে জাহানারা ইমামের লেখা ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ বইটি কিনে দিয়েছি। এখন দেখি, ওই বইটিই তাঁর ধ্যান-জ্ঞান। কিছুদিন আগে বাচ্চাকে কেউ জিজ্ঞেস করেছিল বড় হয়ে তুমি কী হবে, উত্তরে সে বলেছিল, “বীরশ্রেষ্ঠ।” জানেন, উত্তর শুনে চোখে পানি চলে এসেছিল আমার। ওর এই মনোভাবটা বড় হয়েও যদি থেকে যায়, তাহলে আমি হবো সবচেয়ে সুখী মা।’
বেসরকারি ব্যাংকের চাকুরে আশফাক-উজ্-জামান নিজে রেপি¬কা গাড়ির প্রতি আসক্ত। তিনি অনেক দিন ধরে গড়ে তুলেছেন তাঁর গাড়ির সংগ্রহশালা। গাড়ির বিষয়ক বিভিন্ন ব্যাপারে আগ্রহী আশফাকের শিশু-সন্তানটিও বয়স তিন না পেরোতেই গাড়িকেই বানিয়েছে তাঁর জীবনের ধ্যান-জ্ঞান। বাচ্চাটি এই বয়সেই এত ধরনের গাড়ির নাম মুখস্থ করে ফেলেছে যে তা দেখলে বা শুনলে অবাক হতেই হয়। সন্তানের প্রতি বাবা-মায়ের প্রভাব কতখানি, ওপরের দুটি উদাহরণে বিষয়টি বোঝা যায় খুব সহজেই।
বাংলাদেশ মিলিটারি অ্যাকাডেমিতে (বিএমএ) তোরোটি ব্যাচের প্রায় হাজার খানেক ক্যাডেটের ওপর গবেষণা চালিয়েছেন বর্তমানে একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও সাবেক সেনা কর্মকর্তা আবু সালেহ। তাঁর গবেষণা থেকেও সন্তানের গড়ে ওঠা কিংবা আচার-আচরণে বাবা বা মায়ের প্রভাবের ব্যাপারটি বেশ স্পষ্ট।
তিনি জানান, বিএমএ’তে প্রচুর ছেলে-মেয়ে ক্যাডেট হয়ে আসে। বাছাইয়ের অনেক ধাপ পেরিয়েই তাঁদের টিকতে হয়। বাছাইয়ের সময় ক্যাডেটরা প্রায় সকলেই একই ধরনের ফলাফল করলেও পুরো প্রতিশক্ষণ শেষ হওয়ার আগেই অনেককে বিভিন্ন আচরণগত কারণে বিএমএ থেকে চলে যেতে হয়। আচরণগত কারণে বাদ পড়ে যাওয়া ক্যাডেটদের জীবন-বৃত্তান্ত ও পারিবারিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় এনে দেখা গেছে আচরণগত কারণে সমস্যায় পড়া ক্যাডেটদের সমস্যাটার মূল আসলে পরিবারেই প্রোথিত।
তিনি একটি উদাহরণ টেনে বলেন, বিএমএ’তে একবার একটি ছেলেকে পেয়েছিলাম, যার বাবা বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন। মাও ছিলেন যথেষ্ট শিক্ষিত ও উচ্চ পর্যায়ের চাকুরে। কিন্তু, দুঃখের বিষয় ছেলেটিকে বিএমএ’তে রাখা যায়নি। কারণ অনুসন্ধানে গিয়ে দেখলাম, তাঁর বাবা-মা নিজেদের ক্যারিয়ার নিয়ে এতটাই ব্যস্ত ছিলেন, যে ছেলের বেড়ে ওঠার সময় তাঁর প্রতি ঠিকমতো নজরই দিতে পারেননি। বুয়া-আয়া-কেয়ারটেকারদের সঙ্গে খেলে বড় হওয়ার পর তাঁর মধ্যে দেখা দিয়েছিল নানা ধরনের সমস্যা।
পারিবারিক বলয়ে সন্তানের মধ্যে ভালো গুণাবলীর সমন্বয় ঘটাতে আবু সালেহ জোর দিয়েছেন সন্তানের আচরণ বিশে¬ষণের দিকে। বাবা-মায়েরা যদি তাঁর সন্তানের ভালো ও খারাপ আচরণের একটা রেকর্ড নিয়মিত রাখেন, তাহলে তাঁদের পক্ষে সন্তানকে নিয়ন্ত্রণ করা অনেক সহজ হবে। বকা-ঝকা দিয়ে নয়, কঠিন শাসনের মধ্যে রেখেও নয়, সন্তানের মন বুঝে, তাঁর সঙ্গে বন্ধুর মতো মিশেই তাঁর মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে ইতিবাচক গুণগুলো।। পুরো ব্যাপারটিই যেন বাবা-মা দেখেন সন্তানের প্রতি তাঁদের দায়িত্ব ও অবশ্য-পালনীয় কর্তব্য হিসেবে।
~ নাইর ইকবাল, প্রথম আলো
Navigation
[0] Message Index
Go to full version