Religion & Belief (Alor Pothay) > Ramadan and Fasting

রোযায় খাদ্যাভ্যাস ও আপনার স্বাস্থ্য

(1/2) > >>

BRE SALAM SONY:
রহমত, বরকত ও মাগফিরাত এর পয়গাম নিয়ে আসে মাহে রমজান। আমাদের দেহযন্ত্রটি সার্ভিসিং করার জন্যই এ মাসের আগমন ; শুধু দেহই নয়, আত্নার পরিশুদ্ধিরও এক বিশাল সুযোগ দেয়া হয়ছে এ মাসে।

  রোযার মাসে খাওয়া দাওয়া ও সাস্থ্যগত সমস্যা নিয়ে কম বেশী অভিযোগ নেই এমন মানুষ পাওয়া মুশকিল। এসিডিটি, পেটের গোলযোগ আর দুর্বলতা নিয়ে তাদের অভিযোগ লেগেই থাকে। তখন সব দোষ গিয়ে পড়ে রোযার উপর। অসুখে পড়বেন বলে রোযা রাখেন না এমন মানুষও একদম কম নেই। আসলে দোষ কিন্তু রোযা বা খাবার কোনটিরই না... সমস্যা আমাদের নিজেদের অভ্যাসের। রোযার সময়  যদি আমরা প্রচলিত ভাজাভুজি বা বেশী মসলাযুক্ত খাবার  খাওয়ার অভ্যাস বাদ দিয়ে খাবারের মেনুতে ও রান্নার প্রণালীতে একটু পরিবর্তন আনি, তাহলে কিন্তু পু্রো রোযার মাসটাই সুস্থভাবে কাটানো যাবে। অনেক অসুখ-বিসুখের সমাধান কিন্তু রোযা রাখা বা কম খাওয়া।  ইসলাম ধর্ম ছাড়া আরও কিছু ধর্মে উপবাসের প্রথা চালু আছে। কিন্তু ইসলাম ধর্মের মত এত সহজ ও স্বাস্থসম্মত নিয়ম-নীতি অন্য কোন ধর্মে নেই। তাই রোযা অনেকগুলো রোগ-ব্যাধির চিকিৎসাও বটে ।

সাহরীতে যা খাওয়া উচিত :
  সাহরীর খাবার এমন হওয়া উচিত যা দীর্ঘক্ষন পেটে থাকে অর্থাৎ হজম হতে বেশি সময় লাগে। কেউ কেউ মনে করেন, সাহরীতে প্রচুর পরিমান আমিষ ( Protien) জাতীয় খাবার খেলে সারাদিন একটু সবল থাকা যাবে। কেঊ কেউ আবার ভাত (Carbohydrate) বেশী খাওয়ার পক্ষপাতি। আসলে এর কোনটিই ঠিক নয়। সাহরীতে খাবারের প্রত্যেকটি উপাদান যেন প্রয়োজনীয় পরিমাণে থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। বছরের অন্যান্য সময়ে হয়ত আমরা এভাবে সুষম খাবার খাওয়ার কথা ভাবি না, কিন্তু  অন্যান্য সময় ত বটেই, রোযার মাসে এ দিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। আমিষ, শর্করা ও চর্বি জাতীয় খাবারের কোনটিই যেমন খাদ্যতালিকায় বাদ পড়া উচিত নয়, তেমনি কোনটি পরিমানে বেশী খাওয়া ঠিক নয়। শর্করা জাতীয় খাবার বেশী খাওয়ার ফলে pancreas থেকে ইনসুলিন এর নিঃসরণ বেড়ে যায়। এই অতিরিক্ত ইনসুলিন গ্লুকোজ কে রক্ত থেকে দ্রুত দেহকোষে প্রবেশ করিয়ে দেয়। অর্থাৎ অতিরিক্ত ইনসুলিন এর কারনে রক্তে গ্লুকোজ বেশীক্ষণ থাকতে পারে না। অতিরিক্ত ইনসুলিন নিঃসরণের কারণে দেহের স্থুলতা বেড়ে যায়। আবার,আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাসের কারণে দৈনিক যে নির্দিষ্ট পরিমাণ আমিষ-হজমকারী এঞ্জাইম আমাদের পাকস্থলি থেকে নিসৃ্ত হয় , তা দিয়ে অতিরিক্ত আমিষ হজম করা সম্ভব নয়। তাছাড়া অতিরিক্ত আমিষ গ্রহনের ফলে শরীরে ঝিমুনি আসে ও রক্তে ইউরিয়ার পরিমান বেড়ে যায়, যা দেহের জন্য একটি ক্ষতিকারক বর্জ্য পদাথ। অনুরূপভাবে অতিরিক্ত চর্বি জাতীয় খাবার দেহকোষ ও রক্তে অনাকাংখিত মেদ তৈরী ছাড়া আর কিছুই করতে পারে না। যাদের পিত্তথলি বা লিভারের সমস্যা আছে তাদের জন্য অতিরিক্ত চর্বি অত্যন্ত ক্ষতিকর !তাই রোযার মাসে সাহরীতে অন্য মাস গুলোর মত স্বভাবিক খাবার খাওয়াই শ্রেয়ঃ। তবে জটিল শর্করা (Complex carbohydrate) জাতীয় খাবার খুব ধীরে হজম হয় বলে এ ধরনের খাবার সাহরীতে খাওয়া ভালো। যেমন- ঢেঁকিছাটা চালের ভাত, লালরুটি, পাউরুটি, বার্লি, সব রকমের আলু, oatmeal, pasta, macaroni, spaggetti ইত্যাদি। এই খাবারগুলো পাকস্থলীতে দীর্ঘক্ষণ স্থিত থাকে ,হজম হয় ধীরে ধীরে। তাই রোযাদারের ক্ষুধাভাব কম অনুভব হয়। এর সাথে পছন্দ অনুযায়ী পরিমিত মাছ/ গোশ্ত ও প্রচুর পরিমানে শাকসব্জি খেতে পারেন।


BRE SALAM SONY:


একজন রোযাদারের জন্য সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন যথেষ্ঠ পানি  ( দৈনিক অন্তত ২ লিটার ) ও তাজা ফলের রস পান করা  । অনেকেই এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দেন না। পানি দেহকে সতেজ রাখে। শরীর নামের কারখানার বিভিন্ন রাসায়নিক কার্যকলাপের মূল উপাদান এই পানি।  পানি কম খেলে দেহের বর্জ্য পদাথগুলো বের হয় না, দেখা দেয় নানাবিধ সমস্যা।

  স্বাস্থবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে সাহরীতে খাওয়ার বেলায় আল্লাহ রাসূলের (সাঃ) নিয়ম অনুযায়ী খাওয়াই উত্তম - অর্থাৎ পাকস্থলীর তিন ভাগের একভাগ খাবার ও  তিন ভাগের একভাগ পানি দিয়ে পূরণ হবে এবং বাকী  এক ভাগ খালি রাখতে হবে  শ্বাস নেয়ার জন্য। অনেকেই হয়ত ভাববেন, আমরা তো পাকস্থলী দিয়ে শ্বাস নেই না, তাহলে পাকসথলীর এক-তৃ্তীয়াংশ শ্বাস নিতে সাহায্য করে কেমন করে ? উত্তরটা খুবই সহজ। পাকস্থলীর উপরে আছে 'ডায়াফ্রাম' নামের একটি বড় মাংসল পর্দা। আমরা যখন শ্বাস গ্রহণ করি, তখন ডায়াফ্রাম সংকুচিত হয়ে নিচের দিকে নেমে আসে এবং ফুসফুস স্ফীত হয়। খাদ্য দিয়ে পাকস্থলী পুর্ণ  থাকলে শ্বাস গ্রহণের সময় নিশ্বাস-প্রশ্বাসের এই মূল পেশী - ডায়াফ্রাম  সংকুচিত হয়ে নিচের দিকে নামতে পারেনা, ফুসফুস পর্যাপ্ত স্ফীত হয় না ও পরিমাণমত অক্সিজেন দেহে প্রবেশ করতে পারে না। তাই খাবার গ্রহণের ব্যাপারে রাসূল (সাঃ) এর Golden theory of one third মেনে চলা আবশ্যক।

সাহরীতে যা খাওয়া উচিত নয়ঃ

  সাহরীতে চা পান না করাই উত্তম। চায়ে থাকে মুত্র-বর্ধক উপাদান। সাহরীতে চা পান করলে এই মুত্র-বর্ধকের প্রভাবে দেহের পানি  প্রস্রাবের মাধ্যমে দ্রুত বের হয়ে যায়।

ইফতারে যা খাওয়া উচিত :

  সারাদিন রোযা থাকার পর পাকস্থলীতে এমন কিছু খাবার দেয়া উচিৎ যা দ্রুত শরীরে শক্তি যোগায় ও বিভিন্ন ঘাটতি পূরণ করে। ইফতার হিসেবে সরল শর্করা উত্তম। কেননা এটি দ্রুত হজম হয় ও শক্তি যোগায়। দেহের  শরীরবৃত্তীয় চাহিদা পূরনের জন্য কিছু Essential elements গ্রহণ করা জরুরী। যেমন- মস্তিষ্কের খাদ্য হল গ্লুকোজ । গ্লুকোজের অভাবে মস্তিষ্কের কাজ ব্যাহত হয়। সৃষ্টিকর্তা মস্তিষ্ককে এভাবে তৈরী করেছেন যে, ইন্সুলিনের সাহায্য ছাড়াই গ্লুকোজ মস্তিষ্ক কোষে ঢুকে যায়।

  শরীরের আরেকটি গুরুত্বপূরণ অঙ্গ হল কিডনি, যা পানির অভাবে মারাত্নভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। ১২ ঘন্টায় ৩০০ মিলি র কম প্রস্রাব উৎপন্ন হলে kidney failure এর সম্ভবনা থাকে।

  দেহের স্বাভাবিক কার্যকারিতার জন্য বিভিন্ন খনিজ উপাদান যেমন-   সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ইত্যাদি অত্যাবশ্যক।


BRE SALAM SONY:
ইফতারে এমন সব খাবার খাওয়া উচিত যে খাবারে প্রয়োজনীয় পরিমান পানি, গ্লুকোজ ও খনিজ উপাদান থাকে। তাতে মস্তিষ্ক, কিডনি ও ত্বকের কার্যক্রম ঠিক থাকে।

  আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বলেছেন, '' যদি তোমাদের কেউ রোযা রাখে তাহলে সে যেন খেজুর দিয়ে ইফতার করে। যদি সে তা না পায় তাহলে পানি দিয়ে। নিশ্চয়ই পানি হল পরিশোধক ( Purifiyer)।'' [সূত্র-বুখারী ও বায়হাকী]

  এদিক থেকে চিন্তা করলে  পানি, শরবত ও ফলের রস ইফতার হিসেবে অতি উত্তম।

  খেজুরে আছে গ্লুকোজ ও নানা ধরনের খনিজ উপাদান। এতে রয়েছে সরল শর্করা যা  দ্রুত শোষন হয় এবং মস্তিষ্ক ও দেহে শক্তি জোগায়। উচ্চ রক্তচাপ, রক্তশূন্যতা, কোষ্ঠকাঠিন্য ও বিভিন্ন হৃদরোগ প্রতিরোধে খেজুরের অবদান অপরিসীম। হাড়ের সুস্থতা ও রক্তে কোলেস্টেরল কমানোর ক্ষেত্রেও এর ভূমিকা রয়েছে।

  ফলমূলে আছে প্রচুর গ্লুকোজ , ভিটামিন ও খনিজ উপাদান। বিশেষতঃ তরমুজ, বাঙ্গী এ জাতীয় পানীয় ফল ইফতারের জন্য খুব ভালো।

  এছাড়াও ছোলা সিদ্ধ ( পছন্দ অনুযায়ী এর সাথে যয়তুনের তেল, শসা , টমেটো ইত্যাদি মিশিয়ে নিতে পারেন ), পায়েশ ,হালুয়া, দই-চিড়া, দুধ-সাগু, পুডিং, যে কোন রকমের মিষ্টি,  রকমারী ফলের চার্ট , মুরগীর স্যুপ বা স্যুপ নুডুলস, সবজির স্যূপ ইত্যাদি ইফতার হিসেবে শরীরের জন্য খুবই উপকারী।

BRE SALAM SONY:
ইফতারে যা খাওয়া উচিত নয়ঃ
  ভাজা-পোড়া ও অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার শরীরের জন্য সবসময়ই ক্ষতিকর। বিশেষ  করে শরীরের তাৎক্ষণিক ঘাটতি পূরণ ও শক্তি যোগানের ক্ষেত্রে এদের ভূমিকা নেই বললেই চলে। এসব খাবারের উপরিভাগে তেলের আবরণ (Oily coating) থাকার কারনে এরা পাকস্থলীতে পরিপাক হয় না এবং পাকস্থলী অতিক্রম করতে অনেক সময় নেয়; তারপর অন্ত্রে গিয়ে শোষিত হয়ে রক্তে মিশে। ফলে এ ধরনের খাবার দেহে দ্রুত শক্তি যোগাতে পারে না।

  রোযার সময় দাঁতের যত্নের ব্যাপারে আমরা অনেকেই বেখেয়াল হয়ে যাই। রমজান মাসে সাহরীর পর অবশ্যই টুথপেস্ট ও ব্রাশ দিয়ে দাঁত ও জিহ্বা পরিষ্কার করা উচিৎ। সম্ভব হলে একটু কুসুম গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে কুলি করে নেয়া যেতে পারে। ইফতারের পর আরেকবার ব্রাশ করে নেয়া ভাল। এর মাঝে রোযা রাখা অবস্থায় মেসওয়াক অথবা শুধু ব্রাশ দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করতে পারেন । তাতে মুখে দূর্গন্ধ কম হবে এবং দাঁত ও মাড়ির রোগ থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।


wahid:
Thank you very much for your very valuable information about foods to be taken in Ramadan. I have learned so many unknown things by reading your post.

Thank you again.

Navigation

[0] Message Index

[#] Next page

Go to full version